প্রত্যাশা ডেস্ক: মাত্র এক সপ্তাহ পরেই সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপূজা। এই উৎসবকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে বইছে এক অন্যরকম আমেজ। চারদিকে চলছে পূজার প্রস্তুতি। পূজাকে কেন্দ্র করে কেউ নতুন পোশাক কেনাকাটা নিয়ে ব্যস্ত, কেউ প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত, আবার কেউ পূজামণ্ডপ তৈরিসহ আলোকসজ্জা ও আনুষঙ্গিক আয়োজন নিয়ে ব্যস্ত।
সরেজমিন দেখা যায়, রাজধানীর রমনা কালীমন্দির, ঢাকেশ্বরী মন্দির, জয়কালী মন্দির, পুরান ঢাকার শাঁখারিবাজারের পূর্ব মোড়ে অবস্থিত শ্রী শ্রী শনিদেবের মন্দিরসহ ঢাকা শহরে যেখানে পূজামণ্ডপ তৈরি হবে, সেখানেই আলোকসজ্জা ও সাজসজ্জার কাজ চলছে পুরোদমে। ইতোমধ্যে পূজার সব প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। তবে তা সম্পূর্ণ হতে এখনো তিন থেকে চারদিন সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা।
রাজধানীর রমনা কালীমন্দির প্রাঙ্গণেও প্রতি বছরের মতো এবারও দুর্গাপূজা আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে। শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সরেজমিন দেখা যায়, প্রতিমার অবকাঠামো তৈরি প্রায় হয়ে গেছে। আর ২-৩ দিন পরেই শুরু হবে রঙ করার কাজ। সেখানকার একজন শিল্পী রতন পাল এ বিষয়ে সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘প্রতিমা তৈরির যাবতীয় কাজ প্রায় শেষের দিকে। এরপর রঙের কাজ শুরু হবে। তারপর প্যান্ডেলের সাজসজ্জা করবো।’
রমনা কালীমন্দিরের দায়িত্বশীল সূত্রে জানা যায়, দুর্গোৎসবকে কেন্দ্র করে মন্দির কর্তৃপক্ষ সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রশাসন থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হচ্ছে। প্রতিমা তৈরি শেষ পর্যায়ে। তবে মণ্ডপের আনুষঙ্গিক যেসব কাজ আছে তা মেলা শেষে শুরু হবে।
জানা যায়, দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে কালীমন্দির প্রাঙ্গণে তিন দিনব্যাপী মেলা বর্তমানে চলমান আছে। এখন আপাতত পূজাকে কেন্দ্র করে মেলার পরিবেশ জমজমাট। আগামী ২১ তারিখে এই মেলা শেষ হবে। তারপরেই মন্দিরের চারপাশে লাইটিং এবং সাজসজ্জার কাজ শুরু হবে।
পুরান ঢাকার শাঁখারি বাজারে পূর্ব মোড়ে অবস্থিত শ্রী শ্রী শনিদেবের মন্দিরে চলছে সাজসজ্জার কাজ। সোনালি রঙে নতুন করে সাজছে এই মন্দিরটি।
সাজসজ্জার দায়িত্বে থাকা সবুজ মিয়া বলেন, ‘তিন দিন ধরে এই মন্দিরের সাজসজ্জার কাজ করছি। আরো দুদিন লাগবে কাজ শেষ করতে। ইতোমধ্যে আমাদের অন্য যারা মণ্ডপ তৈরির দায়িত্বে আছে তারা বাঁশ দিয়ে পাশেই স্টেজ তৈরি করছেন। বাকি কাজ প্রতিমা এলে করা হবে।’
পুরান ঢাকার শ্রী শ্রী রক্ষা কালীমাতা মন্দিরের আশেপাশে চলছে দুর্গাপূজার সার্বিক প্রস্তুতির কাজ। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, ২০-২৫ জন শ্রমিক পূজা মণ্ডপ তৈরির কাজ করছেন। গত কয়েকদিন ধরেই তারা এই কাজ করছেন। কেউ বাঁশ কাটছে, কেউ রশি দিয়ে বাঁশ বাঁধছেন আবার কেউবা পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাজ করছেন। ২৮ তারিখের আগেই সকল কাজ শেষ করার লক্ষ্যে দিনরাত পরিশ্রম করছেন তারা।
শ্রী শ্রী রক্ষা কালীমাতা মন্দিরে কাজ করছেন শাহ আলম (৩৫) নামের একজন শ্রমিক। ১৫ বছর ধরে পূজামণ্ডপ তৈরিসহ আলোকসজ্জার কাজ করে আসছেন তিনি।
শাহ আলম বলেন, ‘পূজা এলে আমাদের ব্যস্ততা বাড়ে। সারা বছর আমরা বিভিন্ন প্রোগ্রামে ডেকোরেশনের কাজ করি। এ দিয়েই আমাদের সংসার চলে। বাবা চলে যাওয়ার পর সংসারের হাল ধরতে এই পেশায় যুক্ত হয়েছি।’
শাহ আলম আরো বলেন, ‘এখানে দৈনিক ৫০০ টাকা মজুরিতে কাজ করি। পূজাকেন্দ্রিক পুরো একমাস এখানে মণ্ডপ তৈরি সাজসজ্জা এসব নিয়ে কাজ করবো। তারপর পূজা শেষে হয়তো আবার বেকার থাকা লাগবে।’
পুরান ঢাকার শ্রী শ্রী শ্রীধর চক্র জিঁউ বিগ্রহ মন্দিরের সামনে তিন দিন ধরে মণ্ডপের কাজ করছে ‘সুব্রত ডেকোরেশন’। পূজার সাজসজ্জা ও ডেকোরেশনের বিষয়ে সুব্রত ডেকোরেশনের কর্ণধার সুদীপ্ত সেন জানান, পুরান ঢাকায় ৩৫ বছর ধরে পূজামণ্ডপ তৈরি ও ডেকোরেশনের কাজ করেন তিনি।
সুদীপ্ত সেন বলেন, ‘বংশপরম্পরায় এই কাজ করে আসছি। পূজার সাজসজ্জা আর অন্য প্রোগ্রামের সাজসজ্জা সম্পূর্ণ আলাদা। তাই এখানে সময় বেশি লাগে, লোকবলও বেশি লাগে।’
তিনি আরো বলেন, ‘আগে এত আধুনিকতা ছিল না। এক কাপড় দিয়ে দুই তিন পুজোর প্যান্ডেল তৈরি করতাম। মাইকের প্রচলন ছিল। এখন সাউন্ড বক্স ছাড়া চলেই না। এখন পুজোর গেট থেকে শুরু করে ভেতরের প্যান্ডেল, সব কিছু বৈচিত্র্যময় হতে হয়। এক ডিজাইন দ্বিতীয়বার চলে না। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের ডেকোরেশন সিস্টেমও আধুনিক করা লাগছে।’
এদিকে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, গত বছরের তুলনায় এ বছর এক হাজারের বেশি পূজামণ্ডপ বেড়েছে। গত বছর সারা দেশে ৩১,৪৬১ মণ্ডপে দুর্গাপূজা উদযাপিত হয়েছে। এর মধ্যে রাজধানীতে ২৫২টি মণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এবার সেই সংখ্যা কিছুটা বাড়বে। সারা দেশে পূজামণ্ডপ প্রস্তুতের কাজ পুরোদমে এগিয়ে চলছে।
এসি/আপ্র/২০/০৯/২০২৫