রাজশাহী সংবাদদাতা : রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কোভিড ইউনিটে চিকিৎসাধীন রোগীরা করোনাভাইরাস নেগেটিভ হওয়ার পরও বিভিন্ন শারীরিক সমস্যায় হাসপাতাল ছাড়তে পারছেন না। আর যারা বাড়ি ফিরছেন তাদের অনেকেই আবার চিকিৎসার জন্য আসছেন বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী জানান, গত তিনদিনের (১০ থেকে ১২ অগাস্ট পর্যন্ত) হিসেবে দেখা গেছে- কোভিড ইউনিটে চিকিৎসাধীন ১৮ দশমিক ৩৬ শতাংশ রোগী করোনাভাইরাস থেকে মুক্ত হওয়ার পরও নানা শারীরিক স্বাস্থ্য জটিলতায় ভুগছেন। এ তিনদিনে কোভিড নেগেটিভ হওয়ার পর মৃত্যু হার ১৫ শতাংশ। এছাড়াও আইসিইউতে ভর্তি রোগীদের মধ্যে কোভিডমুক্ত হয়েছেন ১৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ। শামীম বলেন, “করোনাভাইরাস নেগেটিভ হয়ে যাওয়ার পর অনেক রোগী বাড়ি ফিরে গিয়ে আবার হাসপাতালে এসেছেন। তাদের অনেকেরই হৃদরোগ ও উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে। অনেকের পাকস্থলী ও কিডনি অকার্যকরসহ বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য জটিলতা দেখা দিচ্ছে। করোনাভাইরাস দেহের অনেক কিছুই অচল করে দিচ্ছে। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউর ইনচার্জ আবু হেনা মোস্তফা কামাল বলেন, করোনাভাইরাস নেগেটিভ হওয়ার পর শারীরিক নানা জটিলতা নিয়ে আসা রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। আইসিইউতেও আগের চেয়ে এই রোগী বেশি হচ্ছে। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে ‘পোস্ট কোভিড’ জটিলতা যেমন বাড়ছে; তেমন বাড়ছে হাসপাতালে এ ধরণের রোগী ও মৃত্যুর সংখ্যা। যারা পোস্ট কোভিড জটিলতায় ভুগছেন তাদের বেশির ভাগই করোনাভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার পর চিকিৎসা শুরু করছে দেরি করে।” এদিকে বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত রাজশাহী হাসপাতালের কোভিড ইউনিটে ৩৪২ জন রোগী ভর্তি আছেন। এর মধ্যে কোভিড পরবর্তী স্বাস্থ্য জটিলতা নিয়ে ৬৫ জন চিকিৎসাধীন বলে পরিচালক জানান। এদিন আইসিইউতে ভর্তি ২০ জনের মধ্যে তিনজন কোভিডমুক্ত হওয়া রোগী। আর কোভিড ইউনিটে মারা যাওয়া নয়জনের মধ্যে একজনের নেগেটিভ হয়েও পরবর্তী স্বাস্থ্য জটিলতায় চিকিৎসাধীন ছিলেন। শামীম জানান, গত বুধবার (১১ আগস্ট) রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কোভিড ইউনিটে রোগী ভর্তি ছিলেন ৩৬৩ জন। এর মধ্যে কোভিড পরবর্তী স্বাস্থ্য জটিলাতায় চিকিৎসাধীন ছিলেন ৬৬ জন। এছাড়া এদিন আইসিইউতে ভর্তি ২০ জনের মধ্যে চারজনের এবং মারা যাওয়া ১০ জনের মধ্যে তিনজনের করোনাভাইরাস নেগেটিভ ছিল। গত মঙ্গলবার কোভিড ইউনিটে রোগী ভর্তি ছিলেন ৩৮০ জন। এর মধ্যে কোভিড পরবর্তী স্বাস্থ্য জটিলতায় চিকিৎসাধীন ছিলেন ৬৮ জন। এছাড়া আইসিইউতে ২০ জনের মধ্যে চারজন ছিলেন করোনাভাইস মুক্ত। আর এ দিন মারা যাওয়া ২১ জনের মধ্যে দুইজন কোভিড পরবর্তী জটিলতায় ভুগছিলেন। এদিকে চলতি মাসের ১২ দিনে (১ অগাস্ট থেকে ১২ আগস্ট পর্যন্ত) কোভিড ইউনিটে ১৭৯ জন মারা গেছে। যাদের মধ্যে ২৪ জন কোভিডমুক্ত হলেও তারা পরবর্তী শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন বলে শামীম জানান। গত জুলাই মাসে রাজশাহী মেডিকেলের কোভিড ইউনিটে মারা যান ৫৩১ জন। যাদের মধ্যে ৩১ জন মারা যান কোভিড পরবর্তী জটিলতায়। যার মৃত্যু হার ৫ দশমিক ৮৪ শতাংশ। আর জুন মাসে মারা যাওয়া ৩৬৯ জনের মধ্যে কোভিড নেগেটিভ ছিল সাতজনের। যার মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৯০ শতাংশ।


























