ঢাকা ১১:৪৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৯ জুলাই ২০২৫

লং কোভিড সম্পর্কে যা জানা প্রয়োজন

  • আপডেট সময় : ১১:১৯:১১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৩০ জুলাই ২০২১
  • ১২৩ বার পড়া হয়েছে

স্বাস্থ্য ও পরিচর্যা ডেস্ক : করোনাভাইরাস মহামারিতে যারা ভাইরাসটিতে সংক্রমিত হয়েছেন তাদের অনেকেই শারীরিক ও মানসিক জটিলতায় ভুগছেন। সময় পরিক্রমায় ভাইরাসটি নিজের পরিবর্তন ঘটিয়ে আরো শক্তিশালী হয়েছে। সেইসঙ্গে বেড়েছে সংক্রমণের জটিলতাও। একটা বিষয় দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, কোভিড-১৯ থেকে সুস্থ হওয়ার পরও (টেস্টে নেগেটিভ আসার পর) কিছু উপসর্গ দীর্ঘসময় থেকে যাচ্ছে। সপ্তাহের পর সপ্তাহ বা মাসের পর মাস বিরাজমান এসব উপসর্গকে চিকিৎসকেরা লং কোভিড বলে থাকেন। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত প্রত্যেকেরই যে লং কোভিড হচ্ছে তা নয়, ১০ থেকে ৩০ শতাংশ এমন পরিণতিতে ভুগছেন।সাধারণত মৃদু কোভিড-১৯ এর উপসর্গ ১-২ বা ৩ সপ্তাহের মধ্যে দূর হয়ে যায়, কিন্তু তীব্র সংক্রমণের ক্ষেত্রে ৬ সপ্তাহ পর্যন্ত লাগতে পারে। বিএমজে ডটকমের গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোভিড-১৯ জনিত উপসর্গ ৩ সপ্তাহের বেশি লেগে থাকলে তাকে লং কোভিড বলা যাবে। উপসর্গের স্থায়িত্ব ৩ থেকে ১২ সপ্তাহ হলে তাকে অ্যাকিউ লং কোভিড এবং ১২ সপ্তাহ পার হয়ে গেলে তাকে ক্রনিক লং কোভিড বলা হয়। অন্য গবেষকরা কোভিড-১৯ এর উপসর্গ দুই মাসের বেশি ভোগালে তাকে লং কোভিড বলছেন। তবে আরো বিস্তৃত গবেষণার আলোকে লং কোভিডের সময়ের পরিসর পরিবর্তন হতে পারে।

  • লং কোভিডের উপসর্গ
    কোনো কোভিড রোগীর করোনা টেস্টে নেগেটিভ আসার পর উপসর্গের স্থায়িত্ব ৩ সপ্তাহের বেশি হলে ধরে নেয়া যায় তিনি একজন লং হলার, অর্থাৎ লং কোভিডে ভুগছেন। তবে যারা করোনাভাইরাসের তীব্র সংক্রমণে ভুগেছেন তাদের উপসর্গ ৬ থেকে দুই মাস থাকতে পারে, এরপরও দূর না হলে এটাকে লং কোভিড মনে করতে হবে। যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব বার্মিংহামের অন্তর্গত থেরাপিস ফর লং কোভিডের (টিএলসি) গবেষক দল লং কোভিড বিষয়ক ২৭টি গবেষণাপত্র বিশ্লেষণ করেন। মূলত লং কোভিড বা দীর্ঘমেয়াদি জটিলতার প্রচলিত উপসর্গ ও ঝুঁকিপূর্ণ বিষয় জানতে এ বিশ্লেষণ করা হয়েছে।গবেষক দলটি জানান- ক্লান্তি বা দুর্বলতা, শ্বাসপ্রশ্বাসে কাঠিন্যতা, পেশি ব্যথা, জয়েন্ট ব্যথা, মাথাব্যথা এবং স্বাদ ও ঘ্রাণের পরিবর্তন হলো সবচেয়ে প্রচলিত উপসর্গ। এছাড়া লং হলাররা ঘুম, মনোযোগ ও স্মৃতি সংক্রান্ত সমস্যায়ও বেশি ভুগেন।
  • যাদের লং কোভিডের ঝুঁকি বেশি
    টিএলসি’র গবেষকরা আরো জানান, যারা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গুরুতর অসুস্থ হয়েছেন বা হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে বা অক্সিজেন সাপোর্ট লেগেছে তাদের লং কোভিডের ঝুঁকি বেশি। আরেকটি গবেষণামতে, যেসব কোভিড রোগীর পাঁচটির বেশি উপসর্গ আছে তাদেরও লং কোভিড বা দীর্ঘমেয়াদি জটিলতার বাড়তি ঝুঁকি রয়েছে। এছাড়া বার্ধক্যে উপনীত ব্যক্তি, নারী ও অন্যকোনো স্বাস্থ্য সমস্যায় জর্জরিত লোকদেরও করোনাভাইরাসের সংক্রমণ জনিত দীর্ঘমেয়াদি জটিলতার ঝুঁকি বেশি।
  • করোনার টিকা লং কোভিডের ঝুঁকি কমায়?
    করোনার টিকা নিলেই শরীরে ভাইরাসটির বিরুদ্ধে ১০০ শতাংশ ইমিউনিটি অর্জিত হয় না। কিন্তু এটি গুরুতর অসুস্থতার ঝুঁকি কমাতে পারে। একারণে টিকা নেওয়ার পরও যারা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন তাদের মধ্যে হাসপাতালে ভর্তি, আইসিইউ বা অক্সিজেন সাপোর্ট ও মৃত্যুর হার কম। টিকায় অর্জিত ইমিউনিটি বা অ্যান্টিবডি সংক্রমণকে দুর্বল করে দিচ্ছে বলে এমন সুফল পাওয়া যাচ্ছে। সারাংশ হলো, টিকা নিলে করোনাভাইরাস থেকে কিছু না কিছু সুরক্ষা পাওয়া যায়। কিন্তু টিকা গ্রহণ করলেই যে লং কোভিড এড়ানো যাবে এটা নিশ্চিতভাবে বলা সম্ভব নয়। লং কোভিড প্রতিরোধে করোনার টিকা কতটা কার্যকর তা সম্পর্কে সুনিশ্চিত হতে অপেক্ষা ছাড়া উপায় নেই। তবে আমরা এটা ধরে নিতে পারি যে- যেহেতু টিকায় কোভিড-১৯ দুর্বল হচ্ছে, তাই লং কোভিডের ঝুঁকিও কমবে।
  • করোনা টেস্টে নেগেটিভ আসলে করণীয়
    করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার পর করোনা টেস্টে নেগেটিভ আসার মানে এটা নয় যে ,আপনি পুরোপুরি জিতেছেন। না, আপনি ভাইরাসটির বিরুদ্ধ অর্ধেক জিতেছেন। আপনার এখনও লং কোভিড বা দীর্ঘমেয়াদি জটিলতার ঝুঁকি রয়েছে।এখনও আপনাকে স্বাস্থ্যকর খাদ্যতালিকার ওপর থাকতে হবে। নিয়মিত শরীরচর্চাও করতে হবে। দুর্বলতার কারণে শরীরচর্চায় অনীহা চলে আসতে পারে, কিন্তু নিষ্ক্রিয় বসে থাকবেন না। যতটুকু পারেন, শরীরচর্চা করেন। যেসব খাবার খেলে দুর্বলতা কমে তা খাদ্যতালিকায় রাখুন। বিচিত্র রঙের ফল ও শাকসবজি খাওয়ার চেষ্টা করুন। প্রচুর পানি পান করতে হবে।মনের অস্থিরতা কমিয়ে ফেলুন। উপসর্গকে নজরদারিতে রাখুন, শোচনীয় হচ্ছে মনে হলে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলুন।
ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

লং কোভিড সম্পর্কে যা জানা প্রয়োজন

আপডেট সময় : ১১:১৯:১১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৩০ জুলাই ২০২১

স্বাস্থ্য ও পরিচর্যা ডেস্ক : করোনাভাইরাস মহামারিতে যারা ভাইরাসটিতে সংক্রমিত হয়েছেন তাদের অনেকেই শারীরিক ও মানসিক জটিলতায় ভুগছেন। সময় পরিক্রমায় ভাইরাসটি নিজের পরিবর্তন ঘটিয়ে আরো শক্তিশালী হয়েছে। সেইসঙ্গে বেড়েছে সংক্রমণের জটিলতাও। একটা বিষয় দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, কোভিড-১৯ থেকে সুস্থ হওয়ার পরও (টেস্টে নেগেটিভ আসার পর) কিছু উপসর্গ দীর্ঘসময় থেকে যাচ্ছে। সপ্তাহের পর সপ্তাহ বা মাসের পর মাস বিরাজমান এসব উপসর্গকে চিকিৎসকেরা লং কোভিড বলে থাকেন। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত প্রত্যেকেরই যে লং কোভিড হচ্ছে তা নয়, ১০ থেকে ৩০ শতাংশ এমন পরিণতিতে ভুগছেন।সাধারণত মৃদু কোভিড-১৯ এর উপসর্গ ১-২ বা ৩ সপ্তাহের মধ্যে দূর হয়ে যায়, কিন্তু তীব্র সংক্রমণের ক্ষেত্রে ৬ সপ্তাহ পর্যন্ত লাগতে পারে। বিএমজে ডটকমের গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোভিড-১৯ জনিত উপসর্গ ৩ সপ্তাহের বেশি লেগে থাকলে তাকে লং কোভিড বলা যাবে। উপসর্গের স্থায়িত্ব ৩ থেকে ১২ সপ্তাহ হলে তাকে অ্যাকিউ লং কোভিড এবং ১২ সপ্তাহ পার হয়ে গেলে তাকে ক্রনিক লং কোভিড বলা হয়। অন্য গবেষকরা কোভিড-১৯ এর উপসর্গ দুই মাসের বেশি ভোগালে তাকে লং কোভিড বলছেন। তবে আরো বিস্তৃত গবেষণার আলোকে লং কোভিডের সময়ের পরিসর পরিবর্তন হতে পারে।

  • লং কোভিডের উপসর্গ
    কোনো কোভিড রোগীর করোনা টেস্টে নেগেটিভ আসার পর উপসর্গের স্থায়িত্ব ৩ সপ্তাহের বেশি হলে ধরে নেয়া যায় তিনি একজন লং হলার, অর্থাৎ লং কোভিডে ভুগছেন। তবে যারা করোনাভাইরাসের তীব্র সংক্রমণে ভুগেছেন তাদের উপসর্গ ৬ থেকে দুই মাস থাকতে পারে, এরপরও দূর না হলে এটাকে লং কোভিড মনে করতে হবে। যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব বার্মিংহামের অন্তর্গত থেরাপিস ফর লং কোভিডের (টিএলসি) গবেষক দল লং কোভিড বিষয়ক ২৭টি গবেষণাপত্র বিশ্লেষণ করেন। মূলত লং কোভিড বা দীর্ঘমেয়াদি জটিলতার প্রচলিত উপসর্গ ও ঝুঁকিপূর্ণ বিষয় জানতে এ বিশ্লেষণ করা হয়েছে।গবেষক দলটি জানান- ক্লান্তি বা দুর্বলতা, শ্বাসপ্রশ্বাসে কাঠিন্যতা, পেশি ব্যথা, জয়েন্ট ব্যথা, মাথাব্যথা এবং স্বাদ ও ঘ্রাণের পরিবর্তন হলো সবচেয়ে প্রচলিত উপসর্গ। এছাড়া লং হলাররা ঘুম, মনোযোগ ও স্মৃতি সংক্রান্ত সমস্যায়ও বেশি ভুগেন।
  • যাদের লং কোভিডের ঝুঁকি বেশি
    টিএলসি’র গবেষকরা আরো জানান, যারা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গুরুতর অসুস্থ হয়েছেন বা হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে বা অক্সিজেন সাপোর্ট লেগেছে তাদের লং কোভিডের ঝুঁকি বেশি। আরেকটি গবেষণামতে, যেসব কোভিড রোগীর পাঁচটির বেশি উপসর্গ আছে তাদেরও লং কোভিড বা দীর্ঘমেয়াদি জটিলতার বাড়তি ঝুঁকি রয়েছে। এছাড়া বার্ধক্যে উপনীত ব্যক্তি, নারী ও অন্যকোনো স্বাস্থ্য সমস্যায় জর্জরিত লোকদেরও করোনাভাইরাসের সংক্রমণ জনিত দীর্ঘমেয়াদি জটিলতার ঝুঁকি বেশি।
  • করোনার টিকা লং কোভিডের ঝুঁকি কমায়?
    করোনার টিকা নিলেই শরীরে ভাইরাসটির বিরুদ্ধে ১০০ শতাংশ ইমিউনিটি অর্জিত হয় না। কিন্তু এটি গুরুতর অসুস্থতার ঝুঁকি কমাতে পারে। একারণে টিকা নেওয়ার পরও যারা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন তাদের মধ্যে হাসপাতালে ভর্তি, আইসিইউ বা অক্সিজেন সাপোর্ট ও মৃত্যুর হার কম। টিকায় অর্জিত ইমিউনিটি বা অ্যান্টিবডি সংক্রমণকে দুর্বল করে দিচ্ছে বলে এমন সুফল পাওয়া যাচ্ছে। সারাংশ হলো, টিকা নিলে করোনাভাইরাস থেকে কিছু না কিছু সুরক্ষা পাওয়া যায়। কিন্তু টিকা গ্রহণ করলেই যে লং কোভিড এড়ানো যাবে এটা নিশ্চিতভাবে বলা সম্ভব নয়। লং কোভিড প্রতিরোধে করোনার টিকা কতটা কার্যকর তা সম্পর্কে সুনিশ্চিত হতে অপেক্ষা ছাড়া উপায় নেই। তবে আমরা এটা ধরে নিতে পারি যে- যেহেতু টিকায় কোভিড-১৯ দুর্বল হচ্ছে, তাই লং কোভিডের ঝুঁকিও কমবে।
  • করোনা টেস্টে নেগেটিভ আসলে করণীয়
    করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার পর করোনা টেস্টে নেগেটিভ আসার মানে এটা নয় যে ,আপনি পুরোপুরি জিতেছেন। না, আপনি ভাইরাসটির বিরুদ্ধ অর্ধেক জিতেছেন। আপনার এখনও লং কোভিড বা দীর্ঘমেয়াদি জটিলতার ঝুঁকি রয়েছে।এখনও আপনাকে স্বাস্থ্যকর খাদ্যতালিকার ওপর থাকতে হবে। নিয়মিত শরীরচর্চাও করতে হবে। দুর্বলতার কারণে শরীরচর্চায় অনীহা চলে আসতে পারে, কিন্তু নিষ্ক্রিয় বসে থাকবেন না। যতটুকু পারেন, শরীরচর্চা করেন। যেসব খাবার খেলে দুর্বলতা কমে তা খাদ্যতালিকায় রাখুন। বিচিত্র রঙের ফল ও শাকসবজি খাওয়ার চেষ্টা করুন। প্রচুর পানি পান করতে হবে।মনের অস্থিরতা কমিয়ে ফেলুন। উপসর্গকে নজরদারিতে রাখুন, শোচনীয় হচ্ছে মনে হলে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলুন।