আন্তর্জাতিক ডেস্ক : রাশিয়াকে ইউক্রেইনে যুদ্ধে নামাতে যুক্তরাষ্ট্র প্রলুব্ধ করছে বলে অভিযোগ করেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
ইউক্রেইন সংকট নিয়ে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে করা প্রথম সরাসরি মন্তব্যে তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্য হচ্ছে সংঘাতকে কাজে লাগিয়ে রাশিয়ার ওপর আরও নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করা।
ইউরোপে নেটো জোট বাহিনীর তৎপরতা নিয়ে রাশিয়ার উদ্বেগকে যুক্তরাষ্ট্র অবজ্ঞা করছে বলেও মত তার।
ইউক্রেইন সীমান্তে রাশিয়ার সৈন্য সমাবেশ ঘিরে তুমুল উত্তেজনার মধ্যে মঙ্গলবার তিনি এসব বলেন বলে জানিয়েছে বিবিসি।
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে রাশিয়া ইউক্রেইন সীমান্তে লাখো সেনা জড়ো করেছে, মোতায়েন করেছে অসংখ্য ট্যাঙ্ক, কামান। বিপুল গোলাবারুদ মজুদ করার পাশাপাশি প্রস্তুত রেখেছে যুদ্ধবিমানও।
ইউক্রেইনে আগ্রাসনের লক্ষ্যেই মস্কোর এই সমরসজ্জা বলে অভিযোগ কিয়েভ ও তার পশ্চিমা মিত্রদের।
রাশিয়া অবশ্য শুরু থেকেই এই অভিযোগ উড়িয়ে আসছে। তাদের ভাষ্য, নিজেদের ভূখ-ের ভেতর যত ইচ্ছা সৈন্য সমাবেশের অধিকার তারা রাখে।
মঙ্গলবার ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্ট ভ্লদিমির জেলেনস্কি রাশিয়াকে হুঁশিয়ার করে বলেছেন, “মস্কো আগ্রাসন চালালে তা কেবল রাশিয়া আর ইউক্রেইনের মধ্যে যুদ্ধে সীমাবদ্ধ থাকবে না, ইউরোপ যুদ্ধে জড়িয়ে পড়বে, পুরোদস্তুর যুদ্ধে।”
একইদিন মস্কোতে হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবানের সঙ্গে বৈঠক শেষে পুতিন বলেন “আমার মনে হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেইনের নিরাপত্তা নিয়ে খুব একটা উদ্বিগ্ন নয়। তাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে রাশিয়ার অগ্রগতি রোধ করা। এভাবে ভাবলে, ইউক্রেইন কেবল তাদের লক্ষ্যে পৌঁছানোর একটি হাতিয়ারই।”
বিশ্বের সবচেয়ে বেশি পারমাণবিক অস্ত্রধর দুই দেশ রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে স্নায়ুযুদ্ধের সময় থেকেই বিরোধ চলছে।
১৯৪৭ থেকে ১৯৮৯ পর্যন্ত স্নায়ুযুদ্ধের ওই সময়ে ইউক্রেইন ছিল তখনকার কমিউনিস্ট সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ, রাশিয়ার পরই ছিল তার অবস্থান।
পুতিন বলেন, নেটোর পূর্বদিকে আরও সম্প্রসারণ বন্ধসহ রাশিয়া তার নিরাপত্তার বিষয়ে যেসব দাবি উত্থাপন করেছে যুক্তরাষ্ট্র তা অবজ্ঞা করে আসছে।
ইউক্রেইন যদি নেটোতে ঢুকতে পারে, তাহলে দেশটি নেটো জোটভুক্ত অন্য দেশগুলোকেও রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে নামাতে পারবে, অনুমান পুতিনের।
“ভাবুন ইউক্রেইন নেটোর সদস্য এবং (ক্রিমিয়ার নিয়ন্ত্রণ নিতে) একটি সামরিক অভিযান শুরু হয়েছে। তখন আমরা নেটোর সঙ্গে যুদ্ধে জড়াবো? কেউ এমনটা ভেবে দেখেছে? আমার মনে হচ্ছে, তারা ভাবেনি,” বলেন রুশ প্রেসিডেন্ট।
এদিকে ইউক্রেইন সফরে যাওয়া যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেছেন, পুতিন ইউক্রেইনের মাথার ওপর ‘বন্দুক ধরে রেখেছেন’।
মস্কো আগ্রাসন চালালে ইউক্রেইনের সেনারাও পাল্টা লড়াইয়ে প্রস্তুত, কিয়েভে জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের এমনটাই বলেন জনসন।
তিনি জানান, রাশিয়া ইউক্রেইনে হামলা চালানোর সঙ্গে সঙ্গে তাদের ওপর যুক্তরাজ্যের একাধিক নিষেধাজ্ঞাসহ আরও নানান ব্যবস্থা কার্যকর হয়ে যাবে।
ইউক্রেইনে স্থিতিশীল শাসনব্যবস্থা ও রাশিয়ার ওপর জ্বালানি নির্ভরশীলতা থেকে মুক্ত হতে কিয়েভকে এরই মধ্যে ৮ কোটি ৮০ লাখ পাউন্ড সহায়তা দেওয়ারও ঘোষণা দিয়েছে লন্ডন।
রাশিয়াকে যুদ্ধে নামানোর চেষ্টা করছে যুক্তরাষ্ট্র, অভিযোগ পুতিনের
জনপ্রিয় সংবাদ