ঢাকা ০২:৫৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রাস্তায় বেড়েছে গাড়ি, গলিতে ভিড়

  • আপডেট সময় : ০১:৩৭:২৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৬ জুলাই ২০২১
  • ৫২ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশব্যাপী কঠোর লকডাউনের ষষ্ঠ দিনে গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর সড়কে মানুষ ও গাড়ির আনাগোনা আরও বাড়তে দেখা গেছে। গত বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া এই লকডাউনে প্রথম দিকে বেশ কড়াকড়ি দেখা গেলেও ক্রমেই শিথিলতা তৈরি হচ্ছে।
স্বাস্থ্যবিধি মানাতে বিভিন্ন এলাকায় পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর তৎপরতা থাকলেও অলিগলিতে সেলুন, মোবাইল এক্সেসরিজ, পোশাকসহ বিভিন্ন সামগ্রীর দোকান খোলা শুরু হয়েছে, বিধিনিষেধে যেগুলো বন্ধ থাকার কথা।
মানুষকে সচেতন করতে বিভিন্ন এলাকায় চলছে মাইকিং; এরপরও স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে জটলা হচ্ছে অলিগলি, বাজারে।
নি¤œ আয়ের মানুষ ও ছোট ব্যবসায়ীরা বলছেন, টানা লকডাউনের মধ্যে আর্থিক সংকটে পড়ে তাদের এখন আর কোনো উপায় নেই। মালিবাগ, রামপুরা, শান্তিনগর, পল্টন, কাকরাইল ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন পাড়া-মহল্লার অলি-গলিতে গত কয়েকদিনের তুলনায় লোকজনের চলাচল বেড়েছে। প্রধান সড়কে চলছে প্রচুর রিকশা, পাশাপাশি প্রাইভেট কারের সংখ্যাও বেশ।
সকালে শেরেবাংলা নগরে রোকেয়া সরণিতে দেখা যায় রিকশার জট। সেই জট থেকে ছাড়া পেতে সড়ক বিভাজকের উপর দিয়ে রিকশা তুলে বিপরীত পাশে নিতে দেখা যায় চালকদের। শান্তিনগর কাঁচাবাজারের বাইরে রাস্তার পাশে ঠেলাগাড়িতে করে সব্জি বিক্রি করতে দেখা যায় বাজারের স্থায়ী দোকানিদের। বাজার কর্তৃপক্ষ বলছে, সরকার উন্মুক্ত স্থানে কাঁচা বাজারের কেনাবেচা করতে বলেছে। তাই সড়কের পাশে অস্থায়ীভাবে এই ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে, কারণ বাজারের ভেতরে লোকজনের উপস্থিতি বেশি হলে সংক্রমণ বাড়তে পারে।
ন্যায্যমূল্যে তেল, ডাল, চিনি কেনার জন্য শান্তিনগরে টিসিবির ট্রাকের পেছনে দেখা গেল লম্বা লাইন । হাফিজা খাতুন নামের একজন ক্রেতা বললেন, “খোলা বাজারে তেলের দাম অনেক বেশি। সেজন্য আমি সকাল বেলা লাইনে দাঁড়িয়েছি সয়াবিন তেল কেনার জন্য। কোরবানির ঈদ তো সামনে।”
পুলিশের চেকপোস্টগুলোতে প্রাইভেট কার থামিয়ে পুলিশ সদস্যরা জিজ্ঞাসা করছেন কোথায় যাচ্ছেন, কেন যাচ্ছেন। তবে রিকশাযাত্রীদের সেরকম জিজ্ঞাসার মুখে পড়তে হচ্ছে কম।
শান্তিনগর থেকে রামপুরায় এসেছেন স্কুল শিক্ষক হাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, “পুলিশ বিভিন্ন চেকপোস্টে যাত্রীদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে। আমিও কিছুটা ভয়ে ভয়ে ছিলাম। পরে রিকশাচালক বলল ‘স্যার, ভয় পাইবেন না। আমাগো কিছু পুলিশ কইব না। ঝামেলা ছাড়াই বাসায় পৌঁছেছি।”
বিভিন্ন এলাকার মোড়ে মোড়ে হ্যান্ড মাইকে বিনা কারণে রাস্তায় বের না হওয়ার জন্য অনুরোধ করে মাইকিং করতে দেখা গেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের। মিরপুর এলাকার বিভিন্ন সড়কেও বেড়েছে ব্যস্ততা। মিরপুর ১০ ও ১১ নম্বরের বিভিন্ন গলিতে জটলা পাকিয়ে মানুষকে আড্ডা দিতে দেখা গেছে। চায়ের দোকান ও খাবার হোটেলেও বেড়েছে ভিড়।
নিষেধ থাকার পরও কিছু কিছু খাবারের দোকানে ভেতরে বসিয়েই খাবার পরিবেশন করতে দেখা গেছে। খুলতে শুরু করে টেইলার্স, স্যানিটারি, জুয়েলারির দোকান।
একটি টেইলার্সের শাটার অর্ধেক নামিয়ে ভেতরে কাজ চলছিল। দোকান খোলার বিষয়ে জানতে চাইলে সেখানকার একজন কর্মী বললেন, “একটা ড্রেস ডেলিভারি নেওয়ার কথা, সেই কারণে একটিু খুলছি।” আগের দিনই দেশে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ও মৃত্যুর রেকর্ড হয়েছে। কিন্তু রাস্তায় বের হওয়া মানুষের মধ্যে সচেতনতা সেভাবে নেই। অনেকেই স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। মাস্ক না পরে রিকশা, মোটরসাইকেল চালাতে দেখা গেছে অনেককে। মিরপুর ১০ নম্বরের বিআরটিএ এলাকায় বহু মানুষকে ভিড় করে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেল। ভিড়ের কারণ জানতে চাইলে একজন বললেন, টিসিবির খোলাবাজারের ট্রাক আসার অপেক্ষায় আছেন তারা।
মিরপুরের প্রধান সড়কগুলোতেও রিকশা কিংবা ব্যক্তিগত গাড়ি থামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে দেখা গেছে পুলিশ সদস্যদের। যথাযথ কারণ দেখাতে না পারলে মামলা আর জরিমানার মুখেও পড়তে হচ্ছে। মিরপুরের রূপনগর, পল্লবী, আরামবাগ এলাকার রাস্তায় মানুষের চলাচল দেখা গেছে গত কয়েক দিনের চেয়ে বেশি। গলির মোড় ও ভেতরের রাস্তার চায়ের দোকানে আড্ডাও বসেছে। সকাল ৯টায় রূপনগর থানা পুলিশের একটি দল একবার টহল দিয়ে যায়, কিন্তু তাদের বিদায়ের পর আবারও ভিড় বাড়ে রাস্তায়। খোলা আকাশের নিচে ফুটপাতে চলছে সবজি ও ফল বিক্রি।
রাস্তায় বের হওয়ার কারণ জানতে চাইলে স্থানীয় বাসিন্দা জাহিদ পাটোয়ারি বললেন, “পেট তো আর লকডাউন বোঝে না। বাজার করতে বের হয়েছি। কিন্তু তরিতরকারির দাম তো লকডাউনের আগের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে।”
মতিউর নামের এক রিকশা চালক বললেন, লকডাউনের প্রথম দুদিন তিনি ভয়ে রিকশা নিয়ে বের হননি। পরে বাধ্য হয়ে বের হতে হয়েছে। তবে যাত্রী কম থাকায় বাজার করার মত রোজগারও তার হচ্ছে না। রামপুরা, হাজীপাড়া, মালিবাগ এলাকার প্রধান সড়ক ডিআইটি রোডে দেখা গেল যান চলাচল আগের কয়েক দিনের মতই কম। সড়কে রিকশা এবং পণ্যবাহী গাড়ি আছে, কিছু ব্যক্তিগত গাড়ি থাকলেও সংখ্যায় কম। এ সড়কের দুইপাশের অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ থাকলেও অলি-গলির বেশিরভাগ দোকান খোলা। পুলি
গলির ভেতরের বেশ কিছু চা-পানের দোকান, বই-খাতা, স্টেশনারি, এমনি সেলুনও খোলা রাখা হয়েছে। তবে পুলিশের উপস্থিতি টের পেলে তারা দোকান বন্ধ করে দেন।
পূর্ব রামপুরা হাই স্কুল রোডে একটি খোলা থাকা সেলুন মালিক বললেন, “করোনার কারণে গত বছরের ক্ষতিই তো কাটিয়ে উঠতে পারিনি। এবার নতুন করে লকডাউন। কয়েক দিন সেলুন বন্ধ রেখেছি, এখন ঘরেবাজার-সদাই করার মত টাকাও নেই। খোলা রাখছি, পরিচিত কোনো কাস্টমার ফোন করে এলে কাজ করে দিই। তবে পুলিশের ভয়ও কাজ করে।”
পুরান ঢাকার, আজিমপুর, লালবাগ, কেল্লারমোড়, বকশিবাজার ও পলাশীর অলিগলি আগের দিনগুলোর চিত্রই দেখা গেছে। পাশের সড়কের মাছ দোকানদার, সবজি দোকানদার, মুদি দোকানগুলোতে মানুষও অনেক। স্বাস্থ্যবিধি মানছেন কেউ কেউ, অনেকের সেদিকে খেয়াল নেই। লালবাগ চৌরাস্তা, পলাশীর মোড় ও বকশিবাজারে অলিগলিতেই মানুষের উপস্থিতি বেশি। আর প্রধান সড়কেও চলাচল বেড়েছে। আজিমপুর চৌরাস্তায় আর কেল্লারগেইট এলাকায় মানুষের চলাচল নিয়ন্ত্রণে তৎপর দেখা যায় পুলিশ সদস্যদের।
পলাশীর মোড়, শাহবাগ, নিউ মার্কেট, নীলক্ষেত, গ্রিন রোড ঘুরে গাড়ি ও রিকশা আগের পাঁচ দিনের তুলনায় বেশি দেখা গেছে। গ্রিন রোডের একটি ভবনের নির্মাণ শ্রমিক শহিদুল ইসলাম বললেন, লকডাউনের আগে প্রতিদিন ৭-৮ শ টাকা আয় ছিল তার। এখন কাজ নেই। বাড়ি ভাড়া দেওয়ার জন্য গ্রামে বোনকে বলেছেন ৪ হাজার টাকা পাঠাতে। দুই সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে হাতিরপুলে থাকেন জানিয়ে শহিদুল বলেন, ”কাজ নেই বলে খুব টেনশনে আছি। জানি না বাকি দিনগুলো কীভাবে পার করব।”
এসব এলাকাতেও রাস্তায় চলাচলকারী মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে দেখা যায়নি সেভাবে।
গ্রিন রোডের মায়ের দোয়া হোটেলের ম্যানেজার মো. জাভেদ বললেন, “আমরা গরমের কারণে হোটেলে মাস্ক পরতে পারি না। অনেক কাস্টমারই মাস্ক পড়তে চান না। তাদের মাস্ক পড়তে অনুরোধ করা হয়।”
মোহাম্মদপুরের আদাবর, শেখেরটেক, মোহাম্মাদীয়া হাউজিং এলাকায় প্রধান সড়কে মানুষের চলাচল কম হলেও পাড়া মহল্লায় ভিড় আছে। দোকানপাট খোলা, রাস্তায় ফেরিওয়ালারাও ভিড় করছেন। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ট্রাফিক পুলিশের রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার জয়দেব চৌধুরী বলেন, “অ্যাপারেন্টলি গাড়ি বেশি মনে হচ্ছে, কারণ ব্যাংকসহ জরুরি সেবার অফিস খোলা। তবে বিধি না মেনে যারা বের হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি।”

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

মহান বিজয়ের মাস শুরু

রাস্তায় বেড়েছে গাড়ি, গলিতে ভিড়

আপডেট সময় : ০১:৩৭:২৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৬ জুলাই ২০২১

নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশব্যাপী কঠোর লকডাউনের ষষ্ঠ দিনে গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর সড়কে মানুষ ও গাড়ির আনাগোনা আরও বাড়তে দেখা গেছে। গত বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া এই লকডাউনে প্রথম দিকে বেশ কড়াকড়ি দেখা গেলেও ক্রমেই শিথিলতা তৈরি হচ্ছে।
স্বাস্থ্যবিধি মানাতে বিভিন্ন এলাকায় পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর তৎপরতা থাকলেও অলিগলিতে সেলুন, মোবাইল এক্সেসরিজ, পোশাকসহ বিভিন্ন সামগ্রীর দোকান খোলা শুরু হয়েছে, বিধিনিষেধে যেগুলো বন্ধ থাকার কথা।
মানুষকে সচেতন করতে বিভিন্ন এলাকায় চলছে মাইকিং; এরপরও স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে জটলা হচ্ছে অলিগলি, বাজারে।
নি¤œ আয়ের মানুষ ও ছোট ব্যবসায়ীরা বলছেন, টানা লকডাউনের মধ্যে আর্থিক সংকটে পড়ে তাদের এখন আর কোনো উপায় নেই। মালিবাগ, রামপুরা, শান্তিনগর, পল্টন, কাকরাইল ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন পাড়া-মহল্লার অলি-গলিতে গত কয়েকদিনের তুলনায় লোকজনের চলাচল বেড়েছে। প্রধান সড়কে চলছে প্রচুর রিকশা, পাশাপাশি প্রাইভেট কারের সংখ্যাও বেশ।
সকালে শেরেবাংলা নগরে রোকেয়া সরণিতে দেখা যায় রিকশার জট। সেই জট থেকে ছাড়া পেতে সড়ক বিভাজকের উপর দিয়ে রিকশা তুলে বিপরীত পাশে নিতে দেখা যায় চালকদের। শান্তিনগর কাঁচাবাজারের বাইরে রাস্তার পাশে ঠেলাগাড়িতে করে সব্জি বিক্রি করতে দেখা যায় বাজারের স্থায়ী দোকানিদের। বাজার কর্তৃপক্ষ বলছে, সরকার উন্মুক্ত স্থানে কাঁচা বাজারের কেনাবেচা করতে বলেছে। তাই সড়কের পাশে অস্থায়ীভাবে এই ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে, কারণ বাজারের ভেতরে লোকজনের উপস্থিতি বেশি হলে সংক্রমণ বাড়তে পারে।
ন্যায্যমূল্যে তেল, ডাল, চিনি কেনার জন্য শান্তিনগরে টিসিবির ট্রাকের পেছনে দেখা গেল লম্বা লাইন । হাফিজা খাতুন নামের একজন ক্রেতা বললেন, “খোলা বাজারে তেলের দাম অনেক বেশি। সেজন্য আমি সকাল বেলা লাইনে দাঁড়িয়েছি সয়াবিন তেল কেনার জন্য। কোরবানির ঈদ তো সামনে।”
পুলিশের চেকপোস্টগুলোতে প্রাইভেট কার থামিয়ে পুলিশ সদস্যরা জিজ্ঞাসা করছেন কোথায় যাচ্ছেন, কেন যাচ্ছেন। তবে রিকশাযাত্রীদের সেরকম জিজ্ঞাসার মুখে পড়তে হচ্ছে কম।
শান্তিনগর থেকে রামপুরায় এসেছেন স্কুল শিক্ষক হাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, “পুলিশ বিভিন্ন চেকপোস্টে যাত্রীদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে। আমিও কিছুটা ভয়ে ভয়ে ছিলাম। পরে রিকশাচালক বলল ‘স্যার, ভয় পাইবেন না। আমাগো কিছু পুলিশ কইব না। ঝামেলা ছাড়াই বাসায় পৌঁছেছি।”
বিভিন্ন এলাকার মোড়ে মোড়ে হ্যান্ড মাইকে বিনা কারণে রাস্তায় বের না হওয়ার জন্য অনুরোধ করে মাইকিং করতে দেখা গেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের। মিরপুর এলাকার বিভিন্ন সড়কেও বেড়েছে ব্যস্ততা। মিরপুর ১০ ও ১১ নম্বরের বিভিন্ন গলিতে জটলা পাকিয়ে মানুষকে আড্ডা দিতে দেখা গেছে। চায়ের দোকান ও খাবার হোটেলেও বেড়েছে ভিড়।
নিষেধ থাকার পরও কিছু কিছু খাবারের দোকানে ভেতরে বসিয়েই খাবার পরিবেশন করতে দেখা গেছে। খুলতে শুরু করে টেইলার্স, স্যানিটারি, জুয়েলারির দোকান।
একটি টেইলার্সের শাটার অর্ধেক নামিয়ে ভেতরে কাজ চলছিল। দোকান খোলার বিষয়ে জানতে চাইলে সেখানকার একজন কর্মী বললেন, “একটা ড্রেস ডেলিভারি নেওয়ার কথা, সেই কারণে একটিু খুলছি।” আগের দিনই দেশে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ও মৃত্যুর রেকর্ড হয়েছে। কিন্তু রাস্তায় বের হওয়া মানুষের মধ্যে সচেতনতা সেভাবে নেই। অনেকেই স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। মাস্ক না পরে রিকশা, মোটরসাইকেল চালাতে দেখা গেছে অনেককে। মিরপুর ১০ নম্বরের বিআরটিএ এলাকায় বহু মানুষকে ভিড় করে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেল। ভিড়ের কারণ জানতে চাইলে একজন বললেন, টিসিবির খোলাবাজারের ট্রাক আসার অপেক্ষায় আছেন তারা।
মিরপুরের প্রধান সড়কগুলোতেও রিকশা কিংবা ব্যক্তিগত গাড়ি থামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে দেখা গেছে পুলিশ সদস্যদের। যথাযথ কারণ দেখাতে না পারলে মামলা আর জরিমানার মুখেও পড়তে হচ্ছে। মিরপুরের রূপনগর, পল্লবী, আরামবাগ এলাকার রাস্তায় মানুষের চলাচল দেখা গেছে গত কয়েক দিনের চেয়ে বেশি। গলির মোড় ও ভেতরের রাস্তার চায়ের দোকানে আড্ডাও বসেছে। সকাল ৯টায় রূপনগর থানা পুলিশের একটি দল একবার টহল দিয়ে যায়, কিন্তু তাদের বিদায়ের পর আবারও ভিড় বাড়ে রাস্তায়। খোলা আকাশের নিচে ফুটপাতে চলছে সবজি ও ফল বিক্রি।
রাস্তায় বের হওয়ার কারণ জানতে চাইলে স্থানীয় বাসিন্দা জাহিদ পাটোয়ারি বললেন, “পেট তো আর লকডাউন বোঝে না। বাজার করতে বের হয়েছি। কিন্তু তরিতরকারির দাম তো লকডাউনের আগের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে।”
মতিউর নামের এক রিকশা চালক বললেন, লকডাউনের প্রথম দুদিন তিনি ভয়ে রিকশা নিয়ে বের হননি। পরে বাধ্য হয়ে বের হতে হয়েছে। তবে যাত্রী কম থাকায় বাজার করার মত রোজগারও তার হচ্ছে না। রামপুরা, হাজীপাড়া, মালিবাগ এলাকার প্রধান সড়ক ডিআইটি রোডে দেখা গেল যান চলাচল আগের কয়েক দিনের মতই কম। সড়কে রিকশা এবং পণ্যবাহী গাড়ি আছে, কিছু ব্যক্তিগত গাড়ি থাকলেও সংখ্যায় কম। এ সড়কের দুইপাশের অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ থাকলেও অলি-গলির বেশিরভাগ দোকান খোলা। পুলি
গলির ভেতরের বেশ কিছু চা-পানের দোকান, বই-খাতা, স্টেশনারি, এমনি সেলুনও খোলা রাখা হয়েছে। তবে পুলিশের উপস্থিতি টের পেলে তারা দোকান বন্ধ করে দেন।
পূর্ব রামপুরা হাই স্কুল রোডে একটি খোলা থাকা সেলুন মালিক বললেন, “করোনার কারণে গত বছরের ক্ষতিই তো কাটিয়ে উঠতে পারিনি। এবার নতুন করে লকডাউন। কয়েক দিন সেলুন বন্ধ রেখেছি, এখন ঘরেবাজার-সদাই করার মত টাকাও নেই। খোলা রাখছি, পরিচিত কোনো কাস্টমার ফোন করে এলে কাজ করে দিই। তবে পুলিশের ভয়ও কাজ করে।”
পুরান ঢাকার, আজিমপুর, লালবাগ, কেল্লারমোড়, বকশিবাজার ও পলাশীর অলিগলি আগের দিনগুলোর চিত্রই দেখা গেছে। পাশের সড়কের মাছ দোকানদার, সবজি দোকানদার, মুদি দোকানগুলোতে মানুষও অনেক। স্বাস্থ্যবিধি মানছেন কেউ কেউ, অনেকের সেদিকে খেয়াল নেই। লালবাগ চৌরাস্তা, পলাশীর মোড় ও বকশিবাজারে অলিগলিতেই মানুষের উপস্থিতি বেশি। আর প্রধান সড়কেও চলাচল বেড়েছে। আজিমপুর চৌরাস্তায় আর কেল্লারগেইট এলাকায় মানুষের চলাচল নিয়ন্ত্রণে তৎপর দেখা যায় পুলিশ সদস্যদের।
পলাশীর মোড়, শাহবাগ, নিউ মার্কেট, নীলক্ষেত, গ্রিন রোড ঘুরে গাড়ি ও রিকশা আগের পাঁচ দিনের তুলনায় বেশি দেখা গেছে। গ্রিন রোডের একটি ভবনের নির্মাণ শ্রমিক শহিদুল ইসলাম বললেন, লকডাউনের আগে প্রতিদিন ৭-৮ শ টাকা আয় ছিল তার। এখন কাজ নেই। বাড়ি ভাড়া দেওয়ার জন্য গ্রামে বোনকে বলেছেন ৪ হাজার টাকা পাঠাতে। দুই সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে হাতিরপুলে থাকেন জানিয়ে শহিদুল বলেন, ”কাজ নেই বলে খুব টেনশনে আছি। জানি না বাকি দিনগুলো কীভাবে পার করব।”
এসব এলাকাতেও রাস্তায় চলাচলকারী মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে দেখা যায়নি সেভাবে।
গ্রিন রোডের মায়ের দোয়া হোটেলের ম্যানেজার মো. জাভেদ বললেন, “আমরা গরমের কারণে হোটেলে মাস্ক পরতে পারি না। অনেক কাস্টমারই মাস্ক পড়তে চান না। তাদের মাস্ক পড়তে অনুরোধ করা হয়।”
মোহাম্মদপুরের আদাবর, শেখেরটেক, মোহাম্মাদীয়া হাউজিং এলাকায় প্রধান সড়কে মানুষের চলাচল কম হলেও পাড়া মহল্লায় ভিড় আছে। দোকানপাট খোলা, রাস্তায় ফেরিওয়ালারাও ভিড় করছেন। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ট্রাফিক পুলিশের রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার জয়দেব চৌধুরী বলেন, “অ্যাপারেন্টলি গাড়ি বেশি মনে হচ্ছে, কারণ ব্যাংকসহ জরুরি সেবার অফিস খোলা। তবে বিধি না মেনে যারা বের হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি।”