পাবনা প্রতিনিধি : রলমন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয় দেওয়া তিন যাত্রীকে জরিমানা করায় সাময়িক বরখাস্ত ভ্রাম্যমাণ টিকিট পরিদর্শক (টিটিই) শফিকুল ইসলামকে ব্যাখ্যা জানাতে তলব করা হয়েছে। আজ রোববার তাঁকে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় কার্যালয়ে তলব করা হয়েছে। গতকাল শনিবার দুপুরে যোগাযোগ করা হলে শফিকুল ইসলাম এ তথ্য জানিয়েছেন।
পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (ডিসিও) নাসির উদ্দিন টিটিইকে বরখাস্তর কারণ হিসেবে এক যাত্রীর হাতে লেখা একটি অভিযোগপত্রের কথা জানিয়েছেন। ৫ মে ঘটনার দিন ইমরুল কায়েস নামের এক যাত্রী অভিযোগটি দিয়েছেন। টিটিই শফিকুল ইসলামকে ওই দিনই বরখাস্ত করা হয়েছে।
অভিযোগপত্রে ওই যাত্রী দাবি করেছেন, তিনি ৫ মে দিবাগত রাত ২টা ১৫ মিনিটে কাউন্টারে টিকিট না পেয়ে ট্রেনে ওঠেন। এরপর টিটিই এসে তাঁদের কাছে টিকিট চান। তিনি টিকিট পাননি বলে জানান। পরে টিকিট দিতে বললে টিটিই তিনজনের ভাড়া বাবদ ১ হাজার ৫০০ টাকা দাবি করেন। ৩০০ টাকার টিকিট ৫০০ কেন জানতে চাইলে তিনি ৩ হাজার ৬০০ টাকা দিয়ে টিকিট নিতে হবে বলে জানান। এত টাকা দেওয়া সম্ভব না বলাতে টিটিই খেপে যান। তিনি বকাবকি করেন। ওই যাত্রীর দাবি, টিটিই মাদকাসক্ত ছিলেন। তিনি তাঁর শাস্তি দাবি করেন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের ডিসিও নাসির উদ্দিন বলেন, টিটিই শফিকুল ইসলাম হীনম্মন্যতায় ভোগেন। তিনি এর আগেও যাত্রীদের সঙ্গে অশোভন আচরণ করেছেন। ফলে, যাত্রীর লিখিত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তবে টিটিই শফিকুল ইসলাম শনিবার দুপুরে দাবি করেন, ‘আমি কারও সঙ্গে অশোভন আচরণ করিনি। আমি শুধু আমার দায়িত্ব পালন করেছি। আমাকে ব্যাখ্যার জন্য ডাকা হয়েছে। আমি ব্যাখ্যা দিতে প্রস্তুত আছি। সেদিন যা যা ঘটেছে, আমি সেটাই বলব। স্যারেরা যা ব্যবস্থা নেওয়ার, নেবেন। আমার আর কিছু বলার নেই।’
৫ মে রাতে খুলনা থেকে ঢাকাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনে ঈশ্বরদী রেলওয়ে জংশন স্টেশন থেকে বিনা টিকিটে তিন যাত্রী ঢাকায় যাচ্ছিলেন। তাঁরা ট্রেনের এসি কামরায় বসেছিলেন। তাঁদের কাছে ভাড়া চাইলে টিটির সঙ্গে কথা-কাটাকাটি হয়। পরে ওই তিন যাত্রী নিজেদের রেলমন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয় দেন। টিটিই শফিকুল ইসলাম তাঁদের কাছ থেকে ১ হাজার ৫০ টাকা ভাড়া নিয়ে এসি কামরা থেকে শোভন কামরায় পাঠান। ওই তিন যাত্রী শোভন কামরাতেই ঢাকা পৌঁছান। এর কিছুক্ষণের মধ্যে মুঠোফোনে টিটিই শফিকুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্তর বিষয়টি জানানো হয়।
বিনা টিকিটের যাত্রীদের সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই: রেলমন্ত্রী : রেলমন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয় দিয়ে বিনা টিকিটে ট্রেনে ভ্রমণ করার অপরাধে তিন যাত্রীকে জরিমানা করা এবং এজন্য টিটিইকে বরখাস্তের ঘটনা নিয়ে মুখ খুলেছেন রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন।
রেলমন্ত্রী বলেছেন, ‘বিনা টিকিটে ট্রেনে ভ্রমণ করা যাত্রীরা আমার আত্মীয় নয়, ওদের সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। মন্ত্রীর নাম ভাঙিয়ে কেউ হয়তো সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করেছে। ঘটনার সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই।’
গতকাল শনিবার সকালে একটি গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে রেলমন্ত্রী এসব কথা বলেন। গত বৃহস্পতিবার রাতে (৫ মে) পাবনার ঈশ্বরদী রেল জংশন থেকে টিকিট ছাড়া ট্রেনে ওঠেন ‘রেলপথমন্ত্রীর আত্মীয়’ পরিচয়দানকারী তিন যাত্রী। টিকিট না কাটলেও তারা রেলের এসি কেবিনের সিট দখল করেন। এতে রেলের ভ্রাম্যমাণ টিকিট পরীক্ষক (টিটিই) তাদের জরিমানা করেন। পরে ওই তিন যাত্রী তাদের সঙ্গে অসদাচরণ করা হয় বলে রেলের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করেন।
সেই অভিযোগের ভিত্তিতে টিটিই শফিকুল ইসলামকে বৃহস্পতিবার রাতেই সাময়িক বরখাস্ত করে রেল কর্তৃপক্ষ। সাময়িক বরখাস্তের আদেশ শুক্রবার (৬ মে) থেকে কার্যকর হয়েছে। বরখাস্তের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পাকশীর ডিসিও (বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা) নাসির উদ্দিন।
দেশজুড়ে আলোচিত এ ঘটনার কিছুই জানতেন না দাবি করে রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন বলেন, ঘটনাটি তিনি শুনেছেন শনিবার সকালেই। তিনি রেলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছ থেকে শুনেছেন- ওই টিটিই বিনা টিকিটের যাত্রীদের সঙ্গে অত্যন্ত খারাপ আচরণ করেছেন। ফলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
রেলমন্ত্রী জানান, রেলের অফিসিয়াল কার্যক্রমের সঙ্গে তার কোনো সংযোগ নেই। ঘটনার সঙ্গে মন্ত্রীর কোনো আত্মীয় জড়িত নন। রেল কর্মকর্তারা ওই টিটিইর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে মন্ত্রী কিছুই জানতেন না। নুরুল ইসলাম সুজন বলেন, আমরা রেলসেবা বাড়াতে কাজ করছি। বিনা টিকিটের যাত্রী যদি মন্ত্রীর আত্মীয়ও হয় তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না। একইভাবে কোনো রেল কর্মকর্তাও যদি যাত্রীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করে তাকেও শাস্তি পেতে হবে। যাত্রীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করার কারণে টিটিইর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। মন্ত্রীর আত্মীয়ের নাম জড়িয়ে যা প্রচার করা হচ্ছে তা মিথ্যা বলেও দাবি করেন নুরুল ইসলাম সুজন। রেলমন্ত্রী বলেন, মাঝেমধ্যেই টিটিইরা বিভিন্নভাবে যাত্রীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন; বিভিন্নভাবে হেনস্তা করেন এমন অভিযোগ আমরা প্রায়ই পাচ্ছি। লোকবল সংকটের কারণে আমরা এসবের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারি না। তবে একেবারেই ছাড় দিলে রেলের দুর্নাম হয়ে যায়। তাই টিটিইদের বিরুদ্ধে এমন ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
রেলমন্ত্রীর তিন স্বজনকে জরিমানা করা টিটিইকে ব্যাখ্যা জানাতে তলব
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ