প্রযুক্তি ডেস্ক : সবচেয়ে কম সময়ে রুবিক’স কিউবের ধাঁধা সমাধান করে নতুন বিশ্ব রেকর্ড গড়েছে জাপানের এক রোবট। গিনেস বিশ্ব রেকর্ডের হিসাব অনুসারে, ‘মিতসুবিশি ইলেকট্রিক’-এর তৈরি করা মেশিনটি মাত্র ০.৩০৫ সেকেন্ডে এ কৃতিত্ব অর্জন করেছে, যা আগের রেকর্ডের তুলনায় ০.০৭৫ সেকেন্ড দ্রুততর। এমনকি সবচেয়ে দ্রুত রুবিকস কিউব সমাধান করা মানুষের চেয়েও ১০ গুণ দ্রুত এর ধাঁধা সমাধান করেছে রোবটটি ,যা অর্জিত হয়েছিল গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যে আয়োজিত এক প্রতিযোগিতায়।
সে সময় ‘৩*৩*৩’ অনুপাতে ঘুর্ণায়মান এক কিউব সমাধানে মাত্র তিন দশমিক ১৩ সেকেন্ড সময় নিয়েছিলেন কোরীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক ম্যাক্স পার্ক, যা বিশ্বের দ্বিতীয় দ্রুততম রুবিক’স কিউব সমাধান করা ব্যক্তির সময়ের তুলনায় এক তৃতীয়াংশেরও কম। রোবটটি এ কৃতিত্ব অর্জনে যে সময় খরচ করেছে, একে মানুষের চোখের পলক ফেলার প্রায় সমান বলা যায়।
সাম্প্রতিক বছরগুলোয় রোবটিক খাতে যে আমূল অগ্রগতি দেখা গেছে, নতুন এ রেকর্ড তারই প্রতিফলন বলে প্রতিবেদনে লিখেছে ব্রিটিশ দৈনিক ইন্ডিপেন্ডেন্ট। এর আগের রেকর্ডটি হয়েছিল ২০০৯ সালে, যখন একটি রোবট রুবিক’স কিউব সমাধান করতে সময় নিয়েছিল এক মিনিট চার সেকেন্ড। মিতসুবিসি ইলেকট্রিক বলেছে, তারা এই কৃতিত্ব অর্জন করেছে ‘নিচ্ছিদ্র, উচ্চ ক্ষমতার, সিগনাল-রেসপন্সিভ সার্ভোমটর’ ব্যবহার করে, যার মাধ্যমে রোবটটি কেবল ০.০০৯ সেকেন্ডে কিউবটিকে ৯০ ডিগ্রি পর্যন্ত ঘুরাতে পারে। তবে, এর চেয়ে দ্রুতগতিতে লক্ষ্যমাত্রাটি অর্জনের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল খোদ কিউবের দৈহিক কাঠামো। আর এর প্রাথমিক প্রচেষ্টায় কিউবের ধাঁধা আটকে যাওয়া ও রোবটের দ্রুত চাপ প্রয়োগ করার কারণে কিউব ভেঙে যাওয়ার নজিরও দেখা গেছে।
“এর কিউব সমাধানের সময় যতটা সম্ভব কমিয়ে আনা খুব জটিল বিষয় হলেও একইসঙ্গে রোমাঞ্চকরও ছিল,” ‘গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস’কে বলেন রোবটটির নতুন রেকর্ড গড়ার প্রচেষ্টায় নেতৃত্ব দেওয়া মিতসুবিশি’র প্রকৌশলী তকুই। মিতসুবিশি বা গিনেস রেকর্ডস কেউই এ প্রকৌশলীর পূর্ণ নাম প্রকাশ করেনি। মিতসুবিশি’র জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক ইউজি ইওশিমুরা যোগ করেন, “২০১৬ সালে আমাদের ‘কম্পোনেন্ট প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং সেন্টার’ প্রতিষ্ঠার পর থেকে আমরা বিভিন্ন হাইটেক মোটর, পাওয়ার সেমিকন্ডাক্টর ও এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পণ্যগুলোর উন্নয়ন করে আসছি।” “রোবটটিতে উচ্চগতি ও নির্ভুলভাবে কিউব ঘোরানোর সক্ষমতা অর্জনে, যা আমাদের বিভিন্ন পণ্যে ব্যবহৃত মোটরের উৎপাদনশীলতা ও দক্ষতা বৃদ্ধির চাবিকাঠি, আমাদের তরুণ প্রকৌশলীরা স্বেচ্ছায় এ বিশ্ব রেকর্ড গড়ার লক্ষ্যে কাজ করেছেন। এজন্যই আমরা ‘গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস’ খেতাব পেয়েছি, যা আমাদের প্রকৌশলীদের প্রযুক্তিগত দক্ষতা বাড়ানোর অনুপ্রেরণাও দিয়েছে।”
১৯৭৪ সালে রুবিকস কিউব উদ্ভাবন করেছিলেন হাঙ্গেরীয় অধ্যাপক আর্নো রুবিক, যা পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক পপ কালচার জগতের অন্যতম পরিচিত গেইম হয়ে ওঠে। এখন পর্যন্ত গোটা বিশ্বে রুবিকস কিউব বিক্রি হয়েছে ৫০ কোটি ইউনিটের বেশি, যা এখনও জনপ্রিয়। এমনকি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে গুগল সার্চের অন্যতম সাধারণ প্রশ্ন হয়ে উঠেছে ‘কীভাবে একটি রুবিকস কিউব সমাধান করতে হয়’।
রোবটের বিশ্ব রেকর্ড, চোখের পলকে রুবিক’স কিউব সমাধান
জনপ্রিয় সংবাদ