ঢাকা ০৪:৩৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৪ অগাস্ট ২০২৫
আলোচনা সভায় মির্জা ফখরুল

সংকট সমাধানের ভালো উপায় নির্বাচিত সরকার

  • আপডেট সময় : ০৪:৩১:৩৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ অগাস্ট ২০২৫
  • ৩৩ বার পড়া হয়েছে

শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘সামাজিক সুরক্ষা কতটা সুরক্ষিত’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর -ছবি সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক: নির্বাচিত সরকারকে সংকট সমাধানের ‘ভালো উপায়’ মনে করছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

শনিবার (২৩ আগস্ট) দুপুরে ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনা সভায় দেশের বর্তমান অবস্থার মূল্যায়ন তুলে ধরে তিনি বলেন, এই যে সমস্যার কথা বললেন, সমাধানের পথ কী? এটা আমার ব্যবস্থার ওপর নির্ভর করবে। আমি যদি একটা জনপ্রতিনিধিত্বমূলক সরকার গঠন করতে পারি, আমি যদি একটা সুষ্ঠ নির্বাচন করতে পারি, সুষ্ঠ নির্বাচন করে আমি যদি ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, পার্লামেন্ট গঠন করতে পারি তাহলে সেখানে আমি জনগণের কাছে জবাবদিহিতামূলক একটা ব্যবস্থা তৈরি করতে পারব।
নির্বাচনকেই আপাতত ভালো উপায় মনে করছেন তিনি। আমি মনে করি আপাতত এটা একটা ভালো পথ বেরোবে, যেখানে গিয়ে আমি হয়তবা কিছুটা সমস্যার সমাধান করতে পারবো।
গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর কর্তৃত্ববাদী শাসনকে চিরতরে বিদায় করতে রাষ্ট্র সংস্কারের উদ্যোগ নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। প্রায় সাড়ে পাঁচ মাসের সংলাপে মৌলিক কিছু সংস্কারে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হলেও রাষ্ট্রের মূলনীতি, আইনসভায় নারী প্রতিনিধিত্বসহ আরো কয়েকটি বিষয়ে ভিন্নমত এসেছে।

এ অবস্থায় জুলাই জাতীয় সনদ চূড়ান্ত করার কাজ চলছে। ইতোমধ্যে আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। তবে নতুন সংবিধান প্রণয়নে জাতীয় নির্বাচনের আগে গণপরিষদ নির্বাচন দাবি করে আসছে জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি। অন্যদিকে বিএন জাতীয় নির্বাচনের বিষয়ে সোচ্চার। এর সঙ্গে অন্য দাবি নিয়ে আসাকে নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করার প্রচেষ্টা হিসেবে দেখছে দলটি।

ব্যবস্থা বদলাতে হবে: রাষ্ট্র ব্যবস্থার কাঠামো বদলাতে হবে, এমন মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমাকে আগে আমার কাঠামোটাকে বদলাতে হবে এবং সেই কাঠামোতে আমাদের এই বিষয়গুলোকে অত্যন্ত, মানে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে। আমাদের শিক্ষক ছিলেন ড. আবু মাহমুদ, অর্থনীতি পড়াতেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে. খুব বিখ্যাত শিক্ষক ছিলেন। তিনি মাঝে মাঝে খুব ভালো ভালো কথা বলতেনৃ.তার মধ্যে একটা কথা তিনি বলতেনৃ তুমি যদি বেগুন গাছ লাগাও সেখান থেকে তো তুমি কমলালেবু আশা করতে পারো না। তো আমরা লাগাবো বেগুন গাছ আর আশা করব আপনার কমলালেবু সেটা তো হয় না। আমাদের এই ব্যবস্থাটাকেই পরিবর্তন করতে হবে। বিচ্ছিন্নভাবে কোনো কিছু হবে না, জোড়াতালি দিয়েও কিছু হবে না। একটা সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য লক্ষ্য, চিন্তাভাবনা নিয়ে এগুতে হবে।

আওয়ামী লীগ দেশকে সর্বস্বান্ত করেছে: মির্জা ফখরুলের মতে, সব কিছু নির্ভর করছে যারা ক্ষমতায় যাচ্ছে, তারা কীভাবে সেই দেশটাকে পরিচালনা করছে? তিনি বলেন, আওয়ামী লীগকে তো যেনতেনভাবে ভোট দিয়েছিল ২০০৮ সালে, তাই না। সেই আওয়ামী লীগ গত ১৫ বছরে এই দেশকে সর্বস্বান্ত করে দিয়েছে। একেবারে বলা যায় যে ভূমি ধস করে দিয়েছে। সেই জায়গায় আপনি এক দেড় বছরে সব কিছু ঠিক করবেন, এটা মনে করার কারণ নাই। তবে কাজ শুরু করতে হবে স্বচ্ছ ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সামনে এগুতে হবে।

সচিবালয়ে উপদেষ্টারা অসহায়: শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে গেছে দাবি করে সাবেক প্রতিমন্ত্রী মির্জা ফখরুল বলেন, এগুলোকে আবার নতুন করে গড়ে তোলার জন্য তো মানুষ লাগবে, সেই মানুষগুলো তৈরি করতে হবে। সচিবালয়ে নিজের অভিজ্ঞতা দুর্ভাগ্যজনক বলে তুলে ধরে তিনি বলেন, আপনি সচিবালয়ে যাবেন, সেখানে গেলে ওই যে আমলারা বসে আছেন, তারাই সবকিছু নির্ধারণ করেন। আমাদের উপদেষ্টা যারা দায়িত্ব পালন করছেন এখন, অনেক ক্ষেত্রেই তারা অসহায়। তারপরও আমরা আশা করি যে, তারা (উপদেষ্টারা) এতদিন যে চেষ্টা করেছেন সে চেষ্টাটা নিয়ে, যারা সংস্কারের যেসব কমিশনগুলো আছে, তারাসহ আমরা সবাই মিলে একটা শুরু করতে পারি। এই শুরুটা দিয়ে আমরা একটা ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ, যেটা বৈষম্যহীন, (সেই) বাংলাদেশের দিকে আমরা এগিয়ে যেতে পারব।

বর্তমান ব্যবস্থায় অনিয়ম, ঘুর্ষ-দুর্নীতি ও বৈষম্য থাকার বিষয়টি তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, এ অবস্থার পরিবর্তন ‘রাতারাতি হবে না, এটা খুব কঠিন’। তার মতে, কল্যাণমূলক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় এমন ব্যবস্থার মধ্যে যেতে হবে হবে যেখানে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা জনগণের ন্যায় বিচার নিশ্চিত করবেন।

জাতীয় প্রেস ক্লাবের তোফাজ্জ্বল হোসেন মানিক মিয়া হলে ‘সামাজিক সুরক্ষা কতটা সুরক্ষিত?’ শীর্ষক এই আলোচনা সভার আয়োজন করে ‘অপর্ণা আলোক সংঘ’ নামে একটি সংগঠন। সংগঠনের প্রধান বীথিকা বিনতে হোসাইনের সভাপতিত্বে সেখানে বক্তব্য রাখেন- গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন-এনডিএম নেতা ববি হাজ্জাজ, সাবেক এমপি রেহানা আক্তার রানু, বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান এম মাসরুর রিয়াজ, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক সোহরাব হাসান।

এসি/সানা/২৩/৮/২০২৫

 

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

আলোচনা সভায় মির্জা ফখরুল

সংকট সমাধানের ভালো উপায় নির্বাচিত সরকার

আপডেট সময় : ০৪:৩১:৩৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ অগাস্ট ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক: নির্বাচিত সরকারকে সংকট সমাধানের ‘ভালো উপায়’ মনে করছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

শনিবার (২৩ আগস্ট) দুপুরে ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনা সভায় দেশের বর্তমান অবস্থার মূল্যায়ন তুলে ধরে তিনি বলেন, এই যে সমস্যার কথা বললেন, সমাধানের পথ কী? এটা আমার ব্যবস্থার ওপর নির্ভর করবে। আমি যদি একটা জনপ্রতিনিধিত্বমূলক সরকার গঠন করতে পারি, আমি যদি একটা সুষ্ঠ নির্বাচন করতে পারি, সুষ্ঠ নির্বাচন করে আমি যদি ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, পার্লামেন্ট গঠন করতে পারি তাহলে সেখানে আমি জনগণের কাছে জবাবদিহিতামূলক একটা ব্যবস্থা তৈরি করতে পারব।
নির্বাচনকেই আপাতত ভালো উপায় মনে করছেন তিনি। আমি মনে করি আপাতত এটা একটা ভালো পথ বেরোবে, যেখানে গিয়ে আমি হয়তবা কিছুটা সমস্যার সমাধান করতে পারবো।
গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর কর্তৃত্ববাদী শাসনকে চিরতরে বিদায় করতে রাষ্ট্র সংস্কারের উদ্যোগ নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। প্রায় সাড়ে পাঁচ মাসের সংলাপে মৌলিক কিছু সংস্কারে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হলেও রাষ্ট্রের মূলনীতি, আইনসভায় নারী প্রতিনিধিত্বসহ আরো কয়েকটি বিষয়ে ভিন্নমত এসেছে।

এ অবস্থায় জুলাই জাতীয় সনদ চূড়ান্ত করার কাজ চলছে। ইতোমধ্যে আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। তবে নতুন সংবিধান প্রণয়নে জাতীয় নির্বাচনের আগে গণপরিষদ নির্বাচন দাবি করে আসছে জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি। অন্যদিকে বিএন জাতীয় নির্বাচনের বিষয়ে সোচ্চার। এর সঙ্গে অন্য দাবি নিয়ে আসাকে নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করার প্রচেষ্টা হিসেবে দেখছে দলটি।

ব্যবস্থা বদলাতে হবে: রাষ্ট্র ব্যবস্থার কাঠামো বদলাতে হবে, এমন মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমাকে আগে আমার কাঠামোটাকে বদলাতে হবে এবং সেই কাঠামোতে আমাদের এই বিষয়গুলোকে অত্যন্ত, মানে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে। আমাদের শিক্ষক ছিলেন ড. আবু মাহমুদ, অর্থনীতি পড়াতেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে. খুব বিখ্যাত শিক্ষক ছিলেন। তিনি মাঝে মাঝে খুব ভালো ভালো কথা বলতেনৃ.তার মধ্যে একটা কথা তিনি বলতেনৃ তুমি যদি বেগুন গাছ লাগাও সেখান থেকে তো তুমি কমলালেবু আশা করতে পারো না। তো আমরা লাগাবো বেগুন গাছ আর আশা করব আপনার কমলালেবু সেটা তো হয় না। আমাদের এই ব্যবস্থাটাকেই পরিবর্তন করতে হবে। বিচ্ছিন্নভাবে কোনো কিছু হবে না, জোড়াতালি দিয়েও কিছু হবে না। একটা সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য লক্ষ্য, চিন্তাভাবনা নিয়ে এগুতে হবে।

আওয়ামী লীগ দেশকে সর্বস্বান্ত করেছে: মির্জা ফখরুলের মতে, সব কিছু নির্ভর করছে যারা ক্ষমতায় যাচ্ছে, তারা কীভাবে সেই দেশটাকে পরিচালনা করছে? তিনি বলেন, আওয়ামী লীগকে তো যেনতেনভাবে ভোট দিয়েছিল ২০০৮ সালে, তাই না। সেই আওয়ামী লীগ গত ১৫ বছরে এই দেশকে সর্বস্বান্ত করে দিয়েছে। একেবারে বলা যায় যে ভূমি ধস করে দিয়েছে। সেই জায়গায় আপনি এক দেড় বছরে সব কিছু ঠিক করবেন, এটা মনে করার কারণ নাই। তবে কাজ শুরু করতে হবে স্বচ্ছ ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সামনে এগুতে হবে।

সচিবালয়ে উপদেষ্টারা অসহায়: শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে গেছে দাবি করে সাবেক প্রতিমন্ত্রী মির্জা ফখরুল বলেন, এগুলোকে আবার নতুন করে গড়ে তোলার জন্য তো মানুষ লাগবে, সেই মানুষগুলো তৈরি করতে হবে। সচিবালয়ে নিজের অভিজ্ঞতা দুর্ভাগ্যজনক বলে তুলে ধরে তিনি বলেন, আপনি সচিবালয়ে যাবেন, সেখানে গেলে ওই যে আমলারা বসে আছেন, তারাই সবকিছু নির্ধারণ করেন। আমাদের উপদেষ্টা যারা দায়িত্ব পালন করছেন এখন, অনেক ক্ষেত্রেই তারা অসহায়। তারপরও আমরা আশা করি যে, তারা (উপদেষ্টারা) এতদিন যে চেষ্টা করেছেন সে চেষ্টাটা নিয়ে, যারা সংস্কারের যেসব কমিশনগুলো আছে, তারাসহ আমরা সবাই মিলে একটা শুরু করতে পারি। এই শুরুটা দিয়ে আমরা একটা ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ, যেটা বৈষম্যহীন, (সেই) বাংলাদেশের দিকে আমরা এগিয়ে যেতে পারব।

বর্তমান ব্যবস্থায় অনিয়ম, ঘুর্ষ-দুর্নীতি ও বৈষম্য থাকার বিষয়টি তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, এ অবস্থার পরিবর্তন ‘রাতারাতি হবে না, এটা খুব কঠিন’। তার মতে, কল্যাণমূলক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় এমন ব্যবস্থার মধ্যে যেতে হবে হবে যেখানে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা জনগণের ন্যায় বিচার নিশ্চিত করবেন।

জাতীয় প্রেস ক্লাবের তোফাজ্জ্বল হোসেন মানিক মিয়া হলে ‘সামাজিক সুরক্ষা কতটা সুরক্ষিত?’ শীর্ষক এই আলোচনা সভার আয়োজন করে ‘অপর্ণা আলোক সংঘ’ নামে একটি সংগঠন। সংগঠনের প্রধান বীথিকা বিনতে হোসাইনের সভাপতিত্বে সেখানে বক্তব্য রাখেন- গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন-এনডিএম নেতা ববি হাজ্জাজ, সাবেক এমপি রেহানা আক্তার রানু, বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান এম মাসরুর রিয়াজ, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক সোহরাব হাসান।

এসি/সানা/২৩/৮/২০২৫