ঢাকা ১২:১৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০৪ জুন ২০২৫

লকডাউনে অপরাধ বাড়তে পারে দ্বিগুণ

  • আপডেট সময় : ০২:১১:৫৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৬ মে ২০২১
  • ১০৬ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : মহামারির মধ্যে কর্মহীন মানুষ বেড়েছে ঢের। অপরাধও বাড়ছে। হত্যাকা-ের মতো অপরাধেও জড়িয়ে পড়ছে কেউ কেউ। বিশেষ করে দেনা-পাওনা পরিশোধ নিয়ে অসহিষ্ণু হয়ে উঠছে মানুষ। বেকারত্বের কারণে সামাজিক অস্থিরতাও বেড়ে চলছে। এমনটাই মনে করছে দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
অপরাধ বিজ্ঞানীরা বলছেন, যারা দিনমজুরের কাজ করতেন, তারা মহামারিতে বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন। তাদেরই অনেকে জড়িয়ে পড়ছেন অনৈতিক কাজে। এই অবস্থা চলতে থাকলে অপরাধের সংখ্যা বেড়ে যেতে পারে দ্বিগুণ
মহামারির কারণে দেড় বছরে দেশের চাকরির বাজার সংকুচিত হয়েছে। বন্ধ হয়েছে অনেক ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প। অনেক প্রতিষ্ঠান কর্মী ছাঁটাই করেছে। লকডাউন হলেই বেকারদের তালিকায় যোগ হয় পরিবহন শ্রমিক, দোকান শ্রমিক ও দিনমজুর।
শহরে বাসের হেলপার ও কনডাক্টরররা সাধারণত দিনে ৫০০-৬০০ টাকা বেতনে কাজ করেন। চালকরা এক হাজার টাকার মতো পান। দূরপাল্লার বাসের চালক ও সুপারভাইজরদের বেতন কিছুটা বেশি হলেও প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। লকডাউনে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় চরম বিপর্যয়ে পড়েছেন তারা। একদিকে আয় নেই, অন্যদিকে মালিক বা প্রশাসনও পাশে নেই। এ কারণে এ শ্রমিকদের অনেকে মাদক, ছিনতাইসহ অন্যান্য অপরাধে জড়িয়ে পড়তে পারেন বেশি।
দেশে মিনিবাস, পরিবহন, ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান সংশ্লিষ্ট প্রায় ৫০ লাখ শ্রমিক রয়েছে। লকডাউনে এদের বেশিরভাগই বসে আছেন। মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন তারা। এমন দাবি করেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন।
সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী বলেন, ‘আমাদের শ্রমিকরা একমাস ধরে বসা। আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরিবহন চলাচালের অনুমতির জন্য দাবি জানিয়েছি। দাবি না মানা হলে কর্মসূচি পালন করা হবে। ইতোমধ্যে কর্মসূচি ঘোষণা করেছি।’
রাজধানীতে বেশকিছু ছিনতাইয়ের সঙ্গে এসব শ্রমিকদের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। এমনকি প্রাইভেটকার, অটোরিকশা ও পিকআপ নিয়ে দলবেঁধেও ছিনতাই করতেও বের হচ্ছে তারা। এ নিয়ে পুলিশও উদ্বিগ্ন। পুলিশের এক কর্মকর্তা বললেন, ‘শহরে কর্মহীন মানুষ বেশি হলে অপরাধ বাড়বেই। বেকাররাই এসব অপরাধমূলক কাজে জড়ায় বেশি।’
পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০১৭ সালের শ্রমশক্তি জরিপ অনুযায়ী, বাংলাদেশে মোট কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী ৬ কোটি ৩৫ লাখ। এর মধ্যে ২৭ লাখ বেকার। প্রতিবছর দশ লাখ বেকার এমনিতেই বাড়ছে। সেই হিসাবে দেশে বর্তমানে ৪৭ লাখ বেকার। সপ্তাহে একদিন কাজ করে এমন শ্রমিকদেরও কর্মজীবী গণনা করা হয়েছে পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবে। এর সঙ্গে লকডাউনের কারণে বেকার ৫০ লাখ পরিবহন শ্রমিক যোগ করলে সংখ্যাটা প্রায় এক কোটিতে দাঁড়ায়। এর বাইরে আংশিক বেকার আছে প্রায় ৬৬ লাখ। এরা টিউশনি, রাইড শেয়ারিং বা বিভিন্ন দোকানে খ-কালীন বিক্রয়কর্মীর কাজ করেন। লকডাউনে তারাও পুরোপুরি বেকার হয়ে পড়েছেন।
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) তথ্য অনুযায়ী, করোনাভাইরাস সংকটে বিশ্বে প্রতি ছয়জনের একজন বেকার হয়েছেন। বাংলাদেশে কাজ হারিয়েছে প্রতি চারজনে একজন।
এই বিশাল জনগোষ্ঠী কর্মহীন থাকার প্রভাব রাজধানীসহ গোটা দেশের অপরাধচিত্রেই পড়তে চলেছে। তবে অপরাধ বেড়েছে রাজধানীতে। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তথ্যানুযায়ী, গত এপ্রিলে রাজধানীতে খুনের ঘটনা ঘটেছে ১৮টি। যা মার্চ ও ফেব্রুয়ারিতে ছিল ৭ ও ১২টি। এপ্রিলে ছিনতাইয়ের ঘটনায় মামলা হয়েছে ১৩টি। আগের মাসে ছিল ৮টি এবং ফেব্রুয়ারিতেও ছিল ৮টি। এ ছাড়াও এপ্রিলে দাঙ্গার ঘটনা ঘটেছে তিনটি, ধর্ষণ ৩৭টি, নারী নির্যাতন ১০২টি, শিশু নির্যাতন ৩৮টি, মোট নারী ও শিশু নির্যাতন ১৭৭টি, অপহরণ দুটি, সিঁধেল চুরি ৫০টি, গাড়ি চুরি ৩২টি ও অন্যান্য চুরির ঘটনা ঘটেছে ৬২টি।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্মকমিশনার মাহবুব আলম বলেন, ‘লকডাউনের কারণে কিছু মানুষ অলস থাকে। এসময় কিছু ট্র্যাডিশনাল ক্রাইম বাড়ে। তবে সব আমাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। যারা যখন অপরাধ করছে, তাদের আইনের আওতায় আনা হয়েছে।’
মহামারিতে কর্মহীন মানুষের অপরাধের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার বিষয়টি অপরাধ বিজ্ঞানের চিরচরিত সূত্রের সঙ্গেও মিলে যায় বলে জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ বিজ্ঞান সোসাইটির পরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলাজি অ্যান্ড ক্রিমিনাল জাস্টিস বিভাগের অধ্যাপক জিয়া রহমান। তিনি বলেন, ‘আমরা তাত্ত্বিকভাবেও জানি যে কর্মহীন মানুষ বেশি অপরাধে লিপ্ত হয়। রোজগারের পথ বন্ধ থাকলে সমাজে চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতিসহ ‘পেটি ক্রাইম’ তথা তুলনামূলকভাবে ছোটখাটো অপরাধ বেড়ে যায়।’

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

দেশে কোরবানির পশু পর্যাপ্ত, পাশের দেশের প্রয়োজন নেই: উপদেষ্টা

লকডাউনে অপরাধ বাড়তে পারে দ্বিগুণ

আপডেট সময় : ০২:১১:৫৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৬ মে ২০২১

নিজস্ব প্রতিবেদক : মহামারির মধ্যে কর্মহীন মানুষ বেড়েছে ঢের। অপরাধও বাড়ছে। হত্যাকা-ের মতো অপরাধেও জড়িয়ে পড়ছে কেউ কেউ। বিশেষ করে দেনা-পাওনা পরিশোধ নিয়ে অসহিষ্ণু হয়ে উঠছে মানুষ। বেকারত্বের কারণে সামাজিক অস্থিরতাও বেড়ে চলছে। এমনটাই মনে করছে দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
অপরাধ বিজ্ঞানীরা বলছেন, যারা দিনমজুরের কাজ করতেন, তারা মহামারিতে বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন। তাদেরই অনেকে জড়িয়ে পড়ছেন অনৈতিক কাজে। এই অবস্থা চলতে থাকলে অপরাধের সংখ্যা বেড়ে যেতে পারে দ্বিগুণ
মহামারির কারণে দেড় বছরে দেশের চাকরির বাজার সংকুচিত হয়েছে। বন্ধ হয়েছে অনেক ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প। অনেক প্রতিষ্ঠান কর্মী ছাঁটাই করেছে। লকডাউন হলেই বেকারদের তালিকায় যোগ হয় পরিবহন শ্রমিক, দোকান শ্রমিক ও দিনমজুর।
শহরে বাসের হেলপার ও কনডাক্টরররা সাধারণত দিনে ৫০০-৬০০ টাকা বেতনে কাজ করেন। চালকরা এক হাজার টাকার মতো পান। দূরপাল্লার বাসের চালক ও সুপারভাইজরদের বেতন কিছুটা বেশি হলেও প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। লকডাউনে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় চরম বিপর্যয়ে পড়েছেন তারা। একদিকে আয় নেই, অন্যদিকে মালিক বা প্রশাসনও পাশে নেই। এ কারণে এ শ্রমিকদের অনেকে মাদক, ছিনতাইসহ অন্যান্য অপরাধে জড়িয়ে পড়তে পারেন বেশি।
দেশে মিনিবাস, পরিবহন, ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান সংশ্লিষ্ট প্রায় ৫০ লাখ শ্রমিক রয়েছে। লকডাউনে এদের বেশিরভাগই বসে আছেন। মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন তারা। এমন দাবি করেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন।
সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী বলেন, ‘আমাদের শ্রমিকরা একমাস ধরে বসা। আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরিবহন চলাচালের অনুমতির জন্য দাবি জানিয়েছি। দাবি না মানা হলে কর্মসূচি পালন করা হবে। ইতোমধ্যে কর্মসূচি ঘোষণা করেছি।’
রাজধানীতে বেশকিছু ছিনতাইয়ের সঙ্গে এসব শ্রমিকদের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। এমনকি প্রাইভেটকার, অটোরিকশা ও পিকআপ নিয়ে দলবেঁধেও ছিনতাই করতেও বের হচ্ছে তারা। এ নিয়ে পুলিশও উদ্বিগ্ন। পুলিশের এক কর্মকর্তা বললেন, ‘শহরে কর্মহীন মানুষ বেশি হলে অপরাধ বাড়বেই। বেকাররাই এসব অপরাধমূলক কাজে জড়ায় বেশি।’
পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০১৭ সালের শ্রমশক্তি জরিপ অনুযায়ী, বাংলাদেশে মোট কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী ৬ কোটি ৩৫ লাখ। এর মধ্যে ২৭ লাখ বেকার। প্রতিবছর দশ লাখ বেকার এমনিতেই বাড়ছে। সেই হিসাবে দেশে বর্তমানে ৪৭ লাখ বেকার। সপ্তাহে একদিন কাজ করে এমন শ্রমিকদেরও কর্মজীবী গণনা করা হয়েছে পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবে। এর সঙ্গে লকডাউনের কারণে বেকার ৫০ লাখ পরিবহন শ্রমিক যোগ করলে সংখ্যাটা প্রায় এক কোটিতে দাঁড়ায়। এর বাইরে আংশিক বেকার আছে প্রায় ৬৬ লাখ। এরা টিউশনি, রাইড শেয়ারিং বা বিভিন্ন দোকানে খ-কালীন বিক্রয়কর্মীর কাজ করেন। লকডাউনে তারাও পুরোপুরি বেকার হয়ে পড়েছেন।
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) তথ্য অনুযায়ী, করোনাভাইরাস সংকটে বিশ্বে প্রতি ছয়জনের একজন বেকার হয়েছেন। বাংলাদেশে কাজ হারিয়েছে প্রতি চারজনে একজন।
এই বিশাল জনগোষ্ঠী কর্মহীন থাকার প্রভাব রাজধানীসহ গোটা দেশের অপরাধচিত্রেই পড়তে চলেছে। তবে অপরাধ বেড়েছে রাজধানীতে। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তথ্যানুযায়ী, গত এপ্রিলে রাজধানীতে খুনের ঘটনা ঘটেছে ১৮টি। যা মার্চ ও ফেব্রুয়ারিতে ছিল ৭ ও ১২টি। এপ্রিলে ছিনতাইয়ের ঘটনায় মামলা হয়েছে ১৩টি। আগের মাসে ছিল ৮টি এবং ফেব্রুয়ারিতেও ছিল ৮টি। এ ছাড়াও এপ্রিলে দাঙ্গার ঘটনা ঘটেছে তিনটি, ধর্ষণ ৩৭টি, নারী নির্যাতন ১০২টি, শিশু নির্যাতন ৩৮টি, মোট নারী ও শিশু নির্যাতন ১৭৭টি, অপহরণ দুটি, সিঁধেল চুরি ৫০টি, গাড়ি চুরি ৩২টি ও অন্যান্য চুরির ঘটনা ঘটেছে ৬২টি।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্মকমিশনার মাহবুব আলম বলেন, ‘লকডাউনের কারণে কিছু মানুষ অলস থাকে। এসময় কিছু ট্র্যাডিশনাল ক্রাইম বাড়ে। তবে সব আমাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। যারা যখন অপরাধ করছে, তাদের আইনের আওতায় আনা হয়েছে।’
মহামারিতে কর্মহীন মানুষের অপরাধের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার বিষয়টি অপরাধ বিজ্ঞানের চিরচরিত সূত্রের সঙ্গেও মিলে যায় বলে জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ বিজ্ঞান সোসাইটির পরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলাজি অ্যান্ড ক্রিমিনাল জাস্টিস বিভাগের অধ্যাপক জিয়া রহমান। তিনি বলেন, ‘আমরা তাত্ত্বিকভাবেও জানি যে কর্মহীন মানুষ বেশি অপরাধে লিপ্ত হয়। রোজগারের পথ বন্ধ থাকলে সমাজে চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতিসহ ‘পেটি ক্রাইম’ তথা তুলনামূলকভাবে ছোটখাটো অপরাধ বেড়ে যায়।’