নিজস্ব প্রতিবেদক : প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে উদ্দেশ্য করে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেছেন, ‘রিকশা শ্রমিকদের বিরুদ্ধে যে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, সেটা প্রত্যাহার করে তাদের জীবন জীবিকা নির্বাহের ব্যবস্থার সিদ্ধান্ত আগামীকাল কোর্টে হোক বা না হোক— আজকে সরকারের পক্ষ থেকে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আর যদি এটা না হয় তাহলে আমি বলছি, তারা যেমন বলে সংস্কার না করে নির্বাচন দেব না; ঠিক তেমনি রিকশা চালকের দাবি না মেনে তুমিও গদিতে থাকতে পারবা না।’
রোববার (২৪ নভেম্বর) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে রিকশা-ভ্যান-ইজিবাইক শ্রমিক ইউনিয়ন আয়োজিত গণঅবস্থান কর্মসূচিতে তিনি এসব কথা বলেন। মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, গত জুলাই আগস্ট মাসে ছাত্রদের নেতৃত্বে গণঅভ্যুত্থান হয়েছে। আপনারা ছাত্রদের গণঅভ্যুত্থান দেখেছেন কিন্তু শ্রমিকদের গণঅভ্যুত্থান দেখেননি। তারা সমস্ত শোষকের বারোটা বাজিয়ে দেবে। পাড়ায় পাড়ায় কমিটি বানান, শ্রমিকদের সংগঠন গড়ে তোলেন। রিকশা ড্রাইভার, গার্মেন্টসের শ্রমিক ও খেত মজুররা অর্থাৎ যারা মেহনত করে খায় তাদের সবার কাছে খবর পৌঁছায় দেন। এর সরকার, তার সরকার, ওর সরকার কত সরকার দেখেছি— আগামী দিনে ইনশাল্লাহ গরীব মানুষের সরকার হবে। ডিসি, এসপি, ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারী, মিলিটারি অফিসার, জোয়ান, পুলিশ বাহিনী সবাই হবে এই সংগ্রামের সৈনিক। তাদের ভেতর থেকেই আমরা এই রাষ্ট্রকে গড়ে তুলবো। কেউ খাবে আর কেউ খাবে না, তা হবে না তা হবে না। রিকশা চালকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, হাইকোর্টের খবরা-খবর আপনারা শুনেছেন। শুধু আমি একটা কথা বলবো, বাঙালকে হাইকোর্ট দেখানোর চেষ্টা করবেন না। এটা করা হলে সারা বাংলাদেশে আগুন জ্বলে উঠবে। আপনারা লড়াই করতে থাকেন। আইনসিদ্ধভাবে আমরা লড়াই করছি। এই লড়াই এগিয়ে নিয়ে ইনশাল্লাহ আমরা আমাদের বিজয় ছিনিয়ে আনবো।
ছাত্র সমাজকে উদ্দেশ্য করে সিপিবির সাবেক সভাপতি বলেন, আমি ডাকসুর ভিপি ছিলাম। আপনারা কেউ রিকশা চালকদের সঙ্গে বেয়াদবি করবেন না। আপনার বাবার বয়সী রিকশা চালককে তুই তোকারি করে কথা বলা চলবে না। মেহনতি মানুষকে মর্যাদা দিতে শেখেন। যারা পরিশ্রম করে দেশ গড়ে তুলেছে, তাদের সম্মান জানান। ভুলে যাবেন না এই গণঅভ্যুত্থান একজন লোকের তৈরি না। এটা হলো সমস্ত ছাত্রের জনতার গণঅভ্যুত্থান। সেখানে রিকশাওয়ালার রক্ত আছে, গার্মেন্টস শ্রমিকের রক্ত আছে। বৈষম্য বিরোধীর কথা বলে মধ্যবিত্তের রাজত্ব কায়েম করলে বৈষম দূর হবে না। আপনাদের কথায় ও কাজের মিল আছে কিনা, সেই প্রমাণ আমরা দেখতে চাই। কোনো ছাত্র যদি রিকশাওয়ালার প্রতি অবিচার করে— যেভাবে আমরা হাসিনার গুন্ডাবাহিনীকে নিবৃত করেছি, একই ভাবে তাদেরও আমরা নিবৃত রাখার জন্য আপ্রাণ ব্যবস্থা করব। এরআগে, ইউনিয়নের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম রতন বলেন, একজন বিচারপতির মৃত্যুবরণের জন্য আজকে রায় হবে না। আমাদের তারা বলেছেন, আগামীকাল তারা এই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হবে। ডিএমপি থেকে বলা হয়েছে কোন রাস্তায় কীভাবে চলা যাবে তা জানাবে। চালকদের উদ্দেশ্যে আমরা এটাও বলতে চাই, নিয়ম মেনে রিকশা চালাতে হবে। লেন মেনে চালাতে হবে। সুশৃঙ্খলভাবে নিয়ম মেনে গাড়ি (রিকশা) চালাতে হবে।
এদিকে বেলা সাড়ে ১১টায় রিকশা-ভ্যান-ইজিবাইক শ্রমিক ইউনিয়নের ব্যানারে ব্যাটারিচালিত যানবাহন বন্ধে হাইকোর্টের আদেশ প্রত্যাহার করাসহ ১১ দফা দাবি আদায়ে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনের রাস্তায় জড়ো হয় হাজারো ব্যাটারিচালিত রিকশা চালকরা। বিশাল একটি মিছিল নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার দোয়েল চত্বর, হাইকোর্ট মাজার মোড় ও কদম ফোয়ারা হয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আসে। মিছিল হাজারো ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালক ছিলেন। এসময় তারা ‘ব্যাটারিচালিত যানবাহন বন্ধে হাইকোর্টের আদেশ প্রত্যাহার কর, করতে হবে’ স্লোগান দিতে থাকেন। পরে প্রেসক্লাবের সামনে এসে তারা রাস্তায় বসে পড়েন। প্রেস ক্লাবের সামনে একটি পিকআপ ভ্যানে লাল ব্যানারে সমাবেশ মঞ্চের আয়োজন করে রিকশা-ভ্যান-ইজিবাইক শ্রমিক ইউনিয়ন। পরে দুপুর দেড়টার দিকে সমাবেশ শেষে রাস্তা ছেড়ে যে যার মতো চলে যায় ব্যাটারিচালিত রিকশা চালকরা।