ঢাকা ০৬:০২ অপরাহ্ন, সোমবার, ১১ অগাস্ট ২০২৫

রেইনট্রিতে ধর্ষণের মামলার রায় পিছিয়ে ১১ নভেম্বর

  • আপডেট সময় : ০১:১৫:২৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৭ অক্টোবর ২০২১
  • ৯৪ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : প্রবীণ আইনজীবী আবদুল বাসেত মজুমদারের মৃত্যুতে ঢাকায় বিচারিক আদালতে কার্যক্রম বন্ধ থাকায় বনানীর রেইনট্রি হোটেলে দুই তরুণীকে ধর্ষণের মামলার রায় পিছিয়ে গেছে। আগামী ১১ নভেম্বর রায়ের নতুন তারিখ ধার্য করেছেন ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ এর বিচারক বেগম মোছা. কামরুন্নাহার। ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আফরোজা ফারহানা আহমেদ অরেঞ্জ এই তথ্য জানিয়েছেন। আলোচিত এই মামলায় রায়ের দিন এনিয়ে দ্বিতীয়বার পেছাল।
গত ৩ অক্টোবর যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে আদালত রায়ের তারিখ ১২ অক্টোবর ঠিক করেছিল। কিন্তু বিচারক ছুটিতে থাকায় তা পিছিয়ে বুধবার রায়ের দিন পুনর্র্নিধারিত হয়েছিল। এখন তা আরও পিছিয়ে গেল।
আলোচিত এই মামলায় প্রধান আসামি আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদের ছেলে সাফাত আহমেদ। বাকি আসামিরা হলেন সাফাতের বন্ধু সাদমান সাকিফ ও নাঈম আশরাফ ওরফে এইচএম হালিম, সাফাতের দেহরক্ষী রহমত আলী ও গাড়িচালক বিল্লাল।
আসামিরা সবাই জামিনে ছিলেন। যুক্তিতর্ক শেষে গত ৩ অক্টোবর সব আসামিদের জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠানো হয়।
গুরুত্বপূর্ণ দুই সাক্ষীর অনুপস্থিতিই রায়ের আগে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামি পক্ষের আইনজীবীদের কথায়। এই কারণে আসামিদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি বলে দাবি করছেন তাদের আইনজীবীরা। তারা আশা করছেন, আসামিরা খালাস পাবেন। আর দুই সাক্ষীকে হাজির করতে না পারায় আসামিদের শাস্তির বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীর কণ্ঠে দৃঢ় আশাবাদ দেখা যায়নি।
২০১৭ সালের ২৮ মার্চ বনানীর রেইনট্রি হোটেলে সাফাতের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানিয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই দুই ছাত্রীকে ধর্ষণ করা হয় বলে মামলায় অভিযোগে বলা হয়েছে।
ঘটনার এক মাসের বেশি সময় পর ৬ মে বনানী থানায় মামলাটি করেন এক তরুণী। তার অভিযোগ, ওই হোটেলে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে তাকেসহ তার বন্ধুকে রাতভর আটকে রেখে সাফাত ও নাঈম ধর্ষণ করেন। অন্য তিনজন তাতে সহায়তা করেন। মামলার কয়েকদিনের মধ্যে ১১ মে সিলেট থেকে সাফাতকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার সঙ্গে গ্রেপ্তার হন সাদমানও। অন্য আসামিদেরও এর মধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়।
এই ঘটনায় তুমুল আলোচনার মধ্যে আপন জুয়েলার্সের বিভিন্ন শাখায় চলে শুল্ক গোয়েন্দাদের অভিযান। বেআইনি সোনা পাওয়ায় দিলদারের বিরুদ্ধে মামলাও হয়।
ধর্ষণের মামলা হওয়ার পরের মাসেই ৭ জুন তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের উইমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনের (ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার) পরিদর্শক ইসমত আরা এমি আদালতে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এক মাসে তদন্ত শেষের পর পরের মাসেই আদালতে অভিযোগ গঠন হয়। ওই বছরের ১৩ জুলাই অভিযোগ গঠনের পর ২২ জনের সাক্ষ্য নিয়ে বিচার শেষ হতে চার বছর লেগে গেল। আলোচিত এ মামলায় শুনানির সময় গুরুত্বপূর্ণ দুই সাক্ষী আহমেদ শাহরিয়ার ও ফারিয়া মাহবুব পিয়াসার সাক্ষ্য দিতে না আসার বিষয়টি উঠে আসে। মামলার বিবরণ অনুযায়ী, অভিযোগকারী তরুণীদের বন্ধু শাহরিয়ার ঘটনার দিন রেইনট্রি হোটেলে ছিলেন। তাকে মারধর করে বের করে দেওয়া হয়। আর মামলা দায়েরের সময় এক তরুণীর সঙ্গে ছিলেন পিয়াসা, যিনি ছিলেন সাফাত আহমেদের সাবেক স্ত্রী। সাফাতের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠার কয়েক মাস আগেই পিয়াসার সঙ্গে তার বিচ্ছেদ হয়। এরপর ফারিয়া আর তার সাবেক শ্বশুর দিলদারের মধ্যে পাল্টাপাল্টি মামলাও হয়েছিল। মডেল পিয়াসা সম্প্রতি মাদকের মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে এখন কারাগারে রয়েছেন।
এ দুই সাক্ষীর না আসা প্রসঙ্গে আসামি নাঈম আশরাফের আইনজীবী খায়রুল ইসলাম লিটন যুক্তিতর্কে বলেছিলেন, “যদি ঘটনা সত্য হত, তাহলে তারা সাক্ষ্য দিতে আসতেন।
“আসামি সাফাত ও অন্যরা ব্যবসায়িক অসুস্থ প্রতিদ্বন্দ্বিতা অথবা সাফাতের সাবেক স্ত্রী পিয়াসার ষড়যন্ত্রের শিকার।”
ডাক্তারি পরীক্ষায় ধর্ষণের আলামত না পাওয়ার কথাও বলেন আসামি পক্ষের আইনজীবী। চিকিৎসকের সেই সনদ বিচারকের গোচরেও আনেন তিনি। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা বলছেন, সাক্ষ্য দিতে বারবার সমন পাঠানো হলেও শাহরিয়ার ও পিয়াসা আদালতে আসেননি।
যুক্তিতর্ক শুনানিতে বিচারকের প্রশ্নে বাদী ও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা বলেছিলেন, লকডাউনের আগে গত জানুয়ারিতে তিনবার সমন পাঠানো হয় পিয়াসা ও শাহরিয়ারকে। মোবাইল ফোনে এসএমএসও পাঠানো হয়। কিন্তু তারা সাক্ষ্য দিতে আসেনি।
মামলাটি রাষ্ট্রপক্ষে পরিচালনা করেন অ্যাডভোকেট আফরোজা ফারহানা আহমেদ অরেঞ্জ, বাদীর নিজস্ব আইনজীবী ফারুক আহাম্মদ। অনেকটাই হতাশ আফরোজা ফারহানা বলছেন, “আমাদের দুজন গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী আদালতে এসে সাক্ষ্য দেননি। আর সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ প্রদর্শনী হিসাবে জমা দেওয়া যায়নি। তদুপরি চিকিৎসা প্রতিবেদনে ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায়নি।”
“কিন্তু উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত আছে, পারিপার্শ্বিক বিবেচনায় আদালত মনে করলে আসামিদের সাজা দিতে পারেন,” এখন এই আশায় আছেন তিনি।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

রেইনট্রিতে ধর্ষণের মামলার রায় পিছিয়ে ১১ নভেম্বর

আপডেট সময় : ০১:১৫:২৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৭ অক্টোবর ২০২১

নিজস্ব প্রতিবেদক : প্রবীণ আইনজীবী আবদুল বাসেত মজুমদারের মৃত্যুতে ঢাকায় বিচারিক আদালতে কার্যক্রম বন্ধ থাকায় বনানীর রেইনট্রি হোটেলে দুই তরুণীকে ধর্ষণের মামলার রায় পিছিয়ে গেছে। আগামী ১১ নভেম্বর রায়ের নতুন তারিখ ধার্য করেছেন ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ এর বিচারক বেগম মোছা. কামরুন্নাহার। ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আফরোজা ফারহানা আহমেদ অরেঞ্জ এই তথ্য জানিয়েছেন। আলোচিত এই মামলায় রায়ের দিন এনিয়ে দ্বিতীয়বার পেছাল।
গত ৩ অক্টোবর যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে আদালত রায়ের তারিখ ১২ অক্টোবর ঠিক করেছিল। কিন্তু বিচারক ছুটিতে থাকায় তা পিছিয়ে বুধবার রায়ের দিন পুনর্র্নিধারিত হয়েছিল। এখন তা আরও পিছিয়ে গেল।
আলোচিত এই মামলায় প্রধান আসামি আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদের ছেলে সাফাত আহমেদ। বাকি আসামিরা হলেন সাফাতের বন্ধু সাদমান সাকিফ ও নাঈম আশরাফ ওরফে এইচএম হালিম, সাফাতের দেহরক্ষী রহমত আলী ও গাড়িচালক বিল্লাল।
আসামিরা সবাই জামিনে ছিলেন। যুক্তিতর্ক শেষে গত ৩ অক্টোবর সব আসামিদের জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠানো হয়।
গুরুত্বপূর্ণ দুই সাক্ষীর অনুপস্থিতিই রায়ের আগে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামি পক্ষের আইনজীবীদের কথায়। এই কারণে আসামিদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি বলে দাবি করছেন তাদের আইনজীবীরা। তারা আশা করছেন, আসামিরা খালাস পাবেন। আর দুই সাক্ষীকে হাজির করতে না পারায় আসামিদের শাস্তির বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীর কণ্ঠে দৃঢ় আশাবাদ দেখা যায়নি।
২০১৭ সালের ২৮ মার্চ বনানীর রেইনট্রি হোটেলে সাফাতের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানিয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই দুই ছাত্রীকে ধর্ষণ করা হয় বলে মামলায় অভিযোগে বলা হয়েছে।
ঘটনার এক মাসের বেশি সময় পর ৬ মে বনানী থানায় মামলাটি করেন এক তরুণী। তার অভিযোগ, ওই হোটেলে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে তাকেসহ তার বন্ধুকে রাতভর আটকে রেখে সাফাত ও নাঈম ধর্ষণ করেন। অন্য তিনজন তাতে সহায়তা করেন। মামলার কয়েকদিনের মধ্যে ১১ মে সিলেট থেকে সাফাতকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার সঙ্গে গ্রেপ্তার হন সাদমানও। অন্য আসামিদেরও এর মধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়।
এই ঘটনায় তুমুল আলোচনার মধ্যে আপন জুয়েলার্সের বিভিন্ন শাখায় চলে শুল্ক গোয়েন্দাদের অভিযান। বেআইনি সোনা পাওয়ায় দিলদারের বিরুদ্ধে মামলাও হয়।
ধর্ষণের মামলা হওয়ার পরের মাসেই ৭ জুন তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের উইমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনের (ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার) পরিদর্শক ইসমত আরা এমি আদালতে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এক মাসে তদন্ত শেষের পর পরের মাসেই আদালতে অভিযোগ গঠন হয়। ওই বছরের ১৩ জুলাই অভিযোগ গঠনের পর ২২ জনের সাক্ষ্য নিয়ে বিচার শেষ হতে চার বছর লেগে গেল। আলোচিত এ মামলায় শুনানির সময় গুরুত্বপূর্ণ দুই সাক্ষী আহমেদ শাহরিয়ার ও ফারিয়া মাহবুব পিয়াসার সাক্ষ্য দিতে না আসার বিষয়টি উঠে আসে। মামলার বিবরণ অনুযায়ী, অভিযোগকারী তরুণীদের বন্ধু শাহরিয়ার ঘটনার দিন রেইনট্রি হোটেলে ছিলেন। তাকে মারধর করে বের করে দেওয়া হয়। আর মামলা দায়েরের সময় এক তরুণীর সঙ্গে ছিলেন পিয়াসা, যিনি ছিলেন সাফাত আহমেদের সাবেক স্ত্রী। সাফাতের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠার কয়েক মাস আগেই পিয়াসার সঙ্গে তার বিচ্ছেদ হয়। এরপর ফারিয়া আর তার সাবেক শ্বশুর দিলদারের মধ্যে পাল্টাপাল্টি মামলাও হয়েছিল। মডেল পিয়াসা সম্প্রতি মাদকের মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে এখন কারাগারে রয়েছেন।
এ দুই সাক্ষীর না আসা প্রসঙ্গে আসামি নাঈম আশরাফের আইনজীবী খায়রুল ইসলাম লিটন যুক্তিতর্কে বলেছিলেন, “যদি ঘটনা সত্য হত, তাহলে তারা সাক্ষ্য দিতে আসতেন।
“আসামি সাফাত ও অন্যরা ব্যবসায়িক অসুস্থ প্রতিদ্বন্দ্বিতা অথবা সাফাতের সাবেক স্ত্রী পিয়াসার ষড়যন্ত্রের শিকার।”
ডাক্তারি পরীক্ষায় ধর্ষণের আলামত না পাওয়ার কথাও বলেন আসামি পক্ষের আইনজীবী। চিকিৎসকের সেই সনদ বিচারকের গোচরেও আনেন তিনি। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা বলছেন, সাক্ষ্য দিতে বারবার সমন পাঠানো হলেও শাহরিয়ার ও পিয়াসা আদালতে আসেননি।
যুক্তিতর্ক শুনানিতে বিচারকের প্রশ্নে বাদী ও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা বলেছিলেন, লকডাউনের আগে গত জানুয়ারিতে তিনবার সমন পাঠানো হয় পিয়াসা ও শাহরিয়ারকে। মোবাইল ফোনে এসএমএসও পাঠানো হয়। কিন্তু তারা সাক্ষ্য দিতে আসেনি।
মামলাটি রাষ্ট্রপক্ষে পরিচালনা করেন অ্যাডভোকেট আফরোজা ফারহানা আহমেদ অরেঞ্জ, বাদীর নিজস্ব আইনজীবী ফারুক আহাম্মদ। অনেকটাই হতাশ আফরোজা ফারহানা বলছেন, “আমাদের দুজন গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী আদালতে এসে সাক্ষ্য দেননি। আর সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ প্রদর্শনী হিসাবে জমা দেওয়া যায়নি। তদুপরি চিকিৎসা প্রতিবেদনে ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায়নি।”
“কিন্তু উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত আছে, পারিপার্শ্বিক বিবেচনায় আদালত মনে করলে আসামিদের সাজা দিতে পারেন,” এখন এই আশায় আছেন তিনি।