ঢাকা ০১:১৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০৯ জুলাই ২০২৫

রেমিটেন্স জঙ্গিবাদে ব্যবহৃত হচ্ছে না : সিআইডি প্রধান

  • আপডেট সময় : ০২:০৫:২৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ নভেম্বর ২০২২
  • ৮০ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : বিদেশ থেকে পাঠানো রেমিটেন্স জঙ্গিবাদে ব্যবহৃত হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন পুলিশের অপরাধ বিভাগের (সিআইডি) প্রধান মোহাম্মদ আলী মিয়া। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে সিআইডির সদর দপ্তরে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। সিআইডিতে যোগদানের পরে প্রথমবারের মত সংবাদ সম্মেলনে মোহাম্মদ আলী মিয়া বলেছিলেন, পাঁচ হাজার এজেন্টকে চিহ্নিত করে কাজ করছে সিআইডি, যারা অবৈধভাবে বিদেশ থেকে রেমিটেন্স আনতে কাজ করছে। মঙ্গলবারের সংবাদ সম্মেলনে সিআইডি প্রধান বলেন, ওই পাঁচ হাজার এজেন্টদেরকে এখনও নজরদারিতে রেখেছে সিআইডি।
মোবাইল ফাইনান্সিয়াল সার্ভিস –এমএফস এজেন্ট ব্যবসার আড়ালে অবৈধ হুন্ডি ব্যবসার অভিযোগে কুমিল্লা এবং ঢাকা থেকে ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি। গ্রেপ্তার আসামিরা হলেন- মীর মো. কামরুল হাসান শিশির, খোরশেদ আলম, মো. ইব্রাহিম খলিল, কাজী শাহ নেওয়াজ, মো. আজিজুল হক তালুকদার ও মো. নিজাম উদ্দিন । এ সময়ে তাদের কাছ থেকে ১১টি মোবাইল ফোন, ১৮টি সিমকার্ড, একটি ল্যাপটপ ও একটি ট্যাব উদ্ধার করা হয়। মোহাম্মদ আলী মিয়া বলেন, রেমিটেন্স বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রাণপ্রবাহ। বিশ্বপরিস্থিতি এ দেশের অর্থনীতির উপরে যে চাপ তৈরি করেছে তা মোকাবেলা করার জন্য সরকার অত্যন্ত তৎপর। হন্ডি সবসময় রিজার্ভের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এমএফএসের মাধ্যমে হুন্ডি পরিলক্ষিত হচ্ছে- এ রকম পাঁচ হাজারের বেশি এমএফএএস এজেন্টের সন্ধান পায় সিআইডি। সিআইডির ফাইনান্সিয়াল ক্রাইম এবং সাইবার ক্রাইম ইউনিট এর আগেও চট্টগ্রামে যৌথভাবে তিনটি অভিযান চালিয়ে ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছিল।
সিআইডি জানায়, গতকাল সোমবার দিবাগত রাতে সিআইডির সাইবার ক্রাইম ইউনিট আবারও অভিযান চালিয়ে কুমিল্লা ও ঢাকা থেকে দুইটি চক্রের ছয়জনকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারকৃত চক্রটি হুন্ডি ব্যবসা করে অবৈধভাবে হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে টাকা পাচার এবং বিদেশে অবস্থানরত ওয়েজ আর্নারসের কষ্টার্জিত টাকা বিদেশ থেকে বাংলাদেশে না এনে স্থানীয় মুদ্রায় মূল্য পরিশোধ করার মাধ্যমে টাকা পাচার করে আসছে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সংঘবদ্ধ হুন্ডিচক্র প্রবাসী বাংলাদেশীদের উপার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা সংগ্রহ করে তা বাংলাদেশে না পাঠিয়ে ওই বৈদেশিক মুদ্রার সমপরিমান মূল্যে স্থানীয় মুদ্রায় পরিশোধ করার মাধ্যমে টাকা পাচার করে আসছে। এই কাজে তিনটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে কাজটি করে থাকে। প্রথম গ্রুপ বিদেশে অবস্থান করে প্রবাসীদের কাছ থেকে বৈদেশিক মুদ্রা সংগ্রহ করে, দেশ থেকে যারা টাকা পাচার করতে চায় তাদেরকে দেয়। দ্বিতীয় গ্রুপ পাচারকারী ও তার সহযোগীরা দেশীয় মুদ্রায় ওই টাকা এমএফএসের এজেন্টকে দেয়। আর তৃতীয় গ্রুপ তথ্য এমএফএসের এজেন্ট বিদেশে অবস্থানকারীর কাছ থেকে পাওয় এমএফএসের নম্বরে দেশীয় মুদ্রায় মূল্য পরিশোধ করে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, চক্রটি প্রতিনিয়ত অবৈধভাবে এমএফএস ব্যবহার করে ক্যাশ ইনের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হুন্ডি করছে। গত এপ্রিল মাস থেকে আগস্ট পর্যন্ত প্রতিটি চক্র অনুমান প্রায় তিন কোটি টাকা হুন্ডি করেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, মোহাম্মদ খোরশেদ আলমের মালিকানাধীন কুমিল্লার লাকসামে অবস্থিত বিকাশ ডিস্ট্রিবিউশন হাউজ, জে এ এন্টারপ্রাইজের দুই হাজার এজেন্ট সিমের মাধ্যমে প্রতি মাসে ২০০ থেকে ৩০০ কোটি টাকার লেনদেন হয়। সিআইডি সন্দেহজনক দুইটি এজেন্ট সিম নিয়ে কাজ করে যার মাধ্যমে গত ছয়মাসে আনুমানিক তিন কোটি টাকার সন্দেহজনক লেনদেনের তথ্য পায়। এই দুইটি সিম নিয়ে কাজ করতে যেয়ে এরকম আরো ১১ টি এজেন্ট সিমের সন্ধান পায় সিআইডি। যাদের মাধ্যমে এরকম সন্দেহজনক তথ্য ডিজিটাল হুন্ডির তথ্য পাওয়া যায়। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ এবং সিআইডির অনুসন্ধানে এখন পর্যন্ত যা পাওয়া গেছে তা হলো এই দুই হাজার এজেন্ট সিমের বেশ কিছু এজেন্ট সদস্য হুন্ডির মতো অবৈধ কাজে সরাসরি জড়িত। ডিজিটাল হুন্ডির কাজকে সহজ নির্ভুল এবং দ্রুততম উপায়ে সম্পন্ন করার জন্য তারা বেশ কিছু সফটওয়্যার ব্যবহার করছে। গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় ফ্রিমডম ফ্লেক্সি২৪ডটকম এমন একটি সফটওয়্যার যার মাধ্যমে সৌদি প্রবাসী হুন্ডি ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশে যে নম্বরগুলোতে টাকা পাঠানো হবে সেই নম্বরগুলো ইনপুট দিত এবং বাংলাদেশে থাকা বিভিন্ন এমএফএস এজেন্টদের সহায়তায় বাংলাদেশী মুক্তির এজেন্টদের মাধ্যমে টাকাগুলো সরাসরি ডিস্ট্রিবিউশন হয়ে প্রাপকের কাছে যেত। এমএফএসের এজেন্টদের সহযোগীতায় চক্রের সদস্যরা বিদেশে স্থায়ী সম্পদ অর্জনসহ অনলাইন জুয়া, ভিডিও স্ট্রিমিংয়ের ভার্চুয়াল মুদ্রা ক্রয়-বিক্রয়, মাদক কেনাবেচা, স্বর্ণচোরাচালান, ইয়াবা ব্যবসাসহ প্রচুর অবৈধ ব্যবসাও পরিচালনা করছে।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

রেমিটেন্স জঙ্গিবাদে ব্যবহৃত হচ্ছে না : সিআইডি প্রধান

আপডেট সময় : ০২:০৫:২৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ নভেম্বর ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক : বিদেশ থেকে পাঠানো রেমিটেন্স জঙ্গিবাদে ব্যবহৃত হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন পুলিশের অপরাধ বিভাগের (সিআইডি) প্রধান মোহাম্মদ আলী মিয়া। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে সিআইডির সদর দপ্তরে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। সিআইডিতে যোগদানের পরে প্রথমবারের মত সংবাদ সম্মেলনে মোহাম্মদ আলী মিয়া বলেছিলেন, পাঁচ হাজার এজেন্টকে চিহ্নিত করে কাজ করছে সিআইডি, যারা অবৈধভাবে বিদেশ থেকে রেমিটেন্স আনতে কাজ করছে। মঙ্গলবারের সংবাদ সম্মেলনে সিআইডি প্রধান বলেন, ওই পাঁচ হাজার এজেন্টদেরকে এখনও নজরদারিতে রেখেছে সিআইডি।
মোবাইল ফাইনান্সিয়াল সার্ভিস –এমএফস এজেন্ট ব্যবসার আড়ালে অবৈধ হুন্ডি ব্যবসার অভিযোগে কুমিল্লা এবং ঢাকা থেকে ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি। গ্রেপ্তার আসামিরা হলেন- মীর মো. কামরুল হাসান শিশির, খোরশেদ আলম, মো. ইব্রাহিম খলিল, কাজী শাহ নেওয়াজ, মো. আজিজুল হক তালুকদার ও মো. নিজাম উদ্দিন । এ সময়ে তাদের কাছ থেকে ১১টি মোবাইল ফোন, ১৮টি সিমকার্ড, একটি ল্যাপটপ ও একটি ট্যাব উদ্ধার করা হয়। মোহাম্মদ আলী মিয়া বলেন, রেমিটেন্স বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রাণপ্রবাহ। বিশ্বপরিস্থিতি এ দেশের অর্থনীতির উপরে যে চাপ তৈরি করেছে তা মোকাবেলা করার জন্য সরকার অত্যন্ত তৎপর। হন্ডি সবসময় রিজার্ভের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এমএফএসের মাধ্যমে হুন্ডি পরিলক্ষিত হচ্ছে- এ রকম পাঁচ হাজারের বেশি এমএফএএস এজেন্টের সন্ধান পায় সিআইডি। সিআইডির ফাইনান্সিয়াল ক্রাইম এবং সাইবার ক্রাইম ইউনিট এর আগেও চট্টগ্রামে যৌথভাবে তিনটি অভিযান চালিয়ে ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছিল।
সিআইডি জানায়, গতকাল সোমবার দিবাগত রাতে সিআইডির সাইবার ক্রাইম ইউনিট আবারও অভিযান চালিয়ে কুমিল্লা ও ঢাকা থেকে দুইটি চক্রের ছয়জনকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারকৃত চক্রটি হুন্ডি ব্যবসা করে অবৈধভাবে হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে টাকা পাচার এবং বিদেশে অবস্থানরত ওয়েজ আর্নারসের কষ্টার্জিত টাকা বিদেশ থেকে বাংলাদেশে না এনে স্থানীয় মুদ্রায় মূল্য পরিশোধ করার মাধ্যমে টাকা পাচার করে আসছে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সংঘবদ্ধ হুন্ডিচক্র প্রবাসী বাংলাদেশীদের উপার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা সংগ্রহ করে তা বাংলাদেশে না পাঠিয়ে ওই বৈদেশিক মুদ্রার সমপরিমান মূল্যে স্থানীয় মুদ্রায় পরিশোধ করার মাধ্যমে টাকা পাচার করে আসছে। এই কাজে তিনটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে কাজটি করে থাকে। প্রথম গ্রুপ বিদেশে অবস্থান করে প্রবাসীদের কাছ থেকে বৈদেশিক মুদ্রা সংগ্রহ করে, দেশ থেকে যারা টাকা পাচার করতে চায় তাদেরকে দেয়। দ্বিতীয় গ্রুপ পাচারকারী ও তার সহযোগীরা দেশীয় মুদ্রায় ওই টাকা এমএফএসের এজেন্টকে দেয়। আর তৃতীয় গ্রুপ তথ্য এমএফএসের এজেন্ট বিদেশে অবস্থানকারীর কাছ থেকে পাওয় এমএফএসের নম্বরে দেশীয় মুদ্রায় মূল্য পরিশোধ করে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, চক্রটি প্রতিনিয়ত অবৈধভাবে এমএফএস ব্যবহার করে ক্যাশ ইনের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হুন্ডি করছে। গত এপ্রিল মাস থেকে আগস্ট পর্যন্ত প্রতিটি চক্র অনুমান প্রায় তিন কোটি টাকা হুন্ডি করেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, মোহাম্মদ খোরশেদ আলমের মালিকানাধীন কুমিল্লার লাকসামে অবস্থিত বিকাশ ডিস্ট্রিবিউশন হাউজ, জে এ এন্টারপ্রাইজের দুই হাজার এজেন্ট সিমের মাধ্যমে প্রতি মাসে ২০০ থেকে ৩০০ কোটি টাকার লেনদেন হয়। সিআইডি সন্দেহজনক দুইটি এজেন্ট সিম নিয়ে কাজ করে যার মাধ্যমে গত ছয়মাসে আনুমানিক তিন কোটি টাকার সন্দেহজনক লেনদেনের তথ্য পায়। এই দুইটি সিম নিয়ে কাজ করতে যেয়ে এরকম আরো ১১ টি এজেন্ট সিমের সন্ধান পায় সিআইডি। যাদের মাধ্যমে এরকম সন্দেহজনক তথ্য ডিজিটাল হুন্ডির তথ্য পাওয়া যায়। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ এবং সিআইডির অনুসন্ধানে এখন পর্যন্ত যা পাওয়া গেছে তা হলো এই দুই হাজার এজেন্ট সিমের বেশ কিছু এজেন্ট সদস্য হুন্ডির মতো অবৈধ কাজে সরাসরি জড়িত। ডিজিটাল হুন্ডির কাজকে সহজ নির্ভুল এবং দ্রুততম উপায়ে সম্পন্ন করার জন্য তারা বেশ কিছু সফটওয়্যার ব্যবহার করছে। গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় ফ্রিমডম ফ্লেক্সি২৪ডটকম এমন একটি সফটওয়্যার যার মাধ্যমে সৌদি প্রবাসী হুন্ডি ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশে যে নম্বরগুলোতে টাকা পাঠানো হবে সেই নম্বরগুলো ইনপুট দিত এবং বাংলাদেশে থাকা বিভিন্ন এমএফএস এজেন্টদের সহায়তায় বাংলাদেশী মুক্তির এজেন্টদের মাধ্যমে টাকাগুলো সরাসরি ডিস্ট্রিবিউশন হয়ে প্রাপকের কাছে যেত। এমএফএসের এজেন্টদের সহযোগীতায় চক্রের সদস্যরা বিদেশে স্থায়ী সম্পদ অর্জনসহ অনলাইন জুয়া, ভিডিও স্ট্রিমিংয়ের ভার্চুয়াল মুদ্রা ক্রয়-বিক্রয়, মাদক কেনাবেচা, স্বর্ণচোরাচালান, ইয়াবা ব্যবসাসহ প্রচুর অবৈধ ব্যবসাও পরিচালনা করছে।