প্রত্যাশা ডেস্ক : ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের পঞ্চম দিনে যুদ্ধ বন্ধের লক্ষ্যে দুই দেশের প্রতিনিধিদের মধ্যে শান্তি আলোচনা শুরু হয়েছে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের কার্যালয় থেকে বলা হয়েছে, তারা এ মুহূর্তে যুদ্ধবিরতি এবং রুশ সেনা প্রত্যাহার চায়।
অন্যদিকে, রাশিয়ার প্রতিনিধিদলের প্রধান ভ্লাদিমির মেদিনস্কি বলছেন, মস্কো এমন এক বোঝাপড়া চায় যাতে দুই পক্ষের স্বার্থ রক্ষা হবে।
বৈঠক শুরুর আগে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি রুশ সেনাদের অস্ত্র নামিয়ে রাখার আহ্বান জানিয়েছিলেন। একইসঙ্গে ইউক্রেইনকে দ্রুত সদস্যপদ দেওয়ার জন্য ইইউ-কেও অনুরোধ করেন তিনি। বিবিসি জানিয়েছে, গতকাল সোমবার ইউক্রেনের স্থানীয় সময় দুপুর ১টার একটু আগে বেলারুশে দুপক্ষের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়। ইউক্রেনের প্রতিনিধি দলের মধ্যে বেশ কয়েকজন ঊচ্চপদস্থ কর্মকর্তা থাকলেও প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি নিজে নেই। পরিকল্পনা, সংগঠন ও নিরাপত্তা ইস্যুজনিত কারণে শান্তি আলোচনা স্থগিত করা হয়েছে বলে এর আগে খবর হয়েছিল।
গত রোববার এক ভাষণে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জানিয়েছিলেন, এই আলোচনার মধ্য দিয়ে সংকট সমাধানে বড় ধরনের কোনও অগ্রগতি হবে বলে আশা করছেন না তিনি। তবে ছোট হলেও এই সুযোগকে তারা ব্যবহার করার চেষ্টা করবেন। ইউক্রেইন যুদ্ধ থামানোর কোনও চেষ্টা করেনি, কেউ যেন এমন অভিযোগ করতে না পারে তা নিশ্চিত করতেই শান্তি আলোচনায় কিয়েভ যোগ দিচ্ছে বলেও তিনি জানিয়েছিলেন। কোনও পূর্বশর্ত ছাড়াই এ আলোচনা অনুষ্ঠিত হচ্ছে বলে ইউক্রেইন জানিয়েছে। বেলারুশের মন্ত্রীরা সোমবার আলোচনার জন্য ইউক্রেইন এবং রাশিয়ার প্রতিনিধিদেরকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, তারা ‘পুরোপুরি নিরাপদ বোধ করতে পারে’।
বেলারুশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভ্লাদিমির মাকেই বলেছেন, “প্রেসিডেন্ট লুকাশেঙ্কো আন্তরিকভাবেই আশা করছেন যে, আজকের আলোচনায় এই সংকটের সব প্রশ্নের সমাধান খুঁজে পাওয়া সম্ভব হবে। বেলারুশের জনগণও এর জন্য প্রার্থনা করছে।”
“আজকের আয়োজিত এই বৈঠকে যে কোনও প্রস্তাব বিবেচনা করে দেখা হবে এবং পূরণ করা হবে। আমরা বৈঠকের ফলের দিকে তাকিয়ে আছি,” বলেন তিনি। সিএনএন জানায়, বৈঠকটি ঠিক কোন জায়গায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে সেটি নিরাপত্তাজনিত কারণে গোপন রাখা হয়েছে। বেলারুশে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকের স্থান বলতে কেবল গোমেল অঞ্চলে প্রিপায়াত নদীর তীরের কথা জানানো হয়েছে।
মধ্যস্থতার চেষ্টায় রুশ ধনকুবের: চেলসিয়া ফুটবল ক্লাবের মালিক রুশ-ইসরায়েলি ধনকুবের রোমান আব্রামোভিচ ইউক্রেন এবং রাশিয়াকে সংঘাতের শান্তিপূর্ণ সমাধানে পৌঁছতে সহায়তা করার জন্য মধ্যস্থতার চেষ্টা করছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। বিবিসি জানায়, আব্রামোভিচের মুখপাত্র বলেছেন, ইউক্রেনের কর্মকর্তারা আলোচনায় একটি শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য তার কাছে সাহায্য চেয়েছেন। এরপরই সহায়তার চেষ্টা শুরু করেছেন আব্রামোভিচ।
রাশিয়ার ৫ হাজারেরও বেশি সেনা নিহত হয়েছে, দাবি ইউক্রেনের : ইউক্রেনে প্রথম চার দিনের লড়াইয়ে রাশিয়ার পাঁচ হাজারেরও বেশি সেনা নিহত হয়েছে বলে কিয়েভের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় দাবি করেছে। সোমবার ফেইসবুকে পোস্ট করা এক বিবৃতিতে মন্ত্রণালয়টির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রাশিয়ার আনুমানিক পাঁচ হাজার ৩০০ সেনা নিহত হয়েছে। একই সময় ইউক্রেনীয় বাহিনীগুলো রাশিয়ার ১৯১টি ট্যাঙ্ক, ২৯টি যুদ্ধবিমান, ২৯টি হেলিকপ্টার ও ৮১৬টি সাঁজোয়া যান ধ্বংস করেছে। বিবিসি জানিয়েছে, তারা এসব দাবি স্বতন্ত্রভাবে যাচাই করতে পারেনি। তবে যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর বিশ্বাস, লড়াইয়ের শুরুর পর্যায়ে রাশিয়ার পক্ষে ‘ব্যাপক’ হতাহত হয়েছে। রোববার রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় তাদের বাহিনীগুলো ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছে বলে স্বীকার করেছে। তবে নির্দিষ্ট কোনো সংখ্যা প্রকাশ করেনি তারা। এদিকে জাতিসংঘের পর্যবেক্ষকরা জানিয়েছেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন শুরুর পর গত চার দিনের যুদ্ধে নিহতদের মধ্যে অন্তত ১০২ জন বেসামরিক নাগরিক রয়েছেন। এই আগ্রাসন ‘গুরুতর মানবিক পরিণতি’ বয়ে এনেছে এবং এতে হতাহতের সংখ্যা অনেক বেশি হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তারা।
প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের বৈঠক ডাকলো ইউরোপীয় ইউনিয়ন : ইউক্রেন সংঘাত পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্য সদস্য দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের বৈঠকে বসার আহ্বান জানিয়েছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র এবং নিরাপত্তা নীতি বিষয়ক প্রধান জোসেফ বোরেল। সোমবার এক টুইট বার্তায় জোসেফ বোরেল জানান, ইইউ প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের এই বৈঠকের আলোচ্যসূচি হবে ‘জরুরি প্রয়োজন’ এবং ইউক্রেনীয়দের জন্য জোটের সহায়তার সমন্বয়। এর আগে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি তার দেশকে অবিলম্বে ইইউ সদস্য করে নেওয়ার আহ্বান জানান। এর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ইউরোপিয়ান কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট চার্লস মাইকেল বলেন, ‘ইইউ সম্প্রসারণে ভিন্ন মতামত এবং স্পর্শকাতরতা রয়েছে।’ সূত্র: বিবিসি
রাশিয়ার মিত্র বেলারুশও যোগ দিচ্ছে ইউক্রেন যুদ্ধে : ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরুর পঞ্চম দিনে এসে রাশিয়ার নেতা ভ্লাদিমির পুতিন তার বেলারুশের মিত্র আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কোকেও লড়াইয়ে যোগ দিতে রাজি করিয়েছেন বলে খবর আসছে।
বিবিসি লিখেছে, ইউক্রেনে হামলা চালানোর জন্য গত কয়েক দিন প্রতিবেশী বেলারুশকে ‘স্প্রিংবোর্ড’ হিসেবে ব্যবহার করছিল রাশিয়া। এখন বেলারুশ নিজেই ইউক্রেনে সেনা পাঠাচ্ছে রাশিয়ার আগ্রাসন সফল করতে। নাম প্রকাশ না করে একজন মার্কিন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে ওয়াশিংটন পোস্ট লিখেছে, বেলারুশ সেনা পাঠানোর প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছে। সোমবারই তাদের সৈন্যরা ইউক্রেনে পৌঁছাতে পারে বলে খবর।
পরমাণু অস্ত্রের হুমকি দিয়ে পুতিন বিভ্রান্ত করতে চাইছেন: যুক্তরাজ্য : ‘ইউক্রেইনে কী ভুল হচ্ছে’ সেদিক থেকে মানুষের দৃষ্টি অন্যদিকে ফেরাতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তার সেনাবাহিনীকে পারমাণবিক অস্ত্র সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রাখতে বলেছেন বলে মনে করেন যুক্তরাজ্যে প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেন ওয়ালেস। তিনি বলেন, ‘‘প্রেসিডেন্ট পুতিন কথার লড়াইয়ের মাধ্যমে বাকি বিশ্বকে তার দাবি না মানলে কি হতে পারে সেটি নিয়ে ভয় দেখাতে চাইছেন।”
‘‘রাশিয়া ইউক্রেনে আগ্রাসনের যে পরিকল্পনা করেছিল, বাস্তবে তারা তার থেকে পিছিয়ে আছে। ইউক্রেইন তাদের খুবই শক্তভাবে প্রতিরোধ করে যাচ্ছে।” পরমাণু অস্ত্র ‘সর্বোচ্চ সতর্ক’ অবস্থায় রাখার নির্দেশ দেওয়ার কারণ ব্যাখ্যায় পুতিন বলেছেন, পশ্চিমা বিশ্ব এবং নেটোর আগ্রাসী আচরণের কারণে তিনি ওই নির্দেশ দিয়েছেন। তার ঘোষণার অর্থ এই নয় যে, রাশিয়া পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করতে চাইছে। কিন্তু সেটা হলেও তার এই ঘোষণা নিশ্চিতভাবেই অত্যন্ত নিন্দনীয় এবং সারা বিশ্ব থেকেই নিন্দার ঝড় উঠেছে। যুক্তরাষ্ট্র একে ‘অগ্রহণযোগ্য উসকানি’ বলেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন মস্কোর উপর নজিরবিহীন বেশ কিছু নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। যার মধ্যে অন্যতম হলো, রাশিয়া এবং রুশ মালিকানাধীন সব উড়োজাহাজের জন্য ইইউ-এর আকাশসীমা বন্ধ করে দেওয়া। সেইসঙ্গে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় দুই সংবাদ সংস্থা রাশিয়া টুডে এবং স্পুৎনিক কে ইইউ’র মাটিতে নিষিদ্ধ করা। এমনকী ইইউ নিজেদের ইতিহাসে প্রথমবারের মত কোনও যুদ্ধক্ষেত্রের জন্য অস্ত্র কেনা এবং তা সরবরাহ করতে অর্থ দেওয়ার ইচ্ছার কথাও জানিয়েছে। রাশিয়ার আগ্রাসন রুখতে তারা ইউক্রেইনে এই সহায়তা দিতে চায়।
রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনায় যুদ্ধবিরতি চায় ইউক্রেন
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ