প্রযুক্তি ডেস্ক : ধূসর ও লাল রঙের কাঠবিড়ালীর মধ্যে পার্থক্য বলে দিতে পারে, এমনই এক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবস্থা আসছে। বিভিন্ন প্রাণী রক্ষায় এই এআই টুল পুরোপুরি ‘গেইম চেঞ্জার’ হতে যাচ্ছে বলে দাবি এর উদ্যোক্তাদের। ‘স্কুইরেল এজেন্ট’ নামের এই সিস্টেমটি হাজার হাজার প্রাণীর ছবির ভিত্তিতে প্রশিক্ষিত হয়েছে। নির্মাতারা বলছে, এর নির্ভুলতা ৯৭ শতাংশ। এটি ব্যবহার করে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই কাঠবিড়ালীর খাবার ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণের সুযোগ মিলবে, যেখানে শুধু লাল রঙের কাঠবিড়ালীরাই খাবার গ্রহণের সুবিধা পাবে ও ধূসর রঙের কাঠবিড়ালীকে এর বদলে দেওয়া যেতে পারে গর্ভনিরোধক পেস্ট। “এআইয়ের সত্যিকারের ক্ষমতা তুলে ধরে এটি,” বলেন এর নির্মাতা কোম্পানি ‘জেনেসিস ইঞ্জিন’-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা এমা ম্যাকক্লেনাগান। “এটি রিয়েল টাইমে বিভিন্ন এমন কাজও করতে পারে, যেটি প্রচলিত উপায়ে করতে গেলে যত লোক লাগবে, আমাদের কাছে তেমন বড় স্বেচ্ছাসেবী দল নেই।” স্কুইরেল এজেন্ট এখন যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় পরীক্ষা করা হচ্ছে, যেখানে সহায়তা করছে বন্যপ্রাণী সুরক্ষা নিয়ে কাজ করা পাঁচটি অলাভজনক সংস্থা। জেনেসিস ইঞ্জিন আশা করছে, পরবর্তীতে গিয়ে শুধু কাঠবিড়ালী নয়, বরং অন্যান্য প্রজাতির প্রাণীও এ ডিজিটাল মনিটরিং ব্যবস্থার সুবিধা পেতে পারে। এ পরীক্ষার সঙ্গে জড়িত সংগঠনগুলোর একটি হল ‘নর্দার্ন রেড স্কুইরেল’। এর সদস্য ইয়ান গ্লেনডিনিং বিবিসি’কে বলেছেন, তিনি যেসব প্রাণী সংরক্ষণের রাখার চেষ্টা করছেন তাতে এ প্রযুক্তি জরুরীভিত্তিতে প্রয়োজন।
লাল বিপদ: লাল রঙের কাঠবিড়ালীর সংখ্যা কমে আসার পেছনে সবচেয়ে বেশি দায়ী ধূসর রঙের কাঠবিড়ালী। এর আংশিক কারণ হল, এদের সংখ্যা অনেক বেশি। আর এরা এমন একটি ভাইরাস বহন করে, যা থেকে তারা নিজেরা নিরাপদ থাকলেও তা লাল রঙের কাঠবিড়ালীর জন্য তা খুবই বিপজ্জনক। যুক্তরাজ্যে এদের আগমন ঘটেছিল দুইশ বছর আগে।
“লাল রঙের কাঠবিড়ালীর দেখা মেলে স্কটল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ডে। এ ছাড়া, ‘অ্যাঙ্গেলসি’ ও ‘আইল অফ হোয়াইট’-এর মতো কয়েকটি দ্বীপেও এদেরকে অল্প পরিসরে দেখা যায়,” ব্যাখ্যা করেছেন গ্লেনডিনিং। “কিন্তু ইংল্যান্ড ও ওয়েলসের মূল ভূখণ্ডে এদের অবস্থা খুবই করুণ। এ প্রবণতা ঠেকাতে না পারলে তারা শিগগিরই বিলুপ্ত হয়ে যাবে।” লাল কাঠবিড়ালী সংরক্ষণ করা কিছুটা জটিল। কারণ এদের নামে ‘রেড’ শব্দটি থাকলেও সকল ‘রেড স্কুইরেল’ আসলে লাল রঙের হয় না। ধূসর কাঠবিড়ালী, যা সংখ্যায় অনেক বেশি, তাদের থেকে লাল কাঠবিড়ালীদের আলাদা করার বিভিন্ন উপায়ের মধ্যে রয়েছে এদের লেজ, কান, আকার ও ভর, যেখানে তাদের রং একই হলেও। এ শনাক্ত করার প্রক্রিয়া মানব পর্যবেক্ষকদের বেলায় সময় সাপেক্ষ হলেও স্কুইরেল এজেন্ট এআই ব্যবহার করে একসঙ্গেই সকল কাঠবিড়ালীর তথ্য বিশ্লেষণ করতে পারে। আর প্রায় নির্ভুলভাবে এটিও বলে দিতে পারে যে, কোন কাঠবিড়ালী কোন প্রজাতির। এর পর এআই টুলটি স্বয়ংক্রিয়ভাবেই সিদ্ধান্ত নিতে পারে, তাদের টিকে থাকার সম্ভাবনা বাড়াতে খাবারের পরিমান বাড়ানো বা কমানো লাগবে কি না।
গোঁফ দিয়ে প্রাণী শনাক্ত করা: জেনেসিস ইঞ্জিন বলছে, এ প্রযুক্তি বিবর্তনের পরবর্তী ধাপ শুধু বিভিন্ন ধরনের কাঠবিড়ালীর তফাৎ বলে দেওয়া নয়, বরং প্রতিটি প্রাণী শনাক্ত করতে পারা। এমা ম্যাকক্লেনাগান বলছেন, এটা সম্ভব প্রাণীদের গোঁফ শনাক্তের মাধ্যমে, যা প্রতিটি প্রাণীর জন্যই আলাদা। “গোঁফ অনেকটা মানুষের আঙুলের ছাপের মতো কাজ করে,” বলেন তিনি। এআইয়ের মাধ্যমে বিশাল পরিমাণ ডেটা বিশ্লেষণের নজির এরইমধ্যে দেখা গেছে, যা দ্রুতই প্রণী সংরক্ষণবাদীদের বেলাতেও উপকারী কিছু হয়ে উঠতে পারে। উদাহরণ হিসেবে, ‘ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ডলাইফ ফান্ড (ডব্লিউডব্লিউএফ)’ এ প্রযুক্তি দিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় দাবানলের পর ধ্বংস হয়ে যাওয়া বিশাল জায়গাগুলোর লাখ লাখ ছবি বিশ্লেষণ করেছে। এর লক্ষ্য ছিল, বিভিন্ন এমন জায়গা খুঁজে বের করা, যেখানে প্রাণী টিকে থাকতে পারে।