নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে ঢাবি শিবিরের সভাপতি এস এম ফরহাদের প্রার্থিতা চ্যালেঞ্জ করে রিটকারী নারী শিক্ষার্থীকে ‘গণধর্ষণের’ হুমকির প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে ছাত্রদল।
মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) পায়রা চত্বর থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে রেজিস্ট্রার বিল্ডিংয়ের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হয়। এরপর সেখানে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে সংগঠনটি।
এর আগে এবারের ডাকসু নির্বাচনে বামজোট মনোনীত ‘অপরাজেয় ৭১-অদম্য ২৪’ প্যানেলের এক নারী প্রার্থী ঢাবি শিবিরের সভাপতি এস এম ফরহাদের প্রার্থিতার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট করেন। সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) এই রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ডাকসু নির্বাচনের কার্যক্রম ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত স্থগিতের আদেশ দেন হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ। পরে অবশ্য হাইকোর্টের দেওয়া আদেশ স্থগিত করেন আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত।
এদিকে, হাইকোর্টের বেঞ্চ থেকে ডাকসু নির্বাচনের কার্যক্রম স্থগিতের আদেশ আসার পর ওই নারী শিক্ষার্থীকে গণধর্ষণের হুমকি দিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করেন ঢাবির সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আলী হুসেন। এই হুমকির প্রতিবাদে মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করলো ঢাবি ছাত্রদল।
এদিন মিছিল শেষে অবস্থান কর্মসূচিতে ঢাবি শাখা ছাত্রদলের সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস বলেন, নারী নিপীড়নমূলক কথাবার্তা ৫ আগস্টের পর থেকে চলে আসছে। কিন্তু প্রশাসন আজ পর্যন্ত এর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি। যার কারণে আজকে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রকাশ্যে গণধর্ষণের পদযাত্রার হুমকির মতো ঘটনা দেখতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, ঢাবি শিক্ষার্থী সংসদ-১ এবং ২-এ নারীদের বিভিন্ন সময় সাইবার বুলিংয়ের শিকার হতে হচ্ছে। কিন্তু উপাচার্য এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি। এছাড়া ঢাবি প্রক্টর যদি দিন-রাত কাজ করেন, তাহলে এই ঘটনা কীভাবে ঘটেছে?
সাহস আরো বলেন, নির্বাচন কমিশনারের কাছে আমরা এখন পর্যন্ত সাতটি অভিযোগ দিয়েছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত তারা এ বিষয়ে কোনও পদক্ষেপ নেয়নি। এই ধরনের পরিবেশে কীভাবে একটি সুন্দর ডাকসু নির্বাচন হবে, সে বিষয়ে আমরা উদ্বেগ প্রকাশ করছি।
সমাবেশে ডাকসু নির্বাচনের ছাত্রদল মনোনীত প্যানেলের সহসভাপতি (ভিপি) পদপ্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান বলেন, ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে আমাদের বোনদের কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যের শিকার হতে হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে অনলাইনে প্রোপাগান্ডা ছড়ানো হচ্ছে। বিভিন্ন সময়ে আমরা দেখেছি নারী হেনস্তাকারীদের যখন জেল থেকে ছাড়ানো হলো, তখন একটা নির্দিষ্ট গোষ্ঠী তাদের ফুলের মালা দিয়ে বরণ করেছে, যা একটি অস্বাভাবিক ঘটনা। এরই ফলশ্রুতিতে গতকাল আলী হুসেন নামে এক শিক্ষার্থী তার মেয়ে সহপাঠীকে গণধর্ষণের পদযাত্রার হুমকি দিয়েছে। অথচ, রাষ্ট্রীয় প্রশাসন এবং ঢাবি প্রশাসন তার বিরুদ্ধে এখনো কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রদলের প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদপ্রার্থী শেখ তানভীর বারী হামিম চারটি বিষয় তুলে ধরে বলেন, ‘নারী হেনস্তাকারীদের থানা থেকে ছাড়িয়ে আনা, শিক্ষার্থীদের ভোট গ্রহণে কার্ড ব্যবস্থার জটিলতা, ডাকসু নির্বাচনের জন্য সেনা মোতায়েন ও সর্বশেষ নির্বাচনের আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছুটির ব্যবস্থা- এসব ঘটনা ঘটেছে ডাকসু নির্বাচনে শিক্ষার্থীদের নিরুৎসাহিত করার জন্য।
তিনি বলেন, আমরা দেখতে পেয়েছি নারীদের বারংবার ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে এবং ডাকসু নির্বাচন বিলম্বিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমরা জানিয়ে দিতে চাই, জাতীয় নির্বাচন ও ডাকসু নির্বাচনকে যারা বিলম্বিত করার চেষ্টা করবে, ঢাবি শিক্ষার্থীরা তাদের লাল কার্ড দেখাবে। ঢাবি প্রশাসন যদি দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ হন, তাহলে দায়িত্ব ছেড়ে যে দায়িত্ব পালন করতে পারবে তার হাতে দায়িত্ব তুলে দেন।
এসি/আপ্র/০২/০৯/২০২৫