ক্রীড়া ডেস্ক: হামজা চৌধুরিকে স্বাগত জানিয়ে সামাজিক মাধ্যমে শেফিল্ড ইউনাইটেড লিখেছে, ‘ঐধসুধ ঈযড়ঁফযঁৎু রং ধ ইষধফব।’ ফুটবলের খোঁজখবর মোটামুটি যারা রাখেন, তাদের জানার কথা যে, শেফিল্ডে ছুরি-কাঁচি তৈরির ঐতিহ্যের কারণে এই ক্লাব পরিচিত ‘দা ব্লেডস’ নামে। একটু পর হামজার ছবি দিয়ে তাদের আরেকটি পোস্ট, ‘বাংলাদেশি ব্লেড’, পাশে বাংলাদেশের পতাকা। গুঞ্জন চলছিল কয়েকদিন ধরেই। সোমবার এলো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা। মৌসুমের বাকি সময়টার জন্য লেস্টার সিটি থেকে ধারে শেফিল্ড ইউনাইটেডে পাড়ি জমিয়েছেন হামজা চৌধুরি। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ক্লাবটিতে খেলার সুযোগ খুব একটা পাচ্ছিলেন না হামজা।
এখন ইংলিশ চ্যাম্পিয়নশিপের ক্লাবটিতে নিয়মিত খেলার আশা করতেই পারেন ২৭ বছর বয়সী ফুটবলার, যিনি ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার ও ডিফেন্ডার দুই ভূমিকাতেই খেলতে পারেন। চ্যাম্পিয়নশিপে এখন ২৯ ম্যাচে ৫৮ পয়েন্ট নিয়ে পয়েন্ট তালিকার দুইয়ে আছে শেফিল্ড। আগামী মৌসুমে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে জায়গা করে নেওয়ার আশায় ছুটছে তারা। শেফিল্ডের কোচ ক্রিস উইল্ডারের সঙ্গে তার কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে আগে। ২০২২-২৩ মৌসুমে যখন তিনি ধারে খেলেন ওয়াটফোর্ডে, তখন সেই দলের কোচ ছিলেন উইল্ডার। কোচের কারণেই শেফিল্ডে আসার সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ হয়েছে, ক্লাবের ওয়েবসাইটে বললেন হামজা।
“সপ্তাহ দুয়েক ধরেই আলোচনা চলছিল। আমি খুশি যে এখানে আসতে পেরেছি এবং মাঠে নামতে তৈরি আছি। এই দল নিজেদের যে অবস্থানে তুলে এনেছে (পয়েন্ট তালিকায় দ্বিতীয়), তা ভালোভাবেই জানি আমি এবং আরও ভালো করতে ক্লাবকে সহায়তা করতে চাই।” “ওয়ার্টফোর্ডে মাস দুয়েক কাজ করেছি দা গ্যাফারের (উইল্ডার) সঙ্গে। যদিও কম সময় ছিল, তবে দারুণ উপভোগ করেছিলাম। এবার যখন তিনি আবার ডাকলেন, আমার দিক থেকে উত্তর ছিল স্রেফ একটিই।” আট বছর বয়সে লেস্টারের একাডেমিতে যোগ দিয়েছিলেন হামজা। ক্লাবের যুব দল হয়ে মূল দলে অভিষেক হয় তার ২০১৫ সালে। পরে দুই দফায় ধারে খেলেছেন বার্টন অ্যালবিয়নে, এক দফায় ওয়াটফোর্ডে। এবার শুরু হচ্ছে ধারের নতুন অধ্যায়ের। শনিবার ডার্বি কাউন্টির বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে নতুন ক্লাবে অভিষেক হতে পারে তার।
লেস্টারের হয়ে হামজা খেলেছেন এখনও পর্যন্ত ৯১ ম্যাচ। বাংলাদেশের ফুটবলে গত কিছুদিন ধরেই তুমুল আলোচিত তিনি। ইংল্যান্ড অনূর্ধ্ব-২১ দলের হয়ে খেলা ফুটবলার গত মাসেই অনুমতি পেয়েছেন আন্তর্জাতিক ফুটবলে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করার। মার্চে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে মায়ের দেশের হয়ে অভিষেকও হতে পারে তার। হামজার মায়ের বাড়ি হবিগঞ্জ জেলার বাহুবলে। তার বাবা ক্যারিবিয়ান দেশ গ্রেনাডার নাগরিক। এক সময় তার বাবা-মায়ের ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। পরে তার মা বিয়ে করেন বাংলাদেশি একজনকেই। শৈশবে বেশ কবার বাংলাদেশে এসেছেন হামজা। জাতীয় দলের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ও গ্রেনাডা, দুই দেশকেই বেছে নেওয়ার সুযোগ ছিল তার। যদিও তার স্বপ্ন ছিল ইংল্যান্ডের জার্সি গায়ে আন্তর্জাতিক ফুটবল মাতানোর। তবে ক্যারিয়ারের এই পর্যায়ে এসে বুঝতে পেরেছেন, সেই স্বপ্ন এখন নাগালের বাইরে। শেষ পর্যন্ত তাই বেছে নিয়েছেন বাংলাদেশকে।