নিজস্ব প্রতিবেদক : বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় তিন বছর আগে যেখানে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল, সেই শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের পাশে পথচারীদের জন্য খুলল আন্ডারপাস।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ঢাকার বিমানবন্দর সড়কের কুর্মিটোলায় আন্ডারপাসটির উদ্বোধন করেন।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে নির্মিত আন্ডারপাসটি রাস্তা চালু রেখে ‘অত্যন্ত কষ্ট’ করে তৈরি করতে হয়েছে জানিয়ে সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানান শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এই আন্ডারপাসটা, এই বক্সপুশিং আন্ডারপাস নির্মাণ এটা আমাদের কিন্তু প্রথম অভিজ্ঞতা। আমাদের সেনাবাহিনী অত্যন্ত যোগ্যতার সাথে এটা সম্পন্ন করে আমি মনে করি নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
“যদিও বক্সপুশিং পদ্ধতি অত্যন্ত ব্যয়বহুল কিন্তু আমি মনে করি যে সম্পূর্ণ সড়কে চলাচল ব্যবস্থা অব্যাহত রেখে এই বক্সপুশিং এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে একটা নতুন দিগন্ত উন্মোচন হল।”
মানুষের যাতে কোনো অসুবিধা না হয় সে কথা মাথা রেখে ভবিষ্যতেও দেশের অবকাঠামোগত নির্মাণকাজগুলো সেরে ফেলা হবে বলে আশা প্রকাশ করেন শেখ হাসিনা।
২০১৮ সালের ২৯ জুলাই শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের সামনের সড়কে বাসচাপায় শিক্ষার্থী দিয়া খানম মিম ও আবদুল করিম রাজীব মারা গেলে নিরাপদ সড়কের দাবিতে দেশজুড়ে আন্দোলন হয়।
পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেখানে আন্ডারপাস নির্মাণের নির্দেশ দেন। সে বছর ১২ অগাস্ট কলেজ প্রাঙ্গনে এক অনুষ্ঠানে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে সবাইকে ধৈর্য্য ধরার আহ্বান জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। আন্ডারপাসটি চালু হওয়ায় বিমানবন্দর সড়কসংলগ্ন বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীসহ সর্ব সাধারণের জন্য সড়ক পারাপার আরও নিরাপদ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে এদিন সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের প্রকল্পের আওতায় নির্মিত দুটি সড়ক এবং একটি সেতুর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এগুলো হচ্ছে সিলেট শহর বাইপাস-গ্যারিসন লিংক ৪ মহাসড়ক; বালুখালী (কক্সবাজার)-ঘুনধুম (বান্দরবান) সীমান্ত সংযোগসড়ক; রাঙ্গামাটি জেলার নানিয়ারচর চেঙ্গী নদীর উপর ৫০০ মিটার দীর্ঘ সেতু। এসব নির্মাণের ক্ষেত্রে সেনাবাহিনীর ২৫ ইসিবি, ২৪ ইঞ্জিনিয়ার কনষ্ট্রাকশন ব্রিগেড, ২০ ইসিবি, ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনষ্ট্রাকশন ব্রিগেড, ১৬ ইসিবিসহ সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়, সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তরকে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী। রাঙ্গামাটিতে চেঙ্গী নদীর ওপর নির্মিত সেতুর উদ্বোধনে তিনি বলেন, “নানিয়ারচরে পার্বত্য চট্টগ্রামের সবচেয়ে দীর্ঘতম এই সেতু নির্মাণের ফলে শান্তি চুক্তির বাস্তবায়ন আরও একধাপ এগোলো। “এতে করে স্থানীয়দের জীবনযাত্রার উন্নয়ন ও উৎপাদিত পণ্য বাজারজাতকরণে ভূমিকা রাখবে। আমরা ক্ষমতায় আসার পর ১৯৯৭ সালে শান্তি চুক্তি করেছিলাম। এখনো শান্তি চুক্তির বাস্তবায়ন চলমান রয়েছে।”
চেঙ্গী নদীর ওপর নির্মিত এই সেতুটির দৈর্ঘ্য ৫০০ মিটার ও প্রস্থ ১০ দশমিক ২ মিটার। সংযোগ সড়কসহ সেতুটির নির্মাণে খরচ হয়েছে ২২৭ কোটি টাকা।
বান্দরবানের সীমান্ত সড়ক প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “কক্সবাজারের বালুখালী থেকে বান্দরবানের ঘুনঘুম পর্যন্ত সীমান্ত এলাকার নিরাপত্তার জন্য সীমান্ত সড়কটি নির্মাণ করা হয়েছে। “এই সড়কটি নির্মাণের ফলে স্থানীয়দের যাতায়াত ব্যবস্থা এবং সীমান্ত সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। এছাড়া পার্বত্য এলাকায় সীমান্ত সড়ক নির্মাণে সেনাবাহিনী কাজ করছে।”
কক্সবাজারের বালুখালী থেকে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম পর্যন্ত ১ দশমিক ৭ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত সংযোগ সড়কটি নির্মাণে খরচ হয়েছে ৭৮ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। ভিডিও কনফারেন্সে গণভবন থেকে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নজরুল ইসলাম, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ উপস্থিত ছিলেন। নানিয়ারচর প্রান্তে উপস্থিত ছিলেন রাঙ্গামাটির সংসদ সদস্য দীপংকর তালুকদার, রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. প্রদানেন্দু বিকাশ চাকমা, রাঙ্গামাটি জেলাপ্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, জেলা সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শাহে আরেফিন, নানিয়ারচরের ইউএনও শিউলি রহমান তিন্নী। এছাড়া ঢাকার শহীদ রমিজ উদ্দীন পথচারী আন্ডারপাস,সিলেট সেনানিবাস থেকে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
রমিজ উদ্দিন কলেজের সেই সড়কের আন্ডারপাস খুলল
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ