ঢাকা ০৯:১৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৪ মে ২০২৫

রেকর্ড ভাঙা গরমে পুড়ছে পশ্চিম ইউরোপ

  • আপডেট সময় : ০২:২৭:৫৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ২০ জুলাই ২০২২
  • ৬৯ বার পড়া হয়েছে

রয়টার্স : পশ্চিম ইউরোপের অধিকাংশ অঞ্চলজুড়ে বয়ে চলা নজিরবিহীন তীব্র তাপদাহে তাপমাত্রার পূর্ববর্তী অনেক রেকর্ড ভেঙে গেছে, পাশাপাশি নতুন নতুন দাবানলের মুখোমুখি হতে হচ্ছে দমকলকর্মীদের। এমনিতে মৃদু জলবায়ুতে অভ্যস্ত যুক্তরাজ্যে এবারই প্রথম তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে উঠছে। চলতি বছরের এখন পর্যন্ত সবচেয়ে উষ্ণতম দিন দেখেছে জার্মানি। কয়েকদিনের টানা তীব্র গরমের মধ্যে পর্তুগালে মৃতের সংখ্যা আরও বেড়েছে। মহাদেশটির বিভিন্ন অংশে প্রাণঘাতী দাবানল দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে বলে সতর্ক করেছে জাতিসংঘের বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (ডব্লিউএমও)। মানব-সৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বজুড়েই এখন নিয়মিত ও আগের তুলনায় তীব্র দাবানল দেখা যাচ্ছে, সেগুলো স্থায়ীত্বও দীর্ঘ হচ্ছে। “ভবিষ্যতে এই ধরনের তাপপ্রবাহ স্বাভাবিক হিসেবে বিবেচিত হবে, আমরা এর চেয়েও তীব্র, শক্তিশালী কিছু দেখতে পাবো,” বলেছেন ডব্লিউএমও-র প্রধান পেতেরি তালাস। যুক্তরাজ্যে রেকর্ড তাপমাত্রার পাশাপাশি অগ্নিকা-ের সংখ্যাও বেড়ে গেছে। পূর্ব লন্ডনের ওয়েনিংটনে একটি বড় অগ্নিকা-ে কয়েকটি বাড়িতে আগুন ধরে গেছে। নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া বাসিন্দারা পরে বিবিসিকে বলেন, আগুনে ৮টির মতো বাড়ি ও সম্ভবত স্থানীয় একটি গির্জাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঘটনাস্থলে থাকা এক দমকলকর্মী ওই অগ্নিকা-কে ‘পুরোপুরি নরক’ অ্যাখ্যা দিয়েছিলেন। সোমবার ফ্রান্সের পৃথক ৬৪টি এলাকায় রেকর্ড-উচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল। তবে এবারের তাপদাহে এখন পর্যন্ত ফ্রান্সের মূলভূখ-ের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড ভাঙ্গেনি, তারপরও দেশটির দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ৩০ বছরেরও বেশি সময়ের মধ্যে সবচয়ে বড় দাবানলের অভিজ্ঞতা হয়েছে। ১২ জুলাই থেকে আগুন ওয়াইন উৎপাদনের জন্য সুপরিচিত জিঁহন্দ অঞ্চলের প্রায় ৫০ হাজার একর জমি পুড়ে ছাই করেছে। স্থানীয় প্রায় ৩৭ হাজার বাসিন্দাকে তাদের বাড়িঘর থেকে সরিয়ে নিতে হয়েছে।
তীব্র তাপদাহের পর যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সে এখন ফের ঠা-া আবহাওয়া ফিরে আসছে। বেলজিয়ামে দে হান রিসোর্টের টিলায় এক অগ্নিকা-ে বেশ কয়েকটি যানবাহন পুড়ে গেছে। কয়েকদিনের ভয়াবহ গরমের পর দেশটি এখন বজ্রঝড়ের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে, যার ফলে কিছু অঞ্চলে ২০ থেকে ৩০ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টি হতে পারে বলে স্থানীয় এক পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। তাপপ্রবাহ জার্মানির উত্তর ও পূর্ব দিকে অগ্রসর হতে থাকায় দেশটির কিছু অংশে এখনও আবহাওয়া সতর্কতা জারি আছে। মঙ্গলবার দেশটি তাদের ২০২২ সালের সবচেয়ে উষ্ণতম দিনের সাক্ষী হয়েছে। জার্মানির আবহাওয়া বিভাগ পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর ডুসবুর্গে ৩৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে। নেদারল্যান্ডসের মাস্ট্রিচটেও তাপমাত্রা একই ৩৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠেছিল বলে জানিয়েছে আবহাওয়াবিদরা। পর্তুগালে এথন তাপমাত্রা উল্লেখযোগ্য মাত্রায় হ্রাস পেলেও গত সপ্তাহ থেকে দেশটিতে হাজরের বেশি তাপপ্রবাহজনিত মৃত্যু রেকর্ড হয়েছে। দাবানল স্পেনের মধ্য ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলকেও ছারখার করে দিয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের পৃথিবী পর্যবেক্ষণ কর্মসূচির অংশ কোপার্নিকাস মনিটরিং সার্ভিস বলেছে, জুন ও জুলাইয়ে দাবানল থেকে মোট কার্বন নিঃসরণ ২০০৩ সালের পর এবারই স্পেনে সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে। গ্রিসে ঝড়ো হাওয়ার মধ্যে দাবানল রাজধানী এথেন্সের কাছের পেন্টেলির পাহাড়ি অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে অসংখ্য ঘরবাড়ির ক্ষতি করে, এতে অন্তত চারটি এলাকা ও একটি হাসপাতাল থেকে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ মানুষজনকে সরিয়ে নিতে বাধ্য হয়। আবহাওয়াবিদরা বুধবার থেকে শুক্রবার ইতালিতে তাপমাত্রা ৪০-৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠে যেতে পারে সতর্ক করেন।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

রেকর্ড ভাঙা গরমে পুড়ছে পশ্চিম ইউরোপ

আপডেট সময় : ০২:২৭:৫৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ২০ জুলাই ২০২২

রয়টার্স : পশ্চিম ইউরোপের অধিকাংশ অঞ্চলজুড়ে বয়ে চলা নজিরবিহীন তীব্র তাপদাহে তাপমাত্রার পূর্ববর্তী অনেক রেকর্ড ভেঙে গেছে, পাশাপাশি নতুন নতুন দাবানলের মুখোমুখি হতে হচ্ছে দমকলকর্মীদের। এমনিতে মৃদু জলবায়ুতে অভ্যস্ত যুক্তরাজ্যে এবারই প্রথম তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে উঠছে। চলতি বছরের এখন পর্যন্ত সবচেয়ে উষ্ণতম দিন দেখেছে জার্মানি। কয়েকদিনের টানা তীব্র গরমের মধ্যে পর্তুগালে মৃতের সংখ্যা আরও বেড়েছে। মহাদেশটির বিভিন্ন অংশে প্রাণঘাতী দাবানল দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে বলে সতর্ক করেছে জাতিসংঘের বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (ডব্লিউএমও)। মানব-সৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বজুড়েই এখন নিয়মিত ও আগের তুলনায় তীব্র দাবানল দেখা যাচ্ছে, সেগুলো স্থায়ীত্বও দীর্ঘ হচ্ছে। “ভবিষ্যতে এই ধরনের তাপপ্রবাহ স্বাভাবিক হিসেবে বিবেচিত হবে, আমরা এর চেয়েও তীব্র, শক্তিশালী কিছু দেখতে পাবো,” বলেছেন ডব্লিউএমও-র প্রধান পেতেরি তালাস। যুক্তরাজ্যে রেকর্ড তাপমাত্রার পাশাপাশি অগ্নিকা-ের সংখ্যাও বেড়ে গেছে। পূর্ব লন্ডনের ওয়েনিংটনে একটি বড় অগ্নিকা-ে কয়েকটি বাড়িতে আগুন ধরে গেছে। নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া বাসিন্দারা পরে বিবিসিকে বলেন, আগুনে ৮টির মতো বাড়ি ও সম্ভবত স্থানীয় একটি গির্জাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঘটনাস্থলে থাকা এক দমকলকর্মী ওই অগ্নিকা-কে ‘পুরোপুরি নরক’ অ্যাখ্যা দিয়েছিলেন। সোমবার ফ্রান্সের পৃথক ৬৪টি এলাকায় রেকর্ড-উচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল। তবে এবারের তাপদাহে এখন পর্যন্ত ফ্রান্সের মূলভূখ-ের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড ভাঙ্গেনি, তারপরও দেশটির দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ৩০ বছরেরও বেশি সময়ের মধ্যে সবচয়ে বড় দাবানলের অভিজ্ঞতা হয়েছে। ১২ জুলাই থেকে আগুন ওয়াইন উৎপাদনের জন্য সুপরিচিত জিঁহন্দ অঞ্চলের প্রায় ৫০ হাজার একর জমি পুড়ে ছাই করেছে। স্থানীয় প্রায় ৩৭ হাজার বাসিন্দাকে তাদের বাড়িঘর থেকে সরিয়ে নিতে হয়েছে।
তীব্র তাপদাহের পর যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সে এখন ফের ঠা-া আবহাওয়া ফিরে আসছে। বেলজিয়ামে দে হান রিসোর্টের টিলায় এক অগ্নিকা-ে বেশ কয়েকটি যানবাহন পুড়ে গেছে। কয়েকদিনের ভয়াবহ গরমের পর দেশটি এখন বজ্রঝড়ের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে, যার ফলে কিছু অঞ্চলে ২০ থেকে ৩০ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টি হতে পারে বলে স্থানীয় এক পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। তাপপ্রবাহ জার্মানির উত্তর ও পূর্ব দিকে অগ্রসর হতে থাকায় দেশটির কিছু অংশে এখনও আবহাওয়া সতর্কতা জারি আছে। মঙ্গলবার দেশটি তাদের ২০২২ সালের সবচেয়ে উষ্ণতম দিনের সাক্ষী হয়েছে। জার্মানির আবহাওয়া বিভাগ পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর ডুসবুর্গে ৩৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে। নেদারল্যান্ডসের মাস্ট্রিচটেও তাপমাত্রা একই ৩৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠেছিল বলে জানিয়েছে আবহাওয়াবিদরা। পর্তুগালে এথন তাপমাত্রা উল্লেখযোগ্য মাত্রায় হ্রাস পেলেও গত সপ্তাহ থেকে দেশটিতে হাজরের বেশি তাপপ্রবাহজনিত মৃত্যু রেকর্ড হয়েছে। দাবানল স্পেনের মধ্য ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলকেও ছারখার করে দিয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের পৃথিবী পর্যবেক্ষণ কর্মসূচির অংশ কোপার্নিকাস মনিটরিং সার্ভিস বলেছে, জুন ও জুলাইয়ে দাবানল থেকে মোট কার্বন নিঃসরণ ২০০৩ সালের পর এবারই স্পেনে সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে। গ্রিসে ঝড়ো হাওয়ার মধ্যে দাবানল রাজধানী এথেন্সের কাছের পেন্টেলির পাহাড়ি অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে অসংখ্য ঘরবাড়ির ক্ষতি করে, এতে অন্তত চারটি এলাকা ও একটি হাসপাতাল থেকে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ মানুষজনকে সরিয়ে নিতে বাধ্য হয়। আবহাওয়াবিদরা বুধবার থেকে শুক্রবার ইতালিতে তাপমাত্রা ৪০-৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠে যেতে পারে সতর্ক করেন।