নিজস্ব প্রতিবেদক : প্রবাসী এক বাংলাদেশি বিদেশে লবিস্ট নিয়োগ করেছে বলে বিএনপি যে দাবি করেছে তার পরিচয় কেন প্রকাশ করা হয়নি তা জানতে চেয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সেতুমন্ত্রী প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘এই প্রবাসী বাংলাদেশি কে? তার পরিচয় কেন প্রকাশ করেননি?’
গতকাল বুধবার সকালে সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে এ কথা বলেন ওবায়দুল কাদের।
যুক্তরাষ্ট্রে লবিস্ট নিয়োগ নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই বাংলাদেশে তুমুল বিতর্ক চলছে৷ সরকারি দল বলছে, বিএনপি-জামায়াত যুক্তরাষ্ট্রে লবিস্ট নিয়োগ দিয়ে ৩.৭৫ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে। লবিস্ট নিয়োগের এই অর্থ কোথায় পেয়েছে তার উৎস খুঁজছে সরকার।
অন্যদিকে সরকারের অভিযোগকে মিথ্যা ও বানোয়াট দাবি করে বিএনপি দাবি করছে সরকারই ২০১৪ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রে লবিস্ট নিয়োগ দিয়ে রেখেছে। তবে বাংলাদেশের মানবাধিকার রক্ষায় বিএনপি উন্নয়ন অংশীদারদের প্রতি আহ্বান জানালেও কোনো লবিস্ট নিয়োগ করেনি। একজন প্রবাসী বিদেশে লবিস্ট নিয়োগ করেছে জানিয়ে গতকাল বিএনপি মহাসচিব দাবি করেছেন, ওই প্রবাসী বাংলাদেশি কর্তৃক লবিস্ট নিয়োগের বিষয়টি বিএনপির ওপর চাপানোর অপচেষ্টা চালাচ্ছে সরকার।
গত বৃহস্পতিবার লবিস্ট নিয়োগের বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। সেতুমন্ত্রী বলেন, বিএনপি দেশের বিরুদ্ধে লবিস্ট নিয়োগ প্রথম দিকে অস্বীকার করলেও এখন স্বীকার করছে, এখন বলছে প্রবাসী একজন বাংলাদেশি এ কাজ করছেন। বিএনপি নেতাদের কাছে প্রশ্ন রেখে ওবায়দুল কাদের বলেন, এই প্রবাসী বাংলাদেশি কে? তার পরিচয় কেন প্রকাশ করেননি? বিএনপি নেতারা বলেছেন এ ধরনের কার্যক্রমে তাদের নৈতিক সমর্থন আছে এবং তারা এতেও সংহতি প্রকাশ করেন। এ থেকেই সবকিছু স্পষ্ট হয়।
জনগণ এসব কৌশলী জবাব কথামালার চাতুরিতে বিভ্রান্ত হয় না উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, জনগণ জানে বিএনপির আসল পরিচয়। বিএনপিকে নতজানু, ভঙ্গুর এবং পরনির্ভর রাজনৈতিক দল মন্তব্য করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, তারা জনগণের কাছে যায় না, যায় বিদেশিদের কাছে আর বিদেশি দূতাবাসের কাছে। বিএনপি নেতাদের দেশের জনগণের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ক্ষমতায় বিদেশিরা বসাবে না, ক্ষমতায় বসাবে এদেশের জনগণ। উন্নয়ন সহযোগীদের কাছে চিঠি লেখা প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিবের বক্তব্যের জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, তাদের ভাষায় নাকি মানবাধিকার আর গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য চিঠি লিখেছেন। অন্তত চিঠি লেখার কথাতো স্বীকার করেছেন! ওবায়দুল কাদের আবারও প্রশ্ন রেখে বলেন, তারা কথায় কথায় সার্বভৌমত্বের কথা বলেন, গণতন্ত্রের কথা বলেন, তবে কি বিদেশিদের কাছে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আহবান জানানো স্বাধীন দেশের রাজনৈতিক দলের কাজ হতে পারে?
‘যারা জীবন্ত মানুষকে পেট্রোল বোমায় পুড়িয়ে মারে, সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের স্টিম রোলার চালায়, হাওয়া ভবনের নামে অনিয়ম আর লুটপাট চালায়, তারাই আজ মানবাধিকারের কথা বলে, যা শুনলে হাসি পায়।’-বলেন ওবায়দুল কাদের।
আন্দোলন ও নির্বাচনে প্রত্যাখ্যাত হয়ে বিএনপি আবার লুটপাটের নেশায় ক্ষমতায় যেতে বিদেশিদের হস্তক্ষেপ চায় উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, এটি বিএনপির মতো মেরুদ-হীন এবং জনগণের সাথে সম্পর্কহীন রাজনৈতিক দলের পক্ষেই সম্ভব।
বিদেশে নাকি বাংলাদেশ গণতন্ত্রহীন, ন্যায়বিচারহীন দেশ হিসেবে পরিচিত, বিএনপি নেতাদের এমন বক্তব্য প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, বিশ্ব অর্থনীতিতে বাংলাদেশের উত্তরণ বিএনপি চোখে দেখে না।
বাংলাদেশকে যখন উন্নয়ন ও অর্জনের রোল মডেল বলা হয় তখন বিএনপি কানে শোনে না মন্তব্য করে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি চায় এদেশ সমস্যা জর্জরিত রক্তাক্ত জনপদ হয়ে যাক, মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী স্রোতধারায় চলুক।
বিদেশে বিএনপি শুধু মিলিয়ন ডলার খরচ করে লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ করে নাই, তারা এফবিআইকে ভাড়া করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়কউপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়কে কিডন্যাপ করার ষড়যন্ত্রও করেছিল জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সন্তান ও জাতির পিতার দৌহিত্র সজীব ওয়াজেদ জয়কে ‘ফিজিক্যালি হার্ম’ করার পরিকল্পনা প্রমাণিত হয় যুক্তরাষ্ট্রের বসবাসরত বিএনপিকর্মী রিজভী আহমেদ সিজারের বিরুদ্ধে।
সেতুমন্ত্রী বলেন, মামলা চলাকালীন সময়ে রিজভী আহমেদ সিজার আদালতে জানায় যে, তিনি এবং তার সহযোগী ইয়োহানেস থেলার মিলে সজীব ওয়াজেদ জয় ও তার পরিবারের সদস্যদের অপহরণ করার উদ্দেশে তথ্য সংগ্রহ করার জন্য একজন এফবিআই স্পেশাল এজেন্টকে ঘুষ দেয়।
রিজভী আহমেদ সিজার আদালতে আরও জানায়, এই কাজের জন্য বিএনপির হাইকমান্ড হতে সাড়ে চার কোটি টাকা পুরস্কার হিসেবে পাওয়ার প্রতিশ্রুতি পেয়েছিল- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আদালতের নথিতে যা লিপিবদ্ধ আছে। এই বিষয়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয় হয় বলেও জানান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।