ঢাকা ০৫:১৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২৫

রোহিঙ্গাদের জন্য ৮৫ কোটি ডলারের সহায়তা আহ্বান

  • আপডেট সময় : ০১:০১:৫৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৪ মার্চ ২০২৪
  • ১১৪ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থী ও স্থানীয় বাংলাদেশিদের জন্য চলতি বছর ৮৫ কোটি ২৪ লাখ ডলার সহায়তার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর এবং এর অংশীদার মানবিক সংস্থাগুলো। বুধবার রাতে জেনিভায় ২০২৪ সালের যৌথ কর্ম-পরিকল্পনা (জেআরপি) ঘোষণা করা হয়; যা বাস্তবায়ন করতে ওই পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন বলে অনুষ্ঠানে জানানো হয়। ইউএনএইচসিআরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জেআরপির বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরে বলা হয়, “এর লক্ষ্য কক্সবাজার ও ভাসান চরে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং ৩ লাখ ৪৬ হাজার স্থানীয় বাসিন্দাকে খাদ্য, আশ্রয়, স্বাস্থ্যসেবা, নিরাপদ পানি, সুরক্ষা পরিষেবা, শিক্ষা, জীবিকামূলক কাজের সুযোগ এবং দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে সহায়তা করা।” বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মিয়ানমারে ক্রমবর্ধমান সংঘাতের এই সময়ে বাংলাদেশের সাথে আন্তর্জাতিক সংহতি এবং শরণার্থীদের সুরক্ষা আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি প্রয়োজন। পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাই কমিশনার ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি এবং জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার মহাপরিচালক এমি পোপ এই কর্ম-পরিকল্পনা এবং আনুষঙ্গিক আর্থিক চাহিদা জেনিভায় দাতাদের সামনে তুলে ধরেন। ইউএনএইচসিআর বলছে, এই মানবিক সংকট বৈশ্বিক মনযোগ হারিয়ে ফেলছে। অথচ ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে বাংলাদেশ সরকার, স্থানীয় জনগণ ও দাতব্য সংস্থাগুলোর প্রয়োজন টেকসই আন্তর্জাতিক সমর্থন। পুরো শরণার্থী জনগোষ্ঠীর অর্ধেকের বেশির বয়স যে ১৮ বছরের নিচে, সে কথা তুলে ধরে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “তাদের শিক্ষা, দক্ষতা- উন্নয়ন ও জীবিকামূলক কাজের সুযোগ সীমিত।” সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিগত বছরগুলোর ‘অপর্যাপ্ত তহবিল’ মিয়ানমারে সহিংসতা ও নিপীড়ন থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা নারী, শিশু ও পুরুষদের জীবনে মারাত্মক বিরূপ প্রভাব ফেলেছে।
“তারা তাদের মৌলিক চাহিদাগুলো মেটাতেই হিমশিম খাচ্ছে, আর তাদের সমস্যা আরও প্রকট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। নিরাপত্তাহীনতা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে আক্রান্ত জনবহুল শরণার্থী ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের জীবন পুরোপুরি অনিশ্চিত, আর তারা মানবিক সহায়তার ওপর নির্ভরশীল।” এদিকে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সহযোগিতায় আরও ৫২ লাখ পাউন্ড অনুদান দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাজ্য সরকার। গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকায় ব্রিটিশ হাই কমিশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, জেআরপি উদ্বোধন উপলক্ষে এই সহায়তা দেওয়ার হচ্ছে। ক্যাম্পে খাদ্য ও রান্নার গ্যাস সরবরাহে ব্যয় হবে নতুন এই সহায়তা। মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নির্যাতন ও গণহত্যার মুখে ২০১৭ সালের ২৫ অগাস্ট রাখাইন (আরাকান) রাজ্য থেকে বাংলাদেশে স্রোতের মত ঢুকতে শুরু করে রোহিঙ্গারা। কয়েক মাসের মধ্যে সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফে আশ্রয় নেয়। যেখানে আগে থেকেই ক্যাম্পে বসবাস করছিল আরও চার লাখ। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে ওই বছরের শেষ দিকে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে রাজি হয় মিয়ানমারের অং সান সু চি সরকার। ওই বছর সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় চুক্তিতে সইও করে। পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়াসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনার এক পর্যায়ে ২০১৯ সালে দুই দফায় প্রত্যাবাসনের উদ্যোগও নেওয়া হয়। কিন্তু মিয়ানমার সরকারের ওপর আস্থা রাখতে পারেনি রোহিঙ্গারা, ভেস্তে যায় আলোচনা। এরপর আসে কোভিড মহামারী, রোহিঙ্গাদের ওপর থেকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মনোযোগেও ঢিল পড়ে। বিশ্বজুড়ে সেই সংকটের মধ্যেই ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে সু চির সরকারকে সরিয়ে ক্ষমতা দখল করেন সামরিক জান্তা জেনারেল মিন অং হ্লাইং। প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় আসে নতুন বাধা। এখন মিয়ানমারে গৃহযুদ্ধের কারণে প্রত্যাবাসনের আলোচনা আপাতত বন্ধ, উল্টো রাখাইনে যুদ্ধের কারণে নতুন করে অনুপ্রবেশের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। সাত বছর আগে বাংলাদেশ সীমানা খুলে দিলেও এবার সরকার কঠোর অবস্থানে।

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : prottashasmf@yahoo.com
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

রোহিঙ্গাদের জন্য ৮৫ কোটি ডলারের সহায়তা আহ্বান

আপডেট সময় : ০১:০১:৫৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৪ মার্চ ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক : কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থী ও স্থানীয় বাংলাদেশিদের জন্য চলতি বছর ৮৫ কোটি ২৪ লাখ ডলার সহায়তার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর এবং এর অংশীদার মানবিক সংস্থাগুলো। বুধবার রাতে জেনিভায় ২০২৪ সালের যৌথ কর্ম-পরিকল্পনা (জেআরপি) ঘোষণা করা হয়; যা বাস্তবায়ন করতে ওই পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন বলে অনুষ্ঠানে জানানো হয়। ইউএনএইচসিআরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জেআরপির বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরে বলা হয়, “এর লক্ষ্য কক্সবাজার ও ভাসান চরে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং ৩ লাখ ৪৬ হাজার স্থানীয় বাসিন্দাকে খাদ্য, আশ্রয়, স্বাস্থ্যসেবা, নিরাপদ পানি, সুরক্ষা পরিষেবা, শিক্ষা, জীবিকামূলক কাজের সুযোগ এবং দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে সহায়তা করা।” বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মিয়ানমারে ক্রমবর্ধমান সংঘাতের এই সময়ে বাংলাদেশের সাথে আন্তর্জাতিক সংহতি এবং শরণার্থীদের সুরক্ষা আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি প্রয়োজন। পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাই কমিশনার ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি এবং জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার মহাপরিচালক এমি পোপ এই কর্ম-পরিকল্পনা এবং আনুষঙ্গিক আর্থিক চাহিদা জেনিভায় দাতাদের সামনে তুলে ধরেন। ইউএনএইচসিআর বলছে, এই মানবিক সংকট বৈশ্বিক মনযোগ হারিয়ে ফেলছে। অথচ ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে বাংলাদেশ সরকার, স্থানীয় জনগণ ও দাতব্য সংস্থাগুলোর প্রয়োজন টেকসই আন্তর্জাতিক সমর্থন। পুরো শরণার্থী জনগোষ্ঠীর অর্ধেকের বেশির বয়স যে ১৮ বছরের নিচে, সে কথা তুলে ধরে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “তাদের শিক্ষা, দক্ষতা- উন্নয়ন ও জীবিকামূলক কাজের সুযোগ সীমিত।” সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিগত বছরগুলোর ‘অপর্যাপ্ত তহবিল’ মিয়ানমারে সহিংসতা ও নিপীড়ন থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা নারী, শিশু ও পুরুষদের জীবনে মারাত্মক বিরূপ প্রভাব ফেলেছে।
“তারা তাদের মৌলিক চাহিদাগুলো মেটাতেই হিমশিম খাচ্ছে, আর তাদের সমস্যা আরও প্রকট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। নিরাপত্তাহীনতা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে আক্রান্ত জনবহুল শরণার্থী ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের জীবন পুরোপুরি অনিশ্চিত, আর তারা মানবিক সহায়তার ওপর নির্ভরশীল।” এদিকে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সহযোগিতায় আরও ৫২ লাখ পাউন্ড অনুদান দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাজ্য সরকার। গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকায় ব্রিটিশ হাই কমিশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, জেআরপি উদ্বোধন উপলক্ষে এই সহায়তা দেওয়ার হচ্ছে। ক্যাম্পে খাদ্য ও রান্নার গ্যাস সরবরাহে ব্যয় হবে নতুন এই সহায়তা। মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নির্যাতন ও গণহত্যার মুখে ২০১৭ সালের ২৫ অগাস্ট রাখাইন (আরাকান) রাজ্য থেকে বাংলাদেশে স্রোতের মত ঢুকতে শুরু করে রোহিঙ্গারা। কয়েক মাসের মধ্যে সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফে আশ্রয় নেয়। যেখানে আগে থেকেই ক্যাম্পে বসবাস করছিল আরও চার লাখ। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে ওই বছরের শেষ দিকে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে রাজি হয় মিয়ানমারের অং সান সু চি সরকার। ওই বছর সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় চুক্তিতে সইও করে। পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়াসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনার এক পর্যায়ে ২০১৯ সালে দুই দফায় প্রত্যাবাসনের উদ্যোগও নেওয়া হয়। কিন্তু মিয়ানমার সরকারের ওপর আস্থা রাখতে পারেনি রোহিঙ্গারা, ভেস্তে যায় আলোচনা। এরপর আসে কোভিড মহামারী, রোহিঙ্গাদের ওপর থেকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মনোযোগেও ঢিল পড়ে। বিশ্বজুড়ে সেই সংকটের মধ্যেই ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে সু চির সরকারকে সরিয়ে ক্ষমতা দখল করেন সামরিক জান্তা জেনারেল মিন অং হ্লাইং। প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় আসে নতুন বাধা। এখন মিয়ানমারে গৃহযুদ্ধের কারণে প্রত্যাবাসনের আলোচনা আপাতত বন্ধ, উল্টো রাখাইনে যুদ্ধের কারণে নতুন করে অনুপ্রবেশের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। সাত বছর আগে বাংলাদেশ সীমানা খুলে দিলেও এবার সরকার কঠোর অবস্থানে।