রাজবাড়ী সংবাদদাতা ঃ উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় লোকসানের মুখে পড়েছেন রাজবাড়ীর তাঁতশিল্পীরা। একের পর এক বন্ধ হয়ে যাচ্ছে তাঁত। অনেকেই এ পেশা ছেড়েছেন। বাপ-দাদার পেশা বলে কেউ কেউ ধরে রেখেছেন। তাদের মধ্যে একজন সদর উপজেলার রামকান্তপুর ইউনিয়নের তাঁতিপাড়া গ্রামের মজিবর রহমান মুন্সি। বাপ-দাদার এ পেশা ছাড়তে না পারলেও লোকসান ঠিকই গুণতে হচ্ছে তাকে। সত্তরোর্ধ্ব এ তাঁতশিল্পী বলেন, “১৯৯০ সাল পর্যন্ত তাঁতের তৈরি পণ্য তৈরি করে পরিবার-পরিজন নিয়ে ভালোই চলতে পেরেছি। নব্বই দশকের পর থেকে রং, সুতার দাম বাড়তে থাকে। এখন অনেকেই এই পেশা ছেড়ে দিয়েছে। কেউ ভ্যান চালায়, কেউ অন্য ব্যবসা করছে, কেউ বিদেশ গেছে। বাপ-দাদার পেশা তাই ধরে রেখেছি।”
তিনি জানান, ১৯৪৬ সাল থেকে রামকান্তপুর ইউনিয়নে তাঁত শিল্পের শুরু। এ সময় তাঁতের তৈরি গামছা, লুঙ্গি, শাড়ির প্রচুর চাহিদা ছিলো। এই তাঁত শিল্পের ওপর নির্ভর করে খেয়ে-পড়ে ভালোই চলতো কারিগরদের সংসার। তিন দশক আগেও এই গ্রামে ছয় থেকে সাত শতাধিক তাঁত ছিলো। গ্রামের প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই ছিলো তাঁত। মজিবর বলেন, “বর্তমানে টিকে আছে ১৫টি। তাঁত কারিগর মো. আজাহার মিয়া বলেন, তিনি ৩০ বছর ধরে বিভিন্ন কারখানায় কাজ করছেন। বর্তমানে এই পেশায় থেকে যে আয় হয় তা দিয়ে সংসার চলে না। সারাদিন কাজ করে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা আয় হয়। এ দিয়ে সংসার চালানো কঠিন। আরেক কারিগর মো. আবজাল হোসেন বলেন, দুই দশক আগেও ছয় থেকে সাতশ টাকায় এক বেল্ট সুতা পাওয়া যেত। এক দশক আগে দাম ছিলো এক হাজার টাকা। কিন্তু বর্তমানে সেই সুতা কিনতে হয় আড়াই থেকে তিন হাজার টাকায়। রংয়ের দাম বেড়েছে। কিন্তু সেই অনুপাতে গামছা, লুঙ্গির দাম বাড়েনি। তাঁত মালিক মজিবর রহমান বলেন, “২০১০ সালে সাধারণ মানের চারটি লুঙ্গি গড়ে ৫০০ টাকায় বিক্রি হতো। বর্তমানে বিক্রি হয় এক হাজার টাকায়। ওই সময় চার পিস লুঙ্গিতে ৩০ থেকে ৪০ টাকা করে লাভ থাকতো। আর বর্তমানে লাভ থাকে ১০ থেকে ২০ টাকা। আর গামছাও বিভিন্ন প্রকারের আছে; আকার ভেদে বিক্রি হয়ে থাকে। এক দশক আগে প্রতি পিস গামছা ৫০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি হতো। বর্তমানে সেই গামছা বিক্রি হয় ১০০ থেকে ৩০০ টাকায়। সেসময় চারটি গামছায় ৩০ থেকে ৪০ টাকা করে লাভ থাকতো। আর বর্তমানে লাভ থাকে ১০ থেকে ২০ টাকা। ২০১৮ সালের তাঁতশুমারি অনুযায়ী, জেলায় তাঁতীর সংখ্যা তিন হাজার ৪৮৮ জন। তাঁত প্রতিষ্ঠান আছে এক হাজার ২৬৬টি। তাঁতকল আছে দুই হাজার ২১৫টি। সচল তাঁতকল আছে এক হাজার ৫০৮টি,অচল ৭০৭টি
লোকসানের মুখে তাঁতশিল্পীরা
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ