ঢাকা ০৭:১৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৪ মে ২০২৫

লিচুর উৎপাদনে স্বাবলম্বী হচ্ছে কৃষক

  • আপডেট সময় : ১২:৩৭:৩০ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৫ মে ২০২৪
  • ৭০ বার পড়া হয়েছে

রাজবাড়ী সংবাদদাতা : রাজবাড়ীতে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে লিচু। যা উত্তরাঞ্চলের লিচুর চেয়েও সুস্বাদু। জেলার শতাধিক চাষি সবজি খেতে লিচু গাছ রোপণ করে উন্নত জাতের লিচু উৎপাদন করে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বীও হচ্ছেন। চলতি মৌসুমে অতিরিক্ত দাবদাহের কারণে লিচুর মুকুল কিছুটা নষ্ট হলেও আগেই পেকে গেছে লিচু। লিচুর রঙে রঙিন হয়ে উঠেছে প্রতিটি বাগান। এ জেলায় কদমি, মোজাফফরপুরী, চায়না-৩, বোম্বাই এলাচি ও পাতি জাতের লিচুসহ পাঁচ ধরনের লিচুর চাষ হয়। ভালো ফলন ও দাম পাওয়ায় অন্যান্য ফসলের চাষ বাদ দিয়ে চাষিরা এখন লিচু চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। প্রতি বছর এক একটি বাগান ৪-৫ লাখ টাকায় বিক্রি হয়। লিচু চাষে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়া যায় বিধায় কোথাও চাষিরা একটু খালি জায়গা পেলেই সেখানে তৈরি করছেন লিচু বাগান। জানা যায়, জেলায় বিভিন্ন জাতের প্রায় ৮০টি লিচু বাগান আছে। প্রায় একশ হেক্টর জমিতে লিচু বাগানগুলো তৈরি করেছেন স্থানীয় চাষিরা। চলতি বছর অতিরিক্ত দাবদাহে লিচুর মুকুল নষ্ট হওয়ার পরও বেশ ভালো ফলন হয়েছে। এ জেলায় উৎপাদিত লিচু স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে চলে যাচ্ছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। লিচু চাষিদের ধারণা প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে জেলায় এবার ৩৬০ টন লিচু উৎপাদন হবে। এ থেকে ৩০ থেকে ৩২ কোটি টাকা আয় হতে পারে। তাদের মতে, কোনো প্রকার রাসায়নিক বিষ মুক্ত রাজবাড়ীর লিচু আকারে বড় ও রসালো আর রং লাল টকটকে হওয়ায় চাহিদাও ভালো। ভৌগোলিক কারণে রাজবাড়ীর লিচু অন্য জেলার আগেই বাজারজাত করা যায়। দাম ভালো পাওয়ার কারণে রাজবাড়ীতে ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে লিচু চাষ। এ জেলার লিচুর কদর দিনাজপুরের লিচুর মতোই বলে জানান তারা। এই জেলায় উৎপাদিত কদমি ও বোম্বাই লিচুর বেশ কদর রয়েছে। মাংসল, রসালো, সুমিষ্ট, ছোট বিচি ও টকটকে লাল হওয়ায় এই লিচু বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ লিচুর তালিকাতে স্থান পায়। রাজবাড়ী সদরের চন্দনি ইউনিয়নের আদর্শ কৃষক ও জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য মো. আলাউদ্দিন শেখের এক একর জমির লিচু বাগানের প্রত্যেকটি গাছে ঝুলছে থোকায় থোকায় ধরে থাকা লিচু। প্রতিটি গাছেই প্রায় ১০ হাজার পিস করে লিচু ধরেছে বলে ধারণা করছেন তিনি। এই বাগান করে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হয়েছেন তিনি। তার দেখে অনেকেই লিচু চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। সরেজমিনে চন্দনি ইউনিয়নের ঘোরপালান গ্রামে লিচু চাষি আলাউদ্দিনের লিচু বাগানে গিয়ে দেখা যায়, তার প্রতিটি গাছে থোকায় থোকায় ধরে আছে লাল রঙের পাকা লিচু। বাগানেই লিচু কিনতে এসেছেন অনেক ক্রেতা ও ব্যবসায়ী। এ এলাকার মাটি ও আবহাওয়া ভালো হওয়ায় অনেকেই লিচুর কলম চারা রোপণ করে প্রথম বছরেই লাভবান হয়েছেন। লিচু চাষিরা জানান, এ বছর দেশের আবহাওয়া লিচু চাষের উপযোগী হওয়ার ভালো ফলন হয়েছে। ফলে এ বছর লোকসানের হাত থেকে রক্ষা পাবেন। রাজবাড়ী জেলা সদরের চন্দনি গ্রামের ৬৪টি বছর বয়সী আব্দুল হান্নান। তিন বছর আগে নিজের ২ একর জমিতে সাড়ে তিনশ গাছ রোপণ করেছেন। সফলতাও পেয়েছেন। তার বাগান ১০ লাখ টাকায় বিক্রি হয়েছে বলে জানিয়েছেন। রাজবাড়ী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ ও সদর উপজেলা কৃষি অফিসার মো. জনি খান জানান, এ বছর খরায় লিচুর প্রচুর মুকুল ঝরে পড়লেও যা ছিল তাতেই ফলন ভালো হয়েছে। রাজবাড়ীর মাটি ও আবহাওয়া লিচু চাষের জন্য উযোগী। তাই চাষীরা আগ্রহী হচ্ছেন।
এ কৃষি কর্মকর্তা বলেন, আমরা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে নিয়মিত লিচু চাষিদের নানাবিধ প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দিচ্ছি। আশা করছি আগামীতে এই অঞ্চলে লিচুর চাষ আরও বাড়বে। এদিকে বাজার ঘুরে দেখা যায়, এ বছর একশ কদমি লিচু বিক্রি হচ্ছে ৫৫০-৬০০ টাকায়। পাতি লিচু বিক্রি হচ্ছে ৪০০-৪৫০ টাকায়। অন্যান্য লিচুও ভালো দামে বিক্রি হচ্ছে। আর এতে খুশি স্থানীয় কৃষকেরাও।

 

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

প্রধান উপদেষ্টা হতাশ-ক্ষুব্ধ, ‘পদত্যাগ’ নিয়ে আলোচনা

লিচুর উৎপাদনে স্বাবলম্বী হচ্ছে কৃষক

আপডেট সময় : ১২:৩৭:৩০ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৫ মে ২০২৪

রাজবাড়ী সংবাদদাতা : রাজবাড়ীতে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে লিচু। যা উত্তরাঞ্চলের লিচুর চেয়েও সুস্বাদু। জেলার শতাধিক চাষি সবজি খেতে লিচু গাছ রোপণ করে উন্নত জাতের লিচু উৎপাদন করে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বীও হচ্ছেন। চলতি মৌসুমে অতিরিক্ত দাবদাহের কারণে লিচুর মুকুল কিছুটা নষ্ট হলেও আগেই পেকে গেছে লিচু। লিচুর রঙে রঙিন হয়ে উঠেছে প্রতিটি বাগান। এ জেলায় কদমি, মোজাফফরপুরী, চায়না-৩, বোম্বাই এলাচি ও পাতি জাতের লিচুসহ পাঁচ ধরনের লিচুর চাষ হয়। ভালো ফলন ও দাম পাওয়ায় অন্যান্য ফসলের চাষ বাদ দিয়ে চাষিরা এখন লিচু চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। প্রতি বছর এক একটি বাগান ৪-৫ লাখ টাকায় বিক্রি হয়। লিচু চাষে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়া যায় বিধায় কোথাও চাষিরা একটু খালি জায়গা পেলেই সেখানে তৈরি করছেন লিচু বাগান। জানা যায়, জেলায় বিভিন্ন জাতের প্রায় ৮০টি লিচু বাগান আছে। প্রায় একশ হেক্টর জমিতে লিচু বাগানগুলো তৈরি করেছেন স্থানীয় চাষিরা। চলতি বছর অতিরিক্ত দাবদাহে লিচুর মুকুল নষ্ট হওয়ার পরও বেশ ভালো ফলন হয়েছে। এ জেলায় উৎপাদিত লিচু স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে চলে যাচ্ছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। লিচু চাষিদের ধারণা প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে জেলায় এবার ৩৬০ টন লিচু উৎপাদন হবে। এ থেকে ৩০ থেকে ৩২ কোটি টাকা আয় হতে পারে। তাদের মতে, কোনো প্রকার রাসায়নিক বিষ মুক্ত রাজবাড়ীর লিচু আকারে বড় ও রসালো আর রং লাল টকটকে হওয়ায় চাহিদাও ভালো। ভৌগোলিক কারণে রাজবাড়ীর লিচু অন্য জেলার আগেই বাজারজাত করা যায়। দাম ভালো পাওয়ার কারণে রাজবাড়ীতে ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে লিচু চাষ। এ জেলার লিচুর কদর দিনাজপুরের লিচুর মতোই বলে জানান তারা। এই জেলায় উৎপাদিত কদমি ও বোম্বাই লিচুর বেশ কদর রয়েছে। মাংসল, রসালো, সুমিষ্ট, ছোট বিচি ও টকটকে লাল হওয়ায় এই লিচু বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ লিচুর তালিকাতে স্থান পায়। রাজবাড়ী সদরের চন্দনি ইউনিয়নের আদর্শ কৃষক ও জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য মো. আলাউদ্দিন শেখের এক একর জমির লিচু বাগানের প্রত্যেকটি গাছে ঝুলছে থোকায় থোকায় ধরে থাকা লিচু। প্রতিটি গাছেই প্রায় ১০ হাজার পিস করে লিচু ধরেছে বলে ধারণা করছেন তিনি। এই বাগান করে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হয়েছেন তিনি। তার দেখে অনেকেই লিচু চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। সরেজমিনে চন্দনি ইউনিয়নের ঘোরপালান গ্রামে লিচু চাষি আলাউদ্দিনের লিচু বাগানে গিয়ে দেখা যায়, তার প্রতিটি গাছে থোকায় থোকায় ধরে আছে লাল রঙের পাকা লিচু। বাগানেই লিচু কিনতে এসেছেন অনেক ক্রেতা ও ব্যবসায়ী। এ এলাকার মাটি ও আবহাওয়া ভালো হওয়ায় অনেকেই লিচুর কলম চারা রোপণ করে প্রথম বছরেই লাভবান হয়েছেন। লিচু চাষিরা জানান, এ বছর দেশের আবহাওয়া লিচু চাষের উপযোগী হওয়ার ভালো ফলন হয়েছে। ফলে এ বছর লোকসানের হাত থেকে রক্ষা পাবেন। রাজবাড়ী জেলা সদরের চন্দনি গ্রামের ৬৪টি বছর বয়সী আব্দুল হান্নান। তিন বছর আগে নিজের ২ একর জমিতে সাড়ে তিনশ গাছ রোপণ করেছেন। সফলতাও পেয়েছেন। তার বাগান ১০ লাখ টাকায় বিক্রি হয়েছে বলে জানিয়েছেন। রাজবাড়ী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ ও সদর উপজেলা কৃষি অফিসার মো. জনি খান জানান, এ বছর খরায় লিচুর প্রচুর মুকুল ঝরে পড়লেও যা ছিল তাতেই ফলন ভালো হয়েছে। রাজবাড়ীর মাটি ও আবহাওয়া লিচু চাষের জন্য উযোগী। তাই চাষীরা আগ্রহী হচ্ছেন।
এ কৃষি কর্মকর্তা বলেন, আমরা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে নিয়মিত লিচু চাষিদের নানাবিধ প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দিচ্ছি। আশা করছি আগামীতে এই অঞ্চলে লিচুর চাষ আরও বাড়বে। এদিকে বাজার ঘুরে দেখা যায়, এ বছর একশ কদমি লিচু বিক্রি হচ্ছে ৫৫০-৬০০ টাকায়। পাতি লিচু বিক্রি হচ্ছে ৪০০-৪৫০ টাকায়। অন্যান্য লিচুও ভালো দামে বিক্রি হচ্ছে। আর এতে খুশি স্থানীয় কৃষকেরাও।