ঢাকা ০৮:৩৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ০৯ জুন ২০২৫

রাখাইনে তুমুল লড়াই জান্তার আরও দুই ঘাঁটি আরাকান আর্মির দখলে

  • আপডেট সময় : ১১:১৩:৫২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
  • ৬৭ বার পড়া হয়েছে

প্রত্যাশা ডেস্ক : রাখাইনের ম্রাউক ইউ ও কিয়াকতাও শহরে জান্তা বাহিনীর আরও দুটি ব্যাটালিয়নের সদরদপ্তর দখলে নেওয়ার দাবি করেছে মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (এএ)। বৃহত্তর স্বায়ত্ত্বশাসনের দাবিতে লড়াই করে আসা রাখাইন রাজ্যের এই গোষ্ঠী বলেছে, সেনাবাহিনীর সদরদপ্তর দখলের অভিযানের সময় ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। এতে মিয়ানমার জান্তার অনেক সৈন্য হতাহত হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার থাইল্যান্ড-ভিত্তিক মিয়ানমারের স্থানীয় সংবাদমাধ্যম দ্য ইরাবতির এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাখাইনের ঐতিহাসিক ম্রাউক ইউ শহরে কয়েক দিনের তীব্র সংঘর্ষের পর সোমবার সকালের দিকে মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর লাইট ইনফ্যান্ট্রি ব্যাটালিয়ন (এলআইবি)-৩৭৮’র সদরদপ্তরের দখল নিয়েছে আরাকান আর্মির যোদ্ধারা। এর আগে, গত মঙ্গলবার ম্রাউক ইউ শহরে জান্তা বাহিনীর এলআইবি-৫৪০ এর সদরদপ্তরের দখল এবং এলআইবি-৩৭৭ ঘাঁটিতে হামলা চালায় আরাকান আর্মি। রাখাইনের এই বিদ্রোহী গোষ্ঠীর দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ওই তিনটি ব্যাটালিয়ন ম্রাউক ইউ শহরের ঐতিহাসিক রাজধানী, ম্রাউক ইউ প্রতœতাত্ত্বিক জাদুঘর, শহরের আবাসিক এলাকা এবং আশপাশের গ্রামগুলোতে গোলাবর্ষণ করেছে। আরাকান আর্মি বলেছে, গত ২ ফেব্রুয়ারি কিয়াকতাও শহরে এলআইবি-৩৭ সদরদপ্তর এবং মিনবিয়া, কিয়াকতাও ও ম্রাউক ইউ শহরের অন্যান্য জান্তা ঘাঁটিগুলোতে হামলা চালিয়েছে যোদ্ধারা।
বিবৃতিতে আরাকান আর্মি বলেছে, আকাশ ও সমুদ্র থেকে জান্তা বাহিনীর বোমাবর্ষণের মাঝেই রাথেডং, পোন্নাগিউন, রামরি এবং অ্যান শহরে সংঘর্ষ চলছে। মংডু শহরের বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া টাং পিয়ো সীমান্ত ফাঁড়িতে হামলা চালিয়েছে আরাকান আর্মি। রোববার ও সোমবার প্রায় ৯০ জন জান্তা সৈন্য সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে গেছে। যদিও মঙ্গলবার বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) নবনিযুক্ত মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী বলেছেন, মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপির সদস্যসহ দেশটির অন্যান্য বাহিনীর মোট ২৬৪ জন বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। সোমবার মিয়ানমার থেকে ছোড়া কামানের গোলায় বান্দরবানে এক বাংলাদেশি নারী ও এক রোহিঙ্গা পুরুষ নিহত হয়েছেন। বাংলাদেশের ভূখ-ে কামানের গোলায় প্রাণহানির এই ঘটনায় মিয়ানমারের জান্তাকে দায়ী করেছে আরাকান আর্মি। গত ১৩ নভেম্বর থেকে উত্তর রাখাইন ও প্রতিবেশী দক্ষিণ চিন রাজ্যের পালেতওয়া শহরজুড়ে জান্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে হামলা চালিয়ে আসছে দেশটির এই বিদ্রোহী গোষ্ঠী। আরাকান আর্মি বলেছে, রাখাইনের রাজধানী সিত্তের কাছের পাউকতাও শহর এবং পুরো পালেতওয়াসহ অন্যান্য এলাকায় মিয়ানমারের জান্তা বাহিনীর অন্তত ১৭০টি অবস্থান দখল করেছে তাদের যোদ্ধারা। সূত্র: দ্য ইরাবতি।
জান্তার আরও ৩৫ সেনার বাংলাদেশে প্রবেশ, মোট ২৬৪: মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলমান সংঘর্ষের জেরে এখন পর্যন্ত দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিজিপি), মিয়ানমার সেনাবাহিনী, ইমিগ্রেশন সদস্য, পুলিশ ও অন্যান্য সংস্থার ২৬৪ জন সদস্য বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন। এদের মধ্যে মঙ্গলবার দুপুরে ৩৫ জন প্রবেশ করেন। একইদিন বিকালে বিজিবি সদরদপ্তর থেকে পাঠানো বার্তায় এ তথ্য জানানো হয়। বিজিবি জানিয়েছে, মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত মিয়ানমারের বিজিপি, সেনাসহ অন্যান্য বাহিনীর ২৬৪ জন মিয়ানমার থেকে এসেছেন। তাদের মধ্যে ৩৫ জন আজ দুপুরে পালিয়ে এসেছেন। তাদের আশ্রয়ে দিয়ে খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এরমধ্যে ১৫ জন আহত ছিলেন। তাদের মধ্যে ৮ জন গুরুতর আহত ছিলেন। ৪ জনকে কক্সবাজার ও ৪ জনকে চট্রগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের বিজিবির পক্ষ থেকে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এছাড়া তাদেরকে নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে।
মিয়ানমারের গোলাগুলিতে জনমানবশূন্য বাংলাদেশ সীমান্ত: মিয়ানমারের রাখাইনে সেনাবাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহী গ্রুপ আরাকান আর্মির চলমান সংঘাতে সীমান্ত এলাকায় বসবাসরত বাংলাদেশিরা চরম আতঙ্কে রয়েছেন। তারা বাড়িঘর ছেড়ে আশ্রয় নিয়েছেন স্বজনদের বাড়ি ও আশপাশের গ্রামগুলোতে। তিন দিন ধরে আরকান আর্মির সঙ্গে এ গৃহযুদ্ধে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর ছোড়া গুলি ও মর্টারশেল পড়ছে বাংলাদেশের ভেতরে। এ কারণে চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন সীমান্তের মানুষ। অবশ্য, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সীমান্তে সতর্ক অবস্থায় রয়েছে বলে জানা গেছে। সীমান্তের একাধিক সূত্র বলছে, বান্দরবানের তুমব্রু, ঘুমধুম সীমান্তে রাখাইনে মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) তিনটি ক্যাম্প দখলে নিয়েছে বিদ্রোহী গ্রুপ আরকান আর্মি। মঙ্গলবার সকাল থেকে রাখাইনের ঢেকিবুনিয়া ক্যাম্পে অভিযান জোরদার করেছে তারা। বর্তমানে কক্সবাজারের উখিয়ার রহমতের বিল ও আন্জুমানপাড়া সীমান্তের ওপারে বিকট শব্দে গোলাগুলি চলছে। এ অবস্থায় সীমান্তের বিদ্রোহী গ্রুপ আরকান আর্মির সঙ্গে গৃহযুদ্ধে টিকতে না পেরে বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছে এ পর্যন্ত ২৬৪ জন বিজিপির সদস্য। তাদের অনেকে আহত হয়েছেন। বিজিবি সদর দফতরের গণসংযোগ কর্মকর্তা শরীফুল ইসলামের দেওয়া তথ্যমতে, মিয়ানমারের রাখাইনে চলমান সংঘাতে সীমান্ত পার হয়ে সশস্ত্র অবস্থায় বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ২২৯ বিজিপি সদস্যকে নিরস্ত্র করে বিজিবির হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ঢেকিবুনিয়া এলাকার বিজিপি ২নং ব্যাটালিয়ন ক্যাম্পে এলাকা থেকে একটি মর্টারশেল এসে সীমান্তের এপারে দক্ষিণ ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয়ের পেছনে বেতবুনিয়া এলাকার একটি বাড়ির জানালায় আঘাত হেনেছে। সীমান্ত এলাকার আতঙ্কগ্রস্ত মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে নিরাপদ স্থানে চলে গেছেন। নাইক্ষ্যংছড়ি ঘুমধুম ইউপি চেয়ারম্যান এমকেএম জাহাঙ্গীর আজিজ জানিয়েছেন, খুব সকাল থেকে ঘুমধুম সীমান্তের ওপারে ঢেকিবুনিয়া এলাকার মিয়ানমার সীমান্তের ওপারে বিজিপির ২নং ব্যাটালিয়ন ক্যাম্প এলাকায় তুমুল গোলাগুলির শব্দ শোনা যাচ্ছিল। আনুমানিক সকাল ৯টার দিকে হঠাৎ একটি মর্টারশেল এসে ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয়ের পেছনের এলাকার সৈয়দ নুর শিকদার নামে এক ব্যক্তির বসতঘরের একপাশে আঘাত করে। তবে কেউ হতাহত হয়নি।
উখিয়ার পালংখালী ইউপি চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী জানিয়েছেন, মঙ্গলবার সকাল থেকে সীমান্তের ওপারে ব্যাপক গোলাগুলির শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। হঠাৎ মিয়ানমার থেকে ছোড়া একটি মর্টারশেল উখিয়ার থাইংখালী রহমতের বিল সীমান্তের এক কিলোমিটার ভেতরে এসে পড়ে। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। সকালে ওপার থেকে কিছু অস্ত্রধারী লোক এপারে আশ্রয়ের জন্য প্রবেশ করেছে। তাদের বিজিবির হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। লম্বাবিল সীমান্তের বাসিন্দা শফিউল আলম বলেন, ‘সীমান্তের তুমব্রু এলাকায় সপ্তাহজুড়ে যুদ্ধের গোলাগুলি, মর্টারশেল, গ্রেনেটের আওয়াজ শুনে আসছিলাম। এখন হয়তো সে দেশের সরকার আর বিদ্রোহী গোষ্ঠীর মধ্যে যুদ্ধের স্থান পরিবর্তন হয়েছে।’
উখিয়ার ধামনখালী সীমান্তে বসবাসরত মোহাম্মদ আতিক বলেন, ‘সকাল থেকে তুমুল যুদ্ধ চলছে সীমান্তের ওপারে। সকাল ৯টার পর সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশ বেশকিছু লোক অনুপ্রবেশ করেছে। তাদের বিজিবি আটক করছে বলে শুনছি।’ এর আগে, সোমবার মিয়ানমার থেকে ছোড়া একটি মর্টারশেল সীমান্তের ঘুমধুমে একটি বাড়িতে এসে পড়ে। এ ঘটনায় ওই এলাকার বাংলাদেশি এক নারীসহ দুজন নিহত হয়েছেন।
গত এক বছর ধরে বাংলাদেশের কক্সবাজার ও বান্দরবানের মিয়ানমার সীমান্তের ওপারে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরকান আর্মির (এএ) সঙ্গে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এবং দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপির লড়াই চলছে। মাঝে কিছুদিন উত্তেজনা কমে আসলেও গত তিন দিন তুমুল লড়াই হচ্ছে। সীমান্তের নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, মঙ্গলবার সকালে থাইংখালী রহমতের বিল সীমান্ত দিয়ে সে দেশের সীমান্তরক্ষী বিজিপি ছাড়াও অর্ধশতাধিক মিয়ানমারের নাগরিক বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। তাদের বিজিবি হেফাজতে নিয়েছে।

 

 

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

রাখাইনে তুমুল লড়াই জান্তার আরও দুই ঘাঁটি আরাকান আর্মির দখলে

আপডেট সময় : ১১:১৩:৫২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

প্রত্যাশা ডেস্ক : রাখাইনের ম্রাউক ইউ ও কিয়াকতাও শহরে জান্তা বাহিনীর আরও দুটি ব্যাটালিয়নের সদরদপ্তর দখলে নেওয়ার দাবি করেছে মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (এএ)। বৃহত্তর স্বায়ত্ত্বশাসনের দাবিতে লড়াই করে আসা রাখাইন রাজ্যের এই গোষ্ঠী বলেছে, সেনাবাহিনীর সদরদপ্তর দখলের অভিযানের সময় ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। এতে মিয়ানমার জান্তার অনেক সৈন্য হতাহত হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার থাইল্যান্ড-ভিত্তিক মিয়ানমারের স্থানীয় সংবাদমাধ্যম দ্য ইরাবতির এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাখাইনের ঐতিহাসিক ম্রাউক ইউ শহরে কয়েক দিনের তীব্র সংঘর্ষের পর সোমবার সকালের দিকে মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর লাইট ইনফ্যান্ট্রি ব্যাটালিয়ন (এলআইবি)-৩৭৮’র সদরদপ্তরের দখল নিয়েছে আরাকান আর্মির যোদ্ধারা। এর আগে, গত মঙ্গলবার ম্রাউক ইউ শহরে জান্তা বাহিনীর এলআইবি-৫৪০ এর সদরদপ্তরের দখল এবং এলআইবি-৩৭৭ ঘাঁটিতে হামলা চালায় আরাকান আর্মি। রাখাইনের এই বিদ্রোহী গোষ্ঠীর দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ওই তিনটি ব্যাটালিয়ন ম্রাউক ইউ শহরের ঐতিহাসিক রাজধানী, ম্রাউক ইউ প্রতœতাত্ত্বিক জাদুঘর, শহরের আবাসিক এলাকা এবং আশপাশের গ্রামগুলোতে গোলাবর্ষণ করেছে। আরাকান আর্মি বলেছে, গত ২ ফেব্রুয়ারি কিয়াকতাও শহরে এলআইবি-৩৭ সদরদপ্তর এবং মিনবিয়া, কিয়াকতাও ও ম্রাউক ইউ শহরের অন্যান্য জান্তা ঘাঁটিগুলোতে হামলা চালিয়েছে যোদ্ধারা।
বিবৃতিতে আরাকান আর্মি বলেছে, আকাশ ও সমুদ্র থেকে জান্তা বাহিনীর বোমাবর্ষণের মাঝেই রাথেডং, পোন্নাগিউন, রামরি এবং অ্যান শহরে সংঘর্ষ চলছে। মংডু শহরের বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া টাং পিয়ো সীমান্ত ফাঁড়িতে হামলা চালিয়েছে আরাকান আর্মি। রোববার ও সোমবার প্রায় ৯০ জন জান্তা সৈন্য সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে গেছে। যদিও মঙ্গলবার বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) নবনিযুক্ত মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী বলেছেন, মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপির সদস্যসহ দেশটির অন্যান্য বাহিনীর মোট ২৬৪ জন বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। সোমবার মিয়ানমার থেকে ছোড়া কামানের গোলায় বান্দরবানে এক বাংলাদেশি নারী ও এক রোহিঙ্গা পুরুষ নিহত হয়েছেন। বাংলাদেশের ভূখ-ে কামানের গোলায় প্রাণহানির এই ঘটনায় মিয়ানমারের জান্তাকে দায়ী করেছে আরাকান আর্মি। গত ১৩ নভেম্বর থেকে উত্তর রাখাইন ও প্রতিবেশী দক্ষিণ চিন রাজ্যের পালেতওয়া শহরজুড়ে জান্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে হামলা চালিয়ে আসছে দেশটির এই বিদ্রোহী গোষ্ঠী। আরাকান আর্মি বলেছে, রাখাইনের রাজধানী সিত্তের কাছের পাউকতাও শহর এবং পুরো পালেতওয়াসহ অন্যান্য এলাকায় মিয়ানমারের জান্তা বাহিনীর অন্তত ১৭০টি অবস্থান দখল করেছে তাদের যোদ্ধারা। সূত্র: দ্য ইরাবতি।
জান্তার আরও ৩৫ সেনার বাংলাদেশে প্রবেশ, মোট ২৬৪: মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলমান সংঘর্ষের জেরে এখন পর্যন্ত দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিজিপি), মিয়ানমার সেনাবাহিনী, ইমিগ্রেশন সদস্য, পুলিশ ও অন্যান্য সংস্থার ২৬৪ জন সদস্য বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন। এদের মধ্যে মঙ্গলবার দুপুরে ৩৫ জন প্রবেশ করেন। একইদিন বিকালে বিজিবি সদরদপ্তর থেকে পাঠানো বার্তায় এ তথ্য জানানো হয়। বিজিবি জানিয়েছে, মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত মিয়ানমারের বিজিপি, সেনাসহ অন্যান্য বাহিনীর ২৬৪ জন মিয়ানমার থেকে এসেছেন। তাদের মধ্যে ৩৫ জন আজ দুপুরে পালিয়ে এসেছেন। তাদের আশ্রয়ে দিয়ে খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এরমধ্যে ১৫ জন আহত ছিলেন। তাদের মধ্যে ৮ জন গুরুতর আহত ছিলেন। ৪ জনকে কক্সবাজার ও ৪ জনকে চট্রগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের বিজিবির পক্ষ থেকে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এছাড়া তাদেরকে নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে।
মিয়ানমারের গোলাগুলিতে জনমানবশূন্য বাংলাদেশ সীমান্ত: মিয়ানমারের রাখাইনে সেনাবাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহী গ্রুপ আরাকান আর্মির চলমান সংঘাতে সীমান্ত এলাকায় বসবাসরত বাংলাদেশিরা চরম আতঙ্কে রয়েছেন। তারা বাড়িঘর ছেড়ে আশ্রয় নিয়েছেন স্বজনদের বাড়ি ও আশপাশের গ্রামগুলোতে। তিন দিন ধরে আরকান আর্মির সঙ্গে এ গৃহযুদ্ধে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর ছোড়া গুলি ও মর্টারশেল পড়ছে বাংলাদেশের ভেতরে। এ কারণে চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন সীমান্তের মানুষ। অবশ্য, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সীমান্তে সতর্ক অবস্থায় রয়েছে বলে জানা গেছে। সীমান্তের একাধিক সূত্র বলছে, বান্দরবানের তুমব্রু, ঘুমধুম সীমান্তে রাখাইনে মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) তিনটি ক্যাম্প দখলে নিয়েছে বিদ্রোহী গ্রুপ আরকান আর্মি। মঙ্গলবার সকাল থেকে রাখাইনের ঢেকিবুনিয়া ক্যাম্পে অভিযান জোরদার করেছে তারা। বর্তমানে কক্সবাজারের উখিয়ার রহমতের বিল ও আন্জুমানপাড়া সীমান্তের ওপারে বিকট শব্দে গোলাগুলি চলছে। এ অবস্থায় সীমান্তের বিদ্রোহী গ্রুপ আরকান আর্মির সঙ্গে গৃহযুদ্ধে টিকতে না পেরে বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছে এ পর্যন্ত ২৬৪ জন বিজিপির সদস্য। তাদের অনেকে আহত হয়েছেন। বিজিবি সদর দফতরের গণসংযোগ কর্মকর্তা শরীফুল ইসলামের দেওয়া তথ্যমতে, মিয়ানমারের রাখাইনে চলমান সংঘাতে সীমান্ত পার হয়ে সশস্ত্র অবস্থায় বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ২২৯ বিজিপি সদস্যকে নিরস্ত্র করে বিজিবির হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ঢেকিবুনিয়া এলাকার বিজিপি ২নং ব্যাটালিয়ন ক্যাম্পে এলাকা থেকে একটি মর্টারশেল এসে সীমান্তের এপারে দক্ষিণ ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয়ের পেছনে বেতবুনিয়া এলাকার একটি বাড়ির জানালায় আঘাত হেনেছে। সীমান্ত এলাকার আতঙ্কগ্রস্ত মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে নিরাপদ স্থানে চলে গেছেন। নাইক্ষ্যংছড়ি ঘুমধুম ইউপি চেয়ারম্যান এমকেএম জাহাঙ্গীর আজিজ জানিয়েছেন, খুব সকাল থেকে ঘুমধুম সীমান্তের ওপারে ঢেকিবুনিয়া এলাকার মিয়ানমার সীমান্তের ওপারে বিজিপির ২নং ব্যাটালিয়ন ক্যাম্প এলাকায় তুমুল গোলাগুলির শব্দ শোনা যাচ্ছিল। আনুমানিক সকাল ৯টার দিকে হঠাৎ একটি মর্টারশেল এসে ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয়ের পেছনের এলাকার সৈয়দ নুর শিকদার নামে এক ব্যক্তির বসতঘরের একপাশে আঘাত করে। তবে কেউ হতাহত হয়নি।
উখিয়ার পালংখালী ইউপি চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী জানিয়েছেন, মঙ্গলবার সকাল থেকে সীমান্তের ওপারে ব্যাপক গোলাগুলির শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। হঠাৎ মিয়ানমার থেকে ছোড়া একটি মর্টারশেল উখিয়ার থাইংখালী রহমতের বিল সীমান্তের এক কিলোমিটার ভেতরে এসে পড়ে। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। সকালে ওপার থেকে কিছু অস্ত্রধারী লোক এপারে আশ্রয়ের জন্য প্রবেশ করেছে। তাদের বিজিবির হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। লম্বাবিল সীমান্তের বাসিন্দা শফিউল আলম বলেন, ‘সীমান্তের তুমব্রু এলাকায় সপ্তাহজুড়ে যুদ্ধের গোলাগুলি, মর্টারশেল, গ্রেনেটের আওয়াজ শুনে আসছিলাম। এখন হয়তো সে দেশের সরকার আর বিদ্রোহী গোষ্ঠীর মধ্যে যুদ্ধের স্থান পরিবর্তন হয়েছে।’
উখিয়ার ধামনখালী সীমান্তে বসবাসরত মোহাম্মদ আতিক বলেন, ‘সকাল থেকে তুমুল যুদ্ধ চলছে সীমান্তের ওপারে। সকাল ৯টার পর সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশ বেশকিছু লোক অনুপ্রবেশ করেছে। তাদের বিজিবি আটক করছে বলে শুনছি।’ এর আগে, সোমবার মিয়ানমার থেকে ছোড়া একটি মর্টারশেল সীমান্তের ঘুমধুমে একটি বাড়িতে এসে পড়ে। এ ঘটনায় ওই এলাকার বাংলাদেশি এক নারীসহ দুজন নিহত হয়েছেন।
গত এক বছর ধরে বাংলাদেশের কক্সবাজার ও বান্দরবানের মিয়ানমার সীমান্তের ওপারে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরকান আর্মির (এএ) সঙ্গে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এবং দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপির লড়াই চলছে। মাঝে কিছুদিন উত্তেজনা কমে আসলেও গত তিন দিন তুমুল লড়াই হচ্ছে। সীমান্তের নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, মঙ্গলবার সকালে থাইংখালী রহমতের বিল সীমান্ত দিয়ে সে দেশের সীমান্তরক্ষী বিজিপি ছাড়াও অর্ধশতাধিক মিয়ানমারের নাগরিক বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। তাদের বিজিবি হেফাজতে নিয়েছে।