স্বাস্থ্য ও পরিচর্যা ডেস্ক: ক্যাপসিকাম বা মিষ্টি মরিচ সারা বিশ্বেই একটি জনপ্রিয় সবজি। বাংলাদেশেও এর জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে। মিষ্টি মরিচের আকার ও আকৃতি বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে। তবে সাধারণত ফল গোলাকার ও ত্বক পুরু হয়। মিষ্টি মরিচ আমাদের দেশীয় প্রচলিত সবজি না হলেও ইদানীং এর চাষ প্রসারিত হচ্ছে। বিশেষ করে বড় বড় শহরের আশেপাশে সীমিত পরিসরে কৃষক ভাইয়েরা এর চাষ করে থাকেন, যা অভিজাত হোটেল ও বিভিন্ন বড় বড় মার্কেটে বিক্রি হয়ে থাকে। এ ছাড়া মিষ্টি মরিচের বিদেশে রপ্তানির সম্ভাবনাও প্রচুর। কারণ সারা বিশ্বে টমেটোর পরেই দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ সবজি হচ্ছে মিষ্টি মরিচ। ক্যাপসিকামের মতো অত্যন্ত উপকারী এক সবজির ব্যবহারও বাঙালি রান্নায় খুব একটা বেশি নেই বললেই চলে। বরং বাড়িতে চাইনিজ পদ রান্না হলেই এই সবজি ব্যবহার হয়। আর এই সবজির প্রতি অবহেলা যে স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর, তা কিন্তু আগেভাগেই জানিয়ে রেখেছেন বিশেজ্ঞরা। পুষ্টিমানের দিক থেকে মিষ্টি মরিচ একটি অত্যন্ত মূল্যবান সবজি। প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ’সি’ থাকার কারণে এবং অতি সহজেই টবে চাষ করা যায় বলে দেশের জনসাধারণকে মিষ্টি মরিচ খাওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করা যেতে পারে। অতি পরিচিত এই সবজিতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের ভা-ার, নিয়মিত খেলে রোগব্যাধি কাছে ঘেঁষবে না আর!
ক্যাপসিকামের বৈজ্ঞানিক নাম ক্যাপসিকাম এনাম। ক্যাপসিকাম এক ধরনের ফল, যা সুইট পেপার নামেও পরিচিত। এটার আকৃতি অনেকটা বেল-এর মত হওয়ায় আমেরিকানরা এটার নাম দিয়েছে বেল পেপার। ক্যাপসিকাম মরিচ এবং টমেটো পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। ক্যাপসিকাম কাঁচা বা রান্না করে খাওয়া যায়। এটাকে শুকিয়ে পাউডার বানিয়ে প্যাপরিকা নামক মশলায় রূপান্তর করা হয়। ক্যাপসিকামে আছে খুবই কম ক্যালরি এবং অনেক বেশী ভিটামিন সি ও এন্টিঅক্সিডেন্ট। তাই এটা একটি স্বাস্থ্যকর খাবার। ক্যাপসিকাম সবুজ, লাল, কমলা এবং হলুদ রঙের হয়। কাঁচা ক্যাপসিকামের ৯২%ই পানি এবং বাকিটা শর্করা ও সামান্য পরিমাণে প্রোটিন ও ফ্যাট। ১০০ গ্রাম কাঁচা ক্যাপসিকামে রয়েছে: ক্যালরি ৩১, পানি ৯২%, প্রোটিন ১ গ্রাম, কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা ৬ গ্রাম, চিনি ৪.২ গ্রাম, ফাইবার ২.১ গ্রাম, ফ্যাট ০.৩ গ্রাম। ক্যাপসিকামে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও মিনারেল। ভিটামিন সি. একটি মাঝারি আকারের ক্যাপসিকাম আপনাকে দিবে প্রতিদিনের চাহিদার ১৬৯% ভিটামিন সি। ফলে এটা ভিটামিন সি এর সবচেয়ে বড় উৎসগুলির অন্যতম। ভিটামিন বি-৬. পাইরিডক্সিন হচ্ছে খুব কমন ধরণের ভিটামিন বি-৬। এটা লোহিত রক্ত কণিকা উৎপাদনে খুবই দরকারি। ভিটামিন কে১. এই ভিটামিনটি রক্ত জমাট বাঁধতে এবং হাঁড় ভাল রাখতে সাহায্য করে। পটাশিয়াম. এই খনিজটি হার্ট ভাল রাখতে সাহায্য করে। ফোলেট. ভিটামিন বি-৯ নামেও পরিচিত এই ভিটামিনটি শরীরের বিভিন্ন কাজে সাহায্য করে। গর্ভবতী মায়েদের দরকার পর্যাপ্ত ফোলেট।
ভিটামিন ই. এটা একটা শক্তিশালী এন্টিঅক্সিডেন্ট যা নার্ভ ও মাংসপেশীর কার্যকারিতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। ভিটামিন এ. লাল ক্যাপসিকামে আছে প্রচুর প্রো-ভিটামিন এ (বেটা ক্যারোটিন), যা আমাদের শরীর ভিটামিন এ-তে রূপান্তর করে। ক্যাপসিকাম অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর – বিশেষ করে ক্যারটিনয়েড, যা পাকা ক্যাপসিকামে বেশী পরিমাণে পাওয়া যায়। লাল রঙের ক্যাপসিকামে ক্যাপস্যানথিন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বেশি থাকে। এটা ক্যাপসিকামকে এর লাল রঙ দেয়। হলুদ ক্যাপসিকামে ভায়োলায্যানথিন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। কাঁচা ক্যাপসিকামে লুটিন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। কিন্তু পাকা ক্যাপসিকামে এটা নেই। পর্যাপ্ত লুটিন খেলে দৃষ্টি শক্তির উন্নয়ন হয়। প্রতিদিন ডায়েটে ক্যাপসিকামকে অবশ্যই জায়গা করে দিন। একমাত্র এই কৌশলেই আপনি একাধিক রোগব্যাধির হাত থেকে বাঁচতে পারবেন। আসুন এর গুণ সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
হার্ট ভালো রাখে
আপনার হার্টকে সুস্থ সবল রাখার কাজে সাহায্য করতে পারে ক্যাপসিকাম। আসলে এই সবজিতে রয়েছে লাইকোপেন নামক একটি ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট। আর এই উপাদান কিন্তু হার্টের অসুখকে দূরে রাখার কাজে একাই একশো। তাই হৃৎপি-ের হাল ফেরাতে পাতে থাক ক্যাপসিকাম।
বিপাকের হার বাড়বে
দেহের ভালো-খারাপের অনেকটাই নির্ভর করে মেটাবলিজম বা বিপাক ক্রিয়ার উপর। তাই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা সবসময়ই মেটাবলিজমকে স্বাভাবিক রাখার পরামর্শ দেন। একমাত্র বিপাক ক্রিয়া স্বাভাবিক গতিতে নিজের কাজ করে যেতে পারলেই বিভিন্ন ক্রনিক অসুখের ফাঁদ এড়িয়ে চলা যাবে। আর জানলে অবাক হবেন, আপনার বিপাকের গতিকে স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করতে পারে ক্যাপসিকাম। আসলে এই সবজিতে এমন কিছু অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা এই কাজে আপনাকে সাহায্য করে। তাই নিয়মিত এই সবজি পাতে রাখা মাস্ট।
ক্যানসারের ঝুঁকি কমবে
ক্যানসার একটি প্রাণঘাতী অসুখ। তাই যেন তেন প্রকারেণ এই অসুখের ফাঁদ এড়িয়ে চলতে হবে। আর এই কাজেও আপনাকে সাহায্য করতে পারে ক্যাপসিকাম। আসলে এই সবজিতে রয়েছে বেশকিছুটা পরিমাণে লাইকোপেন। আর এই উপাদানই দেহে ক্যানসার কোষের বৃদ্ধি আটকে দিতে পারে। তাই কর্কটরোগের কবল থেকে বাঁচতে চাইলে এই সবজিকে রোজের ডায়েটে জায়গা করে দিন।
ইমিউনিটি বাড়বে
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা চাঙ্গা থাকলে একাধিক ছোট-বড় সংক্রামক অসুখের ফাঁদ এড়িয়ে চলা যাবে। তাই যাঁরা নিয়মিত জ্বর, সর্দি, কাশির মতো ভাইরাল ডিজিজে আক্রান্ত হন, তাদের ডায়েটে ক্যাপশিকাম থাকাটা মাস্ট। আর সুস্থ-সবল ব্যক্তিরাও ইমিউনিটিকে চাঙ্গা রাখতে নিয়মিত ক্যাপশিকাম খেতেই পারেন। এতেই দেখবেন উপকার মিলবে হাতেনাতে।
ব্যথার প্রকোপ কমবে
আর্থ্রাইটিসের ব্যথা, যন্ত্রণায় ভুগছেন নাকি? তাহলে যে আজ থেকেই ডায়েটে ক্যাপশিকামকে জায়গা করে দিতে হবে। আসলে এই সবজিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা কিনা ব্যথা এবং প্রদাহ দূর করার কাজে একাই একশো। তাই ব্যথা বিহীন নীরোগ জীবন কাটাতে চাইলে অবশ্যই পাতে ক্যাপশিকাম রাখুন। এতেই আপনার সুস্থ থাকার পথ প্রশস্থ হবে।
ওজন কমবে
গবেষণায় দেখা গেছে, ক্যাপসিকাম আমাদের শরীরের থার্মোজেনেসিস সক্রিয় করে এবং মেটাবলিযম বৃদ্ধি করে, কিন্তু ঝাল মরিচের মত ব্লাড প্রেশার ও হার্ট রেইট বৃদ্ধি করে না। ফলে এটা ওজন কমানোর একটি নিরাপদ খাবার। এছাড়া এতে আছে খুবই কম ক্যালরি।
হাড় সারাতে সাহায্য করে
কলাজেন নামক প্রোটিন আমাদের হাড়কে মজবুত করে। কলাজেন সিন্থেসাইজ হতে প্রয়োজন ভিটামিন সি। ক্যাপসিকামে আছে প্রচুর ভিটামিন সি। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল লাইব্রেরি অফ মেডিসিন এর মতে লাল এবং হলুদ ক্যাপসিকামে কমলা ক্যাপসিকামের তুলনায় চার গুণ বেশী ভিটামিন সি আছে।
রক্তাল্পতা (এনিমিয়া) রোধ করে
এনিমিয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে রক্তে আয়রনের অভাব। ক্যাপসিকামে শুধু পর্যাপ্ত আয়রনই নেই, এতে আছে প্রচুর ভিটামিন সি যা আয়রন শুষে নিতে সাহায্য করে। গবেষকদের মতে নিয়মিত কাচা ক্যাপসিকাম খাওয়ার সাথে সাথে আয়রন সমৃদ্ধ খাবার যেমন গরুর মাংস ও পালং শাক খেলে এনিমিয়া থেকে শরীর রক্ষা পাবে।
দৃষ্টিশক্তির উন্নতি হয়
ক্যাপসিকামে আছে প্রচুর পরিমাণে লুটিন এবং যিয়ায্যানথিন নামক ক্যারটিনয়েড। তাই বেশী বেশী ক্যাপসিকাম খেলে দৃষ্টিশক্তির উন্নয়ন হয়। বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত এসব ক্যারটিনয়েড সমৃদ্ধ খাবার খেলে ক্যাটারেক্ট এবং মাকুলার ডিজেনারেশন-এর ঝুঁকি কমে।
রোগ নিরাময়ে জাদুকরী সমাধান মেলে ক্যাপসিকাম খেলে
জনপ্রিয় সংবাদ