ঢাকা ১১:৫৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ জুন ২০২৫

রাজশাহী আমের বাজারে ধস, ৫২ কেজিতে মণ

  • আপডেট সময় : ০৮:১৩:২১ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ জুন ২০২৫
  • ৫ বার পড়া হয়েছে

রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর বাজারে অনেক কম দাােম বিক্রি হচ্ছে আম -ছবি সংগৃহীত

রাজশাহী প্রতিনিধি: এবার রাজশাহী অঞ্চলের আমের বাজারে নেমেছে ধস। গত চার সপ্তাহ ধরে এ অবস্থা চলছে। মৌসুমের শুরুতে কিছুটা দাম থাকলেও মে মাসের শেষ দিক থেকে কমতে থাকে। এরপর থেকে আশানুরূপ দাম পাননি চাষিরা। শুধু রাজশাহীতে নয়, নওগাঁ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জেও একই অবস্থা যাচ্ছে। চাষিরা ৪৮ থেকে ৫২ কেজিতে মণ দিয়েও দাম পাচ্ছেন না। এ নিয়ে ক্ষোভ ও হতাশার কথা জানিয়েছেন তারা।

চাষিরা বলছেন, এবার ভালো ফলন হয়েছে। কিন্তু ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না। ভরা মৌসুমে ন্যায্য দাম না পেয়ে হতাশ তারা। আমের দাম পড়ে যাওয়ার পেছনে কয়েকটি কারণ জানালেন ব্যবসায়ীরা। বিশ্লেষক ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, একসঙ্গে বাজারে বহু জাতের আম আসা এবং বৈরী আবহাওয়ায় বাজারে আমের দরপতন হয়েছে। পচনশীল পণ্য হওয়ায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন চাষিরা। আম সংরক্ষণের আধুনিক পদ্ধতি এবং আম দিয়ে রূপান্তরিত পণ্য তৈরি করার সুযোগ থাকলে এমন সংকট কাটানো সম্ভব হতো। অতিরিক্ত গরমে বিভিন্ন জাতের আম আগেভাগেই পেকে গেছে। ঈদের ছুটিতে ব্যাংক ১০ দিন বন্ধ থাকায় লেনদেন বন্ধ ছিল। ঈদুল আজহায় পশু কোরবানির পর এখন অনেকের হাতে টাকাপয়সা নেই। তাই বাজার ভরা আম, কিন্তু ক্রেতা নেই। এসব কারণেই এবার আমের দাম পড়ে গেছে।

রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর বাজারে শুক্রবার দেখা যায়, ঢাকা-চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলায় শত শত টন আম পাঠাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, গত বছরের চেয়ে এ বছর আমের দাম কম। যদিও ঈদের আগে ও পরে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাজারগুলোতে এক মণে ৪০ কেজির বেশি ‘ঢলন পদ্ধতি’ বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু তাতে সাড়া দেননি কেউ। এ নির্দেশনা মানছেন না আড়তদার, পাইকার ও ব্যবসায়ীরা। ঢলন পদ্ধতিতে এক মণে নেওয়া হচ্ছে ৪৮ থেকে ৫২ কেজি। এতে চাষিদের লোকসান হয়।

এদিন সারি সারি ভ্যান গাড়িতে ক্যারেটে আমভর্তি করে বিক্রির জন্য দাঁড়িয়ে ছিলেন চাষিরা। দাম নিয়ে হতাশার শেষ নেই তাদের। চাষিরা বলেছেন, গত বছরও দাম ভালো ছিল। চলতি বছর ভালো জাতের আম ৪৮ কেজিতে এক মণ দিয়েও কোনোভাবেই মিলছে না ন্যায্য দাম। তার ওপর যোগ হয়েছে বৈরী আবহাওয়া এবং দাগযুক্ত আম। সবচেয়ে বড় এই বাজারে আম কেনাবেচা হয় অনুমাননির্ভর। এক ক্যারেটে যত আম ধরে তা আধামণ হিসেবে বিবেচিত হয়। যার ফলে কম দামে বেশি আম কিনতে পারছেন ব্যবসায়ীরা।

হিমসাগর, ল্যাংড়া কিংবা আম্রপালি কোনো জাতের ভালো দাম মেলেনি। ৫০০ টাকায় মণ মিলছে লক্ষণভোগের। ভালো জাতের আম কোনোটিই তিন হাজারের কোটা পার হয়নি। ভালো জাত গত বছর তিন হাজারের বেশি ছিল। এবার বানেশ্বরে লক্ষণভোগ ৫০০ টাকা মণ, হিমসাগর ১৮০০ থেকে ২২০০ টাকা মণ, ল্যাংড়া ১২০০ থেকে ১৬০০ টাকা মণ, মল্লিকা ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা মণ, আম্রপালি ১৮০০ থেকে ২২০০ টাকা মণ, ফজলি ১০০০ থেকে ১৫০০ টাকা মণ, গুটি আম ৪০০ থেকে ৭০০ টাকা মণ বিক্রি হচ্ছে। তবে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার কানসাট বাজারে হিমসাগরের মণ ২৫০০ থেকে তিন হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে শনিবার। শেষ সময় হওয়ায় দাম বেড়েছে এই আমের। পাশাপাশি গুটি ও অন্যান্য জাতের দাম মণে বেড়েছে ২০০ থেকে ৫০০ টাকা। গুটির মণ ৭০০ থেকে এক হাজার ও ল্যাংড়া এক হাজার ৪০০ থেকে দুই হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। এ ছাড়া আম্রপালি ১৬০০ থেকে দুই হাজার টাকায় বিক্রি হয়।
এদিকে, নওগাঁর সাপাহার আমের হাটে প্রতি মণ হিমসাগর ১২০০ থেকে ১৬০০ টাকা, ল্যাংড়া ৮০০ থেকে ১৫০০ টাকা, নাক ফজলি ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা, ব্যানানা ম্যাংগো ২৮০০ থেকে ৩৫০০ টাকা, হাঁড়িভাঙা ১৫০০ থেকে ২৫০০ টাকা এবং আম্রপালি ১৮০০ থেকে ৩০০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হয়েছে।

চাষিরা জানিয়েছেন, হিমসাগরের মৌসুম এখন শেষ দিকে। ফলে চাঁপাইনবাবগঞ্জের জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া এই আমের সরবরাহ কম গেছে। এ সুযোগে দাম বেড়েছে। এতে খুশি চাষি ও ব্যবসায়ীরা।

কানসাট এলাকার আব্বাস বাজারের চাষি রবিউল আওয়াল বলেন, ‘হিমসাগর আমের মৌসুম এখন শেষের দিকে। এজন্য বাজারে সরবরাহ কমে গেছে। আর বৃষ্টিতে অন্যান্য আম নেমেছিল কম। বাজার ছিল বাড়তির দিকে। তাই এক লাফে দাম বেড়েছে কিছুটা। তবে ৫২ কেজিতে মণ দিতে হচ্ছে। এজন্য লোকসান হচ্ছে।’

নওগাঁর সাপাহার বাজারে আম বিক্রি করতে আসা নিশ্চিন্তপুর এলাকার চাষি গোপাল চন্দ্র দেবনাথ বলেন, অন্যের দুই বিঘা জমি বর্গা নিয়ে আম্রপালির বাগান করেছি। এ বছর দাম অনেক কম। গত বছর যে আম ৪০০০-৪৫০০ টাকায় বিক্রি করেছি, সেটি এ বছর ২০০০-২৫০০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। এই দামে বিক্রি করে কীটনাশক খরচই উঠবে না। পরিবহন ও শ্রমিক খরচসহ অন্যান্য হিসেব বাদ দিলোাম।’

সাপাহারের বাংলাদেশ ফল ভান্ডারের স্বত্বাধিকারী শাকিল হোসেন বলেন, ‘কৃষকদের সঙ্গে আলোচনা করেই ৫২ কেজি নেওয়া হয়। ক্যারেটের সব আম এক সাইজের হয় না। যার কারণে ব্যবসায়ীরা কৃষকদের সঙ্গে পরামর্শ করে কারও কাছ থেকে ৪৮ আবার কারও কাছ থেকে ৫০ কেজি নিয়ে থাকে। ওজন ৫২-তেই নির্দিষ্ট না। কমবেশি হয়ে থাকে। তা না হলে আমাদের লোকসান দিতে হয়।’

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাগ্রোনমি অ্যান্ড এগ্রিকালচারাল এক্সটেনশন বিভাগের অধ্যাপক গিয়াস উদ্দীন আহমেদ জানান, পিক সিজিনে একসঙ্গে অনেক জাতের আম বাজারজাত হওয়া, সংগ্রহের সঠিক নিয়ম না মানা, বৈরী আবহাওয়া এবং ঈদের ছুটিতে চাহিদা কমে যাওয়া চলতি বছরে আমের দাম কমার মূল কারণ। এ সংকট কাটাতে চাষি পর্যায় পর্যন্ত ভ্যালু অ্যাডেড প্রোডাক্ট তৈরির উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।

কৃষি বিভাগ ও বাণিজ্য সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই মৌসুমে রাজশাহী অঞ্চলে বিশেষ করে রাজশাহী, নওগাঁ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে ১২ হাজার কোটি টাকার আম বাণিজ্যের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এবার রাজশাহীতে সাড়ে ১৯ হাজার, নওগাঁয় ৩১ হাজার এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জে সাড়ে ৩৭ হাজার ৫০৪ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে। এর মধ্যে রাজশাহীতে দুই লাখ ৬০ হাজার, নওগাঁয় তিন লাখ ৮০ হাজার ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে তিন লাখ ৮৬ হাজার মেট্রিক টন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। চাষিরা বলছেন, ইতিমধ্যে লক্ষ্যমাত্রা পার হয়ে গেছে। বানেশ্বর বাজার বণিক সমিতির সভাপতি ওসমান আলী বলেন, ‘এবার অতিরিক্ত গরমের কারণে আগেই আম পেকে গেছে। বেশ কিছু জাতের আম একসঙ্গে পেকেছে। বাজারে প্রচুর আমদানি হয়েছে। ঈদের পরে ঢাকার যে ব্যাপারীদের আম কিনতে রাজশাহীতে আসার কথা, তাদের অর্ধেকও আসেননি। ফলে বাজারে আমদানি হয়েছে প্রচুর। কিন্তু কেনার লোক নেই। মূলত এজন্য ধস নেমেছে আমের বাজারে।’

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

রাজশাহী আমের বাজারে ধস, ৫২ কেজিতে মণ

আপডেট সময় : ০৮:১৩:২১ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ জুন ২০২৫

রাজশাহী প্রতিনিধি: এবার রাজশাহী অঞ্চলের আমের বাজারে নেমেছে ধস। গত চার সপ্তাহ ধরে এ অবস্থা চলছে। মৌসুমের শুরুতে কিছুটা দাম থাকলেও মে মাসের শেষ দিক থেকে কমতে থাকে। এরপর থেকে আশানুরূপ দাম পাননি চাষিরা। শুধু রাজশাহীতে নয়, নওগাঁ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জেও একই অবস্থা যাচ্ছে। চাষিরা ৪৮ থেকে ৫২ কেজিতে মণ দিয়েও দাম পাচ্ছেন না। এ নিয়ে ক্ষোভ ও হতাশার কথা জানিয়েছেন তারা।

চাষিরা বলছেন, এবার ভালো ফলন হয়েছে। কিন্তু ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না। ভরা মৌসুমে ন্যায্য দাম না পেয়ে হতাশ তারা। আমের দাম পড়ে যাওয়ার পেছনে কয়েকটি কারণ জানালেন ব্যবসায়ীরা। বিশ্লেষক ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, একসঙ্গে বাজারে বহু জাতের আম আসা এবং বৈরী আবহাওয়ায় বাজারে আমের দরপতন হয়েছে। পচনশীল পণ্য হওয়ায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন চাষিরা। আম সংরক্ষণের আধুনিক পদ্ধতি এবং আম দিয়ে রূপান্তরিত পণ্য তৈরি করার সুযোগ থাকলে এমন সংকট কাটানো সম্ভব হতো। অতিরিক্ত গরমে বিভিন্ন জাতের আম আগেভাগেই পেকে গেছে। ঈদের ছুটিতে ব্যাংক ১০ দিন বন্ধ থাকায় লেনদেন বন্ধ ছিল। ঈদুল আজহায় পশু কোরবানির পর এখন অনেকের হাতে টাকাপয়সা নেই। তাই বাজার ভরা আম, কিন্তু ক্রেতা নেই। এসব কারণেই এবার আমের দাম পড়ে গেছে।

রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর বাজারে শুক্রবার দেখা যায়, ঢাকা-চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলায় শত শত টন আম পাঠাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, গত বছরের চেয়ে এ বছর আমের দাম কম। যদিও ঈদের আগে ও পরে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাজারগুলোতে এক মণে ৪০ কেজির বেশি ‘ঢলন পদ্ধতি’ বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু তাতে সাড়া দেননি কেউ। এ নির্দেশনা মানছেন না আড়তদার, পাইকার ও ব্যবসায়ীরা। ঢলন পদ্ধতিতে এক মণে নেওয়া হচ্ছে ৪৮ থেকে ৫২ কেজি। এতে চাষিদের লোকসান হয়।

এদিন সারি সারি ভ্যান গাড়িতে ক্যারেটে আমভর্তি করে বিক্রির জন্য দাঁড়িয়ে ছিলেন চাষিরা। দাম নিয়ে হতাশার শেষ নেই তাদের। চাষিরা বলেছেন, গত বছরও দাম ভালো ছিল। চলতি বছর ভালো জাতের আম ৪৮ কেজিতে এক মণ দিয়েও কোনোভাবেই মিলছে না ন্যায্য দাম। তার ওপর যোগ হয়েছে বৈরী আবহাওয়া এবং দাগযুক্ত আম। সবচেয়ে বড় এই বাজারে আম কেনাবেচা হয় অনুমাননির্ভর। এক ক্যারেটে যত আম ধরে তা আধামণ হিসেবে বিবেচিত হয়। যার ফলে কম দামে বেশি আম কিনতে পারছেন ব্যবসায়ীরা।

হিমসাগর, ল্যাংড়া কিংবা আম্রপালি কোনো জাতের ভালো দাম মেলেনি। ৫০০ টাকায় মণ মিলছে লক্ষণভোগের। ভালো জাতের আম কোনোটিই তিন হাজারের কোটা পার হয়নি। ভালো জাত গত বছর তিন হাজারের বেশি ছিল। এবার বানেশ্বরে লক্ষণভোগ ৫০০ টাকা মণ, হিমসাগর ১৮০০ থেকে ২২০০ টাকা মণ, ল্যাংড়া ১২০০ থেকে ১৬০০ টাকা মণ, মল্লিকা ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা মণ, আম্রপালি ১৮০০ থেকে ২২০০ টাকা মণ, ফজলি ১০০০ থেকে ১৫০০ টাকা মণ, গুটি আম ৪০০ থেকে ৭০০ টাকা মণ বিক্রি হচ্ছে। তবে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার কানসাট বাজারে হিমসাগরের মণ ২৫০০ থেকে তিন হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে শনিবার। শেষ সময় হওয়ায় দাম বেড়েছে এই আমের। পাশাপাশি গুটি ও অন্যান্য জাতের দাম মণে বেড়েছে ২০০ থেকে ৫০০ টাকা। গুটির মণ ৭০০ থেকে এক হাজার ও ল্যাংড়া এক হাজার ৪০০ থেকে দুই হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। এ ছাড়া আম্রপালি ১৬০০ থেকে দুই হাজার টাকায় বিক্রি হয়।
এদিকে, নওগাঁর সাপাহার আমের হাটে প্রতি মণ হিমসাগর ১২০০ থেকে ১৬০০ টাকা, ল্যাংড়া ৮০০ থেকে ১৫০০ টাকা, নাক ফজলি ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা, ব্যানানা ম্যাংগো ২৮০০ থেকে ৩৫০০ টাকা, হাঁড়িভাঙা ১৫০০ থেকে ২৫০০ টাকা এবং আম্রপালি ১৮০০ থেকে ৩০০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হয়েছে।

চাষিরা জানিয়েছেন, হিমসাগরের মৌসুম এখন শেষ দিকে। ফলে চাঁপাইনবাবগঞ্জের জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া এই আমের সরবরাহ কম গেছে। এ সুযোগে দাম বেড়েছে। এতে খুশি চাষি ও ব্যবসায়ীরা।

কানসাট এলাকার আব্বাস বাজারের চাষি রবিউল আওয়াল বলেন, ‘হিমসাগর আমের মৌসুম এখন শেষের দিকে। এজন্য বাজারে সরবরাহ কমে গেছে। আর বৃষ্টিতে অন্যান্য আম নেমেছিল কম। বাজার ছিল বাড়তির দিকে। তাই এক লাফে দাম বেড়েছে কিছুটা। তবে ৫২ কেজিতে মণ দিতে হচ্ছে। এজন্য লোকসান হচ্ছে।’

নওগাঁর সাপাহার বাজারে আম বিক্রি করতে আসা নিশ্চিন্তপুর এলাকার চাষি গোপাল চন্দ্র দেবনাথ বলেন, অন্যের দুই বিঘা জমি বর্গা নিয়ে আম্রপালির বাগান করেছি। এ বছর দাম অনেক কম। গত বছর যে আম ৪০০০-৪৫০০ টাকায় বিক্রি করেছি, সেটি এ বছর ২০০০-২৫০০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। এই দামে বিক্রি করে কীটনাশক খরচই উঠবে না। পরিবহন ও শ্রমিক খরচসহ অন্যান্য হিসেব বাদ দিলোাম।’

সাপাহারের বাংলাদেশ ফল ভান্ডারের স্বত্বাধিকারী শাকিল হোসেন বলেন, ‘কৃষকদের সঙ্গে আলোচনা করেই ৫২ কেজি নেওয়া হয়। ক্যারেটের সব আম এক সাইজের হয় না। যার কারণে ব্যবসায়ীরা কৃষকদের সঙ্গে পরামর্শ করে কারও কাছ থেকে ৪৮ আবার কারও কাছ থেকে ৫০ কেজি নিয়ে থাকে। ওজন ৫২-তেই নির্দিষ্ট না। কমবেশি হয়ে থাকে। তা না হলে আমাদের লোকসান দিতে হয়।’

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাগ্রোনমি অ্যান্ড এগ্রিকালচারাল এক্সটেনশন বিভাগের অধ্যাপক গিয়াস উদ্দীন আহমেদ জানান, পিক সিজিনে একসঙ্গে অনেক জাতের আম বাজারজাত হওয়া, সংগ্রহের সঠিক নিয়ম না মানা, বৈরী আবহাওয়া এবং ঈদের ছুটিতে চাহিদা কমে যাওয়া চলতি বছরে আমের দাম কমার মূল কারণ। এ সংকট কাটাতে চাষি পর্যায় পর্যন্ত ভ্যালু অ্যাডেড প্রোডাক্ট তৈরির উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।

কৃষি বিভাগ ও বাণিজ্য সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই মৌসুমে রাজশাহী অঞ্চলে বিশেষ করে রাজশাহী, নওগাঁ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে ১২ হাজার কোটি টাকার আম বাণিজ্যের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এবার রাজশাহীতে সাড়ে ১৯ হাজার, নওগাঁয় ৩১ হাজার এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জে সাড়ে ৩৭ হাজার ৫০৪ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে। এর মধ্যে রাজশাহীতে দুই লাখ ৬০ হাজার, নওগাঁয় তিন লাখ ৮০ হাজার ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে তিন লাখ ৮৬ হাজার মেট্রিক টন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। চাষিরা বলছেন, ইতিমধ্যে লক্ষ্যমাত্রা পার হয়ে গেছে। বানেশ্বর বাজার বণিক সমিতির সভাপতি ওসমান আলী বলেন, ‘এবার অতিরিক্ত গরমের কারণে আগেই আম পেকে গেছে। বেশ কিছু জাতের আম একসঙ্গে পেকেছে। বাজারে প্রচুর আমদানি হয়েছে। ঈদের পরে ঢাকার যে ব্যাপারীদের আম কিনতে রাজশাহীতে আসার কথা, তাদের অর্ধেকও আসেননি। ফলে বাজারে আমদানি হয়েছে প্রচুর। কিন্তু কেনার লোক নেই। মূলত এজন্য ধস নেমেছে আমের বাজারে।’