ঢাকা ০৪:০৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারী ২০২৫, ১ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রিও ভাইরাস নিয়ে আতঙ্ক নয়

  • আপডেট সময় : ০৫:৫৭:১৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ১২ জানুয়ারী ২০২৫
  • ১৫ বার পড়া হয়েছে

ডা. হুমায়ুন কবীর হিমু : দেশে ৫ জনের দেহে রিও ভাইরাস পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। তারা আরও জানিয়েছে, তাদের কারো অবস্থাই গুরুতর ছিল না। সবাই সুস্থ হয়ে বাড়ি গেছে।

আইইডিসিআর সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি নিপাহ ভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে আসা ৪৮ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পরীক্ষায় রিও ভাইরাসে আক্রান্ত নিশ্চিত হয়। এরপর থেকে গণমাধ্যমে রিও ভাইরাস নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে।

রিও ভাইরাস কি: রিও ভাইরাস একটি আরএনএ ভাইরাস। রিও ভাইরাস রিও-ভাইরিডি গ্রুপের ভাইরাস। এই ভাইরাস গোত্রের মধ্যে পরিচিত একটি ভাইরাস হলো রোটা ভাইরাস। একে আমরা সবাই চিনি। রোটা ভাইরাস শিশুদের ডায়রিয়ার অন্যতম কারণ। রোটা ভাইরাসের মতোই একটি ভাইরাস হলো রিও ভাইরাস।
কারা বেশি আক্রান্ত হয়: রিও ভাইরাসে সাধারণত শিশুরাই বেশি আক্রান্ত হয়। এছাড়া বয়স্করাও আক্রান্ত হতে পারেন।
কীভাবে ছাড়ায়: রিও ভাইরাস কীভাবে ছড়ায় সেটি নিয়ে বেশ আলোচনা আছে। তবে এখন পর্যন্ত সঠিক কারণ জানা যায়নি। মনে করা হয় রিও ভাইরাস আক্রান্ত কোনো শিশুর মল পানি বা অন্য কোনো মাধ্যমে অন্য শিশুর মুখে গেলে এ ভাইরাসের সংক্রমিত হতে পারে। এছাড়া যেহেতু এই ভাইরাসে আক্রান্ত হলে সর্দি কাশি থাকে তাই অনেকে মনে করেন হাঁচি-কাশির মাধ্যমে এ ভাইরাস ছড়াতে পারে।
রোগের লক্ষণ: রিও একটি ভাইরাস। কাজেই এই ভাইরাসে আক্রান্ত হলে যে লক্ষণগুলো হয় তা অন্যান্য ভাইরাসের মতোই হয়ে থাকে। এ ভাইরাসে আক্রান্ত হলে জ্বর, সর্দি-কাশি, গলাব্যথা, মাথাব্যথা, শরীর ব্যথা, অবসাদগ্রস্ত হতে পারে। সেই সাথে দেখা দিতে পারে ডায়রিয়া। শিশুদের জ্বরের সাথে পুরো শরীরে দেখা দিতে পারে র‌্যাশ। সাধারণত ভাইরাস জ্বরের মতোই ৫-৭ দিন পর আক্রান্ত ব্যক্তি পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যায়।
চিকিৎসা: এই রোগের নির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই। তবে লক্ষণ অনুযায়ী চিকিৎসার করতে হয়। রোগীর জ্বর থাকলে প্যারাসিটামল দিতে হয়। সর্দি-কাশির জন্য মন্টিলুকাস্ট অথবা ফেক্সোফেনাডিন বা রুপাটিডিন জাতীয় ওষুধ দেওয়া যেতে পারে। ডায়রিয়া থাকলে শিশুকে ওরাল স্যালাইন খাওয়াতে হয়। শরীর ব্যথা থাকলে প্যারাসিটামল কাজ করে।
কতটা ভয়াবহ: রিও ভাইরাস এতটা ভয়াবহ না। অনেকেই অজ্ঞাতসারে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে থাকেন। তাদের শরীরে এ ভাইরাসের অ্যান্টিবডি থাকে। তাই আবার আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। কিছু ক্ষেত্রে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হলে নিউমোনিয়া দেখা দিতে পারে। ১৯৫৪ সালে প্রথম এ ভাইরাসে আক্রান্তের পর থেকে এতদিন পর্যন্ত যত ব্যক্তি আক্রান্ত হয়েছেন তাদের খুব কমই মারাত্মক নিউমোনিয়া হয়েছে। খুব অল্প সংখ্যক ব্যক্তির মস্তিষ্কের প্রদাহ এটাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় এনকেফেলাইটিস বলা হয় ও মস্তিষ্কের পর্দার প্রদাহ যেটাকে মেনিনজাইটিস বলা হয় তা হতে পারে। তবে তা খুবই কম।
কতটা আতঙ্কের: এতক্ষণের আলোচনায় আমরা জেনেছি রিও ভাইরাস নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার দরকার নাই। কারণ এটা সাধারণ ভাইরাসের মতোই একটা ব্যাপার। তারপরও যদি কোনো ধরনের জটিলতা দেখা দেয় তাহলে দ্রুত হসপিটালে ভর্তি করাতে হবে।

লেখক: সহকারী অধ্যাপক, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস (নিনস)

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

রিও ভাইরাস নিয়ে আতঙ্ক নয়

আপডেট সময় : ০৫:৫৭:১৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ১২ জানুয়ারী ২০২৫

ডা. হুমায়ুন কবীর হিমু : দেশে ৫ জনের দেহে রিও ভাইরাস পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। তারা আরও জানিয়েছে, তাদের কারো অবস্থাই গুরুতর ছিল না। সবাই সুস্থ হয়ে বাড়ি গেছে।

আইইডিসিআর সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি নিপাহ ভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে আসা ৪৮ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পরীক্ষায় রিও ভাইরাসে আক্রান্ত নিশ্চিত হয়। এরপর থেকে গণমাধ্যমে রিও ভাইরাস নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে।

রিও ভাইরাস কি: রিও ভাইরাস একটি আরএনএ ভাইরাস। রিও ভাইরাস রিও-ভাইরিডি গ্রুপের ভাইরাস। এই ভাইরাস গোত্রের মধ্যে পরিচিত একটি ভাইরাস হলো রোটা ভাইরাস। একে আমরা সবাই চিনি। রোটা ভাইরাস শিশুদের ডায়রিয়ার অন্যতম কারণ। রোটা ভাইরাসের মতোই একটি ভাইরাস হলো রিও ভাইরাস।
কারা বেশি আক্রান্ত হয়: রিও ভাইরাসে সাধারণত শিশুরাই বেশি আক্রান্ত হয়। এছাড়া বয়স্করাও আক্রান্ত হতে পারেন।
কীভাবে ছাড়ায়: রিও ভাইরাস কীভাবে ছড়ায় সেটি নিয়ে বেশ আলোচনা আছে। তবে এখন পর্যন্ত সঠিক কারণ জানা যায়নি। মনে করা হয় রিও ভাইরাস আক্রান্ত কোনো শিশুর মল পানি বা অন্য কোনো মাধ্যমে অন্য শিশুর মুখে গেলে এ ভাইরাসের সংক্রমিত হতে পারে। এছাড়া যেহেতু এই ভাইরাসে আক্রান্ত হলে সর্দি কাশি থাকে তাই অনেকে মনে করেন হাঁচি-কাশির মাধ্যমে এ ভাইরাস ছড়াতে পারে।
রোগের লক্ষণ: রিও একটি ভাইরাস। কাজেই এই ভাইরাসে আক্রান্ত হলে যে লক্ষণগুলো হয় তা অন্যান্য ভাইরাসের মতোই হয়ে থাকে। এ ভাইরাসে আক্রান্ত হলে জ্বর, সর্দি-কাশি, গলাব্যথা, মাথাব্যথা, শরীর ব্যথা, অবসাদগ্রস্ত হতে পারে। সেই সাথে দেখা দিতে পারে ডায়রিয়া। শিশুদের জ্বরের সাথে পুরো শরীরে দেখা দিতে পারে র‌্যাশ। সাধারণত ভাইরাস জ্বরের মতোই ৫-৭ দিন পর আক্রান্ত ব্যক্তি পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যায়।
চিকিৎসা: এই রোগের নির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই। তবে লক্ষণ অনুযায়ী চিকিৎসার করতে হয়। রোগীর জ্বর থাকলে প্যারাসিটামল দিতে হয়। সর্দি-কাশির জন্য মন্টিলুকাস্ট অথবা ফেক্সোফেনাডিন বা রুপাটিডিন জাতীয় ওষুধ দেওয়া যেতে পারে। ডায়রিয়া থাকলে শিশুকে ওরাল স্যালাইন খাওয়াতে হয়। শরীর ব্যথা থাকলে প্যারাসিটামল কাজ করে।
কতটা ভয়াবহ: রিও ভাইরাস এতটা ভয়াবহ না। অনেকেই অজ্ঞাতসারে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে থাকেন। তাদের শরীরে এ ভাইরাসের অ্যান্টিবডি থাকে। তাই আবার আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। কিছু ক্ষেত্রে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হলে নিউমোনিয়া দেখা দিতে পারে। ১৯৫৪ সালে প্রথম এ ভাইরাসে আক্রান্তের পর থেকে এতদিন পর্যন্ত যত ব্যক্তি আক্রান্ত হয়েছেন তাদের খুব কমই মারাত্মক নিউমোনিয়া হয়েছে। খুব অল্প সংখ্যক ব্যক্তির মস্তিষ্কের প্রদাহ এটাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় এনকেফেলাইটিস বলা হয় ও মস্তিষ্কের পর্দার প্রদাহ যেটাকে মেনিনজাইটিস বলা হয় তা হতে পারে। তবে তা খুবই কম।
কতটা আতঙ্কের: এতক্ষণের আলোচনায় আমরা জেনেছি রিও ভাইরাস নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার দরকার নাই। কারণ এটা সাধারণ ভাইরাসের মতোই একটা ব্যাপার। তারপরও যদি কোনো ধরনের জটিলতা দেখা দেয় তাহলে দ্রুত হসপিটালে ভর্তি করাতে হবে।

লেখক: সহকারী অধ্যাপক, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস (নিনস)