ঢাকা ১০:১৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৬ জুলাই ২০২৫

রাজধানীতে বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীকে মারধর, বিচারের দাবিতে মানববন্ধন

  • আপডেট সময় : ১২:০৯:৪১ অপরাহ্ন, শনিবার, ৯ এপ্রিল ২০২২
  • ৮৭ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশু তাওসিফ আহনাফকে নির্দয়ভাবে মারধরের বিচারের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন অভিভাবকরা। একইসঙ্গে প্রতিবন্ধী শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে তাদের ওপর সব ধরনের নির্যাতন বন্ধের দাবি তুলেছেন তারা।
গতকাল শনিবার বেলা ১১টায় রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এ মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়।
মানববন্ধনে তাওসিফের বাবা সুরুজ মিয়া বলেন, আমার বাচ্চার বয়স ১৫ বছর। তবে বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী হওয়ায় তার আচরণ ছয় বছরের শিশুর মতো। মালিবাগের কল্যাণী ইনক্লুসিভ প্রাইমারি স্কুলের চতুর্থ শ্রেণিতে পড়াশোনা করে সে। প্রতিদিনের মতো ২৯ মার্চ স্কুলে গিয়েছিল। কিন্তু গেটের সামনে থেকে তাওসিফ ‘স্কুলে যাব না, তোমার সঙ্গে অফিসে যাব’ বলে বায়না ধরে। এসময় তাকে স্কুলের গেটে নামিয়ে আমি একটু এগিয়ে যাই। তখন ও পেছন থেকে দৌড়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে অফিসে যেতে চায়।
তিনি বলেন, ওর স্কুলের ঠিক পাশেই সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের গেটে দাঁড়িয়ে তিনটি মেয়ে আমাদের দেখে হাসাহাসি করছিল। এগুলো দেখে আমার ছেলে ওই মেয়েদের গিয়ে বলে, ‘তাকাবা না’। প্রতিটি বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুর কিছু না কিছু বৈশিষ্ট্য থাকে। তাওসিফের দিকে কেউ তাকালে সে বলে- তাকাবা না। তখন জবাবে কেউ যদি বলে, ‘ঠিক আছে তাকাব না’ তাহলে সে শান্ত হয়ে যায়। তবে আমি যখন ছেলেকে বোঝাচ্ছি, তখন মেয়েগুলো হাসছিল। এরপর তাওসিফ তাদের দিকে এগিয়ে গেলে মেয়েগুলো চিৎকার করে দৌড়ে কলেজের ভেতর চলে যায়। তাওসিফও তাদের পেছনে যায়।
‘এ সময় সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের সচিব মহিন উদ্দিন তাওসিফকে মারধর শুরু করেন। দ্রুত আমি সেখানে গিয়ে তাকে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু বলে থামানোর চেষ্টা করি। এরপরও তিনি আমার ছেলের দুই গালে আরও দুটি থাপ্পড় দেন। যা দেখা ছিল আমার জন্য অত্যন্ত কষ্টের। আমি প্রতিবাদ করলে সিকিউরিটি গার্ডরা আমাকেও মারতে উদ্যত হয়। খবর পেয়ে তাওসিফের স্কুল থেকে শিক্ষক ও অভিভাবকেরা এসে প্রতিবাদ করেন। পরে ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়।’
সুরুজ মিয়া বলেন, এই ঘটনায় তাওসিফ আহনাফ অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাকে ঢাকা কমিউনিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। এছাড়াও ওই ঘটনায় মেডিকেল কলেজ থেকে প্রকাশিত ভিডিও সিসিটিভি ফুটেজটি খ-িত চিত্র। আসল ঘটনা রুমের ভেতরে ঘটেছিল। সেখানে তারা আমার ছেলেকে মারধর করেছে। কিন্তু সেই বিষয়টি আড়াল রয়েছে। আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি জানাই ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। তাওসিফের মা ফাতেমা তানজি বলেন, তাওসিফ যখন মেয়েটিকে বলেছিল, আমার দিকে তাকাবা না, তখন মেয়েটি যদি বলত, আচ্ছা তাকাব না, তাহলে কোনো সমস্যাই হত না। কিন্তু আমাদের ছেলে তাওসিফকে ত্চ্ছু কারণে সেদিন যেভাবে মারধর করা হয়েছে তাতে আমি বিস্মিত। তার বাবা কাছে না থকলে আরও বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারতো। আমি এই ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।

মানববন্ধনে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, তরী ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মারুফা আক্তার, অটিজম হেল্প বিডির এনডিডি ট্রেইনার ড. নাসিমা ইসলাম চৌধুরী বৃষ্টি, কল্যাণী স্পেশাল স্কুলের শিক্ষিকা জাকিয়া, শামসুন্নাহার, মানিকগঞ্জের অটিস্টিক ও বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী পুনর্বাসন নিবাসের প্রতিষ্ঠাতা নাজনীন বেগম প্রমুখ।

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

রাজধানীতে বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীকে মারধর, বিচারের দাবিতে মানববন্ধন

আপডেট সময় : ১২:০৯:৪১ অপরাহ্ন, শনিবার, ৯ এপ্রিল ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক : বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশু তাওসিফ আহনাফকে নির্দয়ভাবে মারধরের বিচারের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন অভিভাবকরা। একইসঙ্গে প্রতিবন্ধী শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে তাদের ওপর সব ধরনের নির্যাতন বন্ধের দাবি তুলেছেন তারা।
গতকাল শনিবার বেলা ১১টায় রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এ মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়।
মানববন্ধনে তাওসিফের বাবা সুরুজ মিয়া বলেন, আমার বাচ্চার বয়স ১৫ বছর। তবে বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী হওয়ায় তার আচরণ ছয় বছরের শিশুর মতো। মালিবাগের কল্যাণী ইনক্লুসিভ প্রাইমারি স্কুলের চতুর্থ শ্রেণিতে পড়াশোনা করে সে। প্রতিদিনের মতো ২৯ মার্চ স্কুলে গিয়েছিল। কিন্তু গেটের সামনে থেকে তাওসিফ ‘স্কুলে যাব না, তোমার সঙ্গে অফিসে যাব’ বলে বায়না ধরে। এসময় তাকে স্কুলের গেটে নামিয়ে আমি একটু এগিয়ে যাই। তখন ও পেছন থেকে দৌড়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে অফিসে যেতে চায়।
তিনি বলেন, ওর স্কুলের ঠিক পাশেই সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের গেটে দাঁড়িয়ে তিনটি মেয়ে আমাদের দেখে হাসাহাসি করছিল। এগুলো দেখে আমার ছেলে ওই মেয়েদের গিয়ে বলে, ‘তাকাবা না’। প্রতিটি বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুর কিছু না কিছু বৈশিষ্ট্য থাকে। তাওসিফের দিকে কেউ তাকালে সে বলে- তাকাবা না। তখন জবাবে কেউ যদি বলে, ‘ঠিক আছে তাকাব না’ তাহলে সে শান্ত হয়ে যায়। তবে আমি যখন ছেলেকে বোঝাচ্ছি, তখন মেয়েগুলো হাসছিল। এরপর তাওসিফ তাদের দিকে এগিয়ে গেলে মেয়েগুলো চিৎকার করে দৌড়ে কলেজের ভেতর চলে যায়। তাওসিফও তাদের পেছনে যায়।
‘এ সময় সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের সচিব মহিন উদ্দিন তাওসিফকে মারধর শুরু করেন। দ্রুত আমি সেখানে গিয়ে তাকে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু বলে থামানোর চেষ্টা করি। এরপরও তিনি আমার ছেলের দুই গালে আরও দুটি থাপ্পড় দেন। যা দেখা ছিল আমার জন্য অত্যন্ত কষ্টের। আমি প্রতিবাদ করলে সিকিউরিটি গার্ডরা আমাকেও মারতে উদ্যত হয়। খবর পেয়ে তাওসিফের স্কুল থেকে শিক্ষক ও অভিভাবকেরা এসে প্রতিবাদ করেন। পরে ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়।’
সুরুজ মিয়া বলেন, এই ঘটনায় তাওসিফ আহনাফ অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাকে ঢাকা কমিউনিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। এছাড়াও ওই ঘটনায় মেডিকেল কলেজ থেকে প্রকাশিত ভিডিও সিসিটিভি ফুটেজটি খ-িত চিত্র। আসল ঘটনা রুমের ভেতরে ঘটেছিল। সেখানে তারা আমার ছেলেকে মারধর করেছে। কিন্তু সেই বিষয়টি আড়াল রয়েছে। আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি জানাই ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। তাওসিফের মা ফাতেমা তানজি বলেন, তাওসিফ যখন মেয়েটিকে বলেছিল, আমার দিকে তাকাবা না, তখন মেয়েটি যদি বলত, আচ্ছা তাকাব না, তাহলে কোনো সমস্যাই হত না। কিন্তু আমাদের ছেলে তাওসিফকে ত্চ্ছু কারণে সেদিন যেভাবে মারধর করা হয়েছে তাতে আমি বিস্মিত। তার বাবা কাছে না থকলে আরও বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারতো। আমি এই ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।

মানববন্ধনে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, তরী ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মারুফা আক্তার, অটিজম হেল্প বিডির এনডিডি ট্রেইনার ড. নাসিমা ইসলাম চৌধুরী বৃষ্টি, কল্যাণী স্পেশাল স্কুলের শিক্ষিকা জাকিয়া, শামসুন্নাহার, মানিকগঞ্জের অটিস্টিক ও বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী পুনর্বাসন নিবাসের প্রতিষ্ঠাতা নাজনীন বেগম প্রমুখ।