নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশে জঙ্গিবাদ ও মাদক নির্মূলের পাশাপাশি মহামারীতে র্যাবের ভূমিকার প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র বিনা দোষে বাংলাদেশের এই বাহিনীর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।
গতকাল সোমবার র্যাবের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে দেওয়া ভাষণে তিনি ওই নিষেধাজ্ঞাকে বর্ণনা করেছে ‘অত্যন্ত গর্হিত কাজ’ হিসেবে। র্যাব সদরদপ্তরে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, যে দেশ জাতির পিতার হত্যাকারীদের এবং যুদ্ধপরাধীদের নাগরিকের মর্যাদা দিয়ে আশ্রয় দেয়, সেই দেশ বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ওপর ‘বিনা অপরাধে নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে দেয়’।
২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে র্যাবের বিভিন্ন সাফল্যের কথা প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, হলি আর্টিজানের ঘটনার মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে মানুষকে উদ্ধার করতে পেরেছে বাংলাদেশ। জলদস্যু, বনদস্যু বা মাদক নিয়ন্ত্রণের মত বিভিন্ন ক্ষেত্রে র্যাব সফলতার পরিচয় দিয়েছে।
“আমি জানি না আমাদের এই সাফল্যগুলিতে তারা (যুক্তরাষ্ট্র) কোনো দুঃখ পেয়েছে কিনা, তা আমি বলতে পারি না। কিন্তু বাংলাদেশ যে এসব ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জন করেছে, এটা হল সত্য।
“আর সেই ক্ষেত্রে এই ধরনের একটা স্যাংশন জারি করা, এটা অত্যন্ত গর্হিত কাজ বলে আমি মনে করি।” আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে গত ১০ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্র ‘গুরুতর’ মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক ও বর্তমান পুলিশ প্রধান বেনজীর আহমদসহ বাহিনীর সাত কর্মকর্তার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রতিক্রিয়ায় ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত আর্ল মিলারকে তলব করে সরকারের অবস্থান জানিয়েছিল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে চিঠিও দিয়েছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। এছাড়া ওই নিষেধাজ্ঞা তুলতে ইতোমধ্যে একটি লবিস্ট সংস্থাকে নিয়োগ দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার।
শেখ হাসিনা বলেন, “একটা কথা আমি স্পষ্ট বলতে চাই, সেটা হল আমাদের দেশে আমাদের আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা বা র্যাব বা পুলিশ বা যে কেউ তারা নিজেরা যদি কোনো অপরাধে জড়িয়ে পড়ে, আমরা কিন্তু তার শাস্তির ব্যবস্থা করি।
“কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হচ্ছে, যারা বিনা কারণে, বিনা দোষে র্যাবের কয়েকজন সদস্যের বিরুদ্ধে স্যাংশন জারি করেছে, তাদের দেশে কিন্তু এ ধরনের অপরাধ করলে তারা তাদের কোনো বাহিনীর বিরুদ্ধে কোনো ওরকম শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে না।”
যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে পুলিশের হাতে আফ্রো-আমেরিকানদের নির্যাতিত হওয়ার কথা মনে করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সেখানে ছোট বাচ্চা ছেলে, জাস্ট পকেটে হাত দিয়েছে, তাকে গুলি করে মারল, অথবা রাস্তায় ফেলে পা দিয়ে গলা চেপে মেরে ফেলে দিল। সেখানে যদি এই ধরনের অপরাধ কেউ করে, অর্থাৎ আইন শৃঙ্খলা রক্ষার নামে যদি কেউ অপরাধ করে, অপরাধ করলেও তাদের সেভাবে কোনো শাস্তি দেওয়া হয় না।
“কিন্তু বাংলাদেশ একমাত্র দেশ, পৃথিবীতে যেখানে কেউ অপরাধ করলে আমরা তার শাস্তি বিধান করি।”
যুক্তরাষ্ট্রের ওই নিষেধাজ্ঞার পেছনে ‘কিছু বাংলাদেশির’ হাত থাকারও ইংগিত করেন সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, “সবচেযে দুঃখজনক হলো আমাদের দেশের কিছু মানুষ তারাই বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অপপ্রচার চালায়। আর যারা অপপ্রচার চালাচ্ছে বসে বসে, তারা কিন্তু অপরাধী। কোনো না কোনো দোষে হয়ত চাকরি হারিয়েছে বা দেশ ছেড়েছে।”
জাতির পিতার খুনি রাশেদ চৌধুরীকে বাংলাদেশে ফেরত না দেওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের নীতিরও সমালোচনা করেন বঙ্গবন্ধুর মেয়ে শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, “সেখানে আমাদের যুদ্ধাপরাধীরা যেমন স্থান পেয়েছে, জাতির পিতার খুনি আত্মস্বীকৃত খুনি, সেও কিন্তু আমেরিকায় বসবাস করছে। তাকে তারা ওখানকার সিটিজেন করে নিয়েছে।”
“আমরা বার বার রিকোয়েস্ট করছি, অনুরাধ করছি, প্রেসিডেন্টের কাছে চিঠি দিচ্ছি, একের পর এক প্রেসিডেন্ট আসছে আমরা তার কাছে ধরনা দিয়ে যাচ্ছি। জাস্টিস ডিপার্টমেন্টে আমরা আবেদন করেছি এরা অপরাধী, এরা হত্যাকারী, নারী হত্যাকারী, খুনি, ১৫ অগাস্ট তারা খুন করেছে। “কাজেই তাদেরকে আমাদের দেশে ফেরত দিতে হবে। তারা অপরাধীদের রক্ষা করে তাদের দেশে স্থান দেয়। আর বিনা অপরাধে আমাদের দেশে স্যাংশন দেয়।”
র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা অত্যন্ত গর্হিত কাজ : প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে প্রধানমন্ত্রী
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ