নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করতে এসে গণপিটুনি ও মবের শিকার রিকশাচালক আজিজুর রহমানকে জামিন দিয়েছেন আদালত। আর কোনো মামলা না থাকায় তার কারামুক্তিতে বাধা নেই বলে জানিয়েছেন আইনজীবী।
রোববার (১৭ আগস্ট) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এম. এ আজহারুল ইসলামের আদালত শুনানি শেষে তার জামিন মঞ্জুর করেন। আজিজুর রহমানের পক্ষে জামিন চেয়ে আবেদন করেন অ্যাডভোকেট ফারজানা ইয়াসমিন রাখি। রাষ্ট্রপক্ষে জামিনের বিরোধিতা করা হয়। শুনানি শেষে বিচারক তার জামিন মঞ্জুর করেন। রিকশাচালক আজিজুর রহমানকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময়কার একটি হত্যাচেষ্টা মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়।
রিকশাচালক আজিজুর কিসের ভিত্তিতে আটক: ধানমন্ডি ৩২ এ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধা জানাতে যাওয়া রিকশাচালক আজিজুর রহমানকে কিসের ভিত্তিতে হত্যাচেষ্টা মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে, তার ব্যাখ্যা চেয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। ধানমন্ডি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছে ব্যাখ্যা তলব করে সরকারের পক্ষ থেকে একটি বিবৃতি দেওয়া হয়েছে।
রোববার (১৭ আগস্ট) প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, একই সঙ্গে ওই পুলিশ কর্মকর্তার সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড ও বক্তব্যে কোন অসঙ্গতি রয়েছে কী না তা খতিয়ে দেখার ব্যবস্থা নিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ। এতে আরো বলা হয়, দায়েরকৃত মামলায় আজিজুর রহমানের সম্পৃক্ততা তদন্ত সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে সম্প্রতি সংশোধিত সিআরপিসির ১৭৩(এ) ধারা মোতাবেক অতিসত্ত্বর প্রতিবেদন দাখিলেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার ৫০তম বার্ষিকীতে শুক্রবার ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর সড়কে তার বাড়ির সামনে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে মারধর ও হেনস্তার শিকার হন কয়েকজন। তাদের মধ্যে রিকশাচালক আজিজুর রহমান বেলা ১১টার দিকে রিকশা চালিয়ে হাতে ফুলের তোড়া নিয়ে ৩২ নম্বরে যান। ফুলের তোড়ার ওপর কাগজে লেখা ছিল ‘১৫ই আগস্ট জাতীয় শোক দিবস’। তাকে দেখার সঙ্গে সঙ্গে বিএনপিকর্মীরা রীতিমতো ঝাঁপিয়ে পড়েন। একজন লাফ দিয়ে গিয়ে তার হাত থেকে ফুলের তোড়াটি কেড়ে নেন। চলে মারধর, ভাঙচুর করা হয় তার রিকশাটিও। এসময় কান্নায় ভেঙে পড়েন ওই রিকশাচালক। আজিজুর রহমান সেদিন সাংবাদিকদের বলেন, তিনি যাত্রাবাড়ী থেকে এসেছেন। চারশ টাকা দিয়ে ফুলের তোড়াটি কিনেছেন। আমার অনেক কষ্টের টাকা, আমি দুই বছর ঢাকা শহরে রিকশা চালাই। শুধু বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাসি জন্যি এহানে আইছি। পরে আজিজুর রহমানকে পুলিশ আটক করে এবং সরকার পতনের আন্দোলন চলাকালে ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট সাইন্সল্যাব এলাকার গুলিবিদ্ধ মো. আরিফুল ইসলামের করা হত্যাচেষ্টা মামলায় আজিজুরকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন ধানমন্ডি থানার এসআই মোহাম্মদ তৌহিদুর রহমান।
শনিবার (১৬ আগস্ট) আজিজুরকে আদালতে তোলার পরে তার পক্ষে জামিনের আবেদন করেন আইনজীবী ফারজানা ইয়াসমিন রাখী। শুনানি শেষে বিচারক আসামিকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
রোরবার (১৭ আগস্ট) আজিজুর রহমানকে জামিন দিয়েছে আদালত। ঢাকার মহানগর হাকিম এম এ আজহারুল ইসলাম শুনানি শেষে এক বছর আগের ওই মামলা থেকে আজিজুর রহমানের জামিন মঞ্জুর করেন বলে তার আইনজীবী ফারজানা ইয়াসমিন রাখী জানান। তিনি বলেন, আশা করছি সব প্রক্রিয়া সেরে কালকের মধ্যেই তিনি মুক্তি পাবেন। আজিজুরকে হত্যাচেষ্টা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানোয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তুমুল সমালোচনা হয়। এমন প্রেক্ষাপটে জামিন পেলেন আজিজুর।
আটক রিকশাচালককে হত্যা মামলার আসামি করা হয়নি: গত ১৫ আগস্ট ধানমন্ডি-৩২ নম্বর এলাকা থেকে আটক রিকশাচালক আজিজুর রহমানকে (২৭) হত্যা মামলার আসামি করা হয়নি বলে জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)
ডিএমপির মিডিয়া ও পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান জানান, গত ১৫ আগস্ট ধানমন্ডি- ৩২ এলাকা থেকে মো. আজিজুর রহমান নামে এক ব্যক্তিকে আটক করা হয়। পরে ধানমন্ডি থানার এপ্রিল মাসে দায়ের করা একটি মামলায় সন্দিগ্ধ আসামি হিসেবে ১৬ আগস্ট তাকে আদালতে পাঠানো হয়। এরইমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে মো. আজিজুর রহমানের গ্রেফতার ও মামলা নিয়ে অহেতুক ভুল তথ্য ছড়ানো হচ্ছে, যা ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে মো. আজিজুর রহমানকে যে মামলায় সন্দিগ্ধ আসামি হিসেবে আদালতে পাঠানো হয়েছে তা পেনাল কোডের একটি নিয়মিত মামলা। কিন্তু অনেকেই বিষয়টিকে হত্যা মামলা হিসেবে প্রচার করছেন, যা সর্বৈব মিথ্যা ও উদ্দেশ্যমূলক। এমতাবস্থায়, বর্ণিত বিষয়ে কোনোরকম বিভ্রান্তি ছড়ানো থেকে বিরত থাকার জন্য সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ করা হলো।