নিজস্ব প্রতিবেদক: সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের সভাপতি রাজেকুজ্জামান রতন বলেছেন, আমরা এমন আইন চাই, যে আইনে থাকবে ড্রাইভারদের কর্মঘণ্টা কত হবে, কর্মপরিবেশ কী হবে, তার চাকরির নিশ্চয়তা ও নিরাপত্তা কী হবে, তার বৃদ্ধ বয়সের নিরাপত্তা কী হবে? শ্রমসংস্কার আইনে প্রত্যেক শ্রমজীবী মানুষের একটা রেজিস্ট্রেশন কার্ড থাকতে হবে। এই কার্ডটা তার স্বীকৃতি, যে তিনি একজন শ্রমিক, তিনি একজন শ্রমজীবী মানুষ। এই শ্রমজীবী মানুষের জন্য রেশন, আবাসন ও পেনশন- এ তিনটি অধিকার রাষ্ট্রের নিশ্চিত করা উচিত। শুক্রবার (২৪ অক্টোবর) জাতীয় প্রেসক্লাবে ঢাকা জেলা ট্যাক্সি, ট্যাক্সি কার, অটোরিকশা চালক শ্রমিক ইউনিয়ন আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি।
রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, হালকা যান হিসেবে আমাদের একটা লাইসেন্স আছে, কিন্তু আমাদের শ্রম আইনে হালকা চালকদের কথা লেখা নেই। আমি ড্রাইভিং লাইসেন্স পেলাম হালকা যানের চালক হিসেবে, কিন্তু শ্রম আইনে তার স্বীকৃতি পেলাম না। কারণ হালকা যানবাহন চালক হিসেবে আমরা এতই হালকা যে আমাদের কেউ পাত্তাই দিচ্ছে না, এমনকি আইনেও আমাদের স্বীকৃতি নেই। তিনি আরো বলেন, আমাদের শ্রম আইনের ৫ নম্বর ধারায় আছে, নিয়োগপত্র না দিয়ে কাউকে নিয়োগ করা যাবে না। কিন্তু আমাদের নিয়োগপত্র হচ্ছে চাবি। কালকে যদি মালিক বলে, কালকে থেকে আসবা না, চাবিটা দিয়ে যাও তাহলে শেষ। প্রত্যেকের ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতার একটা মূল্য আছে। আমাদের চালকদের অভিজ্ঞতা বাড়ে, বয়স যত বাড়ে, চাকরির ঝুঁকি তত বাড়ে। শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রধান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমাদের দেশের অন্যতম দক্ষ জনশক্তি হচ্ছে গাড়ির চালকরা। তাদের নিবন্ধিত লাইসেন্স আছে। পরীক্ষা দিয়ে লাইসেন্স নিয়ে একজন দক্ষ জনশক্তি হিসেবে নিবন্ধিত হওয়ার পরই তিনি রাস্তায় নামতে পারেন। তাহলে এই দক্ষ একজন জনশক্তি, একজন দক্ষ ব্যক্তিকে কেন যুগের পর যুগ এত অমানবিক অবস্থার মধ্যে যেতে হয়? এটা আমাদের একটু খুঁজে বের করা দরকার।
চালকদের উদ্দেশ্যে তিনি তিনটি পরামর্শ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, প্রথমত- চালকদের নিজেদের নিয়োগকারীর (মালিক নয়) সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ সমান অংশীদার হিসেবে দেখতে হবে। এই সম্পর্কটি ‘মালিক-শ্রমিক’ না হয়ে ‘চুক্তিভিত্তিক’ হতে হবে, যেখানে উভয়ের অধিকার ও দায়িত্ব সুনির্দিষ্ট থাকবে। এবং এটার জন্য নিজেদের মধ্যে একটা বোধ, একটা সাহস তৈরি করা খুব দরকার-যে আমি একজন দক্ষ জনশক্তির অংশ।
দ্বিতীয়ত তিনি বলেন, মৌলিক দাবিগুলো যেমন নিয়োগপত্র, ন্যায্য মজুরি যা বাজারের মানদণ্ড নয় বরং যৌক্তিক আলোচনার ভিত্তিতে নির্ধারিত হবে। সেটা আদায়ে নিজেদের মধ্যে সংগঠিত হতে হবে এবং অন্যান্য সংগঠিত হওয়ার চেষ্টাকারী দলগুলোর সঙ্গে একটি যোগসূত্র বা কর্মসূচিভিত্তিক ঐক্য তৈরি করতে হবে। তিনি অনুরোধ করেন, চালকরা যেন নিজেদের মর্যাদা নিয়ে ইনিয়ে-বিনিয়ে কথা বলা বন্ধ করে দেন এবং একটি কর্মসূচির ভিত্তিতে অন্যদের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়ে একটি মডেল তৈরি করেন। মৌলিক দাবি পূরণ হয়ে গেলে পরবর্তীতে যার যার নিজস্ব সংগঠন তৈরি করা যেতে পারে, কিন্তু প্রাথমিকভাবে একটি যোগসূত্র থাকা আবশ্যক।
তৃতীয় পরামর্শে তিনি বলেন, অ্যাক্সিডেন্টের পর চালকদের প্রতি জনগণের নেতিবাচক মনোভাব ও দূরত্ব কমানোর জন্য জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে। এর জন্য কিছু জনসংযোগমূলক কর্মসূচি হাতে নেওয়া দরকার। উদাহরণস্বরূপ, চালকরা ‘অযথা হর্ন দিবেন না’ এমন স্টিকার ব্যবহার করতে পারেন এবং একই সঙ্গে জনগণের জন্য মোবাইল হাতে নিয়ে রাস্তা পার হবেন না এমন প্রচার চালাতে পারেন। এই ধরনের উদ্যোগের মাধ্যমে জনগণের সঙ্গে চালকদের ইতিবাচক সম্পর্ক তৈরি হবে।
সানা/কেএমএএ/আপ্র/২৪/১০/২০২৫



















