বিদেশের খবর ডেস্ক : রাশিয়ার ওপর আরোপিত কিছু নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করছে যুক্তরাষ্ট্র। নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মস্কোর সঙ্গে সম্পোর্কন্নয়ন এবং ইউক্রেনের যুদ্ধ বন্ধ করতে চান। এ দুটি প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হতে পারে। বার্তাসংস্থা রয়টার্স গতকাল মঙ্গলবার (৪ মার্চ) জানিয়েছে, হোয়াইট হাউজ পররাষ্ট্র ও অর্থ মন্ত্রণালয়কে রাশিয়ার ওপর দেওয়া নিষেধাজ্ঞার একটি তালিকা প্রস্তুত করতে বলেছে। এই তালিকায় থাকা কিছু নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হতে পারে।
আগামী কয়েকদিনের মধ্যে মস্কো ও ওয়াশিংটনের কর্মকর্তাদের মধ্যে আলোচনা হবে। এই আলোচনার লক্ষ্য থাকবে রাশিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক ভালো করা। হোয়াইট হাউজের নির্দেশনার পর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা কাজও শুরু করে দিয়েছেন। তারা রাশিয়ার নির্দিষ্ট কিছু প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের প্রস্তাব দেবেন। যারমধ্যে থাকবেন রুশ ধনকুবেররাও। তবে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বদলে যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার কাছ থেকে কী চাইবে সেটি স্পষ্ট নয়। রাশিয়ার বিশ্বের অন্যতম বড় তেল উৎপাদনকারী দেশ। যদি তাদের এই তেল শিল্পের ওপর থেকে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে তাহলে জ্বালানির দাম বাড়া ঠেকানো যাবে। ২০২২ সালে রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা করার পর তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও তার প্রশাসন মস্কোর ওপর শত শত নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পরই রাশিয়ার সঙ্গে আবারও ভালো সম্পর্ক গড়ার দিকে নজর দেন। প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার এক মাস না যেতেই গত ১২ ফেব্রুয়ারি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন তিনি। তিনি প্রতিশ্রতি দেন দ্রুত সময়ে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করবেন।
মার্কিন সাইবার হামলা স্থগিতের নির্দেশ
এর আগে প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন রাশিয়ার বিরুদ্ধে তাদের আক্রমণাত্মক সাইবার অভিযান স্থগিত করছে বলে জানিয়েছেন মার্কিন কর্মকর্তারা। ইউক্রেইন যুদ্ধ অবসানে কূটনৈতিক তৎপরতা চলমান থাকা অবস্থায় এ পদক্ষেপ নেওয়া হলো। গত শুক্রবার হোয়াইট হাউজে ট্রাম্পের সঙ্গে ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির বৈঠক ভেস্তে যাওয়ার আগেই এ নির্দেশটি দেওয়ার হয়েছিল বলে জেনেছে বিবিসি। তবে কী কারণে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে তা প্রকাশ করা হয়নি। আর স্থগিতাদেশ কতদিন বহাল থাকবে, তা-ও স্পষ্ট নয়। মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ও এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। ট্রাম্প দ্বিতীয়বার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণের পর ইউক্রেইনের যুদ্ধ অবসানে একটি চুক্তি করার আগ্রহ থেকে মস্কোর প্রতি মার্কিন মনোভাব উল্লেখযোগ্যভাবে নমনীয় করে তুলেছেন।
তিন বছর আগে ইউক্রেইন যুদ্ধ শুরু করার বিষয়ে মস্কোর ন্যায্যতা নিয়েও কথা বলেছেন ট্রাম্প। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করার পরিকল্পনাও ঘোষণা করেছেন। ইউক্রেইন যুদ্ধ নিয়ে জাতিসংঘের সাম্প্রতিক ভোটগুলোতেও রাশিয়ার পক্ষ নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। একই সময়ে, ট্রাম্প জেলেনস্কিকে ‘স্বৈরশাসক’ আখ্যায়িত করেন। এরপর শুক্রবার হোয়াইট হাউজের ওভাল দপ্তরে দুই নেতার বৈঠকে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়ের সময় জেলনস্কি ‘তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের সঙ্গে জুয়া খেলছেন’ বলে অভিযোগ করেন।
বিবিসির মার্কিন অংশীদার সিবিএস নিউজকে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ ইউএস সাইবার কমান্ডকে দেওয়া নতুন নির্দেশনায় রাশিয়ার বিরুদ্ধে সাইবার অভিযান বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। এই সিদ্ধান্তের ফলে সাইবার রণক্ষেত্রে রাশিয়ার কথিত হ্যাকিং, নির্বাচনে হস্তক্ষেপ এবং যুদ্ধে ইউক্রেইনের পক্ষ নেওয়া পশ্চিমা দেশগুলোকে লক্ষ্য করে নাশকতার প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা লড়াইয়ের শক্তি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ক প্রকাশনা দ্য রেকর্ড জানিয়েছে, হেগসেথের এই আদেশে শত শত বা হাজার হাজার সাইবার কর্মী ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন। রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের আক্রমণাত্মক সাইবার অভিযান স্থগিতের সংবাদটি প্রথম দ্য রেকর্ডই দিয়েছে। মার্কিন প্রশাসনের এ সিদ্ধান্তে ইউক্রেইনের ডিজিটাল প্রতিরক্ষা শক্তিশালী করার জন্য যে অভিযানগুলি চলছিল, সেগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে জানিয়েছে বিবিসি। সূত্র: রয়টার্স