ঢাকা ১১:৩৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৩০ মে ২০২৫

লাল মরিচের চাষ কমলেও ভালো দামে খুশি কৃষকেরা

  • আপডেট সময় : ১২:২১:১০ অপরাহ্ন, শনিবার, ২ মার্চ ২০২৪
  • ১১০ বার পড়া হয়েছে

বগুড়া প্রতিনিধি: বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলায় কৃষকেরা লাল মরিচ প্রক্রিয়াজাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। বাজারে সবকিছুর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মজুরি ও অন্যান্য জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় উৎপাদন খরচও বেড়েছে। লাভ বেশি হওয়ায় হাইব্রিড মরিচ চাষ বাড়লেও কমেছে দেশি লাল মরিচের আবাদ। এরপরও ভালো দাম পাওয়ায় খুশি কৃষকেরা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উত্তরাঞ্চলের প্রাণকেন্দ্র বগুড়ার লাল মরিচ দেশসেরা। এর মধ্যে যমুনা ও বাঙালি নদীবিধৌত সারিয়াকান্দি উপজেলার বেলে-দোআঁশ মাটিতে মরিচ বেশি উৎপাদন হয়। প্রাচীনকাল থেকে বেশি মরিচ উৎপাদন হয় বলে সারিয়াকান্দি উপজেলা লাল মরিচের জন্য বিখ্যাত। কৃষকেরা এখন মাঠে মাঠে লাল মরিচ উত্তোলন, পরিবহন করে বাড়িতে নেওয়া, বাছাই করে উঠান, চাল, চাতাল বা খোলা স্থানে শুকাতে দিচ্ছেন। শুকিয়ে যাওয়ার পর লাল মরিচ আবারও বাছাই করে বাজারজাত করতে ব্যস্ত সময় পার করবেন তারা। যমুনা এবং বাঙালি নদীর পানি নেমে যাওয়ার পরপরই জমিতে জো (কাঙ্ক্ষিত পানি থাকা) আসলে কৃষকেরা দেশি মরিচের বীজ বপন বা হাইব্রিড মরিচের চারা রোপণ করেন। বিগত বছরগুলোতে দেশি মরিচে লাগাতার লোকসানের জন্য কৃষকেরা হাইব্রিড জাতের মরিচ বেশি চাষ করেছেন। এ মরিচ আগাম ধরে ও দেশি মরিচের তুলনায় বেশি উৎপাদন হয়। এ ছাড়া কাঁচা অবস্থাতেই মরিচ বাজারজাত করে বেশি মুনাফা হয়। তাই কৃষকেরা দিন দিন হাইব্রিড মরিচ চাষের দিকে ঝুঁকছেন। ফলে এ উপজেলায় কমেছে দেশি মরিচের আবাদ।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এবং শ্রমিকের মজুরি বেশি, উত্তোলনে খরচ বৃদ্ধি, নদীতে নাব্যতা না থাকায় পরিবহন খরচ বৃদ্ধিসহ নানা কারণে এবার লাল মরিচের উৎপাদন খরচ বেড়েছে। স্থানীয় আড়তদারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত বছরের তুলনায় এবার মরিচের দাম তুলনামূলক একটু কম। গত বছর যেখানে লাল টোপা মরিচ প্রতি মণ তিন হাজারের বেশি দামে বিক্রি হয়েছে। এ বছর তা বিক্রি হচ্ছে দুই হাজারের কিছু বেশিতে। তবে কৃষকেরা জানিয়েছেন, এ দামে বিক্রি করেও তারা খুশি। এর চেয়ে দাম আরও কমলে তারা ব্যাপকভাবে লোকসানের মুখে পড়বেন। সারিয়াকান্দি সদর ইউনিয়নের পারতিতপরল গ্রামের মরিচচাষি লেবু মিয়া জানান, দেশি জাতের মরিচ চাষ ছেড়ে তিনি এ বছর আট বিঘা জমিতে হাইব্রিড জাতের মরিচ চাষ করেছেন। এতে তার খরচ হয়েছে তিন লাখ টাকা। এ পর্যন্ত তিনি চার লাখ টাকার মরিচ বিক্রি করেছেন। তবে তিনি কিছু জমিতে দেশি জাতের মরিচের চাষ করেছেন। সেখান থেকে লাল মরিচ উত্তোলন করে আঙিনায় শুকাতে দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘চার মণ ১০ কেজি লাল টোপা মরিচ শুকিয়ে এক মণ শুকনা মরিচ পাওয়া যায়। এ বছর মরিচ চাষে খরচ বেশি হয়েছে। তাই বর্তমান বাজারদরে খুবই সামান্য লাভ হচ্ছে।’ মরিচের আড়তদার রফিকুল ইসলাম জানান, সোমবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) সারিয়াকান্দি ঘাটপার আড়ত লাল টোপা মরিচ দুই হাজার থেকে ২২০০ টাকা, কাঁচা মরিচ ১১০০ টাকা থেকে ১২০০ টাকা এবং শুকনা মরিচ ১২ হাজার থেকে ১৩ হাজার টাকা মণ পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে।
সারিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, এ বছর মরিচ চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৩৩০০ হেক্টর জমি। উৎপাদন হয়েছে ৩৩১০ হেক্টর জমিতে। তার মধ্যে হাইব্রিড ২১৫০ হেক্টর এবং দেশি উফসি জাতের ১১৬০ হেক্টর। উৎপাদন হেক্টরপ্রতি ৩ মেট্রিক টন। গত বছর ৩১৫০ হেক্টর জমিতে মরিচের চাষ হয়েছিল। সারিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল হালিম বলেন, ‘মরিচের জন্য বিখ্যাত সারিয়াকান্দিতে বরাবরের মতো এ বছরও আবাদ বেশ ভালো হয়েছে। বাজারে ভালো দাম পাওয়ায় কৃষকেরা লাভবান হচ্ছেন। মরিচ চাষের জন্য কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান এবং সহযোগিতা অব্যাহত রাখা হয়েছে।’

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

লাল মরিচের চাষ কমলেও ভালো দামে খুশি কৃষকেরা

আপডেট সময় : ১২:২১:১০ অপরাহ্ন, শনিবার, ২ মার্চ ২০২৪

বগুড়া প্রতিনিধি: বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলায় কৃষকেরা লাল মরিচ প্রক্রিয়াজাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। বাজারে সবকিছুর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মজুরি ও অন্যান্য জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় উৎপাদন খরচও বেড়েছে। লাভ বেশি হওয়ায় হাইব্রিড মরিচ চাষ বাড়লেও কমেছে দেশি লাল মরিচের আবাদ। এরপরও ভালো দাম পাওয়ায় খুশি কৃষকেরা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উত্তরাঞ্চলের প্রাণকেন্দ্র বগুড়ার লাল মরিচ দেশসেরা। এর মধ্যে যমুনা ও বাঙালি নদীবিধৌত সারিয়াকান্দি উপজেলার বেলে-দোআঁশ মাটিতে মরিচ বেশি উৎপাদন হয়। প্রাচীনকাল থেকে বেশি মরিচ উৎপাদন হয় বলে সারিয়াকান্দি উপজেলা লাল মরিচের জন্য বিখ্যাত। কৃষকেরা এখন মাঠে মাঠে লাল মরিচ উত্তোলন, পরিবহন করে বাড়িতে নেওয়া, বাছাই করে উঠান, চাল, চাতাল বা খোলা স্থানে শুকাতে দিচ্ছেন। শুকিয়ে যাওয়ার পর লাল মরিচ আবারও বাছাই করে বাজারজাত করতে ব্যস্ত সময় পার করবেন তারা। যমুনা এবং বাঙালি নদীর পানি নেমে যাওয়ার পরপরই জমিতে জো (কাঙ্ক্ষিত পানি থাকা) আসলে কৃষকেরা দেশি মরিচের বীজ বপন বা হাইব্রিড মরিচের চারা রোপণ করেন। বিগত বছরগুলোতে দেশি মরিচে লাগাতার লোকসানের জন্য কৃষকেরা হাইব্রিড জাতের মরিচ বেশি চাষ করেছেন। এ মরিচ আগাম ধরে ও দেশি মরিচের তুলনায় বেশি উৎপাদন হয়। এ ছাড়া কাঁচা অবস্থাতেই মরিচ বাজারজাত করে বেশি মুনাফা হয়। তাই কৃষকেরা দিন দিন হাইব্রিড মরিচ চাষের দিকে ঝুঁকছেন। ফলে এ উপজেলায় কমেছে দেশি মরিচের আবাদ।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এবং শ্রমিকের মজুরি বেশি, উত্তোলনে খরচ বৃদ্ধি, নদীতে নাব্যতা না থাকায় পরিবহন খরচ বৃদ্ধিসহ নানা কারণে এবার লাল মরিচের উৎপাদন খরচ বেড়েছে। স্থানীয় আড়তদারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত বছরের তুলনায় এবার মরিচের দাম তুলনামূলক একটু কম। গত বছর যেখানে লাল টোপা মরিচ প্রতি মণ তিন হাজারের বেশি দামে বিক্রি হয়েছে। এ বছর তা বিক্রি হচ্ছে দুই হাজারের কিছু বেশিতে। তবে কৃষকেরা জানিয়েছেন, এ দামে বিক্রি করেও তারা খুশি। এর চেয়ে দাম আরও কমলে তারা ব্যাপকভাবে লোকসানের মুখে পড়বেন। সারিয়াকান্দি সদর ইউনিয়নের পারতিতপরল গ্রামের মরিচচাষি লেবু মিয়া জানান, দেশি জাতের মরিচ চাষ ছেড়ে তিনি এ বছর আট বিঘা জমিতে হাইব্রিড জাতের মরিচ চাষ করেছেন। এতে তার খরচ হয়েছে তিন লাখ টাকা। এ পর্যন্ত তিনি চার লাখ টাকার মরিচ বিক্রি করেছেন। তবে তিনি কিছু জমিতে দেশি জাতের মরিচের চাষ করেছেন। সেখান থেকে লাল মরিচ উত্তোলন করে আঙিনায় শুকাতে দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘চার মণ ১০ কেজি লাল টোপা মরিচ শুকিয়ে এক মণ শুকনা মরিচ পাওয়া যায়। এ বছর মরিচ চাষে খরচ বেশি হয়েছে। তাই বর্তমান বাজারদরে খুবই সামান্য লাভ হচ্ছে।’ মরিচের আড়তদার রফিকুল ইসলাম জানান, সোমবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) সারিয়াকান্দি ঘাটপার আড়ত লাল টোপা মরিচ দুই হাজার থেকে ২২০০ টাকা, কাঁচা মরিচ ১১০০ টাকা থেকে ১২০০ টাকা এবং শুকনা মরিচ ১২ হাজার থেকে ১৩ হাজার টাকা মণ পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে।
সারিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, এ বছর মরিচ চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৩৩০০ হেক্টর জমি। উৎপাদন হয়েছে ৩৩১০ হেক্টর জমিতে। তার মধ্যে হাইব্রিড ২১৫০ হেক্টর এবং দেশি উফসি জাতের ১১৬০ হেক্টর। উৎপাদন হেক্টরপ্রতি ৩ মেট্রিক টন। গত বছর ৩১৫০ হেক্টর জমিতে মরিচের চাষ হয়েছিল। সারিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল হালিম বলেন, ‘মরিচের জন্য বিখ্যাত সারিয়াকান্দিতে বরাবরের মতো এ বছরও আবাদ বেশ ভালো হয়েছে। বাজারে ভালো দাম পাওয়ায় কৃষকেরা লাভবান হচ্ছেন। মরিচ চাষের জন্য কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান এবং সহযোগিতা অব্যাহত রাখা হয়েছে।’