ক্যাম্পাস ও ক্যারিয়ার ডেস্ক: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান গবেষণাগারের হালনাগাদ নমুনা পরীক্ষার ফি দ্বিগুণ বাড়ানো হয়েছে। অতিরিক্ত ফি বাড়ানোর ফলে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন শিক্ষার্থীরা। ১০ আগস্ট থেকে গবেষণাগার উপদেষ্টা কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দ্বিগুণ হারে ফি দিয়ে নমুনা পরীক্ষা করতে হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, অতিরিক্ত ফি বাড়ানো হলেও অন্যান্য জায়গার তুলনায় আমাদের এখানে একেবারেই সীমিত। রাজশাহী প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়সহ (রুয়েট) আশেপাশের অনেক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা ফি কম হওয়ার কারণে এখানে এসে গবেষণার কাজ করেন।
পুনঃনির্ধারিত ফি অনুসারে বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব শিক্ষক-শিক্ষার্থী বা গবেষকদের জন্য প্রতিটি নমুনা পরীক্ষণ ফি হলো- অটোমিক অ্যাবসোর্পশন স্পেকট্রোস্কোপি (এএএস), ফুরিয়ার ট্রান্সফর্ম ইনফ্রারেড রেডিয়েশন (এফটিআইআর), ফ্লুরোসেন্স মাইক্রোস্কোপ, ইউএন ভিজিবল স্পেকট্রোফোটোমিটার (শোষণ এবং ট্রান্সমিট্যান্স), ইউএন ভিজিবল স্পেকট্রোফোটোমিটার (প্রতিফলন), হট স্টেজ উইথ পোলারাইজড মাইক্রোস্কোপ, আলট্রা কুলিংসহ সেন্ট্রিফিউজ, ল্যামিনার ফ্লো ক্যাবিনেটসহ কোষ কালচারের জন্য কার্বনডাইঅক্সাইড ইনকিউবেটরের আগের ফি ছিল ৫০ টাকা এবং জরুরি ফি ১৫০ টাকা। যা বর্তমানে বাড়িয়ে করা হয়েছে ১০০ টাকা এবং জরুরি ফি ৩০০ টাকা। টিজিএ-থার্মো গ্র্যাভিমেট্রিক অ্যানালাইসিস’র জন্য ফি ছিল নিয়মিত ৫০ টাকা ও জরুরি ফি ২০০ টাকা যা বর্তমানে ১৫০ টাকা ও ৫০০ টাকা করা হয়েছে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নন এমন গবেষকদের আলাদা ফি দিতে হবে। তাদের জন্য নমুনা পরীক্ষণ ফি ছিল ১০০ টাকা এবং ২৫০ টাকা যা বর্তমানে বাড়িয়ে করা হয়েছে ২০০ টাকা এবং জরুরি ৫০০ টাকা। টিজিএ-থার্মো গ্র্যাভিমেট্রিক অ্যানালাইসিসে নিয়মিত ফি ছিল ১৫০ ও জরুরি ফি ৫০০ টাকা যা বর্তমানে করা হয়েছে ৫০০ এবং জরুরি ফি ১৫০০ টাকা।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, বর্তমান দেশে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে আমরা হিমশিম খাচ্ছি। এদিকে আবার গবেষণাগারে নমুনা পরীক্ষণ ফি দিগুণ হাড়ে বাড়ানো হয়েছে। বর্তমান সময়ে চলতেই যেখানে কষ্ট হচ্ছে সেখানে ফি বৃদ্ধি করা অযৌক্তিক।
রসায়ন বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল মুইন বলেন, ফি বাড়ানোর ফলে আমাদের ওপর অনেক চাপ সৃষ্টি হয়েছে। সম্প্রতি ৮টি স্যাম্পল জমা দিয়ে এসেছি যা আগে ৪০০ টাকা লাগলেও বর্তমানে ৮০০ টাকা লাগছে। ফলে একদিকে যেমন আমাদের আর্থিক সমস্যা হচ্ছে অন্যদিকে নমুনা পরীক্ষায় আমাদের বিমুখতা কাজ করছে। অতিরিক্ত ফি বাড়ানোয় আমাদের সুপারভাইজাররাও স্যাম্পলগুলো আগের মতো পরীক্ষা করছে না। ফলে আমাদের গবেষণায় ত্রুটি থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। ফি বাড়ানোর বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছেন, কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান গবেষণাগারে অনেকগুলো যন্ত্র অকেজো হয়ে পড়ে আছে। এগুলোকে মেরামত করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে কোনো অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয় না। তাই অতিরিক্ত ফি বাড়িয়ে এসব অকেজো যন্ত্রগুলোকে মেরামত করা হবে। অতিরিক্ত ফি বাড়ানো হলেও অন্যান্য জায়গার তুলনায় আমাদের এখানে একেবারেই সীমিত। রাজশাহী প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়সহ (রুয়েট) আশেপাশের অনেক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা ফি কম হওয়ায় এখানে এসে স্যাম্পল পরীক্ষা করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. কুদরত-ই-জাহান বলেন, ফি বাড়ানোর বিষয়টি শিক্ষার্থীদের ওপর সম্পূর্ণ অন্যায় করা হয়েছে। এতে শিক্ষার্থীরা গবেষণা বিমুখ হয়ে পরবে। কর্তৃপক্ষের উচিত এমন কিছু উদ্যোগ নেওয়া যেন শিক্ষার্থীরা গবেষণামুখী হয়।
এই সিদ্ধান্তের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি আরও বলেন, গবেষণাগারে সিরিয়াল দিয়ে স্যাম্পল এনালাইসিস করতে অনেক সময় ব্যয় হয়। আর যে সময় দেওয়া হয় (দুই বা তিন ঘণ্টা) তাও যথেষ্ট নয়। আবার, সায়েন্স ফ্যাকাল্টিতে অনেকগুলো সাবজেক্ট থাকায় সেখানে গবেষকদের সংখ্যা বাড়ছে। সরকারিভাবেও বিভিন্ন স্কলারশিপ দেওয়া হচ্ছে কিন্তু পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা আমাদের সায়েন্স ল্যাব না দিতে পারলে আমাদের শিক্ষার্থীরা গবেষণা বিমুখী হবে। ফলে দেশে ও দেশের বাইরের অনেক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে।
রাবির বর্ষসেরা গবেষক ও পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সালেহ হাসান নকীব বলেন, যেকোনো সিদ্ধান্ত শিক্ষার্থীদের পক্ষে নেওয়া উচিত। শিক্ষার্থীদের জন্যই এ বিশ্ববিদ্যালয়। গবেষণা যন্ত্রের দাম এমন একটা পর্যায়ে রাখা উচিত যেন শিক্ষার্থীরা গবেষণা বিমুখ না হয়। দাম বাড়ানোর প্রয়োজন হতে পারে তবে তা ধাপে ধাপে বাড়ালে ভালো। একেবারে দ্বিগুণ করে দেওয়া উচিত নয়। সার্বিক বিষয়ে কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান গবেষণাগারের পরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ মোস্কাফিজুর রহমান বলেন, উপদেষ্টা কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ল্যাবের স্বার্থেই এ দাম পুনঃনির্ধারণ করা হয়েছে। অন্যান্য জায়গার তুলনায় ফি বাড়ানো ঠিক আছে।
রাবির বিজ্ঞান গবেষণাগারে নমুনা পরীক্ষার ফি বেড়েছে দ্বিগুণ
জনপ্রিয় সংবাদ