ঢাকা ০২:২৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

লঞ্চ কেটে ভাঙারি পণ্য রূপে বিক্রি

  • আপডেট সময় : ১১:৪২:২৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১ অক্টোবর ২০২২
  • ৮৫ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : সড়ক পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়নে বিরূপ প্রভাব পড়েছে এলাকা ভিত্তিক বা আঞ্চলিক নৌ চলাচল ব্যবস্থায়। ফলে যাত্রী সংকটে যুগ যুগ ধরে চলা ঢাকা-বরিশাল রুটের জমজমাট লঞ্চ ব্যবসায় এখন করুন দশা। রোটেশন করে চালিয়েও লাভের মুখ দেখছেন না লঞ্চ মালিকরা, তাই বাধ্য হয়েই কোটি-কোটি টাকার লঞ্চ কেটে লোহার দামে বিক্রি করা হচ্ছে।
সরজমিনে দেখা যায়, রাজধানীর পোস্তগোলা শশ্মান ঘাটে ‘কামাল-১’ নামের একটি লঞ্চ কাটার কাজ চলছে। তিনতলা এই লঞ্চটির বেশিরভাগ অংশই কাটা হয়ে গেছে। বাকি অংশও কাটা হচ্ছে গ্যাসের আগুন দিয়ে। বিশাল এই লঞ্চের লোহা ও স্টিল সিটগুলো বিক্রি হচ্ছে কেজি দরে। যা ভাঙারির দোকানের মাধ্যমে পরে রিফাইন করে ব্যবহার করা হবে প্রয়োজন অনুযায়ী। এসব স্ক্র্যাপ বা ভাঙ্গারী গলিয়ে বানানো হবে রড বা গ্রিল তৈরির ফ্ল্যাটবার-এঙ্গেলবার। ইঞ্জিন ও অন্যান্য অনুষঙ্গও বিক্রি হচ্ছে একইভাবে। জানা গেছে, কিছুদিন আগে এভাবে কেটে ফেলা হয়েছে ‘রাজধানী’ নামের আরেকটি লঞ্চ। দূরেই কাটার জন্য অপেক্ষায় আছে ‘প্রিন্স সাকিন-৪’ নামের লঞ্চটি।
ঘাটের কন্ট্রাক্টার ও শ্রমিকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, পোস্তগোলার শশ্মান ঘাটটি আগে ব্যবহার হতো লঞ্চ নির্মাণ ও মেরামতের জন্য। বর্তমানে ঘাটটি ব্যবহার হচ্ছে লঞ্চ কাটার জন্য। লঞ্চের কন্ট্রাক্টর হাসান বলেন, ‘আমরা কন্ট্রাক্ট নিয়ে লঞ্চ কেটে দেই। প্রতিটি লঞ্চে গড়ে ১০-১২ লাখ টাকার মজুরি খরচ হয়। তেলের দাম বাড়ার পর থেকে ফিটনেস বিহীন পুরনো লঞ্চগুলো কেটে বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে।
লঞ্চ কাটায় কাজ করছেন মোবারক নামের এক শ্রমিক। তিনি বলেন, ‘লঞ্চ কেটে লোহা কেজি দরে বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে। কাটার পর এখান থেকেই বিক্রি হয়ে যায়। ইঞ্জিনও বিক্রি করে দেয়। আবার অনেকে ইঞ্জিন রেখেও দিচ্ছে। এই ইঞ্জিনতো আর অন্য কোথাও ব্যবহার করা যায় না। নতুন লঞ্চ হলে সেক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়।’
জানা গেছে, সম্প্রতি নির্মাণাধীন একটি বিলাসবহুল লঞ্চের ৩০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর সেটি কেটে ফেলা হয়েছে। আরেক শ্রমিক সাইফুদ্দিন বলেন, ‘তেলের দাম বাড়ার পর সবকিছুর দামই বেড়ে গেছে, যাত্রীও নেই। নতুন লঞ্চ বানিয়ে কি করবে? বরং যেসব লঞ্চ তৈরি হচ্ছিলো সেগুলো বন্ধ আছে। একটা ভিআইপি লঞ্চ বানানোর কাজ শুরুর পর সেটা আবার কেটে বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে।’ জহুরুল নামের আরেক কর্মচারী বলেন, ‘একটা লঞ্চ কাটতে ৪০-৫০ দিনের মতো সময় লাগে। এখন কামাল-১ কাটছি ২০-২২ দিন ধরে। এরপর প্রিন্স সাকিন-৪ কাটা হবে।’ তবে শুধু যাত্রী কমাই লঞ্চ কাটার একমাত্র কারণ নয়। জানা যায়, বিভিন্ন রুটে চলাচল করা লঞ্চগুলোর অধিকাংশরই ফিটনেস ছিল না। ফিটনেস সমস্যা নিয়ে সহজে অন্য রুটে পারমিট না পাওয়ায় চাইলেও বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না লঞ্চগুলো। ফলে বাধ্য হয়েই কেটে ফেলে বিক্রি করতে হচ্ছে কোটি কোটি টাকা দামের এসব লঞ্চ। লঞ্চ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শহীদুল হক বলেন, ‘আমার নিজেরেই একটা লঞ্চে তেলের ৪৭ হাজার টাকা বাকি পড়েছে। সবাই লোকসানে আছে। আগে যেখানে দিনে ৭-৮টা লঞ্চ যেতো, এখন রোটেশনে তিনটা করে চালানো হচ্ছে তারপরও টাকা উঠছে না। তেলের দাম বেড়েছে এটা যেমন সমস্যা, আরও বড় সমস্যা ভেজাল তেল। এখন যে তেলটা আমরা পাচ্ছি কেরোসিনের মতো পাতলা। ফলে দ্রুত জ্বলে যাচ্ছে, ২-৩ ব্যারেল তেল বেশি লাগছে আবার ইঞ্জিনেরও ক্ষতি হচ্ছে। লঞ্চের মেইনটেইন খরচ ছাড়াও আমাদের কর্মচারীদের বেতন দেওয়ার বিষয় আছে। সব মিলিয়ে আমরা বিপাকে।’ তিনি বলেন, ‘আমার নিজেরই দুইটা লঞ্চ কাটা হবে, কথাবার্তা চলছে। বিশেষ করে মাঝারি ও ছোটো সাইজের অধিকাংশ লঞ্চই হয়তো কাটা পড়বে। আমাদের তো ব্যবসা চালাতে হবে, যাত্রী না থাকলে লঞ্চ রেখে কী হবে? সামনে লোহার দাম কমে গেলেতো এখন কেটে যে টাকা পাবো সেটাও পাওয়া যাবে না।’

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

নতুন আপদ ‘মব সন্ত্রাস’, আতঙ্কে সারা দেশ

লঞ্চ কেটে ভাঙারি পণ্য রূপে বিক্রি

আপডেট সময় : ১১:৪২:২৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১ অক্টোবর ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক : সড়ক পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়নে বিরূপ প্রভাব পড়েছে এলাকা ভিত্তিক বা আঞ্চলিক নৌ চলাচল ব্যবস্থায়। ফলে যাত্রী সংকটে যুগ যুগ ধরে চলা ঢাকা-বরিশাল রুটের জমজমাট লঞ্চ ব্যবসায় এখন করুন দশা। রোটেশন করে চালিয়েও লাভের মুখ দেখছেন না লঞ্চ মালিকরা, তাই বাধ্য হয়েই কোটি-কোটি টাকার লঞ্চ কেটে লোহার দামে বিক্রি করা হচ্ছে।
সরজমিনে দেখা যায়, রাজধানীর পোস্তগোলা শশ্মান ঘাটে ‘কামাল-১’ নামের একটি লঞ্চ কাটার কাজ চলছে। তিনতলা এই লঞ্চটির বেশিরভাগ অংশই কাটা হয়ে গেছে। বাকি অংশও কাটা হচ্ছে গ্যাসের আগুন দিয়ে। বিশাল এই লঞ্চের লোহা ও স্টিল সিটগুলো বিক্রি হচ্ছে কেজি দরে। যা ভাঙারির দোকানের মাধ্যমে পরে রিফাইন করে ব্যবহার করা হবে প্রয়োজন অনুযায়ী। এসব স্ক্র্যাপ বা ভাঙ্গারী গলিয়ে বানানো হবে রড বা গ্রিল তৈরির ফ্ল্যাটবার-এঙ্গেলবার। ইঞ্জিন ও অন্যান্য অনুষঙ্গও বিক্রি হচ্ছে একইভাবে। জানা গেছে, কিছুদিন আগে এভাবে কেটে ফেলা হয়েছে ‘রাজধানী’ নামের আরেকটি লঞ্চ। দূরেই কাটার জন্য অপেক্ষায় আছে ‘প্রিন্স সাকিন-৪’ নামের লঞ্চটি।
ঘাটের কন্ট্রাক্টার ও শ্রমিকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, পোস্তগোলার শশ্মান ঘাটটি আগে ব্যবহার হতো লঞ্চ নির্মাণ ও মেরামতের জন্য। বর্তমানে ঘাটটি ব্যবহার হচ্ছে লঞ্চ কাটার জন্য। লঞ্চের কন্ট্রাক্টর হাসান বলেন, ‘আমরা কন্ট্রাক্ট নিয়ে লঞ্চ কেটে দেই। প্রতিটি লঞ্চে গড়ে ১০-১২ লাখ টাকার মজুরি খরচ হয়। তেলের দাম বাড়ার পর থেকে ফিটনেস বিহীন পুরনো লঞ্চগুলো কেটে বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে।
লঞ্চ কাটায় কাজ করছেন মোবারক নামের এক শ্রমিক। তিনি বলেন, ‘লঞ্চ কেটে লোহা কেজি দরে বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে। কাটার পর এখান থেকেই বিক্রি হয়ে যায়। ইঞ্জিনও বিক্রি করে দেয়। আবার অনেকে ইঞ্জিন রেখেও দিচ্ছে। এই ইঞ্জিনতো আর অন্য কোথাও ব্যবহার করা যায় না। নতুন লঞ্চ হলে সেক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়।’
জানা গেছে, সম্প্রতি নির্মাণাধীন একটি বিলাসবহুল লঞ্চের ৩০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর সেটি কেটে ফেলা হয়েছে। আরেক শ্রমিক সাইফুদ্দিন বলেন, ‘তেলের দাম বাড়ার পর সবকিছুর দামই বেড়ে গেছে, যাত্রীও নেই। নতুন লঞ্চ বানিয়ে কি করবে? বরং যেসব লঞ্চ তৈরি হচ্ছিলো সেগুলো বন্ধ আছে। একটা ভিআইপি লঞ্চ বানানোর কাজ শুরুর পর সেটা আবার কেটে বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে।’ জহুরুল নামের আরেক কর্মচারী বলেন, ‘একটা লঞ্চ কাটতে ৪০-৫০ দিনের মতো সময় লাগে। এখন কামাল-১ কাটছি ২০-২২ দিন ধরে। এরপর প্রিন্স সাকিন-৪ কাটা হবে।’ তবে শুধু যাত্রী কমাই লঞ্চ কাটার একমাত্র কারণ নয়। জানা যায়, বিভিন্ন রুটে চলাচল করা লঞ্চগুলোর অধিকাংশরই ফিটনেস ছিল না। ফিটনেস সমস্যা নিয়ে সহজে অন্য রুটে পারমিট না পাওয়ায় চাইলেও বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না লঞ্চগুলো। ফলে বাধ্য হয়েই কেটে ফেলে বিক্রি করতে হচ্ছে কোটি কোটি টাকা দামের এসব লঞ্চ। লঞ্চ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শহীদুল হক বলেন, ‘আমার নিজেরেই একটা লঞ্চে তেলের ৪৭ হাজার টাকা বাকি পড়েছে। সবাই লোকসানে আছে। আগে যেখানে দিনে ৭-৮টা লঞ্চ যেতো, এখন রোটেশনে তিনটা করে চালানো হচ্ছে তারপরও টাকা উঠছে না। তেলের দাম বেড়েছে এটা যেমন সমস্যা, আরও বড় সমস্যা ভেজাল তেল। এখন যে তেলটা আমরা পাচ্ছি কেরোসিনের মতো পাতলা। ফলে দ্রুত জ্বলে যাচ্ছে, ২-৩ ব্যারেল তেল বেশি লাগছে আবার ইঞ্জিনেরও ক্ষতি হচ্ছে। লঞ্চের মেইনটেইন খরচ ছাড়াও আমাদের কর্মচারীদের বেতন দেওয়ার বিষয় আছে। সব মিলিয়ে আমরা বিপাকে।’ তিনি বলেন, ‘আমার নিজেরই দুইটা লঞ্চ কাটা হবে, কথাবার্তা চলছে। বিশেষ করে মাঝারি ও ছোটো সাইজের অধিকাংশ লঞ্চই হয়তো কাটা পড়বে। আমাদের তো ব্যবসা চালাতে হবে, যাত্রী না থাকলে লঞ্চ রেখে কী হবে? সামনে লোহার দাম কমে গেলেতো এখন কেটে যে টাকা পাবো সেটাও পাওয়া যাবে না।’