ঢাকা ০৩:১৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ০৮ অক্টোবর ২০২৫

লাল চন্দন ভেবে ভারত থেকে ভেসে আসা গাছের গুঁড়ি বিক্রির ধুম

  • আপডেট সময় : ০১:২৪:২১ অপরাহ্ন, বুধবার, ৮ অক্টোবর ২০২৫
  • ৩ বার পড়া হয়েছে

ছবি সংগৃহীত

কুড়িগ্রাম সংবাদদাতা: কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারী উপজেলায় কালজানি নদীর সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে পানিতে ভেসে এসেছে হাজার হাজার গাছের গুঁড়ি। এসব কাঠের বেশিরভাগই বাকল ও শিকড়বিহীন এবং লালচে রঙে হওয়ায় অনেকেই এগুলোকে ‘লাল চন্দন’ বলে ধরে নিচ্ছেন।

রোববার (৫ অক্টোবর) বিকেল থেকে ভূরুঙ্গামারী উপজেলার শিলখুড়ি ইউনিয়নের ঢলডাঙা ও শালঝোড় এলাকায় কালজানি নদীতে এসব কাঠ ভেসে আসতে শুরু করে। পরদিন নদীর স্রোতে গুঁড়িগুলো দুধকুমার হয়ে ব্রহ্মপুত্র নদ পর্যন্ত পৌঁছে যায়।

এতে ভূরুঙ্গামারী, নাগেশ্বরী, কুড়িগ্রাম সদর, উলিপুর ও চিলমারী উপজেলার শত শত মানুষ ভোর থেকেই নদীতে নেমে পড়ে। কেউ নৌকা, কেউ ভেলা, আবার কেউ টিউবের ভরসায় কাঠ ধরতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। নদীপাড়ে গড়ে ওঠে অস্থায়ী কাঠের হাট।

নাগেশ্বরীর দামালগ্রাম এলাকায় দেখা যায়, একেকটি গাছের গুঁড়ি ২০ হাজার থেকে ৩৫ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কোথাও দাম আরো বেশি। রায়গঞ্জ ইউনিয়নে একটি বড় লালচে গুঁড়ির দাম ধরা হয়েছে এক লাখ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত।

দামালগ্রামের আবদুল মোতালেব বলেন, ‘চারজন মিলে প্রায় ৫০ ফুটের মতো একটি গাছ তুলেছি। দেখতে ঠিক চন্দনের মতো। দেড় লাখ টাকা দাম চেয়েছি, তবে এক লাখ ২০ হাজার টাকা হ‌লে ছে‌ড়ে দেব।’

আজাদ হোসেন নামের এক কাঠ ব্যবসায়ী বলেন, ‘একেকটা গুঁড়ি ১২ হাজার টাকায় কিনেছি। কেটে জ্বালানি কাঠ হিসেবে বিক্রি করবো।’

ছিটমাইলানীর সবুজ মিয়া বলেন, ‘পরিবারসহ সারারাত ধরে প্রায় ৫০০ মণ কাঠ তুলেছি। কিছু রাখবো রান্নার জন্য, বাকিটা বিক্রি করবো।’

কুড়িগ্রাম জেলা বন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. সাদিকুর রহমান বলেন, ‘এগুলো আসল চন্দন কাঠ নয়। দীর্ঘদিন পানিতে থাকায় কাঠের রঙ লালচে হয়েছে। শ্বেত বা রক্তচন্দনের কোনো নমুনা পাওয়া যায়নি।’

কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ ও উদ্ভিদবিদ মীর্জা মো. নাসির উদ্দিন বলেন, ‘কাঠে থাকা ট্যানিন ও ফেনলিক যৌগ পানিতে ভেজা অবস্থায় বাতাসের অক্সিজেনের সংস্পর্শে এসে জারিত হয়ে লালচে রঙ ধারণ করে। তাই দেখতে চন্দনের মতো হলেও এসব কাঠ সাধারণ গাছের।’

তিনি আরো জানান, ‘চন্দন কাঠে বিশেষ ঘ্রাণ থাকে, যা ঘষলে বোঝা যায়। কিন্তু এসব কাঠে কোনো গন্ধ নেই, ফলে বোঝা যায় এগুলো চন্দন নয়।’

এসি/আপ্র/০৮/১০/২০২

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : prottashasmf@yahoo.com
আপলোডকারীর তথ্য

লাল চন্দন ভেবে ভারত থেকে ভেসে আসা গাছের গুঁড়ি বিক্রির ধুম

আপডেট সময় : ০১:২৪:২১ অপরাহ্ন, বুধবার, ৮ অক্টোবর ২০২৫

কুড়িগ্রাম সংবাদদাতা: কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারী উপজেলায় কালজানি নদীর সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে পানিতে ভেসে এসেছে হাজার হাজার গাছের গুঁড়ি। এসব কাঠের বেশিরভাগই বাকল ও শিকড়বিহীন এবং লালচে রঙে হওয়ায় অনেকেই এগুলোকে ‘লাল চন্দন’ বলে ধরে নিচ্ছেন।

রোববার (৫ অক্টোবর) বিকেল থেকে ভূরুঙ্গামারী উপজেলার শিলখুড়ি ইউনিয়নের ঢলডাঙা ও শালঝোড় এলাকায় কালজানি নদীতে এসব কাঠ ভেসে আসতে শুরু করে। পরদিন নদীর স্রোতে গুঁড়িগুলো দুধকুমার হয়ে ব্রহ্মপুত্র নদ পর্যন্ত পৌঁছে যায়।

এতে ভূরুঙ্গামারী, নাগেশ্বরী, কুড়িগ্রাম সদর, উলিপুর ও চিলমারী উপজেলার শত শত মানুষ ভোর থেকেই নদীতে নেমে পড়ে। কেউ নৌকা, কেউ ভেলা, আবার কেউ টিউবের ভরসায় কাঠ ধরতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। নদীপাড়ে গড়ে ওঠে অস্থায়ী কাঠের হাট।

নাগেশ্বরীর দামালগ্রাম এলাকায় দেখা যায়, একেকটি গাছের গুঁড়ি ২০ হাজার থেকে ৩৫ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কোথাও দাম আরো বেশি। রায়গঞ্জ ইউনিয়নে একটি বড় লালচে গুঁড়ির দাম ধরা হয়েছে এক লাখ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত।

দামালগ্রামের আবদুল মোতালেব বলেন, ‘চারজন মিলে প্রায় ৫০ ফুটের মতো একটি গাছ তুলেছি। দেখতে ঠিক চন্দনের মতো। দেড় লাখ টাকা দাম চেয়েছি, তবে এক লাখ ২০ হাজার টাকা হ‌লে ছে‌ড়ে দেব।’

আজাদ হোসেন নামের এক কাঠ ব্যবসায়ী বলেন, ‘একেকটা গুঁড়ি ১২ হাজার টাকায় কিনেছি। কেটে জ্বালানি কাঠ হিসেবে বিক্রি করবো।’

ছিটমাইলানীর সবুজ মিয়া বলেন, ‘পরিবারসহ সারারাত ধরে প্রায় ৫০০ মণ কাঠ তুলেছি। কিছু রাখবো রান্নার জন্য, বাকিটা বিক্রি করবো।’

কুড়িগ্রাম জেলা বন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. সাদিকুর রহমান বলেন, ‘এগুলো আসল চন্দন কাঠ নয়। দীর্ঘদিন পানিতে থাকায় কাঠের রঙ লালচে হয়েছে। শ্বেত বা রক্তচন্দনের কোনো নমুনা পাওয়া যায়নি।’

কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ ও উদ্ভিদবিদ মীর্জা মো. নাসির উদ্দিন বলেন, ‘কাঠে থাকা ট্যানিন ও ফেনলিক যৌগ পানিতে ভেজা অবস্থায় বাতাসের অক্সিজেনের সংস্পর্শে এসে জারিত হয়ে লালচে রঙ ধারণ করে। তাই দেখতে চন্দনের মতো হলেও এসব কাঠ সাধারণ গাছের।’

তিনি আরো জানান, ‘চন্দন কাঠে বিশেষ ঘ্রাণ থাকে, যা ঘষলে বোঝা যায়। কিন্তু এসব কাঠে কোনো গন্ধ নেই, ফলে বোঝা যায় এগুলো চন্দন নয়।’

এসি/আপ্র/০৮/১০/২০২