ঢাকা ০৯:০৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ১২ মে ২০২৫

রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ চলাকালে দুই ছাত্রের আত্মহত্যার চেষ্টা

  • আপডেট সময় : ০১:৪১:৩৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৪ অক্টোবর ২০২১
  • ৮১ বার পড়া হয়েছে

সিবাজগঞ্জ প্রতিনিধি : আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সূত্রে জানা গেছে, দুই দিন ধরে আমরণ অনশনে আছেন বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী। গতকাল সকালে পৌর শহরের বিসিক মোড় এলাকায় অস্থায়ী ক্যাম্পাসের একাডেমিক ভবন এবং কান্দাপাড়া এলাকায় প্রশাসনিক ভবনে তালা দিয়ে বাইরে অবস্থান নেন তাঁরা। তাঁরা শিক্ষক ফারহানা ইয়াসমিনের স্থায়ী বহিষ্কার দাবিতে বিক্ষোভ করছেন। গত শুক্রবার গভীর রাত থেকেই আমরণ অনশন কর্মসূচি শুরু হয়। দুপুরের দিকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মধ্যে শামীম হোসেন বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। তাঁকে শাহজাদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। অপর দিকে আবিদ হাসান নামের আরেক ছাত্র ব্লেড দিয়ে হাত কেটে আত্মহত্যার চেষ্টা করলে অন্যরা তাঁকে নিবৃত্ত করেন। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মুখপাত্র শামীম হোসেন বলেন, ‘আমাদের ন্যায়বিচার ভূলুণ্ঠিত করতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কালক্ষেপণ করছে। সিদ্ধান্ত ছাড়া সিন্ডিকেট সভা শেষ করা হয়েছে। আবার কবে সভা বসবে, তা অনিশ্চিত। বাধ্য হয়ে আমরা কঠোর আন্দোলনে নেমেছি। আজকের মধ্যে আমাদের দাবি মানা না হলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে কেউ কেউ আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।’ রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের রুটিন দায়িত্বে থাকা কোষাধ্যক্ষ আবদুল লতিফ বলেন, ‘রেজিস্ট্রার সাহেব ঢাকায় ছিলেন। চলে আসছেন। তিনি এসে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সার্বিক বিষয় নিয়ে কথা বলবেন। আমরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করছি।’
এদিকে এসব ঘটনার পর শাহজাদপুর বিসিক বাসস্ট্যান্ড এলাকায় নগরবাড়ি-হাটিকুমরুল মহাসড়ক দুপুর ১২টা থেকে প্রায় ১ ঘণ্টা অবরোধ করে রাখেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। বর্তমানে মহাসড়কে সব ধরনের যান চলাচল স্বাভাবিক আছে। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মুখপাত্র নাজমুল হাসান বলেন, ক্যাম্পাসে অবস্থান করে বিক্ষোভ চলছিল। এ অবস্থায় দুপুরের দিকে হঠাৎ শামিম হোসেন বিষপান করেন। তাঁকে দ্রুত উদ্ধার করে শাহজাদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। আবেদ হাসান ব্লেড দিয়ে হাত কেটে আত্মহত্যার চেষ্টা করলে তাঁকে থামানো হয়। শাহজাদপুর থানার ওসি শাহীদ মাহমুদ খান মহাসড়ক অবরোধের বিষয়টি নিশ্চিত করে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা শিক্ষার্থীদের বোঝাতে চেষ্টা করেছি যে তাঁদের আন্দোলনের সঙ্গে সবাই একমত। তবে আন্দোলনটি হতে হবে শান্তিপূর্ণ। সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ সৃষ্টি করে মহাসড়কে আন্দোলন না করতে তাঁদের অনুরোধ করা হয়। তাঁরা সেটি মেনে তাঁদের ক্যাম্পাসে চলে যান।’ গত ২৬ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগের ১৪ শিক্ষার্থীর মাথার চুল ওই বিভাগের চেয়ারম্যান ও সহকারী প্রক্টর ফারহানা ইয়াসমিন কেটে দেন বলে অভিযোগ। সেই অপমান সহ্য করতে না পেরে পরের রাতে নাজমুল হাসান নামের এক ছাত্র অতিমাত্রায় ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। এ ঘটনার প্রতিবাদে ২৮ সেপ্টেম্বর সকাল থেকে শিক্ষার্থীরা সব পরীক্ষা বর্জন করে একাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ওই রাতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান, সহকারী প্রক্টর ও সিন্ডিকেট সদস্যের পদ থেকে পদত্যাগ করেন ফারহানা ইয়াসমিন। একই সঙ্গে ঘটনা তদন্তে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে শিক্ষক ফারহানা ইয়াসমিনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও স্থায়ী বহিষ্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলতে থাকে। একপর্যায়ে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির আশ্বাসে আন্দোলন থেকে সরে আসেন শিক্ষার্থীরা। ২১ অক্টোবর তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় কমিটি। ২২ অক্টোবর সিন্ডিকেট বৈঠকে ওই প্রতিবেদনের আলোকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সিদ্ধান্ত ছাড়াই সিন্ডিকেট সভা মুলতবি হওয়ায় রাতেই আবার আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ চলাকালে দুই ছাত্রের আত্মহত্যার চেষ্টা

আপডেট সময় : ০১:৪১:৩৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৪ অক্টোবর ২০২১

সিবাজগঞ্জ প্রতিনিধি : আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সূত্রে জানা গেছে, দুই দিন ধরে আমরণ অনশনে আছেন বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী। গতকাল সকালে পৌর শহরের বিসিক মোড় এলাকায় অস্থায়ী ক্যাম্পাসের একাডেমিক ভবন এবং কান্দাপাড়া এলাকায় প্রশাসনিক ভবনে তালা দিয়ে বাইরে অবস্থান নেন তাঁরা। তাঁরা শিক্ষক ফারহানা ইয়াসমিনের স্থায়ী বহিষ্কার দাবিতে বিক্ষোভ করছেন। গত শুক্রবার গভীর রাত থেকেই আমরণ অনশন কর্মসূচি শুরু হয়। দুপুরের দিকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মধ্যে শামীম হোসেন বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। তাঁকে শাহজাদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। অপর দিকে আবিদ হাসান নামের আরেক ছাত্র ব্লেড দিয়ে হাত কেটে আত্মহত্যার চেষ্টা করলে অন্যরা তাঁকে নিবৃত্ত করেন। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মুখপাত্র শামীম হোসেন বলেন, ‘আমাদের ন্যায়বিচার ভূলুণ্ঠিত করতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কালক্ষেপণ করছে। সিদ্ধান্ত ছাড়া সিন্ডিকেট সভা শেষ করা হয়েছে। আবার কবে সভা বসবে, তা অনিশ্চিত। বাধ্য হয়ে আমরা কঠোর আন্দোলনে নেমেছি। আজকের মধ্যে আমাদের দাবি মানা না হলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে কেউ কেউ আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।’ রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের রুটিন দায়িত্বে থাকা কোষাধ্যক্ষ আবদুল লতিফ বলেন, ‘রেজিস্ট্রার সাহেব ঢাকায় ছিলেন। চলে আসছেন। তিনি এসে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সার্বিক বিষয় নিয়ে কথা বলবেন। আমরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করছি।’
এদিকে এসব ঘটনার পর শাহজাদপুর বিসিক বাসস্ট্যান্ড এলাকায় নগরবাড়ি-হাটিকুমরুল মহাসড়ক দুপুর ১২টা থেকে প্রায় ১ ঘণ্টা অবরোধ করে রাখেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। বর্তমানে মহাসড়কে সব ধরনের যান চলাচল স্বাভাবিক আছে। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মুখপাত্র নাজমুল হাসান বলেন, ক্যাম্পাসে অবস্থান করে বিক্ষোভ চলছিল। এ অবস্থায় দুপুরের দিকে হঠাৎ শামিম হোসেন বিষপান করেন। তাঁকে দ্রুত উদ্ধার করে শাহজাদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। আবেদ হাসান ব্লেড দিয়ে হাত কেটে আত্মহত্যার চেষ্টা করলে তাঁকে থামানো হয়। শাহজাদপুর থানার ওসি শাহীদ মাহমুদ খান মহাসড়ক অবরোধের বিষয়টি নিশ্চিত করে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা শিক্ষার্থীদের বোঝাতে চেষ্টা করেছি যে তাঁদের আন্দোলনের সঙ্গে সবাই একমত। তবে আন্দোলনটি হতে হবে শান্তিপূর্ণ। সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ সৃষ্টি করে মহাসড়কে আন্দোলন না করতে তাঁদের অনুরোধ করা হয়। তাঁরা সেটি মেনে তাঁদের ক্যাম্পাসে চলে যান।’ গত ২৬ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগের ১৪ শিক্ষার্থীর মাথার চুল ওই বিভাগের চেয়ারম্যান ও সহকারী প্রক্টর ফারহানা ইয়াসমিন কেটে দেন বলে অভিযোগ। সেই অপমান সহ্য করতে না পেরে পরের রাতে নাজমুল হাসান নামের এক ছাত্র অতিমাত্রায় ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। এ ঘটনার প্রতিবাদে ২৮ সেপ্টেম্বর সকাল থেকে শিক্ষার্থীরা সব পরীক্ষা বর্জন করে একাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ওই রাতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান, সহকারী প্রক্টর ও সিন্ডিকেট সদস্যের পদ থেকে পদত্যাগ করেন ফারহানা ইয়াসমিন। একই সঙ্গে ঘটনা তদন্তে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে শিক্ষক ফারহানা ইয়াসমিনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও স্থায়ী বহিষ্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলতে থাকে। একপর্যায়ে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির আশ্বাসে আন্দোলন থেকে সরে আসেন শিক্ষার্থীরা। ২১ অক্টোবর তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় কমিটি। ২২ অক্টোবর সিন্ডিকেট বৈঠকে ওই প্রতিবেদনের আলোকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সিদ্ধান্ত ছাড়াই সিন্ডিকেট সভা মুলতবি হওয়ায় রাতেই আবার আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা।