কিশোরগঞ্জ সংবাদদাতা : বর্ষার শেষ দিকে বছরের মাঝ সময়ে বাড়তি ফসল হিসেবে রোপা আমন ধান চাষে ব্যস্ত কিশোরগঞ্জের ভৈরবের কৃষকরা। এ বছর উপজেলার সাতটি ইউনিয়নে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি রোপা আমন ধান চাষ করা হয়েছে। সেসব রোপনকৃত জমিতে দিনভর পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। রোপা আমন চাষে এক কানি বা ( ২০ শতাংশ) জমিতে ১৮/২০ মণ ধান উৎপন্ন হয় এবং ৯০ দিনে ফলন পাওয়া যায়। বাজারে এ ধানের চাহিদা থাকায় দর ও ভালো পাওয়া যায়। তাই এ ধান চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের মাঝে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভৈরব উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নের পাঁচটি গ্রামে কয়েক হাজার শতাংশ জমিতে রোপা আমন ধান চাষ করা হয়েছে। এসব রোপনকৃত জমিতে দিনের প্রখর রোদে রোপণকৃত জমিতে কেউ পোকামাকড় রোধে কীটনাশক দিচ্ছেন, কেউ জমিতে সার প্রয়োগ করছেন, কেউ আবার জমিতে আগাছা নিধনে ব্যস্ত রয়েছেন। বাজারে চালের দর বেশি থাকায় এবং এ ধানের চাহিদা থাকায় এ ধান চাষ করে লাভবান হবে বলে আশা করছেন এ অঞ্চলের কৃষকরা। তাই দিন দিন এ ধান চাষে ঝুকছেন কৃষকরা। তবে কৃষি অফিস বলছে, এ ধান চাষে কম খরচে কম সময়ে বেশি ফলন ও বাজার দর ভাল থাকায় কৃষি অফিসের সার্বিক সহযোগিতায় এ ধানের ফলন বৃদ্ধি পাচ্ছে। স্থানীয় কৃষক ইউসুফ মিয়া বলেন, বর্ষার শেষে এই সময়ে জমিতে সাধারণ মাসকালাই, সরিষা আবাদ করা হতো। কিছু জমিতে ধান চাষ হতো। কিন্ত এ বছর বর্ষার পানি দ্রুত সময়ে চলে যাওয়ায় আমরা সেসব জমিতে রোপা আমন ধান চাষ করেছি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে বছরের এই সময়ে বোনাস ফসল হিসেবে ঘরে তুলতে পারবেন বলে তিনি জানান। প্রতি বছরের ন্যায় এবছরও দশ একর জমিতে রোপা আমন ধান রোপণ করেছেন উপজেলার সাদেকপুর গ্রামের কৃষক বাছির ভূইঁয়া। তিনি বলেন, প্রতি বছরই আমি বর্ষার শেষে রোপা আমন ধান চাষ করে থাকি। কারণ রোপা আমন ধান চাষে খরচ কম লাগে। আবার অল্প সময়ে বাড়তি ফসল হিসেবে ধান ঘরে তুলতে পারি। আবহাওয়া ঠিক থাকলে প্রত্যাশা অনুযায়ী ফসল ফলবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করছেন তিনি। সাদেকপুর গ্রামের আরেক কৃষক হাসিম উদ্দিন ভূইঁয়া বলেন, আগে আমরা এসব জমিতে সরিষা বা অন্য ফসল চাষ করতাম এসব ফসল উৎপাদনে খরচ বেশি পড়তো। এ বছর এসব জমিতে রোপা আমন ধান চাষ করেছি। এখন পর্যন্ত রোপণকৃত জমিতে তেমন কোন সমস্যা দেখা দেয়নি। তবে রোপনকৃত জমিতে যেন কোন ধরনের রোগবালাই বা পোকামাকড় না ধরতে পারে সেজন্যই জমিতে কীটনাশক প্রয়োগ করছেন তিনি। ভৈরব উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আকলিমা বেগম জানান, এ বছর রোপা আমন ধানের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো দুই হাজার ২৩০ হেক্টর জমি কিন্ত অর্জিত হয়েছে দুই হাজার ২৭০ হেক্টর জমি। এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ভৈরবের কৃষকরা বাড়তি ফসল হিসেবে রোপা আমন ধান চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। ভৈরবে বোরো ধান প্রধান ফসল হিসেবে কৃষকরা বেশি আবাদ করে থাকেন। বছরের এই সময়ে জমি পতিত না রেখে কৃষকরা রোপা আমন ধান চাষে আগ্রহ বাড়ছে। এখন বাড়তি ফসল হিসেবে রোপা আমন ও সরিষা চাষীদের সরকারিভাবে প্রণোদনাসহ আমাদের মাঠ পর্যায়ে কর্মীরা সার্বক্ষণিক রোগ আক্রমণ প্রতিরোধে সহযোগিতা প্রদান করে থাকে। এছাড়া কিভাবে চাষিরা তাদের জমিতে বেশি ফসল উৎপাদন করতে পারে সে বিষয়ে কৃষি বিভাগ সার্বক্ষণিক পরামর্শ দিয়ে থাকেন বলে তিনি জানান।