নিজস্ব প্রতিবেদক : বর্তমান অবস্থার প্রেক্ষাপটে ‘রাজপথে নামার বিকল্প নেই’ বলে মন্তব্য করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
গতকাল শনিবার রাজধানী ঢাকায় এক স্মরণসভায় বিএনপি মহাসচিব দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও ডিজেল-কেরোসিনের দাম বাড়ানোর কারণে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি ও দুর্গতি তুলে ধরে এ মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, ‘‘এদিকে জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে হু হু করে, অন্যদিকে এখন আবার হঠাৎ একলাফে পার লিটারে ১৫ টাকা বাড়িয়ে দিল ডিজেল-কেরোসিনের দাম। ফলে আরও দ্বিগুণ বাড়বে দ্রব্যমূল্য।
“এখন সাধারণ মানুষ যাবে কোথায়? তাদের তো এখন না খেয়ে অপুষ্টিতে মৃত্যুবরণ করার মতো অবস্থা হয়ে গেছে।“
এমন পরিস্থিতিতে সবাইকে আন্দোলনে নামার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা সব সময় যেটা বলে আসছি, এখনও বলছি- কোনো বিকল্প নাই। একমাত্র পথ হচ্ছে এদেরকে (বর্তমান সরকার) সরিয়ে দিয়ে সত্যিকার অর্থেই একটা জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করা, পার্লামেন্ট তৈরি করা।
“আসুন আমরা সেই লক্ষ্যে সবাই ঐক্যবদ্ধ হই, আমরা সবাই রাজপথে নেমে আসি।“
কাকরাইলের ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউট মিলনায়তনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির প্রয়াত সদস্য তরিকুল ইসলামের তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ‘তরিকুল ইসলাম স্মৃতি সংসদ’ এ আলোচনা সভার আয়োজন করে।
২০১৮ সালের ৪ নভেম্বর রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তরিকুল। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের এই সংগঠক বিএনপি সরকারের মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য ছিলেন। এ স্মরণসভায় মিলনায়তনে হাজারো নেতাকর্মী জড়ো হোন। সভা শুরু হলেও নিজেদের মধ্যে কথা বলতে থাকেন নেতাকর্মীরা। এতে নেতারা বক্তৃতা করতে এসে বিরক্তি প্রকাশ করেন। এমনকি বিএনপি মহাসচিব বক্তৃতা শুরু করলেও তা থামেনি। হট্টগোলে বিরক্ত হয়ে এক পর্যায়ে তিনি ডায়াস থেকে নেমে যান। পরে সবাই চুপ করলে তিনি ফিরে এসে বক্তব্য শেষ করেন। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সহিংসতার প্রসঙ্গ টেনে ফখরুল বলেন, ‘‘গত ৭ মাসে ৮৪জন নিহত হয়েছে এবং সব তাদের লোক। তারা নিজেরা নিজেরা এখন মারামারি করে। কারণ বিরোধী দল তো নাই।
“আজকে তারা লুট করে, নিজেরা মারামারি করে এবং নিজেদের মধ্যেই এই সমস্যা তারা তৈরি করছে। আর মামলা দেয় বিএনপির নামে।“
তরিকুল ইসলামের বর্ণাঢ্য জীবন তুলে ধরে তার আদর্শ অনুসরণ করতে নেতা-কর্মীদের প্রতি আহবান জানান তিনি।
বিএনপি মহাসচিবের সভাপতিত্বে সভা সঞ্চালনা করেন কেন্দ্রীয় নেতা আজিজুল বারী হেলাল, শামীমুর রহমান শামীম ও আমিরুজ্জামান শিমুল।
বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও সেলিমা রহমান, কেন্দ্রীয় নেতা নিতাই রায় চৌধুরী, আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, জয়ন্তু কুমার কু-, যুবদলের সাইফুল আলম নিরব, স্বেচ্ছাসেবক দলের মোস্তাফিজুর রহমান, আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, কৃষক দলের শহিদুল ইসলাম বাবুল, ছাত্রদলের ফজলুর রহমান খোকন প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে প্রয়াত তরিকুল ইসলামের ছোট ছেলে বিএনপির সহ সাংগঠিনক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিতসহ যশোর-খুলনার নেতারাও উপস্থিত ছিলেন।
স্মরণসভায় বক্তৃতার সময় নেতা-কর্মীদের কোলাহলে বিরক্ত হয়ে ডায়াস থেকে চলে যান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। পরে সবাই চুপ করলে তিনি ফিরে এসে বক্তব্য শেষ করেন। রাজধানী ঢাকার ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউটের নিচতলার মিলনায়তনে বিএনপির প্রয়াত নেতা তরিকুল ইসলামের স্মরণসভায় হাজির হয়েছিলেন হাজারো নেতা-কর্মী।
শনিবার আয়োজিত এ সভায় বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীর উপস্থিতিতে তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। শুরু থেকেই হৈচৈ লেগেই ছিল। সভা শুরুর পর নেতাদের বক্তব্য দেওয়ার সময়ও মিলনায়তনে কর্মীরা নিজেদের মধ্যে কথা বলতেই থাকেন। পেছনের দিকে এবং মূল মঞ্চের দুই পাশে কর্মীরা সারাক্ষণ কথা বলতে থাকেন। এ নিয়ে দলের ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু ও যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বক্তব্য দিতে এসে কর্মীদের কানাঘুষা ও কথা বলা বন্ধ করতে বলেন। এরপরও কিছু কিছু কর্মী তাতে কর্ণপাত করছিলেন না।
এক পর্য়ায়ে তারা বলেন, ‘‘কথা শুনতে না চাইলে এ কক্ষের বাইরে চলে যান অথবা আপনারা মাইকে এসে কথা বলেন, আমরা মঞ্চে বসে শুনি।” বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সভাপতির বক্তব্য দেয়ার সময়ও একই অবস্থা সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে ক্ষুব্ধ হয়ে ডায়াস থেকে চলে গিয়ে তিনি নিজের আসনে বসে পড়েন। হট্টগোল দেখে মহাসচিব বলেন, ‘‘সমস্যা হচ্ছে আমরা কেন এরকম সভায় আসি, সেটা বোধহয় আমরা নিজেরাও জানি না। এটা একটা স্মরণসভা, এমন একজন নেতার যিনি আমাদের অতীতে নেতৃত্ব দিয়েছেন, পথ দেখিয়েছেন এবং সারাটা জীবন সংগ্রাম করেছেন, লড়াই করেছেন।
“তার স্মরণ সভায় এসে আমাদেরকে এই সমস্ত সমস্যা সামাধান করতে হয়।”
বিরক্ত প্রকাশ করে তিনি বলেন, “কীভাবে কথা বলবেন। দেখুন এখানে ইয়াং ছেলেরা আছে, তরুণরা আছে। হয় তারা ছাত্রদল, না হয় যুবদল, না হয় স্বেচ্ছাসেবক দল অথবা মহানগরের নতুন কমিটির ছেলেরা।
“তারা তো এখানে কথা শুনতেই আসেনি। অনেকে বহুবার বলেছেন এখানে। কিন্তু আমরা কেউ কর্ণপাত করছি না। আমাদের এ কান দিয়ে ঢুকে ওই কান দিয়ে বেরিয়ে যায়।”
ডানদিনে হট্টগোলকারীদের দিকে তাকিয়ে তিনি বলেন, ‘‘ওইখানকার সমস্যাটা কী? হোয়াট ইজ প্রবলেম দেয়ার। এভাবে আমি কথা বলব না।”
এসময়ে দলের সঞ্চালক শামীমুর রহমান মাইকে এসে বলেন, “আপনারা চুপ করেন। কেউ কথা বলবেন না। প্লিজ মহাসচিব এখন বক্তব্য রাখবেন। সবাই বসে পড়েন। শান্ত হয়ে বসেন। আমাদের সংগ্রামী মহাসচিব স্যার কথা বলছেন।”
তখন পিনপতন নিরবতা তৈরি হয় মিলনায়তনে। পরে আবার ডায়াসে এসে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “আবারো বলছি আপনারা মিটিং শুনতে আসেন, উনাকে স্মরণ করতে চান তাহলে দয়া করে শান্ত হয়ে থাকেন। তা না হলে আমাদের এখানে থাকার দরকার নাই, কোনো প্রয়োজন নাই।
“আমি বলতে চাই, এভাবে কিছু হয় না। বিশেষ করে আমাদের তরুণ যুবক, ছাত্র-যুবদল তাদের প্রতি আহবান জানাতে চাই- আসুন আপনারা নিজেরা কিছু জানুন এবং নিজেদেরকে নিয়ন্ত্রণ করতে শিখুন। তা না হলে কোনো কিছু অর্জন করা সম্ভব হবে না।”
অনুষ্ঠান শেষেও বিপত্তি তৈরি হয় সভাকেন্দ্রে। নেতা-কর্মীরা একসঙ্গে বেরুতে গিয়ে ইন্সটিটিউটের মূল গেইটের একটা গ্লাস ভেঙে যায়।
কর্তব্যরত নিরাপত্তা কর্মী সামাদ বলেন, ‘‘বার বার বলছিলাম, আপনারা আস্তে যান। কেউ কথা শুনছে না। বিএনপির লোকজন এক সঙ্গে বেরুনোর সময়ে গ্লাসটি ভেঙে যায়। আমি নিজেও আহত হয়েছি।”