ঢাকা ১১:০৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৭ জুলাই ২০২৫

লবণাক্ত জমিতে সৌদি খেজুরের বাম্পার ফলন

  • আপডেট সময় : ০৭:২৭:০৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৭ জুলাই ২০২৫
  • ৪ বার পড়া হয়েছে

ছবি সংগৃহীত

কৃষি ও কৃষক ডেস্ক: উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটের একটি উপজেলা রামপাল; যেখানের নদী ও খালে সব সময় লবণ পানি বিরাজ করে। এই উপজেলায় চিংড়ি ছাড়া অন্য কোনো ফসল তেমন ভালো হয় না; সেখানে সৌদির খেজুর চাষ! অবাক করার মতো হলেও সত্য উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার লবণাক্ত জমিতে প্রথমবারের মতো বাণিজ্যিকভাবে সৌদি খেজুর চাষে সফল হয়েছেন এক আইনজীবী; পেয়েছেন বাম্পার ফলনও। ফলে এ অঞ্চলে মরু এলাকার এই ফল চাষে নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে গেল।

রামপালের মল্লিকের বেড় ইউনিয়নের সন্ন্যাসী গ্রামের বাসিন্দা এবং কৃষি উদ্যোক্তা দিহিদার জাকির হোসেন। পেশায় একজন আইনজীবী হলেও ২০১৪ সাল থেকে ১৫ একর জমিতে মৎস্য চাষ শুরু করেন তিনি। চিংড়ি ও বিভিন্ন ফল চাষে আশানুরূপ সাফল্য না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েন। পরে ইউটিউবে দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে শুরু করেন সৌদি খেজুর চাষ। ২০১৯ সালের শুরুর দিকে তিনি উত্তরবঙ্গ থেকে ৪০ হাজার টাকা করে সৌদি খেজুরের ৬০টি চারা এনে রোপণ করেন। পাঁচ বছর পর তার ৫০টির মতো গাছে ফল এসেছে। আর এক বছরের মধ্যে আরও ২০০ গাছে ফল আসবে বলে আশা করছেন তিনি।

যুবক উদ্যোক্তা লতিফ শেখ বলেন, যেভাবে সৌদি খেজুর চাষে সফলতা পেয়েছেন, সেটি দেখে এখন অনেক তরুণ চাষে আগ্রহী হচ্ছে। আমি নিজেও চিন্তা করছি তার নার্সারি থেকে চারা এনে শুরু করব। আমাদের মতো এলাকায় এমন চাষ যদি সফল হয়, তাহলে আর পিছিয়ে থাকতে হবে না।

প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা শ্রমিক শহিদুল ইসলাম বলেন, চারা লাগানোর সময় মানুষ আমাদের নিয়ে ঠাট্টা করতো। এখন সবাই আসে খেজুর দেখতে। যারা আগে হাসাহাসি করতেন, এখন স্যারকে বাহবা দেন। নিয়মিত গাছে জৈব সার, পানি ও ওষুধ ব্যবহার করায় গাছগুলো ভালোভাবে বেড়ে উঠেছে।

জাকির হোসেন বলেন, ২০১৯ সালে মাছ চাষ ও অন্যান্য ফলের ব্যর্থতায় আমি একেবারে হতাশ হয়ে পড়েছিলাম। তখন ইউটিউব দেখে হঠাৎ মনে হলো যেখানে মরুভূমিতে খেজুর হয়, সেখানে আমাদের লবণাক্ত জমিতে কেন নয়? সেই ভাবনা থেকেই সাহস করি। উত্তরবঙ্গ থেকে ৪০ হাজার টাকা করে ৬০টি সৌদি খেজুরের চারা এনে রোপণ করি। এরপর ধীরে ধীরে এই সংখ্যা দুই হাজারে ছড়িয়ে যায়। বর্তমানে খামারে প্রায় আড়াই হাজার সৌদি খেজুর গাছ রয়েছে। এর মধ্যে ৫০টি গাছে ইতোমধ্যেই ফল এসেছে। অনেক গাছে আবার ফুল এসেছে, ফল আসার প্রস্তুতি চলছে। এক বছরে আরো ২০০ থেকে ৩০০ গাছে ফলন মিলবে। তিনি বলেন, এটি মরুভূমির গাছ। তাই আমাদের এলাকার জলবায়ুর সঙ্গে খাপ খাওয়াতে সময় লেগেছে। রোগবালাই, ইঁদুরের উপদ্রব, পানি ব্যবস্থাপনা সবই বড় চ্যালেঞ্জ। কম পানি দিলে শুকিয়ে যায়, আবার বেশি দিলে গাছ পচে যায়। তবুও নিয়মিত পরিচর্যা আর অধ্যবসায়ের কারণে এখন ফল আসতে শুরু করেছে। এবার অনেক গাছে ২৫ থেকে ৩৫ কেজি পর্যন্ত ফলন হতে পারে।

খেজুর চাষে কীটপতঙ্গ ও রোগবালাইয়ের ঝুঁকি নিয়ে জাকির হোসেন বলেন, ‘হোয়াইট ফ্লাই’ ও ‘শুঁটিমূল’ নামে দুটি নতুন রোগে গাছ আক্রান্ত হয়। ইঁদুরও ব্যাপক ক্ষতি করে। এসবের বিরুদ্ধে নিয়মিত কীটনাশক ব্যবহার ও সতর্কতা জরুরি। নতুন চাষিদের উদ্দেশে তিনি বলেন, বীজ থেকে তৈরি চারায় পুরুষ গাছ বেশি হয়। তাই ফল আসে না। কলম চারা কিনলেই ভালো ফলন পাওয়া যায়।

বাগেরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. মোতাহার হোসেন বলেন, সৌদি খেজুর সাধারণত মরু এলাকার ফসল। কিন্তু দিহিদার জাকির হোসেন তার চাষে সফল হয়েছেন। এর স্বাদ, পুষ্টিগুণ ও উৎপাদন ঠিক থাকলে এটি এই অঞ্চলে দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে তাকে কারিগরি সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।

আজকের প্রত্যাশা/কেএমএএ

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

লবণাক্ত জমিতে সৌদি খেজুরের বাম্পার ফলন

আপডেট সময় : ০৭:২৭:০৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৭ জুলাই ২০২৫

কৃষি ও কৃষক ডেস্ক: উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটের একটি উপজেলা রামপাল; যেখানের নদী ও খালে সব সময় লবণ পানি বিরাজ করে। এই উপজেলায় চিংড়ি ছাড়া অন্য কোনো ফসল তেমন ভালো হয় না; সেখানে সৌদির খেজুর চাষ! অবাক করার মতো হলেও সত্য উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার লবণাক্ত জমিতে প্রথমবারের মতো বাণিজ্যিকভাবে সৌদি খেজুর চাষে সফল হয়েছেন এক আইনজীবী; পেয়েছেন বাম্পার ফলনও। ফলে এ অঞ্চলে মরু এলাকার এই ফল চাষে নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে গেল।

রামপালের মল্লিকের বেড় ইউনিয়নের সন্ন্যাসী গ্রামের বাসিন্দা এবং কৃষি উদ্যোক্তা দিহিদার জাকির হোসেন। পেশায় একজন আইনজীবী হলেও ২০১৪ সাল থেকে ১৫ একর জমিতে মৎস্য চাষ শুরু করেন তিনি। চিংড়ি ও বিভিন্ন ফল চাষে আশানুরূপ সাফল্য না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েন। পরে ইউটিউবে দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে শুরু করেন সৌদি খেজুর চাষ। ২০১৯ সালের শুরুর দিকে তিনি উত্তরবঙ্গ থেকে ৪০ হাজার টাকা করে সৌদি খেজুরের ৬০টি চারা এনে রোপণ করেন। পাঁচ বছর পর তার ৫০টির মতো গাছে ফল এসেছে। আর এক বছরের মধ্যে আরও ২০০ গাছে ফল আসবে বলে আশা করছেন তিনি।

যুবক উদ্যোক্তা লতিফ শেখ বলেন, যেভাবে সৌদি খেজুর চাষে সফলতা পেয়েছেন, সেটি দেখে এখন অনেক তরুণ চাষে আগ্রহী হচ্ছে। আমি নিজেও চিন্তা করছি তার নার্সারি থেকে চারা এনে শুরু করব। আমাদের মতো এলাকায় এমন চাষ যদি সফল হয়, তাহলে আর পিছিয়ে থাকতে হবে না।

প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা শ্রমিক শহিদুল ইসলাম বলেন, চারা লাগানোর সময় মানুষ আমাদের নিয়ে ঠাট্টা করতো। এখন সবাই আসে খেজুর দেখতে। যারা আগে হাসাহাসি করতেন, এখন স্যারকে বাহবা দেন। নিয়মিত গাছে জৈব সার, পানি ও ওষুধ ব্যবহার করায় গাছগুলো ভালোভাবে বেড়ে উঠেছে।

জাকির হোসেন বলেন, ২০১৯ সালে মাছ চাষ ও অন্যান্য ফলের ব্যর্থতায় আমি একেবারে হতাশ হয়ে পড়েছিলাম। তখন ইউটিউব দেখে হঠাৎ মনে হলো যেখানে মরুভূমিতে খেজুর হয়, সেখানে আমাদের লবণাক্ত জমিতে কেন নয়? সেই ভাবনা থেকেই সাহস করি। উত্তরবঙ্গ থেকে ৪০ হাজার টাকা করে ৬০টি সৌদি খেজুরের চারা এনে রোপণ করি। এরপর ধীরে ধীরে এই সংখ্যা দুই হাজারে ছড়িয়ে যায়। বর্তমানে খামারে প্রায় আড়াই হাজার সৌদি খেজুর গাছ রয়েছে। এর মধ্যে ৫০টি গাছে ইতোমধ্যেই ফল এসেছে। অনেক গাছে আবার ফুল এসেছে, ফল আসার প্রস্তুতি চলছে। এক বছরে আরো ২০০ থেকে ৩০০ গাছে ফলন মিলবে। তিনি বলেন, এটি মরুভূমির গাছ। তাই আমাদের এলাকার জলবায়ুর সঙ্গে খাপ খাওয়াতে সময় লেগেছে। রোগবালাই, ইঁদুরের উপদ্রব, পানি ব্যবস্থাপনা সবই বড় চ্যালেঞ্জ। কম পানি দিলে শুকিয়ে যায়, আবার বেশি দিলে গাছ পচে যায়। তবুও নিয়মিত পরিচর্যা আর অধ্যবসায়ের কারণে এখন ফল আসতে শুরু করেছে। এবার অনেক গাছে ২৫ থেকে ৩৫ কেজি পর্যন্ত ফলন হতে পারে।

খেজুর চাষে কীটপতঙ্গ ও রোগবালাইয়ের ঝুঁকি নিয়ে জাকির হোসেন বলেন, ‘হোয়াইট ফ্লাই’ ও ‘শুঁটিমূল’ নামে দুটি নতুন রোগে গাছ আক্রান্ত হয়। ইঁদুরও ব্যাপক ক্ষতি করে। এসবের বিরুদ্ধে নিয়মিত কীটনাশক ব্যবহার ও সতর্কতা জরুরি। নতুন চাষিদের উদ্দেশে তিনি বলেন, বীজ থেকে তৈরি চারায় পুরুষ গাছ বেশি হয়। তাই ফল আসে না। কলম চারা কিনলেই ভালো ফলন পাওয়া যায়।

বাগেরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. মোতাহার হোসেন বলেন, সৌদি খেজুর সাধারণত মরু এলাকার ফসল। কিন্তু দিহিদার জাকির হোসেন তার চাষে সফল হয়েছেন। এর স্বাদ, পুষ্টিগুণ ও উৎপাদন ঠিক থাকলে এটি এই অঞ্চলে দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে তাকে কারিগরি সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।

আজকের প্রত্যাশা/কেএমএএ