ঢাকা ০৬:১৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০১ অক্টোবর ২০২৫

লুটেরাদের হটিয়ে জাতীয় সরকার গঠন হবে : মির্জা ফখরুল

  • আপডেট সময় : ০২:৫০:৩৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩ ডিসেম্বর ২০২২
  • ১০৪ বার পড়া হয়েছে

রাজশাহী প্রতিনিধি : ‘একটি সুস্থ-সুন্দর-প্রেমময় পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে পরিবর্তনের কোনও বিকল্প নেই’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, ‘এই পরিবর্তনে সবাইকে জেগে উঠতে হবে। লুটেরাদের হটিয়ে জাতীয় সরকার গঠন করা হবে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আওয়ামী লীগ এখন আর কোনও রাজনৈতিক দল নয়। লুটেরাদের সরকারে পরিণত হয়েছে। এরা দেশের টাকা লুট করে বেগমপাড়া আর সেকেন্ড হোম গড়ে তুলছে। এই দানবীয় অনির্বাচিত সরকার অস্তিত্ব সংকটে পড়ে বিরোধীদলকে হামলা-মামলা-গুম-খুন দিয়ে নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টায় মেতেছে। কিন্তু পারেনি। এখন তারা ভয়ে আছে। আজ আমরা মানুষের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে নেমেছি।
গতকাল শনিবার রাজশাহীর মাদ্রাসা মাঠে বিভাগীয় গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। নিত্যপণ্য ও জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি এবং পুলিশের গুলিতে নেতাকর্মীদের মৃত্যুর প্রতিবাদ, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই সরকার পরিকল্পিতভাবে দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করেছে। রাজনীতির কাঠামোকে হত্যা করেছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের জন্য এই সরকার আন্দোলন করেছিল। কিন্তু তারা ক্ষমতায় এসে সেই পদ্ধতি বাতিল করেছে। কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া দেশে নির্বাচন হবে না। আন্দোলনের মাধ্যমে এই লুটেরা সরকারকে হটিয়ে জাতীয় সরকার গঠন করা হবে। এজন্য সবাইকে আন্দোলনে নামতে হবে।’
সমাবেশে উপস্থিত নেতাকর্মীদের গত তিন দিনের কষ্টের জন্য কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘কনকনে ঠান্ডা বাতাসের মধ্যে খেয়ে না খেয়ে কীসের ভালোবাসায়, কীসের তাগিদে আপনারা তিন দিন ধরে এখানে সময় কাটালেন? একটাই কারণ, আপনারা মুক্তি চান। সেই মুক্তির জন্য দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।’
রাজশাহীকে গণতন্ত্রের আন্দোলন-সংগ্রামের উর্বর ভূমি পরিচয় করিয়ে দিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘রাজশাহীর মাটি সংগ্রামের মাটি। পাশেই শুয়ে আছেন শাহমখদুম। ১৯৬৯ সালে আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে যখন আন্দোলন শুরু হয়েছিল, তখন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. শামসুজ্জোহা বুকের রক্ত দিয়েছিলেন। এরকম অনেকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন যুগ যুগ।’
দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থা ও লুটপাটের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই সরকারের আমলে ২৫ হাজার মানুষ কোটিপতি হয়েছে। ৩০ লাখ মানুষ আরও গরিব হয়েছে। এই সরকার কি ২৫ হাজার মানুষের? লুটপাটের সরকারকে বিদায় করতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের শাসনামলে আমাদের ৬০০ নেতাকর্মী গুম হয়েছে। এর মধ্যে পাবনার ঈশ্বরদীতে জাকারিয়া পিন্টুসহ ৯ জনের মৃত্যুদ- দিয়েছে তারা। ২৫ জনকে যাবজ্জীবন সাজা দিয়েছে। এটাই এই সরকারের চরিত্র। এভাবে তারা বিরোধীদলকে নির্মূল করতে চায়। তাতে কি নির্মূল হয়েছে? রাজশাহীর মানুষ কি ভয় পেয়েছে? পায়নি তো। আরও উত্তালে জেগে উঠেছে। এই লড়াইয়ে আমাদের জয়ী হতেই হবে।’
“কোথায় ১০ টাকার চাল, ঘরে ঘরে চাকরি” উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘হ্যাঁ চাকরি দিয়েছে। নিজেদের লোকদের দিয়েছে। সেখানেও ২০ লাখ টাকা করে দিতে হয়েছে চাকরিপ্রার্থীদের।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘কাটাছেঁড়া সংবিধানের আইন মেনে সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না বিএনপি। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই নির্বাচন দিতে হবে। অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী সরকার বিএনপিকে ভয় পায়। ভয় পায় নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতে। কিন্তু দেশ ও দেশের মানুষকে রক্ষার পাশাপাশি সরকারের দুঃশাসন বন্ধ করা, নিত্যপণ্যের দাম কমিয়ে দেশকে স্থিতিশীল করা সর্বোপরি দেশে গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠিত করতে তারেক জিয়ার নির্দেশে বিএনপি যে আন্দোলন শুরু করেছে, সেটি বানচালে সব রকম চেষ্টা করছে সরকার। এজন্য তারা নানা কূটকৌশলের আশ্রয় নিচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপি আন্দোলনের মাধ্যমে খালেদা জিয়ার মুক্তি, তারেক জিয়াকে দেশে ফিরিয়ে আনাসহ দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় বদ্ধপরিকর। এজন্য দেশের বিভাগীয় আন্দোলন শেষে আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকার সম্মেলনকেও সফল করতে হবে।’
সমাবেশে প্রধান বক্তা ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। এতে বক্তব্য রাখেন সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর আসনের এমপি হারুন অর রশিদ, বিএনপির রাজশাহী বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন মহানগর বিএনপির সভাপতি এরশাদ আলী ঈশা।
সমাবেশে দফায় দফায় মারামারি: রাজশাহীতে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশে দফয় দফায় মারামারির ঘটনা ঘটেছে। শনিবার সমাবেশ চলাকালে ও সমাবেশ শেষে বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সমাবেশে বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) নাদিম মোস্তফার বক্তব্য চলাকালে সমাবেশস্থলে বসাকে কেন্দ্র করে দুই গ্রুপের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটে। এসময় নেতাকর্মীরা একে অন্যের দিকে লাঠি, ফেস্টুন, পানির বোতল ছোড়াছুড়ি করতে থাকেন। পরে অবশ্য মঞ্চে থাকা নেতাদের কথায় তারা শান্ত হয়ে বসেন। তবে সমাবেশ শেষ হওয়ার পর আবার ওই দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। এসময়ও নেতাকর্মীরা লাঠি, ফেস্টুন নিয়ে একে অন্যের সঙ্গে মারামারিতে জড়িয়ে পড়েন। পরে পুলিশ পরিস্থিতি শান্ত করে। এ বিষয়ে রাজশাহী বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশের অহ্বায়ক ও কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বলেন, মারামারি হয়েছে। আমি যেটুকু শুনেছি, সমাবেশ চলাকালে বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট শফিকুল হক মিলনের লোকজনের সঙ্গে ঝামেলা হয়। পরে সেই রাগ থেকেই আবার সমাবেশ শেষ মারামারি হয়েছে বলে শুনেছি। এর বেশি কিছু জানি না।
‘মিডিয়া কার্ডে’ খালেদা-তারেকের ছবি নিয়ে সাংবাদিকদের আপত্তি: রাজশাহীতে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশের সংবাদ সংগ্রহ করতে যাওয়া সাংবাদিকদের জন্য বিশেষ ‘মিডিয়া কার্ড’ ইস্যু করেছে বিএনপি। তবে কার্ডে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, দলের চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ছবি আছে। এ নিয়ে আপত্তি জানিয়ে মিডিয়া কার্ড বর্জন করেছেন রাজশাহীর সাংবাদিকেরা। এ নিয়ে রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে বিবৃতি পাঠানো হয়েছে। সমাবেশের মিডিয়া উপকমিটির সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন ও সদস্যসচিব আতিকুর রহমানের সই রয়েছে এই কার্ডে। গতকাল শুক্রবার বিকেলে রাজশাহী নগরের একটি হোটেলের সম্মেলন কক্ষে বসে এই কার্ড বিতরণ করা হয়। বিএনপির এই সমাবেশের সংবাদ সংগ্রহের বিষয়ে সম্প্রতি বিএনপির মিডিয়া উপকমিটি রাজশাহীর সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। সেখানেই সাংবাদিকদের আলাদা মিডিয়া কার্ড ইস্যু করার সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি, যাতে স্বেচ্ছাসেবকেরা সাংবাদিকদের চিনতে পারেন এবং সমাবেশে দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে কোনো অসুবিধা না হয়।
গত শুক্রবার রাতে রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি রফিকুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক তানজিমুল হকের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘সমাবেশের সংবাদ সংগ্রহের জন্য গণমাধ্যমকর্মীদের মধ্যে বিএনপির দেওয়া মিডিয়া কার্ডে সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামিসহ কারাবন্দি এক আসামির ছবি ছাপানো হয়েছে। এ কারণে মিডিয়া কার্ডটি আরইউজের পক্ষ থেকে বর্জনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’ বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘আমরা গণমাধ্যমকর্মীরা কেউ সমাবেশস্থলে এই কার্ড গলায় ঝুলিয়ে বা সঙ্গে নিয়ে যাব না। সমাবেশে যদি ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়, তাহলে আমরা সমাবেশ বয়কট করব।’
পরে অবশ্য বিএনপির পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের বিএনপির ইস্যু করা কার্ড না নিয়ে আসতে বলা হয়েছে। এ নিয়ে রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি রফিকুল ইসলাম বলেন, তাঁরা আপত্তি তোলার পর বিএনপির পক্ষ থেকে তাঁদের জানানো হয়েছে, সাংবাদিকদের এই ধরনের কার্ড ঝোলানোর দরকার নেই। তাঁরা কার্ড ছাড়াই প্রবেশ করতে পারবেন। এ বিষয়ে কথা বলার জন্য বিএনপির নেতাদের কল করা হলেও কেউ ফোন ধরেননি।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

র‌্যাবের ওপর হামলা করে সন্ত্রাসী সাহেব আলীকে ছিনিয়ে নিলো সহযোগীরা

লুটেরাদের হটিয়ে জাতীয় সরকার গঠন হবে : মির্জা ফখরুল

আপডেট সময় : ০২:৫০:৩৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩ ডিসেম্বর ২০২২

রাজশাহী প্রতিনিধি : ‘একটি সুস্থ-সুন্দর-প্রেমময় পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে পরিবর্তনের কোনও বিকল্প নেই’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, ‘এই পরিবর্তনে সবাইকে জেগে উঠতে হবে। লুটেরাদের হটিয়ে জাতীয় সরকার গঠন করা হবে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আওয়ামী লীগ এখন আর কোনও রাজনৈতিক দল নয়। লুটেরাদের সরকারে পরিণত হয়েছে। এরা দেশের টাকা লুট করে বেগমপাড়া আর সেকেন্ড হোম গড়ে তুলছে। এই দানবীয় অনির্বাচিত সরকার অস্তিত্ব সংকটে পড়ে বিরোধীদলকে হামলা-মামলা-গুম-খুন দিয়ে নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টায় মেতেছে। কিন্তু পারেনি। এখন তারা ভয়ে আছে। আজ আমরা মানুষের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে নেমেছি।
গতকাল শনিবার রাজশাহীর মাদ্রাসা মাঠে বিভাগীয় গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। নিত্যপণ্য ও জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি এবং পুলিশের গুলিতে নেতাকর্মীদের মৃত্যুর প্রতিবাদ, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই সরকার পরিকল্পিতভাবে দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করেছে। রাজনীতির কাঠামোকে হত্যা করেছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের জন্য এই সরকার আন্দোলন করেছিল। কিন্তু তারা ক্ষমতায় এসে সেই পদ্ধতি বাতিল করেছে। কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া দেশে নির্বাচন হবে না। আন্দোলনের মাধ্যমে এই লুটেরা সরকারকে হটিয়ে জাতীয় সরকার গঠন করা হবে। এজন্য সবাইকে আন্দোলনে নামতে হবে।’
সমাবেশে উপস্থিত নেতাকর্মীদের গত তিন দিনের কষ্টের জন্য কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘কনকনে ঠান্ডা বাতাসের মধ্যে খেয়ে না খেয়ে কীসের ভালোবাসায়, কীসের তাগিদে আপনারা তিন দিন ধরে এখানে সময় কাটালেন? একটাই কারণ, আপনারা মুক্তি চান। সেই মুক্তির জন্য দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।’
রাজশাহীকে গণতন্ত্রের আন্দোলন-সংগ্রামের উর্বর ভূমি পরিচয় করিয়ে দিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘রাজশাহীর মাটি সংগ্রামের মাটি। পাশেই শুয়ে আছেন শাহমখদুম। ১৯৬৯ সালে আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে যখন আন্দোলন শুরু হয়েছিল, তখন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. শামসুজ্জোহা বুকের রক্ত দিয়েছিলেন। এরকম অনেকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন যুগ যুগ।’
দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থা ও লুটপাটের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই সরকারের আমলে ২৫ হাজার মানুষ কোটিপতি হয়েছে। ৩০ লাখ মানুষ আরও গরিব হয়েছে। এই সরকার কি ২৫ হাজার মানুষের? লুটপাটের সরকারকে বিদায় করতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের শাসনামলে আমাদের ৬০০ নেতাকর্মী গুম হয়েছে। এর মধ্যে পাবনার ঈশ্বরদীতে জাকারিয়া পিন্টুসহ ৯ জনের মৃত্যুদ- দিয়েছে তারা। ২৫ জনকে যাবজ্জীবন সাজা দিয়েছে। এটাই এই সরকারের চরিত্র। এভাবে তারা বিরোধীদলকে নির্মূল করতে চায়। তাতে কি নির্মূল হয়েছে? রাজশাহীর মানুষ কি ভয় পেয়েছে? পায়নি তো। আরও উত্তালে জেগে উঠেছে। এই লড়াইয়ে আমাদের জয়ী হতেই হবে।’
“কোথায় ১০ টাকার চাল, ঘরে ঘরে চাকরি” উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘হ্যাঁ চাকরি দিয়েছে। নিজেদের লোকদের দিয়েছে। সেখানেও ২০ লাখ টাকা করে দিতে হয়েছে চাকরিপ্রার্থীদের।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘কাটাছেঁড়া সংবিধানের আইন মেনে সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না বিএনপি। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই নির্বাচন দিতে হবে। অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী সরকার বিএনপিকে ভয় পায়। ভয় পায় নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতে। কিন্তু দেশ ও দেশের মানুষকে রক্ষার পাশাপাশি সরকারের দুঃশাসন বন্ধ করা, নিত্যপণ্যের দাম কমিয়ে দেশকে স্থিতিশীল করা সর্বোপরি দেশে গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠিত করতে তারেক জিয়ার নির্দেশে বিএনপি যে আন্দোলন শুরু করেছে, সেটি বানচালে সব রকম চেষ্টা করছে সরকার। এজন্য তারা নানা কূটকৌশলের আশ্রয় নিচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপি আন্দোলনের মাধ্যমে খালেদা জিয়ার মুক্তি, তারেক জিয়াকে দেশে ফিরিয়ে আনাসহ দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় বদ্ধপরিকর। এজন্য দেশের বিভাগীয় আন্দোলন শেষে আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকার সম্মেলনকেও সফল করতে হবে।’
সমাবেশে প্রধান বক্তা ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। এতে বক্তব্য রাখেন সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর আসনের এমপি হারুন অর রশিদ, বিএনপির রাজশাহী বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন মহানগর বিএনপির সভাপতি এরশাদ আলী ঈশা।
সমাবেশে দফায় দফায় মারামারি: রাজশাহীতে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশে দফয় দফায় মারামারির ঘটনা ঘটেছে। শনিবার সমাবেশ চলাকালে ও সমাবেশ শেষে বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সমাবেশে বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) নাদিম মোস্তফার বক্তব্য চলাকালে সমাবেশস্থলে বসাকে কেন্দ্র করে দুই গ্রুপের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটে। এসময় নেতাকর্মীরা একে অন্যের দিকে লাঠি, ফেস্টুন, পানির বোতল ছোড়াছুড়ি করতে থাকেন। পরে অবশ্য মঞ্চে থাকা নেতাদের কথায় তারা শান্ত হয়ে বসেন। তবে সমাবেশ শেষ হওয়ার পর আবার ওই দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। এসময়ও নেতাকর্মীরা লাঠি, ফেস্টুন নিয়ে একে অন্যের সঙ্গে মারামারিতে জড়িয়ে পড়েন। পরে পুলিশ পরিস্থিতি শান্ত করে। এ বিষয়ে রাজশাহী বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশের অহ্বায়ক ও কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বলেন, মারামারি হয়েছে। আমি যেটুকু শুনেছি, সমাবেশ চলাকালে বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট শফিকুল হক মিলনের লোকজনের সঙ্গে ঝামেলা হয়। পরে সেই রাগ থেকেই আবার সমাবেশ শেষ মারামারি হয়েছে বলে শুনেছি। এর বেশি কিছু জানি না।
‘মিডিয়া কার্ডে’ খালেদা-তারেকের ছবি নিয়ে সাংবাদিকদের আপত্তি: রাজশাহীতে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশের সংবাদ সংগ্রহ করতে যাওয়া সাংবাদিকদের জন্য বিশেষ ‘মিডিয়া কার্ড’ ইস্যু করেছে বিএনপি। তবে কার্ডে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, দলের চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ছবি আছে। এ নিয়ে আপত্তি জানিয়ে মিডিয়া কার্ড বর্জন করেছেন রাজশাহীর সাংবাদিকেরা। এ নিয়ে রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে বিবৃতি পাঠানো হয়েছে। সমাবেশের মিডিয়া উপকমিটির সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন ও সদস্যসচিব আতিকুর রহমানের সই রয়েছে এই কার্ডে। গতকাল শুক্রবার বিকেলে রাজশাহী নগরের একটি হোটেলের সম্মেলন কক্ষে বসে এই কার্ড বিতরণ করা হয়। বিএনপির এই সমাবেশের সংবাদ সংগ্রহের বিষয়ে সম্প্রতি বিএনপির মিডিয়া উপকমিটি রাজশাহীর সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। সেখানেই সাংবাদিকদের আলাদা মিডিয়া কার্ড ইস্যু করার সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি, যাতে স্বেচ্ছাসেবকেরা সাংবাদিকদের চিনতে পারেন এবং সমাবেশে দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে কোনো অসুবিধা না হয়।
গত শুক্রবার রাতে রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি রফিকুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক তানজিমুল হকের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘সমাবেশের সংবাদ সংগ্রহের জন্য গণমাধ্যমকর্মীদের মধ্যে বিএনপির দেওয়া মিডিয়া কার্ডে সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামিসহ কারাবন্দি এক আসামির ছবি ছাপানো হয়েছে। এ কারণে মিডিয়া কার্ডটি আরইউজের পক্ষ থেকে বর্জনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’ বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘আমরা গণমাধ্যমকর্মীরা কেউ সমাবেশস্থলে এই কার্ড গলায় ঝুলিয়ে বা সঙ্গে নিয়ে যাব না। সমাবেশে যদি ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়, তাহলে আমরা সমাবেশ বয়কট করব।’
পরে অবশ্য বিএনপির পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের বিএনপির ইস্যু করা কার্ড না নিয়ে আসতে বলা হয়েছে। এ নিয়ে রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি রফিকুল ইসলাম বলেন, তাঁরা আপত্তি তোলার পর বিএনপির পক্ষ থেকে তাঁদের জানানো হয়েছে, সাংবাদিকদের এই ধরনের কার্ড ঝোলানোর দরকার নেই। তাঁরা কার্ড ছাড়াই প্রবেশ করতে পারবেন। এ বিষয়ে কথা বলার জন্য বিএনপির নেতাদের কল করা হলেও কেউ ফোন ধরেননি।