ঢাকা ০৭:৩৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৫ জুন ২০২৫

রোজিনাকে ফাঁসানো হয়েছে, দাবি সাংবাদিকদের

  • আপডেট সময় : ০২:৪৩:৪২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৯ মে ২০২১
  • ১০৮ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাষ্ট্রীয় গোপন নথি ‘চুরির চেষ্টার’ অভিযোগে গ্রেপ্তার সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে ‘ফাঁসানো হয়েছে’ বলে দাবি করেছেন সচিবালয়ে তার সহকর্মীরা।
গতকাল বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাব চত্বরে বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরাম (বিএসআরএফ) আয়োজিত এক মানববন্ধন থেকে রোজিনার নিঃশর্ত মুক্তি, মামলা প্রত্যাহার এবং ‘দোষী’ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শাস্তির দাবি জানানো হয়। সংগঠনের সভাপতি তপন বিশ্বাস মানববন্ধনে বলেন, “রোজিনা ইসলামকে যেভাবে নির্যাতন করা হয়েছে, তাকে ফাঁসিয়ে দেওয়া হয়েছে- এর বিরুদ্ধে আমরা আজকে মানববন্ধনে দাঁড়িয়েছি। তার মুক্তি চাই, তার সঙ্গে যারা অন্যায় কাজগুলো করেছেন, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি। তিনি বলেন, “আমার দুটি প্রশ্ন। প্রথমত অভিযোগ দিতে পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা ছয়টি ঘণ্টা অপেক্ষা করেছেন। ছয় ঘণ্টা অপেক্ষা করার কারণটা কী? কী এমন অপরাধ করেছে সে? “দ্বিতীয়ত, স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন, রাষ্ট্রীয় গোপন নথি সে চুরি করেছে। কী এমন রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ফাইল সেটা? বলা হচ্ছে, রাশিয়ার সঙ্গে ভ্যাকসিনের জন্য একটা এগ্রিমেন্ট হয়েছে। সেই এগ্রিমেন্ট হয়েছে ২২ এপ্রিল। কিন্তু ঘটনা ঘটেছে ১৭ মে। এত গুরুত্বপূর্ণ ফাইল সচিবের পিএসের টেবিলে পড়ে আছে!”
মন্ত্রণালয়ের ওই যুক্তি ‘কোনোভাবেই বিশ্বাসযোগ্য নয়’ মন্তব্য করে তপন বিশ্বাস বলেন, “এটা রোজিনাকে ফাঁসানোর ষড়যন্ত্র। রোজিনা ইসলাম নির্দোষ বলে মনে করি।”
বিএসআরএফ সভাপতি বলেন, রোজিনার মুক্তির দাবিতে তারা যে আন্দোলন করছেন, তা অব্যাহত থাকবে। প্রয়োজনে ‘আরও কঠোর কর্মসূচি’ তারা দেবেন।
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমেদ বলেন, “আমরা চাই সচিবালয়ে সাংবাদিকদের জন্য একটি সুষ্ঠু কর্মপরিবেশ তৈরি করা হোক, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের চক্রান্তে আমাদের কোনো সাংবাদিক না পড়ে। আমাদের কর্মসূচি চলমান থাকবে।” এ দাবিতে একাত্মতা জানিয়ে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপু মানববন্ধনে অংশ নেন।
মুক্তির দাবিতে প্রেস ক্লাবে সাংবাদিকদের মানববন্ধন : দৈনিক প্রথম আলোর সিনিয়র রিপোর্টার রোজিনা ইসলামের নিঃশর্ত মুক্তি, মামলা প্রত্যাহার ও দোষী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছে সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠন।
গতকাল বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাব চত্বরে এই কর্মসূচি পালন করা হয়। সংগঠনগুলোর মধ্যে রয়েছে—বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরাম (বিএসআরএফ), বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে), রংপুর বিভাগীয় সাংবাদিক অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ ফটোসাংবাদিক অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (একাংশ), ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (একাংশ)।
বিএফইউজের মানববন্ধন : মানববন্ধনে বিএসআরএফের সভাপতি তপন বিশ্বাস বলেন, ‘প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামকে যেভাবে নির্যাতন করা হয়েছে, তাকে ফাঁসিয়ে দেওয়া হয়েছে, এর বিরুদ্ধে আমরা আজকে মানববন্ধনে দাঁড়িয়েছি। আমরা তার মুক্তি চাই, তার সঙ্গে যারা অন্যায় কাজগুলো করেছেন, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।’ তিনি বলেন, ‘রোজিনা ইসলামকে ডেকে নিয়ে কাগজ ধরিয়ে নাটকের মতো করে অভিযোগ দাঁড় করানো হয়েছে। আমার দুটি প্রশ্ন—একটি অভিযোগ দিতে পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা ৬ ঘণ্টা অপেক্ষা করেছেন। ৬ ঘণ্টা অপেক্ষা করার কারণটা কী? কী এমন অপরাধ করেছেন তিনি?’ বিএসআরএফের সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমেদ বলেন, ‘রোজিনা ইসলামের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে আমরা আজকে মানববন্ধনে দাঁড়িয়েছি। তার মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত এ ধরনের কর্মসূচি চলতে থাকবে।’
রংপুর বিভাগ সাংবাদিক সমিতির মানববন্ধন : তিনি আরও বলেন, ‘আমরা চাই সচিবালয়ে সাংবাদিকদের একটি সুষ্ঠু কর্মপরিবেশ তৈরি করা হোক, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের চক্রান্তে কোনও সাংবাদিক যাতে না পড়ে। আমাদের কর্মসূচি চলমান থাকবে।’ একাত্মতা জানিয়ে মানববন্ধনে অংশ নেন ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপু। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরামের আন্দোলনের সঙ্গে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন একাত্মতা প্রকাশ করছে। আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। আগামীকাল সকাল ১০টায় আবারও প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করবো।’
বাংলাদেশ ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের মানববন্ধন : তিনি বলেন, ‘দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলতে চাই, সরকারি অর্থায়নে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার এখনই বন্ধ করতে হবে। এই অর্থ জনগণ দেয়। সেই অর্থ লুটপাটকারীরা ব্যবহার করবেন, তাদের ভাবমূর্তি উন্নয়নের জন্য ব্যবহার করবেন, সেটা আমরা কোনোভাবেই মানবো না। ঘটনা তদন্তে একটি স্বাধীন তদন্ত কমিটি গঠন করতে হবে। এটা আমলাদের কর্তৃত্বে হতে পারে না।’
মানববন্ধনে বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরামের সহ-সভাপতি সাজেদা পারভীন সাজু, সাংগঠনিক সম্পাদক ইসমাইল হোসেন, কোষাধ্যক্ষ মাসউদুল হক, দফতর সম্পাদক মাসুদ রানা, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাবিবুর রহমান (পঞ্চায়েত হাবিব)-সহ সংগঠনের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
মামলা তুলে নেওয়ার দাবিতে ডিআরইউর সমাবেশ : মামলা প্রত্যাহার করে সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে মুক্তি দেওয়ার দাবি জানিয়েছে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ)।
গতকাল বুধবার ডিআরইউর এক সমাবেশ থেকে সচিবালয়ে রোজিনাকে আটকে রেখে হেনস্তায় জড়িতদের শাস্তির দাবিও জানানো হয়। দুপুরে ডিআরইউ চত্বরের এই সভায় এ সমাবেশে বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা উপস্থিত হয়ে সংহতি জানান। সরকারি নথি ‘চুরির চেষ্টার’ অভিযোগ তুলে সোমবার সচিবালয়ে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের এক কর্মকর্তার কক্ষে প্রায় সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা আটকে রাখা হয়েছিল প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনাকে। পরে তাকে শাহবাগ থানায় সোপর্দ করা হয় এবং অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট ও দ-বিধির কয়েকটি ধারায় তার বিরুদ্ধে মামলা করে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ।ওই মামলায় এই সাংবাদিক এখন কারাগারে। রোজিনাকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে দেশে-বিদেশে সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠনের ক্ষোভ-বিক্ষোভের মধ্যে ঢাকার প্রতিবেদকদের সংগঠন ডিআরইউও প্রতিবাদ সমাবেশ করল। সমাবেশে সচিবালয় রিপোর্টার্স ফোরামের সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমেদ বলেন, “আমরা দেখেছি কীভাবে আমাদের বোন রোজিনা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। আমাদের চোখের সামনে তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়ে গিয়েছেন, তবুও তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়নি। আমরা কিছুই করতে পারিনাই। আমরা অসহায় ছিলাম।
“আমরা রোজিনা আপার নিঃশর্ত মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাব।” টেলিকম রিপোর্টার্স, বাংলাদেশের সভাপতি রাশেদ মেহেদী বলেন, “রোজিনা ইসলাম জেলে আছেন মানে আমরা সব সাংবাদিক জেলে আছি। আমরা ব্রিটিশ উপনিবেশ দেখি নাই, পাকিস্তান উপনিবেশ দেখি নাই, কিন্তু বাংলাদেশে এখন আমরা প্রশাসন ক্যাডারের উপনিবেশ দেখছি।”
ল রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি মাশহুদুল হক বলেন, “যে আইনে রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে, সামান্যতম ন্যায়বিচার হলেও তার জামিন সম্ভব। অবিলম্বে এই মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি। “স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যেসব কর্মকর্তারা রোজিনাকে মিথ্যা অভিযোগে গ্রেপ্তার করিয়ে দেশের ভাবমূর্তি বহির্বিশ্বে ক্ষুণ্ন করেছেন, অবিলম্বে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।”
অ্যাভিয়েশন অ্যান্ড ট্যুরিজম জার্নালিস্টস ফোরাম বাংলাদেশের সভাপতি নাদিরা কিরণ বলেন, “রোজিনার উপর যে নির্যাতন করা হয়েছে, সেটি নিঃসন্দেহে সাংবাদিকদের উপরই নির্যাতনের শামিল। শুধু ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে আন্দোলনকে চালিয়ে রাখা যাবে না। তার শুধু জামিনই নয়, বরং নিঃশর্ত মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে।” ইকোনমিকস রিপোর্টার্স ফোরামের সাধারণ সম্পাদক রাশেদুল হাসান বলেন, “এটি কেবল সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা নয়, এর মাধ্যমে সাংবাদিকদের তথ্য অধিকারের বিষয়টিকে ক্ষুণ্ন করা হয়েছে।।” বরিশাল ডিভিশনাল জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আমিন আল রশিদ বলেন, “অফিসিয়াল সিক্রেটস আইনে যে মামলা রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে করা হয়েছে, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এই আইনে মামলা হতে পারে না। “এই মামলার অর্থই হলো বাংলাদেশের কোনো সরকারি অফিসের দুর্নীতি-অনিয়মের বিরুদ্ধে তথ্য দেওয়া যাবে না। এই মামলার অর্থই হলো বাংলাদেশে অনুসন্ধানী সাংবাদিক বলে কিছু থাকবে না।”
সমাবেশে সংহতি জানিয়ে প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আনিসুল হক বলেন, “তথ্য গ্রহণ করা মানেই তথ্য চুরি নয়। রোজিনা যে তথ্য পেয়েছেন, সেটি ক্রসচেকের উদ্দেশ্যেই সেখানে গিয়েছেন।
“বৃহস্পতিবার আদালতে জামিনের শুনানি হবে। আমরা তার নিঃশর্ত মুক্তি এবং মামলা প্রত্যাহারের দাবি করছি।” রোজিনার বিরুদ্ধে যে অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টে মামলা করা হয়েছে, তার যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন বক্তারা। তারা বলেন, রোজিনাকে ‘শারীরিক নির্যাতনকারী’ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ২০১৩ সালের নিরাপত্তা হেফাজতে নির্যাতন ও মৃত্যু নিবারণ আইনে মামলা দায়ের করা উচিৎ। প্রতিবাদ সমাবেশ শেষে উপস্থিত সাংবাদিকরা সচিবালয়ের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের কাছে রোজিনা ইসলামের মুক্তি এবং তার উপর নির্যাতনকারীদের শাস্তির দাবিতে স্মারকলিপি দিতে যান।

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

রোজিনাকে ফাঁসানো হয়েছে, দাবি সাংবাদিকদের

আপডেট সময় : ০২:৪৩:৪২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৯ মে ২০২১

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাষ্ট্রীয় গোপন নথি ‘চুরির চেষ্টার’ অভিযোগে গ্রেপ্তার সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে ‘ফাঁসানো হয়েছে’ বলে দাবি করেছেন সচিবালয়ে তার সহকর্মীরা।
গতকাল বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাব চত্বরে বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরাম (বিএসআরএফ) আয়োজিত এক মানববন্ধন থেকে রোজিনার নিঃশর্ত মুক্তি, মামলা প্রত্যাহার এবং ‘দোষী’ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শাস্তির দাবি জানানো হয়। সংগঠনের সভাপতি তপন বিশ্বাস মানববন্ধনে বলেন, “রোজিনা ইসলামকে যেভাবে নির্যাতন করা হয়েছে, তাকে ফাঁসিয়ে দেওয়া হয়েছে- এর বিরুদ্ধে আমরা আজকে মানববন্ধনে দাঁড়িয়েছি। তার মুক্তি চাই, তার সঙ্গে যারা অন্যায় কাজগুলো করেছেন, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি। তিনি বলেন, “আমার দুটি প্রশ্ন। প্রথমত অভিযোগ দিতে পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা ছয়টি ঘণ্টা অপেক্ষা করেছেন। ছয় ঘণ্টা অপেক্ষা করার কারণটা কী? কী এমন অপরাধ করেছে সে? “দ্বিতীয়ত, স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন, রাষ্ট্রীয় গোপন নথি সে চুরি করেছে। কী এমন রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ফাইল সেটা? বলা হচ্ছে, রাশিয়ার সঙ্গে ভ্যাকসিনের জন্য একটা এগ্রিমেন্ট হয়েছে। সেই এগ্রিমেন্ট হয়েছে ২২ এপ্রিল। কিন্তু ঘটনা ঘটেছে ১৭ মে। এত গুরুত্বপূর্ণ ফাইল সচিবের পিএসের টেবিলে পড়ে আছে!”
মন্ত্রণালয়ের ওই যুক্তি ‘কোনোভাবেই বিশ্বাসযোগ্য নয়’ মন্তব্য করে তপন বিশ্বাস বলেন, “এটা রোজিনাকে ফাঁসানোর ষড়যন্ত্র। রোজিনা ইসলাম নির্দোষ বলে মনে করি।”
বিএসআরএফ সভাপতি বলেন, রোজিনার মুক্তির দাবিতে তারা যে আন্দোলন করছেন, তা অব্যাহত থাকবে। প্রয়োজনে ‘আরও কঠোর কর্মসূচি’ তারা দেবেন।
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমেদ বলেন, “আমরা চাই সচিবালয়ে সাংবাদিকদের জন্য একটি সুষ্ঠু কর্মপরিবেশ তৈরি করা হোক, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের চক্রান্তে আমাদের কোনো সাংবাদিক না পড়ে। আমাদের কর্মসূচি চলমান থাকবে।” এ দাবিতে একাত্মতা জানিয়ে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপু মানববন্ধনে অংশ নেন।
মুক্তির দাবিতে প্রেস ক্লাবে সাংবাদিকদের মানববন্ধন : দৈনিক প্রথম আলোর সিনিয়র রিপোর্টার রোজিনা ইসলামের নিঃশর্ত মুক্তি, মামলা প্রত্যাহার ও দোষী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছে সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠন।
গতকাল বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাব চত্বরে এই কর্মসূচি পালন করা হয়। সংগঠনগুলোর মধ্যে রয়েছে—বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরাম (বিএসআরএফ), বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে), রংপুর বিভাগীয় সাংবাদিক অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ ফটোসাংবাদিক অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (একাংশ), ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (একাংশ)।
বিএফইউজের মানববন্ধন : মানববন্ধনে বিএসআরএফের সভাপতি তপন বিশ্বাস বলেন, ‘প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামকে যেভাবে নির্যাতন করা হয়েছে, তাকে ফাঁসিয়ে দেওয়া হয়েছে, এর বিরুদ্ধে আমরা আজকে মানববন্ধনে দাঁড়িয়েছি। আমরা তার মুক্তি চাই, তার সঙ্গে যারা অন্যায় কাজগুলো করেছেন, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।’ তিনি বলেন, ‘রোজিনা ইসলামকে ডেকে নিয়ে কাগজ ধরিয়ে নাটকের মতো করে অভিযোগ দাঁড় করানো হয়েছে। আমার দুটি প্রশ্ন—একটি অভিযোগ দিতে পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা ৬ ঘণ্টা অপেক্ষা করেছেন। ৬ ঘণ্টা অপেক্ষা করার কারণটা কী? কী এমন অপরাধ করেছেন তিনি?’ বিএসআরএফের সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমেদ বলেন, ‘রোজিনা ইসলামের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে আমরা আজকে মানববন্ধনে দাঁড়িয়েছি। তার মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত এ ধরনের কর্মসূচি চলতে থাকবে।’
রংপুর বিভাগ সাংবাদিক সমিতির মানববন্ধন : তিনি আরও বলেন, ‘আমরা চাই সচিবালয়ে সাংবাদিকদের একটি সুষ্ঠু কর্মপরিবেশ তৈরি করা হোক, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের চক্রান্তে কোনও সাংবাদিক যাতে না পড়ে। আমাদের কর্মসূচি চলমান থাকবে।’ একাত্মতা জানিয়ে মানববন্ধনে অংশ নেন ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপু। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরামের আন্দোলনের সঙ্গে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন একাত্মতা প্রকাশ করছে। আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। আগামীকাল সকাল ১০টায় আবারও প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করবো।’
বাংলাদেশ ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের মানববন্ধন : তিনি বলেন, ‘দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলতে চাই, সরকারি অর্থায়নে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার এখনই বন্ধ করতে হবে। এই অর্থ জনগণ দেয়। সেই অর্থ লুটপাটকারীরা ব্যবহার করবেন, তাদের ভাবমূর্তি উন্নয়নের জন্য ব্যবহার করবেন, সেটা আমরা কোনোভাবেই মানবো না। ঘটনা তদন্তে একটি স্বাধীন তদন্ত কমিটি গঠন করতে হবে। এটা আমলাদের কর্তৃত্বে হতে পারে না।’
মানববন্ধনে বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরামের সহ-সভাপতি সাজেদা পারভীন সাজু, সাংগঠনিক সম্পাদক ইসমাইল হোসেন, কোষাধ্যক্ষ মাসউদুল হক, দফতর সম্পাদক মাসুদ রানা, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাবিবুর রহমান (পঞ্চায়েত হাবিব)-সহ সংগঠনের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
মামলা তুলে নেওয়ার দাবিতে ডিআরইউর সমাবেশ : মামলা প্রত্যাহার করে সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে মুক্তি দেওয়ার দাবি জানিয়েছে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ)।
গতকাল বুধবার ডিআরইউর এক সমাবেশ থেকে সচিবালয়ে রোজিনাকে আটকে রেখে হেনস্তায় জড়িতদের শাস্তির দাবিও জানানো হয়। দুপুরে ডিআরইউ চত্বরের এই সভায় এ সমাবেশে বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা উপস্থিত হয়ে সংহতি জানান। সরকারি নথি ‘চুরির চেষ্টার’ অভিযোগ তুলে সোমবার সচিবালয়ে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের এক কর্মকর্তার কক্ষে প্রায় সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা আটকে রাখা হয়েছিল প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনাকে। পরে তাকে শাহবাগ থানায় সোপর্দ করা হয় এবং অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট ও দ-বিধির কয়েকটি ধারায় তার বিরুদ্ধে মামলা করে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ।ওই মামলায় এই সাংবাদিক এখন কারাগারে। রোজিনাকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে দেশে-বিদেশে সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠনের ক্ষোভ-বিক্ষোভের মধ্যে ঢাকার প্রতিবেদকদের সংগঠন ডিআরইউও প্রতিবাদ সমাবেশ করল। সমাবেশে সচিবালয় রিপোর্টার্স ফোরামের সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমেদ বলেন, “আমরা দেখেছি কীভাবে আমাদের বোন রোজিনা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। আমাদের চোখের সামনে তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়ে গিয়েছেন, তবুও তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়নি। আমরা কিছুই করতে পারিনাই। আমরা অসহায় ছিলাম।
“আমরা রোজিনা আপার নিঃশর্ত মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাব।” টেলিকম রিপোর্টার্স, বাংলাদেশের সভাপতি রাশেদ মেহেদী বলেন, “রোজিনা ইসলাম জেলে আছেন মানে আমরা সব সাংবাদিক জেলে আছি। আমরা ব্রিটিশ উপনিবেশ দেখি নাই, পাকিস্তান উপনিবেশ দেখি নাই, কিন্তু বাংলাদেশে এখন আমরা প্রশাসন ক্যাডারের উপনিবেশ দেখছি।”
ল রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি মাশহুদুল হক বলেন, “যে আইনে রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে, সামান্যতম ন্যায়বিচার হলেও তার জামিন সম্ভব। অবিলম্বে এই মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি। “স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যেসব কর্মকর্তারা রোজিনাকে মিথ্যা অভিযোগে গ্রেপ্তার করিয়ে দেশের ভাবমূর্তি বহির্বিশ্বে ক্ষুণ্ন করেছেন, অবিলম্বে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।”
অ্যাভিয়েশন অ্যান্ড ট্যুরিজম জার্নালিস্টস ফোরাম বাংলাদেশের সভাপতি নাদিরা কিরণ বলেন, “রোজিনার উপর যে নির্যাতন করা হয়েছে, সেটি নিঃসন্দেহে সাংবাদিকদের উপরই নির্যাতনের শামিল। শুধু ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে আন্দোলনকে চালিয়ে রাখা যাবে না। তার শুধু জামিনই নয়, বরং নিঃশর্ত মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে।” ইকোনমিকস রিপোর্টার্স ফোরামের সাধারণ সম্পাদক রাশেদুল হাসান বলেন, “এটি কেবল সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা নয়, এর মাধ্যমে সাংবাদিকদের তথ্য অধিকারের বিষয়টিকে ক্ষুণ্ন করা হয়েছে।।” বরিশাল ডিভিশনাল জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আমিন আল রশিদ বলেন, “অফিসিয়াল সিক্রেটস আইনে যে মামলা রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে করা হয়েছে, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এই আইনে মামলা হতে পারে না। “এই মামলার অর্থই হলো বাংলাদেশের কোনো সরকারি অফিসের দুর্নীতি-অনিয়মের বিরুদ্ধে তথ্য দেওয়া যাবে না। এই মামলার অর্থই হলো বাংলাদেশে অনুসন্ধানী সাংবাদিক বলে কিছু থাকবে না।”
সমাবেশে সংহতি জানিয়ে প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আনিসুল হক বলেন, “তথ্য গ্রহণ করা মানেই তথ্য চুরি নয়। রোজিনা যে তথ্য পেয়েছেন, সেটি ক্রসচেকের উদ্দেশ্যেই সেখানে গিয়েছেন।
“বৃহস্পতিবার আদালতে জামিনের শুনানি হবে। আমরা তার নিঃশর্ত মুক্তি এবং মামলা প্রত্যাহারের দাবি করছি।” রোজিনার বিরুদ্ধে যে অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টে মামলা করা হয়েছে, তার যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন বক্তারা। তারা বলেন, রোজিনাকে ‘শারীরিক নির্যাতনকারী’ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ২০১৩ সালের নিরাপত্তা হেফাজতে নির্যাতন ও মৃত্যু নিবারণ আইনে মামলা দায়ের করা উচিৎ। প্রতিবাদ সমাবেশ শেষে উপস্থিত সাংবাদিকরা সচিবালয়ের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের কাছে রোজিনা ইসলামের মুক্তি এবং তার উপর নির্যাতনকারীদের শাস্তির দাবিতে স্মারকলিপি দিতে যান।