রয়টার্স :জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা আকস্মিক সফরে ইউক্রেন গেছেন। রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধরত দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন তিনি। কিশিদা এমন এক সময় ইউক্রেন যান যখন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং আরেক যুদ্ধরত দেশ রাশিয়া সফর করেন। জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদার ইউক্রেন সফরের তথ্য গতকাল মঙ্গলবার জাপানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রকাশ করেছে। জাপানের সংবাদমাধ্যম এনএইচকের একটি ফুটেজে দেখা যায়, কিশিদা পোল্যান্ডের সীমান্ত শহর প্রজেমিসল থেকে একটি ট্রেনে উঠেছেন। এদিকে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে সোমবার (২০ মার্চ) রাশিয়া পৌঁছেছেন শি জিনপিং। সফরের প্রথম দিনেই তিনি ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ৪ ঘণ্টার একটি অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করেন। শি জিনপিংয়ের মস্কো সফরকে তার কৌশলগত অংশীদার পুতিনের জন্য একটি বড় সহযোগিতা হিসেবে দেখা হচ্ছে। ইউক্রেনীয় শিশুদের বেআইনিভাবে নির্বাসনের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে পুতিনের উপর। গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির তিন দিনের মধ্যে শি জিনপিংয়ের রাশিয়া সফর মস্কোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সোমবার শি-পুতিনের বৈঠকে রুশ নেতা জানিয়েছেন, তিনি আলোচনার জন্য প্রস্তুত। সংঘাত বিষয়ে বেইজিংয়ের ১২ দফা প্রস্তাবেরও প্রশংসা করেন পুতিন। উল্লেখ্য, সম্প্রতি ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ থামাতে একটি মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়েছে চীন। এই প্রস্তাবে দুই পক্ষের সংলাপ এবং সকল দেশের আঞ্চলিক সার্বভৌমত্বের প্রতি সম্মান জানানোর আহ্বান রয়েছে।
চীনের প্রেসিডেন্টের রাশিয়া সফরকালে দুই দেশের মধ্যে একাধিক চুক্তি হতে পারে। বিশেষ করে জ্বালানি খাতে বড় চুক্তির আশা করছে রাশিয়া। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে রুশ জ্বালানির সবচেয়ে বড় গ্রাহক হয়ে উঠেছে চীন। পশ্চিমা ক্রেতারা রুশ জ্বালানি নিষিদ্ধ করায় চীন স্বল্পমূল্যে ব্যাপকহারে রুশ জ্বালানি ক্রয় করছে।
চীনের শুল্ক বিভাগের তথ্যমতে, চলতি বছরের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া থেকে দৈনিক ১. ৯৪ মিলিয়ন ব্যারেল তেল আমদানি করেছে চীন, যা ২০২২ সালের একই সময়ে ছিল ১. ৫৭ ব্যারেল। চীনে অপরিশোধিত রুশ তেল রফতানি ৮ শতাংশ বেড়ে দৈনিক ১.৭২ ব্যারেলে উন্নীত হয়েছে।
গত বছর চীনের রুশ পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাস এবং তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানিও বেড়েছে যথাক্রমে ২.৬ এবং ২.৪ গুণ। অন্যদিকে চীনে রুশ কয়লা আমদানি বেড়েছে ২০ শতাংশ।
পুতিনকে শান্তি প্রস্তাব শি জিনপিংয়ের
এদিকে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর এই প্রথম শি জিনপিং মস্কো সফরে গেলেন। কিছুদিন আগেই তৃতীয়বারের জন্য ক্ষমতায় ফিরেন শি। এরপর এটাই তার প্রথম বিদেশ সফর। সোমবার দুই রাষ্টপ্রধানের বৈঠকের পর পুতিন জানিয়েছেন, অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়েছে। এর ফলে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরো গভীর হবে। শি বলেছেন, চীন এবং রাশিয়া স্ট্রাটেজিক পার্টনার। এই সম্পর্ক আরো অনেকটা বাড়িয়ে নেয়া প্রয়োজন। এদিনের বৈঠকে এ বিষয়ে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে বলে শি জানিয়েছেন। পুতিন জানিয়েছেন, ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে একটি ১২ পয়েন্টের শান্তিপ্রস্তাব রাশিয়াকে দিয়েছে চীন। রাশিয়া প্রস্তাবটি খতিয়ে দেখছে বলে পুতিন জানিয়েছেন। চীনের এই প্রস্তাব অবশ্য ইইউ আগেই নাকচ করে দিয়েছিল। তাদের বক্তব্য চীনের প্রস্তাব একপেশে। সেখানে ইউক্রেনকে গ্রাহ্যই করা হয়নি। পুতিন অবশ্য চীনের প্রস্তাব গ্রহণ করেছেন। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, রাশিয়া-চীনের সমঝোতা ভূরাজনৈতিক দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বস্তুত শি-এর একটি মন্তব্য নিয়েও কূটনৈতিক মহলে আলোচনা হচ্ছে। শি বলেছেন, পুতিন যেভাবে কাজ করছেন, তাতে আগামী বছরেও তিনি ক্ষমতায় ফিরবেন। অন্যদিকে, পুতিন বলেছেন, তিনি শি-কে হিংসে করেন। শিয়ের হাত ধরে চীন প্রতিদিন শক্তিশালী হচ্ছে।
রাশিয়ায় শি জিনপিং, ইউক্রেনে কিশিদা
ট্যাগস :
রাশিয়ায় শি জিনপিং
জনপ্রিয় সংবাদ