রাজবাড়ী সংবাদদাতা : রাজবাড়ীতে গত কয়েকদিন ধরে বিদ্যুৎ বিভ্রাট শুরু হয়েছে; দিনের পাশাপাশি রাতেও ঘন ঘন লোডশেডিং হচ্ছে। জেলা শহরের তুলনায় গ্রামঞ্চলের লোকজনকে এ যন্ত্রণা পোহাতে হচ্ছে আরও বেশি। ফলে প্রচ- গরমে দিশেহারা হয়ে পড়ছে সাধারণ মানুষ। ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো) ও পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি বলছে, চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবারহ কম থাকায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এ অবস্থায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন গ্রাহকরা। পাশাপাশি ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে লোকসানের শঙ্কায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। প্রচ- গরমের মধ্যে লেখাপড়ায় ব্যাঘাত ঘটছে শিক্ষার্থীদের। অনেকেই বিদ্যুৎ বিভ্রাট নিয়ে নানা পোস্ট দিচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে, যেখানে প্রকাশ পেয়েছে জনসাধারণের রাগ- ক্ষোভ। কয়েকদিন পরেই ঈদ; কিন্তু ঘন ঘন লোডশেডিং এর কারণে অন্ধকার আর গরমের মধ্যে ক্রেতা হারাতে বসেছেন শহরের গার্মেন্টস ব্যবসায়ী মো. শিমুল হোসেন। তিনি বলেন, “বিদ্যুৎ খালি যায় আর আসে; গরমের মধ্যে লোকজন দোকানে আসতে চায় না। যাও বা দুই চারজন আসে গরমের যন্ত্রণায় তাড়াহুড়া করে চলে যায়। সামনে ঈদ হলেও বেচাকেনা প্রায় নেই বললেই চলে। ঈদের এই সময়টা অন্তত বিদ্যুৎ সার্ভিসটা ভালো হওয়া দরকার।” ঘন ঘন বিদ্যুৎ বিভ্রাটে পড়ালেখা নিয়ে ভোগান্তিতে পড়েছেন রাজবাড়ি সরকারি কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সাদিয়া ইসলাম। তার ভাষ্য, “দিনের বেলা তো বিদ্যুৎ যায় আসে; রাতেও একই অবস্থা। এমনও হয়, পড়তে বসেছি আর বিদ্যুৎ চলে গেছে। সে সময় গরমে বা অন্ধকারে আর পড়া হয় না। এভাবে বিদ্যুৎ যাওয়া আসার কারণে লেখাপাড়া বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।” একই পরিস্থিতির শিকার রাজবাড়ি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী সামিউল সামি। এ শিক্ষার্থী জানায়, বিদ্যুৎ না থাকায় গরমে লেখাপড়া করা যায় না। এতে অনেক ক্ষতি হচ্ছে। শহরের দক্ষিণ ভবানীপুর এলাকার গৃহবধূ সুমাইয়া আক্তার বলেন, “লোডশেডিং এর কারণে খুবই যন্ত্রণায় আছি। আমার চার মাসের শিশু গরমে থাকতে পারে না। হাত পাখা দিয়ে আর কত সময় বাতাস করা যায়? পাংশা উপজেলার বাহাদুরপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা শাহিন রেজা বলেন, “এখানে দিনে চার থেকে পাঁচবার বিদ্যুৎ যায়। একবার বিদ্যুৎ গেলে দুই ঘণ্টার আগে আসে না। সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়তে হয় রাতে লোডশেডিং হলে। কারণ ছোট ছোট বাচ্চারা গরমে ঘুমাতে পারে না।” বাহাদুরপুর ইউনিয়নের মেঘনা বাজারে সৌরভ টেইলার্স অ্যান্ড বস্ত্র বিতানের মালিক আলামিন বলেন, “ঈদ সামনে; অথচ ঘন ঘন বিদ্যুৎ যাওয়ার করণে কাজগুলো ঠিকমত করতে পারছি না। একটা জামা তৈরির পর সেই আয়রণ করতে পারি না। ফলে কাস্টমারদের ডেলিভারি করতেও দেরি হচ্ছে।” তাছাড়া যখন বিদ্যুৎ থাকে না সে সময় মার্কেট অন্ধকার হয়ে থাকে; ক্রেতারা আসতে চায় না। এভাবে চলতে থাকলে ঈদে ব্যবসায়ীদের লোকসান গুণতে হবে।
রাজবাড়ী বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রের রাজবাড়ি জেলার এক কর্মকর্তা বলেন, উৎপাদন কম হওয়ায় রাজবাড়ীতে ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো) ও পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির গ্রাহকদের চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। এই জেলাতে সকালে ৩৫-৪০ মেগাওয়াট, বিকালে ৪০-৪৫ মেগাওয়াট ও সন্ধ্যায় ৬০-৭০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ এর চাহিদা রয়েছে। রাজবাড়ীর ১৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র পাচ্ছে ৪৫-৫০ মেগাওয়াট। যে কারণে ঘন ঘন লোডশেডিং হচ্ছে বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, “জাতীয় গ্রিড স্টেশন থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ কম পাওয়ার কারণে এমনটা হচ্ছে; এখানে আমাদের কিছু করার নেই। ঢাকা থেকে যখন লোডশেডিং দিতে বলছে, তখনই আমার লোডশেডিং দিয়ে দিচ্ছি।” রাজবাড়ী পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির এজিএম রাজন জানান, জেলায় প্রায় দুই লাখ গ্রাহকের বিদ্যুৎ এর চাহিদা রয়েছে ৬৭ মোগাওয়াট, কিন্তু তারা পাচ্ছেন ৪৩ মেগাওয়াট।
রাজবাড়ীতে বিদ্যুৎ বিভ্রাটে ভোগান্তি
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ