রংপুর প্রতিনিধি : দেশে যে কয়েকটি জেলায় সর্বাধিক আলু উৎপাদন হয় তার মধ্যে অন্যতম রংপুর। কয়েক বছর আগেও এখানে স্থানীয় চাহিদা পূরণের জন্য আলু চাষ করতেন কৃষকরা। তবে চাহিদার তুলনায় উৎপাদন বেশি হওয়ায় অতিরিক্ত আলু নিয়ে বিপাকে পড়তেন তারা। সেজন্য লোকসানের মুখে লাভের আশায় দীর্ঘদিন থেকে বিদেশে রপ্তানির দাবি জানিয়ে আসছিলেন কৃষকরা। তাদের সেই স্বপ্ন বাস্তবে ধরা দিয়েছে। স্থানীয় চাহিদা পূরণের পাশাপাশি ইতোমধ্যে মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, সৌদি আরব ও নেপালসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোয় আলু পাঠানোর কার্যক্রম শুরু হয়েছে। কৃষি বিভাগের পরামর্শে রপ্তানি উপযোগী আলু চাষে চাষিদেরও আগ্রহ আরও বেড়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এবার রংপুর জেলায় ৫৩ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যা গতবারের তুলনায় প্রায় ১ হাজার হেক্টর বেশি। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৩ লাখ ৯২ হাজার ৩০০ মেট্রিক টন। যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ১২ হাজার মেট্রিক টন বেশি। এর মধ্যে প্রায় ১০ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে আগাম আলু রোপণ করা হয়েছে। বিদেশে আলু রপ্তানির জন্য উন্নত জাতের বীজ সরবরাহ এবং কৃষকদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে কৃষি বিভাগ। এরই মধ্যে ৪০০ কৃষককে রপ্তানি উপযোগী আলু চাষে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। নতুন করে আরও ৮০০ জন কৃষককে প্রশিক্ষণ দেবে কৃষি বিভাগ। সরেজমিনে তিস্তানদী বেষ্টিত পীরগাছা ও কাউনিয়া উপজেলার কয়েকটি চর ঘুরে দেখা গেছে, কৃষকরা আলু গাছ পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পাড় করছেন। এরই মধ্যে আগাম আলু উত্তোলন করছেন অনেকে। বাজারে ভালো দাম পাওয়ায় অপরিপক্ব আলুও তোলা হচ্ছে। তবে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ভালো ফলনের আশা করছেন কৃষকরা। তবে সার, ডিজেল ও শ্রমিকের মজুরি বাড়াতে উৎপাদন খরচ তোলা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন অনেকে। পীরগাছা উপজেলার গাবুড়ার চরের চাষি আব্দুল মজিদ বলেন, গত বছরের থেকে এবার সার ও ডিজেলের দাম বেশি। শ্রমিকের মজুরিও বাড়ছে। ফলে এতো কষ্ট করে আবাদ করে উৎপাদন খরচ তুলতে পারবো কিনা সেটা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, বিদেশে চাহিদার কথা মাথায় রেখে বিভিন্ন জাতের আলু আবাদে সহায়তা দিচ্ছে কৃষি বিভাগ। এজন্য উন্নতমানের আলু বীজও সরবরাহ করা হচ্ছে। গত বছর মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, সৌদি আরব, নেপাল ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোয় প্রায় ১৯ হাজার মেট্রিক টন আলু রপ্তানি করা হয়েছে। রংপুর বিভাগ থেকে বিদেশে আলু রপ্তানিতে শীর্ষে রয়েছে পীরগাছা উপজেলা। গত বছর এ উপজেলা থেকে সাড়ে ৪ হাজার মেট্রিক টন আলু বিদেশে রপ্তানি করা হয়েছিল। এর মধ্যে ডায়মন্ড, গ্রানুলা, কুমারিকা, কুম্ভিকাসহ বিভিন্ন জাতের আলু রয়েছে। চলতি মৌসুমে প্রায় ৩০ হাজার মেট্রিক টন আলু রপ্তানির প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।
গত বছর জমি থেকে সরাসরি আলু তুলে বিদেশে রপ্তানির সুযোগ পেয়েছেন বেশ কয়েকজন কৃষক। তাদের একজন পীরগাছা উপজেলার দেউতি এলাকার কৃষক আজিজুল হক। তিনি বলেন, বিদেশে রপ্তানি উপযোগী উন্নতমানের আলু চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে। এই আলুর বাজারে প্রচুর চাহিদা রয়েছে। তাই লাভের আশায় উন্নত জাতের আলু চাষেই এখন ঝুঁকছেন কৃষকরা। পীরগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান বলেন, বিদেশে চাহিদা বাড়ায় উন্নত জাতের আলুর উৎপাদন বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে রপ্তানি উপযোগী আলু চাষে আগ্রহ বেড়েছে কৃষকদের। এজন্য সব ধরনের সহযোগিতা করছে কৃষি বিভাগ। রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (উদ্যান) শামিমুর রহমান বলেন, সিঙ্গাপুর, নেপাল ও মালয়েশিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যে আলুর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। সেই চাহিদার কথা বিবেচনা করে ডায়মন্ড, কুমারিকা, গ্রানুলা, কুম্বিকা এলুয়েট, এস্টারিকস ও সানসাইনসহ বিভিন্ন জাতের সাদা আলুর উৎপাদন বাড়ানো উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ জন্য কৃষকদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও উন্নত জাতের আলুর বীজ সরবরাহ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ৪০০ জন কৃষককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। আরও ৮০০ জনের প্রশিক্ষণ দেবে কৃষি বিভাগ।
রপ্তানি উপযোগী আলু চাষ হচ্ছে রংপুরে
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ




















