ঢাকা ০৮:৫৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১০ মে ২০২৫

রণজিৎ অধিকারীর পাঁচটি কবিতা

  • আপডেট সময় : ০৯:০৭:৫৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২ জুলাই ২০২২
  • ১১৫ বার পড়া হয়েছে


রণজিৎ অধিকারী :

প্রণালী
দুটো মহাদেশকে জুড়ে দিয়েছে কিংবা
দুদিকে ঠেলে একটু দূরে সরিয়ে রেখেছে একটা প্রণালী
একবার এদিকে দাঁড়িয়ে ওদিকটায় দেখো,
তারপর ওদিকে দাঁড়িয়ে এইদিকে ৃ
সময়গুলো কীভাবে অত্যাচার করে গেছে
কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও সেই চিহ্ন খুঁজে পাওয়া যাবে না,
যা দেখে টের পাবে যে সময় আসলে
কোন দিক থেকে এসে কোন দিকে গেছে!
অথচ তোমার পায়ের তলায় সবসময় একটা মহাদেশ,
প্রণালীর ওদিকে শুয়ে আছে আরেকটা,
ভাঙাচোরা ইতিহাস ধর্ম আর বেঁচে থাকা নিয়ে লড়াই..

সময়ের সামনের দিক
আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, সেই দিনটা কোথায় গেল,
ওই যে কামনার ভেতর দিয়ে যাওয়া?
সে আশ্চর্য হয়ে তাকায়।
তাকে বললাম, পায়ে পায়ে জড়িয়ে থাকা সেই দুপুর,
এখন কোথায়?
সে নিস্পৃহভাবে বলে, আছে কোথাও এই আশেপাশে।
আজ ঝলমলে একটা রবিবার এবং আমরা এখন
রবিবারের ভেতরে নিজেদের ছাপ নিয়ে রাখছি;
ছাঁচে মূর্তি তৈরি হওয়ার ঠিক উল্টো, আমাদের ছাপ দিয়েই ছাঁচ বানাচ্ছি।
এই দিন যদি সময় হয় তাহলে আমরা তার ভেতর
জমাট হয়ে থাকা একেকটা আশা।
সময়ের পেছন দিকটা আছে কোথাও, কিন্তু হয়তো
আমাদের কাছে বুধবার মানে হল, যে আসছে সোম মঙ্গল পেরিয়ে; এই বানিয়ে রাখা আমাদের ছাপ দিয়েই
কেটে নেব বুধ বা শুক্রের কিছুটা -এই আশায়
এই যে তোমার বুকের ওপর বেঁচে থাকা,
হয়তো এই-ই ভালোবাসা।

কখনোই টেপা হয় না
একটা বোতাম টেপার ইচ্ছে,
আঙুলটাকে সময়ের মাঝখানে নিয়ে গিয়ে
কোনো এক দ্বিধায় চুপ করে থাকো,
তখনও আঙুল ছুঁয়ে সময় চলে যাচ্ছে,ৃ
তিরতিরে একটা অনুভূতি !
…একটা সীমাহীন স্কেল,
না-খোলা ঢাকনা,
আর পর্যাপ্ত মাপজোখ —
তোমার মাথার ভেতর রাখা আছে,
একদিন হঠাৎই তুমি জেনে ফেল এটা
এবং তারপর এই অস্থিরতা….
আঙুলটা নিয়ে যাও সময়ের মাঝখান বরাবর,
কিন্তু দ্বিধা —ভালোবাসা নাকি না-ভালোবাসা!
কী তোমাকে দ্বিধায় ফেলে দেয়?
বোতামটা কখনোই টেপা হয় না।
যথারীতি একটা সীমাহীন স্কেল, না-খোলা ঢাকনা,
আর কত কত মাপজোখ এখনো তোমাকে অস্থির করে তুলতে থাকে!

বাহক
পিঠে জীবনকে বয়ে নিয়ে যাচ্ছে যারা,
একটা অস্পষ্ট পাটাতনের মতো প্রেক্ষিত,
আমি একটা দুরূহ কোণ থেকে তাদের দেখতে পাচ্ছি,
তারা টেরও পায় না, তাদের অলক্ষে তাদের জীবনের আঙ্গিক টুকে নিচ্ছে কেউ, তারা
হয়তো এসবের কিছুই জানে না —
একটা অসীম স্কেলের মাঝখান থেকে শুরু করে
তারা শেষ করে মাত্র কয়েক বিন্দু দূরে।
আমি দূর থেকে শুধু ভাবি — জীবন কি খুব ভারী,
নাকি ভারী কিছু বয়ে নিয়ে যাওয়ার ভান করে ওরা!
মনে হয় পুরোটাই বানানো, ওই মগ্নতাটাও,
এখন এই যে কবিতাটা হয়ে উঠবে, সেটাও —পাতার একদিকে শব্দগুলোকে এমনভাবে চালনা করা, যেন তারা খুব অর্থ বহন করছে এইভাবে….

দেখা হচ্ছে তোমাকে
তুমি খুব সাবধানে পা ফেলে উঁচু নিচু পথটায় হাঁটছ,
পাথরগুলো তোমাকে একমনে লক্ষ করছে কিন্তু
চড়াই উৎরাই তোমাকে এমন আত্মমগ্ন করে তুলছে যে তুমি কিছুই দেখার অবকাশ পাচ্ছ না।
তখন আরো দূরের একটা মনখারাপ করা জানালা দিয়ে
আঙুল নির্দেশ করে দেখা হচ্ছে তোমাকে— “ওই,
ওই যে জায়গাটা, যেখানে মেয়েটি বাঁক নিচ্ছে” …
তুমি একা একা এই নির্জনতাকে অর্থ দিচ্ছ কিন্তু
এর বাইরের, এর থেকে দূরের, যেখান থেকেই
তোমাকে লক্ষ করা হোক, তুমি জানবে না,
তুমি কখনো জানবে না, কোন কোন জানালা থেকে
তোমাকে দেখা হয়েছে এতদিন!
একটা নিউট্রন ভরা নক্ষত্র থেকে ইঙ্গিত আসছে
এই বিশ্বের দিকে, আসছে, আসছে …
তুমি এইমাত্র একটা পাহাড়ি ঝোপ পেরোলে,
একটা লম্বা গাছ তোমার সঙ্গে কথা বলতে চাইল,
লক্ষই করলে না তুমি….

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

রণজিৎ অধিকারীর পাঁচটি কবিতা

আপডেট সময় : ০৯:০৭:৫৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২ জুলাই ২০২২


রণজিৎ অধিকারী :

প্রণালী
দুটো মহাদেশকে জুড়ে দিয়েছে কিংবা
দুদিকে ঠেলে একটু দূরে সরিয়ে রেখেছে একটা প্রণালী
একবার এদিকে দাঁড়িয়ে ওদিকটায় দেখো,
তারপর ওদিকে দাঁড়িয়ে এইদিকে ৃ
সময়গুলো কীভাবে অত্যাচার করে গেছে
কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও সেই চিহ্ন খুঁজে পাওয়া যাবে না,
যা দেখে টের পাবে যে সময় আসলে
কোন দিক থেকে এসে কোন দিকে গেছে!
অথচ তোমার পায়ের তলায় সবসময় একটা মহাদেশ,
প্রণালীর ওদিকে শুয়ে আছে আরেকটা,
ভাঙাচোরা ইতিহাস ধর্ম আর বেঁচে থাকা নিয়ে লড়াই..

সময়ের সামনের দিক
আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, সেই দিনটা কোথায় গেল,
ওই যে কামনার ভেতর দিয়ে যাওয়া?
সে আশ্চর্য হয়ে তাকায়।
তাকে বললাম, পায়ে পায়ে জড়িয়ে থাকা সেই দুপুর,
এখন কোথায়?
সে নিস্পৃহভাবে বলে, আছে কোথাও এই আশেপাশে।
আজ ঝলমলে একটা রবিবার এবং আমরা এখন
রবিবারের ভেতরে নিজেদের ছাপ নিয়ে রাখছি;
ছাঁচে মূর্তি তৈরি হওয়ার ঠিক উল্টো, আমাদের ছাপ দিয়েই ছাঁচ বানাচ্ছি।
এই দিন যদি সময় হয় তাহলে আমরা তার ভেতর
জমাট হয়ে থাকা একেকটা আশা।
সময়ের পেছন দিকটা আছে কোথাও, কিন্তু হয়তো
আমাদের কাছে বুধবার মানে হল, যে আসছে সোম মঙ্গল পেরিয়ে; এই বানিয়ে রাখা আমাদের ছাপ দিয়েই
কেটে নেব বুধ বা শুক্রের কিছুটা -এই আশায়
এই যে তোমার বুকের ওপর বেঁচে থাকা,
হয়তো এই-ই ভালোবাসা।

কখনোই টেপা হয় না
একটা বোতাম টেপার ইচ্ছে,
আঙুলটাকে সময়ের মাঝখানে নিয়ে গিয়ে
কোনো এক দ্বিধায় চুপ করে থাকো,
তখনও আঙুল ছুঁয়ে সময় চলে যাচ্ছে,ৃ
তিরতিরে একটা অনুভূতি !
…একটা সীমাহীন স্কেল,
না-খোলা ঢাকনা,
আর পর্যাপ্ত মাপজোখ —
তোমার মাথার ভেতর রাখা আছে,
একদিন হঠাৎই তুমি জেনে ফেল এটা
এবং তারপর এই অস্থিরতা….
আঙুলটা নিয়ে যাও সময়ের মাঝখান বরাবর,
কিন্তু দ্বিধা —ভালোবাসা নাকি না-ভালোবাসা!
কী তোমাকে দ্বিধায় ফেলে দেয়?
বোতামটা কখনোই টেপা হয় না।
যথারীতি একটা সীমাহীন স্কেল, না-খোলা ঢাকনা,
আর কত কত মাপজোখ এখনো তোমাকে অস্থির করে তুলতে থাকে!

বাহক
পিঠে জীবনকে বয়ে নিয়ে যাচ্ছে যারা,
একটা অস্পষ্ট পাটাতনের মতো প্রেক্ষিত,
আমি একটা দুরূহ কোণ থেকে তাদের দেখতে পাচ্ছি,
তারা টেরও পায় না, তাদের অলক্ষে তাদের জীবনের আঙ্গিক টুকে নিচ্ছে কেউ, তারা
হয়তো এসবের কিছুই জানে না —
একটা অসীম স্কেলের মাঝখান থেকে শুরু করে
তারা শেষ করে মাত্র কয়েক বিন্দু দূরে।
আমি দূর থেকে শুধু ভাবি — জীবন কি খুব ভারী,
নাকি ভারী কিছু বয়ে নিয়ে যাওয়ার ভান করে ওরা!
মনে হয় পুরোটাই বানানো, ওই মগ্নতাটাও,
এখন এই যে কবিতাটা হয়ে উঠবে, সেটাও —পাতার একদিকে শব্দগুলোকে এমনভাবে চালনা করা, যেন তারা খুব অর্থ বহন করছে এইভাবে….

দেখা হচ্ছে তোমাকে
তুমি খুব সাবধানে পা ফেলে উঁচু নিচু পথটায় হাঁটছ,
পাথরগুলো তোমাকে একমনে লক্ষ করছে কিন্তু
চড়াই উৎরাই তোমাকে এমন আত্মমগ্ন করে তুলছে যে তুমি কিছুই দেখার অবকাশ পাচ্ছ না।
তখন আরো দূরের একটা মনখারাপ করা জানালা দিয়ে
আঙুল নির্দেশ করে দেখা হচ্ছে তোমাকে— “ওই,
ওই যে জায়গাটা, যেখানে মেয়েটি বাঁক নিচ্ছে” …
তুমি একা একা এই নির্জনতাকে অর্থ দিচ্ছ কিন্তু
এর বাইরের, এর থেকে দূরের, যেখান থেকেই
তোমাকে লক্ষ করা হোক, তুমি জানবে না,
তুমি কখনো জানবে না, কোন কোন জানালা থেকে
তোমাকে দেখা হয়েছে এতদিন!
একটা নিউট্রন ভরা নক্ষত্র থেকে ইঙ্গিত আসছে
এই বিশ্বের দিকে, আসছে, আসছে …
তুমি এইমাত্র একটা পাহাড়ি ঝোপ পেরোলে,
একটা লম্বা গাছ তোমার সঙ্গে কথা বলতে চাইল,
লক্ষই করলে না তুমি….