ঢাকা ০৩:০৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১২ অগাস্ট ২০২৫

রহিমা বেগম জানালেন, তাকে অপহরণ করা হয়েছিল

  • আপডেট সময় : ০২:৪০:০৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২২
  • ৯০ বার পড়া হয়েছে

খুলনা প্রতিনিধি ; নিখোঁজের ২৯ দিন পর ফরিদপুর থেকে উদ্ধার হওয়া রহিমা বেগম পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) কাছে মুখ খুলেছেন। রহিমা বেগমের দাবি, গত ২৭ আগস্ট রাতে পানি আনতে গিয়ে তিনি অপহৃত হন। চার ব্যক্তি তাঁকে জাপটে ধরে নাকে রুমাল চেপে ধরেন। এতে তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। এরপর তাঁর কিছু মনে নেই।
গতকাল রোববার বিকেলে পিবিআই খুলনার পুলিশ সুপার সৈয়দ মুশফিকুর রহমান সংবাদমাধ্যমকে এ তথ্য জানান। পুলিশ সুপার বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে রহিমা বেগম অপহৃত হয়েছেন বলেই দাবি করেছেন। তিনি বলেছেন, তাঁকে চারজন মিলে অপহরণ করে নিয়ে যান। কিন্তু তাঁরা কারা বা কোথায় নিয়ে যান, সে ব্যাপারে তিনি কিছু বলতে পারেননি। একপর্যায়ে তাঁরা সাদা (খালি) স্ট্যাম্পে কিছু স্বাক্ষর নেন। স্বাক্ষর নেওয়ার পর তাঁকে একটা নির্জন জায়গায় ছেড়ে দেন। কিন্তু জায়গাটা কোথায় সেটা তিনি বুঝতে পারেননি। এরপর তিনি মনি নামের একটি মেয়ের বাড়িতে ছিলেন। তবে সেই মেয়ের বাড়ি কোথায় তিনি বলতে পারছেন না। এরপর ওই মেয়ে তাঁকে এক হাজার টাকা সংগ্রহ করে দেন। পরে তিনি মকসুদপুরে চলে আসেন।
সৈয়দ মুশফিকুর রহমান বলেন, যখন যেখানে ছিলেন, তাঁরা তাঁকে কাপড়চোপড় দিয়েছেন বলে জানান রহিমা। সেগুলো তিনি সংগ্রহে রেখেছিলেন। মুকসুদপুর থেকে তিনি বোয়ালমারীতে আসেন। এরপর ১৭ সেপ্টেম্বর তাঁর বাড়ির ২৮ বছর আগের ভাড়াটিয়া আবদুস কুদ্দুস মোল্লার বাড়িতে যান। কুদ্দুস একসময় খুলনার দৌলতপুরের সোনালী জুট মিলে চাকরি করতেন। তিনি ভেবেছিলেন, সেখানে গেলে আশ্রয় পাওয়া যেতে পারে। খুলনায় না গিয়ে ফরিদপুরে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে রহিমা বেগম পুলিশকে জানান, খুলনায় আসতে ভয় পেয়েছিলেন। ভেবেছিলেন, কুদ্দুসের বাড়ি যাওয়ার পর মেয়েদের খবর দেবেন। এরপর মেয়েদের সঙ্গে চলে যাবেন।
সৈয়দ মুশফিকুর রহমান জানান, সৈয়দপুরে অবস্থানকালে ঘটনাটি আলোচিত হলে ওই এলাকার একটি ছেলে বিষয়টি স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধির নজরে আনেন। ওই জনপ্রতিনিধি বিষয়টি খুলনার দৌলতপুরের এক কাউন্সিলরকে জানান। তিনি ঘটনাটি দৌলতপুর থানা-পুলিশকে জানান। এরপর দৌলতপুর থানার পুলিশ গত শনিবার ওই এলাকায় গিয়ে তাঁকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে।
পুলিশ সুপার জানান, রহিমা বেগমকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। আদালতে তিনি জবানবন্দি দেবেন। এরপর আদালতের সিদ্ধান্ত মতো কার্যক্রম চলবে। ২৭ আগস্ট রাত ১০টার দিকে খুলনার দৌলতপুরের মহেশ্বরপাশা উত্তর বণিকপাড়া এলাকার বাসার উঠানের নলকূপে পানি আনতে যান রহিমা বেগম। এর পর থেকেই নিখোঁজ ছিলেন তিনি। পরদিন তাঁর মেয়ে আদুরী আক্তার বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে থানায় অপহরণ মামলা করেন। এ মামলায় ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মায়ের সন্ধান চেয়ে ঢাকায় মানববন্ধনের পাশাপাশি বিভিন্ন স্থানে দৌড়ঝাঁপ করে আসছিলেন তাঁর সন্তানেরা।
মরিয়মদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা চান অপহরণ মামলায় গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের স্বজনেরা : অন্যদিকে খুলনার দৌলতপুর থেকে রহিমা বেগম নিখোঁজের পরদিন মেয়ে আদুরী আক্তার থানায় একটি অপহরণ মামলা করেছিলেন। সেই মামলায় ছয়জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যদের দাবি, তাঁদের ঘায়েল করার জন্য ওই মামলা করা হয়েছিল। জমিসংক্রান্ত বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে পরিকল্পিতভাবে আত্মগোপন করেছিলেন রহিমা। বিষয়টি জানতেন তাঁর মেয়ে মরিয়ম মান্নানসহ পরিবারের সদস্যরা। খুঁজে পাওয়া রহিমা বেগম ও তাঁর মেয়েদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন মামলায় গ্রেপ্তার হেলাল শরীফের পরিবারের সদস্যরা। একই সঙ্গে ক্ষতিপূরণও চেয়েছেন তাঁরা।
রোববার হেলাল শরীফের স্ত্রী মনিরা আক্তার সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘মরিয়ম মান্নানের সৎভাইয়ের কাছ থেকে ২০১৯ সালে জমি কিনেছিলাম। কিন্তু সেই জমির দখল তারা দেয়নি। এ জন্য সেখানকার স্থানীয় কাউন্সিলরের কাছে আমরা আবেদন করেছিলাম। তবে ওই পক্ষ এগোয়নি। বরং আমাদের নামে মানহানি মামলাও করেছিল। সেই মামলায় আমার স্বামীসহ পাঁচজন আসামি ছিলেন। সবাই আগাম জামিন নেন। পরে সেই পাঁচজনের নামে অপহরণ মামলা করা হয়েছে। আগের মামলায় জামিন হওয়ার পরই নতুন করে ফাঁসানোর জন্য তারা অপহরণের ঘটনা সাজায়।’
রহিমা নিজে আত্মগোপন করেছিলেন, এটা এখন পরিষ্কার বলে মনে করেন মনিরা আক্তার। তিনি বলেন, ‘শুধু ফাঁসানোই টার্গেট ছিল। মরিয়ম মান্নান সবকিছুই করল। অকারণেই আমাদের দিকে আঙুল তোলা হলো। আমরা নিশ্চিত ছিলাম, গ্রেপ্তার কেউ এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন। আমার স্বামী বের হলে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেব। আমরা আশা করছি, দ্রুত আমার স্বামী ছাড়া পাবে।’
অপহরণ মামলায় স্বামী গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকে সামাজিকভাবে অনেক হেয়প্রতিপন্ন হতে হয়েছে মনিরা আক্তারকে। থানা-পুলিশ ও আদালতে ছোটাছুটি করতে গিয়ে আর্থিক ক্ষতিও হয়েছে বলে জানিয়েছেন মনিরা। তিনি বলেন, গত ৩০ আগস্ট তাঁর স্বামীকে গ্রেপ্তার করা হয়। আর ৬ সেপ্টেম্বর তাঁর কন্যাসন্তান হয়েছে। ১৩ অক্টোবর সন্তান প্রসবের নির্ধারিত দিন ছিল। কিন্তু স্বামী গ্রেপ্তার হওয়ার পর তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে আগেই সিজার করতে হয়। এ ধরনের পরিস্থিতিতে তিনি স্বামীকে কাছে পাননি।
শনিবার রাতে রহিমাকে উদ্ধারের খবর পেয়ে রাতে দৌলতপুর থানায় আসেন অপহরণ মামলায় গ্রেপ্তার রফিকুল আলম ও নুরুল আলমের বাবা আনসার উদ্দিন আহমেদ। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, তাঁদের সঙ্গে জমির সীমানা নিয়ে মতবিরোধ থাকায় তাঁর দুই ছেলের নামে মামলা দিয়ে হয়রানি ও সম্মানহানি করা হয়েছে। রহিমা ও তাঁর সন্তানেরা অপহরণের নাটক সাজিয়েছেন, তাই তিনি তাঁদের ব্যাপারে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।
একই মামলায় গ্রেপ্তার মহিউদ্দিন ও গোলাম কিবরিয়ার বড় ভাই নজরুল ইসলাম বলেন, পুরো বিষয়টি একটি সাজানো নাটক। রহিমা বেগমের সন্তানেরা পুলিশ ও সাংবাদিকদের মিথ্যা কথা বলে প্রায় এক মাস বিভ্রান্ত করেছেন।
গত ২৭ আগস্ট রাত ১০টার দিকে খুলনার দৌলতপুরের মহেশ্বরপাশা উত্তর বণিকপাড়া এলাকার বাসার উঠানের নলকূপে পানি আনতে যান রহিমা বেগম। এর পর থেকেই নিখোঁজ ছিলেন তিনি। পরদিন তাঁর মেয়ে আদুরী আক্তার বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে থানায় অপহরণ মামলা করেন। এ মামলায় ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মায়ের সন্ধান চেয়ে ঢাকায় মানববন্ধনের পাশাপাশি বিভিন্ন স্থানে দৌড়ঝাঁপ করে আসছিলেন তাঁর সন্তানেরা। গত শনিবার রাতে ফরিদপুরের বোয়ালমারী থেকে রহিমাকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ।
যা বললো পিবিআই : খুলনার দৌলতপুর থেকে রহিমা বেগমের নিখোঁজ হওয়ার ঘটনাটি অপহরণ না-ও হতে পারে বলে মনে করছে পিবিআই। রোববার দুপুরে নগরীর হাজী মহসিন রোডের পিবিআই খুলনা কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে পিবিআই খুলনার পুলিশ সুপার সৈয়দ মুশফিকুর রহমান বলেন, রহিমার কাছে সাদা রঙের একটি শপিং ব্যাগ উদ্ধার করা হয়েছে। যার মধ্যে ওড়না, হিজাব, আয়না, শাড়ি, আইড্রপ, ওষুধ, সালোয়ার কামিজ এবং ছোট একটি হাত ব্যাগ ছিল। “সাধারণত একজনকে অপহরণ করে নিয়ে গেলে এই জিনিসগুলো থাকার কথা না।” এটা অপহরণ বলে মনে হচ্ছে কি-না সাংবাদিকরা জানতে চাইলে পুলিশ সুপার বলেন, “আমরা এখনও মামলা তদন্ত করছি। যেহেতু আমরা তদন্তের প্রাথমিক পর্যায়ে আছি, তদন্ত শেষে আমরা বিস্তারিত জানাবো। আপাত দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে, অপহরণ না-ও হতে পারে “ তিনি বলেন, “আগেও আমরা ওখানে জমি সংক্রান্ত একটি মামলা তদন্ত করেছি। সেখানে প্রতিবেশীদের সঙ্গে বিরোধ আছে। সেই বিরোধকে ঘিরে এই ঘটনা ঘটছে কি-না তা আমরা এই মুহূর্তে বলতে পারছি না।

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

রহিমা বেগম জানালেন, তাকে অপহরণ করা হয়েছিল

আপডেট সময় : ০২:৪০:০৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২২

খুলনা প্রতিনিধি ; নিখোঁজের ২৯ দিন পর ফরিদপুর থেকে উদ্ধার হওয়া রহিমা বেগম পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) কাছে মুখ খুলেছেন। রহিমা বেগমের দাবি, গত ২৭ আগস্ট রাতে পানি আনতে গিয়ে তিনি অপহৃত হন। চার ব্যক্তি তাঁকে জাপটে ধরে নাকে রুমাল চেপে ধরেন। এতে তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। এরপর তাঁর কিছু মনে নেই।
গতকাল রোববার বিকেলে পিবিআই খুলনার পুলিশ সুপার সৈয়দ মুশফিকুর রহমান সংবাদমাধ্যমকে এ তথ্য জানান। পুলিশ সুপার বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে রহিমা বেগম অপহৃত হয়েছেন বলেই দাবি করেছেন। তিনি বলেছেন, তাঁকে চারজন মিলে অপহরণ করে নিয়ে যান। কিন্তু তাঁরা কারা বা কোথায় নিয়ে যান, সে ব্যাপারে তিনি কিছু বলতে পারেননি। একপর্যায়ে তাঁরা সাদা (খালি) স্ট্যাম্পে কিছু স্বাক্ষর নেন। স্বাক্ষর নেওয়ার পর তাঁকে একটা নির্জন জায়গায় ছেড়ে দেন। কিন্তু জায়গাটা কোথায় সেটা তিনি বুঝতে পারেননি। এরপর তিনি মনি নামের একটি মেয়ের বাড়িতে ছিলেন। তবে সেই মেয়ের বাড়ি কোথায় তিনি বলতে পারছেন না। এরপর ওই মেয়ে তাঁকে এক হাজার টাকা সংগ্রহ করে দেন। পরে তিনি মকসুদপুরে চলে আসেন।
সৈয়দ মুশফিকুর রহমান বলেন, যখন যেখানে ছিলেন, তাঁরা তাঁকে কাপড়চোপড় দিয়েছেন বলে জানান রহিমা। সেগুলো তিনি সংগ্রহে রেখেছিলেন। মুকসুদপুর থেকে তিনি বোয়ালমারীতে আসেন। এরপর ১৭ সেপ্টেম্বর তাঁর বাড়ির ২৮ বছর আগের ভাড়াটিয়া আবদুস কুদ্দুস মোল্লার বাড়িতে যান। কুদ্দুস একসময় খুলনার দৌলতপুরের সোনালী জুট মিলে চাকরি করতেন। তিনি ভেবেছিলেন, সেখানে গেলে আশ্রয় পাওয়া যেতে পারে। খুলনায় না গিয়ে ফরিদপুরে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে রহিমা বেগম পুলিশকে জানান, খুলনায় আসতে ভয় পেয়েছিলেন। ভেবেছিলেন, কুদ্দুসের বাড়ি যাওয়ার পর মেয়েদের খবর দেবেন। এরপর মেয়েদের সঙ্গে চলে যাবেন।
সৈয়দ মুশফিকুর রহমান জানান, সৈয়দপুরে অবস্থানকালে ঘটনাটি আলোচিত হলে ওই এলাকার একটি ছেলে বিষয়টি স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধির নজরে আনেন। ওই জনপ্রতিনিধি বিষয়টি খুলনার দৌলতপুরের এক কাউন্সিলরকে জানান। তিনি ঘটনাটি দৌলতপুর থানা-পুলিশকে জানান। এরপর দৌলতপুর থানার পুলিশ গত শনিবার ওই এলাকায় গিয়ে তাঁকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে।
পুলিশ সুপার জানান, রহিমা বেগমকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। আদালতে তিনি জবানবন্দি দেবেন। এরপর আদালতের সিদ্ধান্ত মতো কার্যক্রম চলবে। ২৭ আগস্ট রাত ১০টার দিকে খুলনার দৌলতপুরের মহেশ্বরপাশা উত্তর বণিকপাড়া এলাকার বাসার উঠানের নলকূপে পানি আনতে যান রহিমা বেগম। এর পর থেকেই নিখোঁজ ছিলেন তিনি। পরদিন তাঁর মেয়ে আদুরী আক্তার বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে থানায় অপহরণ মামলা করেন। এ মামলায় ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মায়ের সন্ধান চেয়ে ঢাকায় মানববন্ধনের পাশাপাশি বিভিন্ন স্থানে দৌড়ঝাঁপ করে আসছিলেন তাঁর সন্তানেরা।
মরিয়মদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা চান অপহরণ মামলায় গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের স্বজনেরা : অন্যদিকে খুলনার দৌলতপুর থেকে রহিমা বেগম নিখোঁজের পরদিন মেয়ে আদুরী আক্তার থানায় একটি অপহরণ মামলা করেছিলেন। সেই মামলায় ছয়জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যদের দাবি, তাঁদের ঘায়েল করার জন্য ওই মামলা করা হয়েছিল। জমিসংক্রান্ত বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে পরিকল্পিতভাবে আত্মগোপন করেছিলেন রহিমা। বিষয়টি জানতেন তাঁর মেয়ে মরিয়ম মান্নানসহ পরিবারের সদস্যরা। খুঁজে পাওয়া রহিমা বেগম ও তাঁর মেয়েদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন মামলায় গ্রেপ্তার হেলাল শরীফের পরিবারের সদস্যরা। একই সঙ্গে ক্ষতিপূরণও চেয়েছেন তাঁরা।
রোববার হেলাল শরীফের স্ত্রী মনিরা আক্তার সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘মরিয়ম মান্নানের সৎভাইয়ের কাছ থেকে ২০১৯ সালে জমি কিনেছিলাম। কিন্তু সেই জমির দখল তারা দেয়নি। এ জন্য সেখানকার স্থানীয় কাউন্সিলরের কাছে আমরা আবেদন করেছিলাম। তবে ওই পক্ষ এগোয়নি। বরং আমাদের নামে মানহানি মামলাও করেছিল। সেই মামলায় আমার স্বামীসহ পাঁচজন আসামি ছিলেন। সবাই আগাম জামিন নেন। পরে সেই পাঁচজনের নামে অপহরণ মামলা করা হয়েছে। আগের মামলায় জামিন হওয়ার পরই নতুন করে ফাঁসানোর জন্য তারা অপহরণের ঘটনা সাজায়।’
রহিমা নিজে আত্মগোপন করেছিলেন, এটা এখন পরিষ্কার বলে মনে করেন মনিরা আক্তার। তিনি বলেন, ‘শুধু ফাঁসানোই টার্গেট ছিল। মরিয়ম মান্নান সবকিছুই করল। অকারণেই আমাদের দিকে আঙুল তোলা হলো। আমরা নিশ্চিত ছিলাম, গ্রেপ্তার কেউ এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন। আমার স্বামী বের হলে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেব। আমরা আশা করছি, দ্রুত আমার স্বামী ছাড়া পাবে।’
অপহরণ মামলায় স্বামী গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকে সামাজিকভাবে অনেক হেয়প্রতিপন্ন হতে হয়েছে মনিরা আক্তারকে। থানা-পুলিশ ও আদালতে ছোটাছুটি করতে গিয়ে আর্থিক ক্ষতিও হয়েছে বলে জানিয়েছেন মনিরা। তিনি বলেন, গত ৩০ আগস্ট তাঁর স্বামীকে গ্রেপ্তার করা হয়। আর ৬ সেপ্টেম্বর তাঁর কন্যাসন্তান হয়েছে। ১৩ অক্টোবর সন্তান প্রসবের নির্ধারিত দিন ছিল। কিন্তু স্বামী গ্রেপ্তার হওয়ার পর তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে আগেই সিজার করতে হয়। এ ধরনের পরিস্থিতিতে তিনি স্বামীকে কাছে পাননি।
শনিবার রাতে রহিমাকে উদ্ধারের খবর পেয়ে রাতে দৌলতপুর থানায় আসেন অপহরণ মামলায় গ্রেপ্তার রফিকুল আলম ও নুরুল আলমের বাবা আনসার উদ্দিন আহমেদ। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, তাঁদের সঙ্গে জমির সীমানা নিয়ে মতবিরোধ থাকায় তাঁর দুই ছেলের নামে মামলা দিয়ে হয়রানি ও সম্মানহানি করা হয়েছে। রহিমা ও তাঁর সন্তানেরা অপহরণের নাটক সাজিয়েছেন, তাই তিনি তাঁদের ব্যাপারে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।
একই মামলায় গ্রেপ্তার মহিউদ্দিন ও গোলাম কিবরিয়ার বড় ভাই নজরুল ইসলাম বলেন, পুরো বিষয়টি একটি সাজানো নাটক। রহিমা বেগমের সন্তানেরা পুলিশ ও সাংবাদিকদের মিথ্যা কথা বলে প্রায় এক মাস বিভ্রান্ত করেছেন।
গত ২৭ আগস্ট রাত ১০টার দিকে খুলনার দৌলতপুরের মহেশ্বরপাশা উত্তর বণিকপাড়া এলাকার বাসার উঠানের নলকূপে পানি আনতে যান রহিমা বেগম। এর পর থেকেই নিখোঁজ ছিলেন তিনি। পরদিন তাঁর মেয়ে আদুরী আক্তার বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে থানায় অপহরণ মামলা করেন। এ মামলায় ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মায়ের সন্ধান চেয়ে ঢাকায় মানববন্ধনের পাশাপাশি বিভিন্ন স্থানে দৌড়ঝাঁপ করে আসছিলেন তাঁর সন্তানেরা। গত শনিবার রাতে ফরিদপুরের বোয়ালমারী থেকে রহিমাকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ।
যা বললো পিবিআই : খুলনার দৌলতপুর থেকে রহিমা বেগমের নিখোঁজ হওয়ার ঘটনাটি অপহরণ না-ও হতে পারে বলে মনে করছে পিবিআই। রোববার দুপুরে নগরীর হাজী মহসিন রোডের পিবিআই খুলনা কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে পিবিআই খুলনার পুলিশ সুপার সৈয়দ মুশফিকুর রহমান বলেন, রহিমার কাছে সাদা রঙের একটি শপিং ব্যাগ উদ্ধার করা হয়েছে। যার মধ্যে ওড়না, হিজাব, আয়না, শাড়ি, আইড্রপ, ওষুধ, সালোয়ার কামিজ এবং ছোট একটি হাত ব্যাগ ছিল। “সাধারণত একজনকে অপহরণ করে নিয়ে গেলে এই জিনিসগুলো থাকার কথা না।” এটা অপহরণ বলে মনে হচ্ছে কি-না সাংবাদিকরা জানতে চাইলে পুলিশ সুপার বলেন, “আমরা এখনও মামলা তদন্ত করছি। যেহেতু আমরা তদন্তের প্রাথমিক পর্যায়ে আছি, তদন্ত শেষে আমরা বিস্তারিত জানাবো। আপাত দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে, অপহরণ না-ও হতে পারে “ তিনি বলেন, “আগেও আমরা ওখানে জমি সংক্রান্ত একটি মামলা তদন্ত করেছি। সেখানে প্রতিবেশীদের সঙ্গে বিরোধ আছে। সেই বিরোধকে ঘিরে এই ঘটনা ঘটছে কি-না তা আমরা এই মুহূর্তে বলতে পারছি না।