নিজস্ব প্রতিবেদক : ঈদের আগে লকডাউনের শেষ দিনই ঢাকার রাস্তা থেকে বিদায় নিয়েছে বিধিনিষেধ; বাস ছাড়া প্রায় সব ধরনের যানবাহনই চলছে। কাকরাইলের কাছে মাইনুদ্দিন নামের এক রিকশাচালক রসিকতার সুরে বললেন, “এতদিন আমরাই বেশি ছিলাম। আইজকা দেখেন প্রাইভেট কার বাইর হইছে আমাগো চেয়ে বেশি।”
গতকাল বুধবার সকাল থেকে ঢাকার শান্তিনগর, বিজয়নগর, পল্টন, আজিমপুর, পলাশী, লালবাগ, শ্যামলী, আগারগাঁও, মীরপুরের সড়কগুলোতে ঘুরে গেছে গেছে একইরকম চিত্র্র।
প্রধান সড়কে রিকশার পাশাপাশি প্রাইভেটকার, পণ্যবাহী পরিবহন, মাইক্রোবাস চলছে প্রচুর, নেমেছে অটোরিকশা ও মোটরবাইকও। পুলিশ সদস্যরা এখন আবার ট্রাফিক সামলাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।
করোনাভাইরাসের ডেল্টা ধরনের ভয়াবহ সংক্রমণে শনাক্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা হু হু করে বাড়তে থাকায় গত ১ জুলাই সারা দেশে শুরু হয় লকডাউনের কঠোর বিধিনিষেধ। মহামারী পরিস্থিতির দৃশ্যমাণ কোনো পরিবর্তন না হলেও ঈদ সামনে রেখে সেই বিধিনিষেধ আপাতত তুলে দেওয়া হচ্ছে।
সরকার জানিয়েছে, ১৪ জুলাই মধ্যরাত থেকে ২৩ জুলাই সকাল ৬টা পর্যন্ত সকল বিধিনিষেধ শিথিল থাকবে। ঈদের ছুটির পর ২৩ জুলাই সকাল ৬টা থেকে ৫ অগাস্ট মধ্যরাত পর্যন্ত আগের বিধিনিষেধগুলো আবারও কার্যকর হবে।
সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী, বুধবারও লকডাউনের বিধিনিষেধ আছে, তবে বাস্তবে তার কোনো কার্যকারিতা তেমন দেখা গেল না।
কাকরাইলের নাইটিঙ্গেল মোড়ে সকাল সাড়ে ৯টায় দুটি অটোরিকশা আটকেছিল পুলিশ। চালক গ্যালমান পুলিশ কর্মকর্তাদের বললেন, “স্যার বুঝতে পারি নাই, ভাবছি শেষ দিন একটু কড়াকড়ি কম থাকব। পেটের দায়ে গাড়ি নামাইছি, মাফ কইরা দেন।”
সড়কের পাশপাশি ফুটপাত ও কাঁচাবাজারেও মানুষের চলাচল বেড়েছে। মালিবাগ রেলগেইট বাজার, রেল গেইট কাঁচা বাজার, শান্তিনগর বাজারে সকালে ছিল বেশ ভিড়। টিসিবির ন্যায্যমূল্যের তেল, ডাল ও চিনি কিনতে শান্তিনগরে আসা ফরিদা আখতার বললেন, “লকডাউনের মধ্যে আমি আরও দুইদিন বাজারে এসেছি। লোকজনের এত ভিড় আগে দেখিনি।”
আগারগাঁওয়ে রাইড শেয়ারিংয়ের মোটরসাইকেল চালক শামীম জানালেন, সকাল থেকে মিরপুরের দিকে দুইবার যাওয়া আসা করেছেন, পথে কেউ আটকায়নি। নারায়ণগঞ্জ থেকে প্রথমে রিকশা-ভ্যান ও পরে পিকআপে চড়ে আগারগাঁওয়ে এসেছেন একটি বেসরকারি কোম্পানির বিপণন কর্মী সাজেদুর রহমান। তিনি জানালেন, বাস বন্ধ থাকায় তাকে এভাবেই আসতে হয়েছে। পুরান ঢাকার আজিমপুর, লালবাগ, কেল্লারমোড়, বকশিবাজার অলিগলির কাপড়ের দোকান, ড্রাই ক্লিনার্স, হার্ডওয়ারের দোকানসহ সবই খোলা। ভিড়ের মধ্যেও অনেকে মাস্ক পড়ছেন না।মিরপুর ১১, ১২ ও কালশী ঘুরে বুধবার সকালে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর তেমন কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি। এসব এলাকায় বাস ছাড়া সব যানবাহনই চলছে। ভিড় বেড়েছে কাঁচাবাজার ও পোশাকের দোকানে। মিরপুর ১২ নম্বরের ডি ব্লক এলাকার একটি গলিতে দেখা যায়, কাপড়ের দোকানগুলোতে অসংখ্য ক্রেতা কেনাকাটা করছেন। অনেকের মুখে মাস্ক নেই। পারভীন আক্তার নামের একজন ক্রেতা বললেন, “লকডাউন যেহেতু ছাড়ছে, তাই ভাবছি দেশের বাড়ি যাব। একটু কেনাকাটা করতে বের হলাম।” মাস্ক না পরার কারণ জানতে চাইলে বললেন, “বোরকা পরে বের হইছি তো, তাই মাস্ক নিতে ভুলে গেছি। মুখ তো ঢাকাই থাকে, কিছু হবে না।”
লকডাউনের শেষ দিন বাস ছাড়া সবই রাস্তায়
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ