ঢাকা ০৮:৪০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৫ মে ২০২৫

রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় রাজশাহী পাটকল চালুর দাবিতে শ্রমিকদের বিক্ষোভ

  • আপডেট সময় : ১১:২৫:১৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৭ এপ্রিল ২০২৪
  • ৮৭ বার পড়া হয়েছে

রাজশাহী প্রতিনিধি: রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় রাজশাহী পাটকল ফের চালুর দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন শ্রমিকেরা। গতকাল রোববার সকাল ১০টার দিকে রাজশাহী জুট মিলস শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের উদ্যোগে পাটকলের সামনে থেকে এই বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি কাটাখালী বাজারে গিয়ে শেষ হয়। এরপর সেখানে অনুষ্ঠিত সমাবেশে অংশ নেন শ্রমিকরা। সমাবেশে শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সাবেক কোষাধ্যক্ষ ফরমান আলী বলেন, “তৎকালীন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী দেশের ২৫টি পাটকলের শ্রমিকদের পথে বসিয়ে মিল বন্ধ করে দিয়েছেন। “বর্তমান বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী শ্রমিকবান্ধব। আমাদের প্রত্যাশা, তিনি এই পাটকল আবার চালু করবেন। খেটে-খাওয়া শ্রমিকদের দু’বেলা খাওয়ার ব্যবস্থা করবেন।” ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক শামীম হোসেন বলেন, “২০২০ সালে যখন পাটকল বন্ধ করা হয়, তখন বলা হয়েছিল ইজারা দিয়ে পাটকলগুলো আবার চালু করা হবে। তারপর কয়েকটা পাটকল ইজারা দেওয়া হয়েছে, কিন্তু সেগুলো চলছে না। তাই রাষ্ট্রীয়ভাবেই এই পাটকল চালু করতে হবে।” কর্মহীন অনেক শ্রমিক বিনা চিকিৎসায় মারা গেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, “এই পাটকলের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বসে বসে বেতন নিচ্ছেন। কিন্তু কর্ম হারিয়ে অনাহারে থাকছেন শ্রমিকেরা। এ অবস্থা চলতে পারে না। আমরা গায়ে খেটে পারিশ্রমিক নিতে চাই।” রাজশাহীতে ভারি শিল্পের অভাবের কথা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, “যে দু’একটি আছে সেগুলোও বন্ধ করে দিয়েছে। আমার বয়স হয়েছে। আর হয়ত কাজ করতে পারব না। কিন্তু নতুনরা কাজের সুযোগ পাক। আমরা এটাই চাই। “নতুন মন্ত্রী যদি পাটকল চালু করে দেন, শ্রমিকেরা দুই হাত তুলে দোয়া করবে,” যোগ করেন এই শ্রমিক নেতা। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ইউনিয়নের সভাপতি জিল্লুর রহমান। তিনি বলেন, পাটকলের মৃত শ্রমিক ও বদলির শ্রমিকদের অনেকের পাওনা পরিশোধ করেনি কর্তৃপক্ষ।
তিনি অভিযোগ করেন, “এক হাজার ৭০০ শ্রমিক বেকার থাকলেও ৫৭ জন কর্মকর্তা ও ১৫০ জন কর্মচারী বসে বসে বেতন নিচ্ছেন। তাদের কোনো কাজ নেই। মাসে একদিন এসে হাজিরা খাতায় সই করে বেতন নিয়ে চলে যান। “তারা বসে বসে বেতন নিলেও যদি লোকসান না হয়, তাহলে শ্রমিকেরা উৎপাদন করে মজুরি নিলেও লোকসান হবে না। সরকারকে বিষয়টি বুঝতে হবে।” পাটকল চালু করতে রাজশাহীর জনপ্রতিনিধিদের উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে জিল্লুর আরও বলেন, “আমরা বাড়ি-গাড়ি চাই না। আমরা কাজের পরিবেশ চাই। কাজ করে পয়সা নিতে চাই।” “অচিরেই যদি পাটকল রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় চালু করা না হয়, তাহলে আমরা দেশের ২৫টি পাটকলের শ্রমিকদের সঙ্গেই বসব। সবাই মিলে আমরা বৃহত্তর কর্মসূচিতে যাব। প্রয়োজনে আমরণ অনশন করব। তারপরও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান এভাবে ধ্বংস হতে দেব না।” শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের কোষাধ্যক্ষ মোস্তাফিজুর রহমানের পরিচালনায় সমাবেশ আরও অনেকে বক্তব্য দেন। শ্রমিকেরা বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নানা স্লোগান দেন। রাজশাহীর পবা উপজেলার কাটাখালী পৌরসভা এলাকায় ১৯৫৫ সালে এই পাটকল প্রতিষ্ঠিত হয়। রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় এখানে উৎপাদন চলত। ২০২০ সালে দেশের ২৫টি পাটকলকেই ইজারা দিয়ে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় চালানোর সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। কথা ছিল, আধুনিকায়নের পর তিন মাসের মধ্যেই পাটকলে আবার উৎপাদন শুরু হবে। কিন্তু চার বছর পার হলেও রাজশাহী পাটকল আর চালু হয়নি। এতে পাটকলের প্রায় ১ হাজার ৭০০ জন শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়েছেন।

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় রাজশাহী পাটকল চালুর দাবিতে শ্রমিকদের বিক্ষোভ

আপডেট সময় : ১১:২৫:১৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৭ এপ্রিল ২০২৪

রাজশাহী প্রতিনিধি: রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় রাজশাহী পাটকল ফের চালুর দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন শ্রমিকেরা। গতকাল রোববার সকাল ১০টার দিকে রাজশাহী জুট মিলস শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের উদ্যোগে পাটকলের সামনে থেকে এই বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি কাটাখালী বাজারে গিয়ে শেষ হয়। এরপর সেখানে অনুষ্ঠিত সমাবেশে অংশ নেন শ্রমিকরা। সমাবেশে শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সাবেক কোষাধ্যক্ষ ফরমান আলী বলেন, “তৎকালীন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী দেশের ২৫টি পাটকলের শ্রমিকদের পথে বসিয়ে মিল বন্ধ করে দিয়েছেন। “বর্তমান বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী শ্রমিকবান্ধব। আমাদের প্রত্যাশা, তিনি এই পাটকল আবার চালু করবেন। খেটে-খাওয়া শ্রমিকদের দু’বেলা খাওয়ার ব্যবস্থা করবেন।” ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক শামীম হোসেন বলেন, “২০২০ সালে যখন পাটকল বন্ধ করা হয়, তখন বলা হয়েছিল ইজারা দিয়ে পাটকলগুলো আবার চালু করা হবে। তারপর কয়েকটা পাটকল ইজারা দেওয়া হয়েছে, কিন্তু সেগুলো চলছে না। তাই রাষ্ট্রীয়ভাবেই এই পাটকল চালু করতে হবে।” কর্মহীন অনেক শ্রমিক বিনা চিকিৎসায় মারা গেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, “এই পাটকলের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বসে বসে বেতন নিচ্ছেন। কিন্তু কর্ম হারিয়ে অনাহারে থাকছেন শ্রমিকেরা। এ অবস্থা চলতে পারে না। আমরা গায়ে খেটে পারিশ্রমিক নিতে চাই।” রাজশাহীতে ভারি শিল্পের অভাবের কথা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, “যে দু’একটি আছে সেগুলোও বন্ধ করে দিয়েছে। আমার বয়স হয়েছে। আর হয়ত কাজ করতে পারব না। কিন্তু নতুনরা কাজের সুযোগ পাক। আমরা এটাই চাই। “নতুন মন্ত্রী যদি পাটকল চালু করে দেন, শ্রমিকেরা দুই হাত তুলে দোয়া করবে,” যোগ করেন এই শ্রমিক নেতা। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ইউনিয়নের সভাপতি জিল্লুর রহমান। তিনি বলেন, পাটকলের মৃত শ্রমিক ও বদলির শ্রমিকদের অনেকের পাওনা পরিশোধ করেনি কর্তৃপক্ষ।
তিনি অভিযোগ করেন, “এক হাজার ৭০০ শ্রমিক বেকার থাকলেও ৫৭ জন কর্মকর্তা ও ১৫০ জন কর্মচারী বসে বসে বেতন নিচ্ছেন। তাদের কোনো কাজ নেই। মাসে একদিন এসে হাজিরা খাতায় সই করে বেতন নিয়ে চলে যান। “তারা বসে বসে বেতন নিলেও যদি লোকসান না হয়, তাহলে শ্রমিকেরা উৎপাদন করে মজুরি নিলেও লোকসান হবে না। সরকারকে বিষয়টি বুঝতে হবে।” পাটকল চালু করতে রাজশাহীর জনপ্রতিনিধিদের উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে জিল্লুর আরও বলেন, “আমরা বাড়ি-গাড়ি চাই না। আমরা কাজের পরিবেশ চাই। কাজ করে পয়সা নিতে চাই।” “অচিরেই যদি পাটকল রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় চালু করা না হয়, তাহলে আমরা দেশের ২৫টি পাটকলের শ্রমিকদের সঙ্গেই বসব। সবাই মিলে আমরা বৃহত্তর কর্মসূচিতে যাব। প্রয়োজনে আমরণ অনশন করব। তারপরও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান এভাবে ধ্বংস হতে দেব না।” শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের কোষাধ্যক্ষ মোস্তাফিজুর রহমানের পরিচালনায় সমাবেশ আরও অনেকে বক্তব্য দেন। শ্রমিকেরা বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নানা স্লোগান দেন। রাজশাহীর পবা উপজেলার কাটাখালী পৌরসভা এলাকায় ১৯৫৫ সালে এই পাটকল প্রতিষ্ঠিত হয়। রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় এখানে উৎপাদন চলত। ২০২০ সালে দেশের ২৫টি পাটকলকেই ইজারা দিয়ে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় চালানোর সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। কথা ছিল, আধুনিকায়নের পর তিন মাসের মধ্যেই পাটকলে আবার উৎপাদন শুরু হবে। কিন্তু চার বছর পার হলেও রাজশাহী পাটকল আর চালু হয়নি। এতে পাটকলের প্রায় ১ হাজার ৭০০ জন শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়েছেন।