ঢাকা ০৪:২৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৩ অগাস্ট ২০২৫

রণক্ষেত্র নিউ মার্কেট

  • আপডেট সময় : ০১:৪৯:০৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ এপ্রিল ২০২২
  • ১০৮ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিউ মার্কেটের দোকানকর্মীদের দফায় দফায় সংঘর্ষে অন্তত অর্ধশত আহত হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য ও হাসপাতালে খবর নিয়ে জানা যায়, গতকাল মঙ্গলবার প্রথম প্রহর থেকে দুপুর পর্যন্ত আহতদের মধ্যে শিক্ষার্থী ও দোকানকর্মী ছাড়াও রয়েছেন পথচারী, হকার, সাংবাদিক। এদের মধ্যে চারজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এক শিক্ষার্থী ভর্তি আছেন স্কয়ার হাসপাতালে। খাবারের দাম দেওয়া নেওয়া নিয়ে ঢাকা কলেজের কয়েক শিক্ষার্থী এবং নিউ মার্কেটের একটি দোকানের কর্মীদের মধ্যে মধ্যরাতে প্রথম মারামারি বাধে। রাতে এক দফা মারামারির পর থামলেও সকালে হয় ব্যাপক সংঘর্ষ। বিকাল নাগাদ দফায় দফায় সেই সংঘর্ষ চলছিল। সংঘর্ষে আহত অন্তত অর্ধশত জন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। এর মধ্যে রয়েছেন সাজ্জাদ, সেলিম, রাজু, কাওসার, রাহাদ, আলিফ, ইয়াসিন, রুবেল, রাজু, সাংবাদিক আসিফ ও এসএটিভির ক্যামেরা পার্সন কবির হোসেন।
জরুরি বিভাগের আবাসিক চিকিৎসক ডা. মো. আলাউদ্দিন জানান, আহতদের মধ্যে কয়েকজনের মাথায় আঘাত রয়েছে, তাদেরকে নিউরোসার্জারি বিভাগে পাঠানো হয়। বাকিদেরকে জরুরি বিভাগে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। চারজনকে ভর্তি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া। এই চারজনের মধ্যে তিনজন দোকান কর্মচারী। অন্যজন শিক্ষার্থী। আহত শিক্ষার্থীর নাম কানন চৌধুরী (২২)। দোকানকর্মীরা হলেন- মোরসালিন (২২), ইয়াসিন (২৩) এবং অজ্ঞাত (২৩)। মোরসালিন ও অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির অবস্থা গুরুতর বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। মোশাররফ হোসেন নামে এক শিক্ষার্থীকে রাতেই স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাকে আইসিইউতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে বলে জানান ঢাতা মহানগর পুলিশের নিউ মার্কেট জোনের অতিরিক্ত উপ কমিশনার শাহেন শাহ।
ঢাকা কলেজের ছাত্রাবাস খালি করার নির্দেশ : রাজধানীর নিউ মার্কেট এলাকায় দোকানকর্মীদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের দফায় দফায় সংঘর্ষের পর ঢাকা কলেজের ছাত্রাবাসগুলো আগামী ৫ মে পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলের মধ্যেই শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দিয়ে দুপুরে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে কলেজ কর্তৃপক্ষ। ঢাকা কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এ টি এম মইনুল হোসেন স্বাক্ষরিত ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “ঢাকা কলেজের সকল আবাসিক শিক্ষার্থীকে জানানো যাচ্ছে যে, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অদ্য ১৯ এপ্রিল ২০২২ মঙ্গলবার থেকে ৫ মে ২০২২ তারিখ বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ঢাকা কলেজের হলসমূহ বন্ধ ঘোষণা করা হলো। অদ্য মঙ্গলবার বিকালের মধ্যে ছাত্রাবাস খালি করার নির্দেশ দেওয়া হল।”
হল বন্ধের ঘোষণায় ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা, অধ্যক্ষ অবরুদ্ধ : রাজধানীর নিউ মার্কেট এলাকায় দোকানকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষের পর ঢাকা কলেজের ছাত্রাবাসগুলো বন্ধ ঘোষণা করায় বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে তার কক্ষে অবরুদ্ধ করে রেখেছে। মঙ্গলবার বিকাল ৩টার দিকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এ টি এম মইনুল হোসেন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে আগামী ৫ মে পর্যন্ত আবাসিক হলগুলো বন্ধ ঘোষণা করে বিকেলের মধ্যে হল খালি করার নির্দেশ দেওয়া হয়। ওই নির্দেশনা প্রত্যাখ্যান করে বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে শিক্ষার্থীরা ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের কার্যালয়ের বাইরে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। ‘শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা কেন, প্রশাসন জবাব চাই, ‘ক্যাম্পাসে পুলিশ কেন? প্রশাসন জবাব চাই’, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন তারা। বিকালে অধ্যক্ষের কার্যালয়ের বাইরে যখন এই বিক্ষোভ চলছিল, তখনও কিছু শিক্ষার্থী কলেজের সামনের রাস্তায় দোকানকর্মীদের সেঙ্গ বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ চালিয়ে যাচ্ছিল।
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় এবং সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য দুপুর দেড়টার দিকে শিক্ষার্থীদের শান্ত করতে গিয়ে তোপের মুখে পড়েন। ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা তাদের ঘিরে ধরেন।
এক শিক্ষার্থী লেখক ভট্টাচার্যকে উদ্দেশ করে বলেন, “আপনি তামাশা দেখতে আসছেন?” তার কথা শেষ না হতেই আরেকজন বলেন, “কেন আসছেন এখানে? সারাজীবন আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগকে বাঁচালাম। রাত থেকে ঝামেলা চলছে। আপনাদের কেউ আসলেন না।” জটলার মধ্য থেকে কয়েকজনকে লেখকের দিকে তেড়ে যেতে দেখা যায়। গালাগালিও করেন অনেকে। তবে এসবের জবাবে কিছু বলেননি লেখক। দীর্ঘদিন ঢাকা কলেজে ছাত্রলীগের কমিটি না হওয়ার জন্যও ক্ষোভ প্রকাশ করেন শিক্ষার্থীরা। কলেজ শাখার নেতাকর্মীদের দাবি, কলেজ ছাত্রলীগের কমিটি থাকলে ব্যবসায়ীরা ‘এত সাহস পেত না’।
পরে হল বন্ধের ঘোষণা দিলে আল নাহিয়ান খান জয় ও লেখক ভট্টাচার্য অধ্যক্ষের কার্যালয়ে গিয়ে অবস্থান নেন। অধ্যক্ষকে অবরুদ্ধ করা শিক্ষার্থীদের শান্ত করতে গিয়ে লেখক ভট্টাচার্য বলেছেন, “হল বন্ধ করে দেওয়া কোনো সমাধান নয়। প্রয়োজনে মার্কেট বন্ধ হবে। কিন্তু শিক্ষার্থীদের আবাসিক হল নয়।”
ঢাকা কলেজের ছাত্রদের সমর্থনে ঢাবি ছাত্রদের বিক্ষোভ : ঢাকা কলেজের ছাত্রদের সঙ্গে নিউমার্কেটসহ আশপাশের মার্কেটগুলোর ব্যবসায়ী ও দোকানকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনায় ঢাকা কলেজের ছাত্রদের পক্ষে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একটি অংশ। এ সময় পুলিশের প্রতি ক্ষোভ দেখান বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা।
ছাত্রদের সমর্থনে ইডেনের ছাত্রীদের বিক্ষোভ : ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সমর্থনে সড়কে নেমে বিক্ষোভ দেখিয়েছে ইডেন মহিলা কলেজের ছাত্রীদের একটি অংশ। ইডেন মহিলা কলেজের ছাত্রীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ঢাকা কলেজের দিকে যেতে চাইলে নিউমার্কেটের ব্যবসায়ীরা বাধা দেন। ব্যবসায়ীদের বাধার মুখে ছাত্রীরা নীলক্ষেত মোড়ে অবস্থান নেন। প্রায় শ খানেক ছাত্রী এ বিক্ষোভে অংশ নেন।
প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য, মঙ্গলবার বেলা তিনটার কিছু পরে ইডেন কলেজ থেকে মিছিল নিয়ে সড়কে বের হয় একদল ছাত্রী। মিছিলটি নীলক্ষেত মোড় হয়ে ঢাকা কলেজের দিকে যাচ্ছিল। এ সময় নিউমার্কেটের ফটকের সামনে ব্যবসায়ী ও দোকানকর্মীরা মিছিলটির সামনে দাঁড়িয়ে যান। দুই পক্ষের মধ্যে কিছুক্ষণ বাগ্বিত-া চলে। এরপর ছাত্রীরা মিছিল নিয়ে নীলক্ষেত মোড়ে এসে অবস্থান নেন।
নীলক্ষেত মোড়ে অবস্থান নিয়ে ছাত্রীরা বিভিন্ন স্লোগান দেন। ঢাকা কলেজের ছাত্রদের ওপর হামলার বিচার চান তাঁরা। পুলিশের ভূমিকার সমালোচনা করেও তাঁরা স্লোগান দেন। ইডেন কলেজের ছাত্রীদের হাতে থাকা প্ল্যাকার্ডে ‘স্ট্যান্ড উইথ ঢাকা কলেজ’, ‘আমার ভাইয়ের রক্ত, বৃথা যেতে দেব না’, ‘ঢাকা কলেজের ভাইদের কিছু হলে ইডেন কন্যারা জ্বালাবে আগুন ঘরে ঘরে’ প্রভৃতি লেখা ছিল। বিকাল চারটার দিকে ইডেনের ছাত্রীরা নীলক্ষেত মোড় থেকে সরে যান।
নিউমার্কেট এলাকায় মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ : ঢাকার নিউমার্কেট এলাকায় দ্রুতগতির মোবাইল ইন্টারনেট সেবা বন্ধ হয়ে গেছে। মোবাইল অপারেটর সূত্র জানিয়েছে, মঙ্গলবার বিকেল সোয়া চারটার পরে এই সেবা বন্ধ হয়ে যায়। অপারেটর সূত্র জানিয়েছে, সরকারি নির্দেশনা পাওয়ার পর ওই এলাকায় দ্রুত গতির ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়। ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিউমার্কেটের ব্যবসায়ীদের দফায় দফায় সংঘর্ষের পরিপ্রেক্ষিতে এই ব্যবস্থা নেওয়া হলো।
নিউ মার্কেট এলাকা রণক্ষেত্র : সোমবার মধ্যরাতে আড়াই ঘণ্টার সংঘাতের পর থমথমে পরিস্থিতির মধ্যে সকালে আবার সংঘর্ষে জড়িয়েছিল নিউ মার্কেটের দোকান কর্মচারী এবং ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা। ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা রাতের ঘটনার প্রতিবাদে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মানববন্ধন করতে রাস্তায় জড়ো হয়। এ সময় ব্যবসায়ীরাও বেরিয়ে এলে সংঘর্ষ শুরু হয়। কলেজের সামনের সড়কে লাঠি, রড হাতে জড়ো হওয়া শিক্ষার্থীদের ঢিল ছুড়তে দেখা যায়। অন্যদিকে নিউ মার্কেট ওভারব্রিজ এলাকায় অবস্থান নিয়ে থাকা দোকান কর্মচারীরা পাল্টা জবাব দেয়। নিউ মার্কেট থানার পরিদর্শক অপারেশনস হালদার অজিত ঠাকুর বলেন, “নিউ মার্কেটসহ আশেপাশের এলাকার সকল দোকান পাট বন্ধ রয়েছে।শিক্ষার্থীরা রাস্তায় অবস্থান করছে। দোকান কর্মচারীরাও বিচ্ছিন্নভাবে আছে।”
সকাল থেকে হাজার হাজার দোকান কর্মচারীকে লাঠি আর ইট নিয়ে রাস্তায় অবস্থান করছেন। আর ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা কলেজ ফটকের সামনে এবং হলের ছাদে অবস্থান নিয়ে আছেন। রাস্তায় অনেকের হাতে লাঠি আর মাথায় হেলমেট দেখা গেছে। ঢিল বৃষ্টির মধ্যে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে টিয়ার শেল ছুড়ছে পুলিশ। কয়েকটি বিস্ফোরণেরও আওয়াজও পাওয়া গেছে।
উপ কমিশনার সাজ্জাদুর রহমন জানান, “দুই পক্ষ আবারো মুখোমুখি হয়েছে। আমরা পরিস্থিস্তি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছি।”
আগের রাতের সংঘর্ষের পর থেকেই সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড় থেকে নিউ মার্কেট পর্যন্ত সড়কে যান চলাচল বন্ধ ছিল, সকালে সংঘর্ষ শুরুর পর রাস্তায় কাঠসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র জড়ো করে তাতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। এই সংঘর্ষের কারণে সায়েন্স ল্যাব থেকে নিউ মার্কেট পর্যন্ত অন্তত ৭৫টি বিপণি বিতান বন্ধ রয়েছে বলে দোকান মালিকরা জানিয়েছেন। ঈদের এই ভরা মৌসুমে সংঘর্ষ আর দোকানপাট বন্ধ থাকায় উদ্বেগ রয়েছে তাদের মধ্যে। নিউ মার্কেট দোকান মালিক সমিতির সভাপতি শাহীন আহমেদ বলেন, “সবপক্ষকে শান্ত করে রাত ৪টার দিকে আমরা বাসায় ফিরেছিলাম। আমরা ছাত্রনেতাদের কথা দিয়েছিলাম যে ব্যবসায়ীরা আর সংঘর্ষে জড়াবে না। কিন্তু সকালে ছাত্ররা আবার সড়ক অবরোধ করে। ফলে পাশে চাঁদনীচক, গাউছিয়া ও অন্যান্য মার্কেটের ব্যবসায়ীরা আবার একত্রিত হয়ে সংঘর্ষে জড়ায়।” নিউ মার্কেট মোড়ে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশের সদস্য রাজ্জাক জানান, মূল সড়ক বন্ধ থাকায় যানবাহনকে ঘুরে যেতে হচ্ছে। তাতে আশপাশের সব সড়কে চাপ পড়ছে। নীলক্ষেতের দিকে তীব্র যানজট তৈরি হয়েছে।
কী নিয়ে সংঘাত : সোমবার রাত ১২টার দিকে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। এরপর আড়াই ঘণ্টা ধরে দুই পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় ধাওয়া, পাল্টা ধাওয়া চলে। শেষ পর্যন্ত রাত আড়াইটার দিকে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে বলে নিউ মার্কেট জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার শরীফ মোহাম্মদ ফারুকুজ্জামান জানান। ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা রাতে দাবি করেছিল, নিউ মার্কেটে তর্কাতর্কির জেরে দোকানকর্মীদের মারধরের শিকার হন তিন ছাত্র। সেখান থেকে সংঘর্ষের সূত্রপাত। সকালে ব্যবসায়ী, পুলিশ ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়েছিল একটি খাবারের দোকানে কথা কাটাকাটি থেকে। নিউ মার্কেট দোকান মালিক সমিতির নেতা শাহীন আহমেদ বলেন, “নিউ মার্কেটের ৪ নম্বর গেইটের কাছে একটি খাবারের দোকান থেকে সংঘর্ষের সূত্রপাত। ওই খাবারের দোকানের লোকজনের সঙ্গে কয়েকজন শিক্ষার্থীর বাকবিত-ার পর ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা দলবদ্ধ হয়ে এসে হামলা চালায়। “রাতে ছাত্ররা অগ্নিসংযোগেরও চেষ্টা করে, কয়েকটি দোকানে লুটতরাজ চালায়। পুলিশ ঠিক সময়ে না এলে তারা মার্কেটে আগুন ধরিয়ে দিতে পারত।”
সাখাওয়াত হোসেন নামে ঢাকা কলেজের এক শিক্ষার্থী বলেন, “চতুর্থ বর্ষ আর মাস্টার্সের তিনজন শিক্ষার্থী রাতে খেতে যায়। দাম যা আসছে তার চেয়ে একটু কম দিতে চেয়েছিল তারা। এসময় ঝগড়ার এক পর্যায়ে দোকানে থাকা ধারালো ছুরি নিয়ে শিক্ষার্থীদের গুরুতর জখম করে দোকানিরা। এই খবর ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়লে শিক্ষার্থীরা গিয়ে ভাংচুর চালায়। এরপর ব্যবসায়ী ও পুলিশ ধাওয়া দিয়ে শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে দেয়। “এরপর রাতে কয়েক দফায় পাল্টাপাল্টি সংঘর্ষ হয়েছে। পুলিশ ও ব্যবসায়ীদের দিক থেকে গুলি ছোড়া হয়েছে। আর ছাত্রদের এই দিক থেকে বেশ কিছু ককটেল বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া গেছে। রাতে ৭ জন শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধসহ মোট ১৫ জন আহত হয়েছে বলে আমরা জেনেছি।”
নিউ মার্কেট জোনের অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার শাহেন শাহও বলেছেন, নিউ মার্কেট এলাকায় একটি খাবারের দোকানে ‘দাম দেওয়া নেওয়া নিয়ে’ সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। রাতের সংঘর্ষের সময় আহতদের মধ্যে দুই শিক্ষার্থীসহ চারজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। তিনজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ছেড়ে দেওয়া হয় বলে জানান মেডিকেল পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া। অন্য জনকে স্থানান্তর করা হয় অন্য হাসপাতালে। মোশাররফ হোসেন নামে ম্যানেজমেনট চতুর্থ বর্ষের ওই শিক্ষার্থীকে স্কয়ার হাসপাতালে আইসিইউতে রাখা হয়েছে জানিয়ে উপ কমিশনার শাহেন শাহ বলেন, তার অবস্থা এখন ‘স্থিতিশীল’। “তবে সেই ক্ষোভ থেকেই মূলত সকালে শিক্ষার্থীরা আবারো সড়কে অবস্থান নিয়েছে। শিক্ষার্থীদের হুমকির প্রেক্ষিত্রে নিউ মার্কেটের ব্যবসায়ীদের বলা হয়েছে তাদের দোকানপাট বন্ধ রাখতে। তারা দোকনপাট বন্ধ রেখেছে। আমরা দুই পক্ষের সাথে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে।”
২০ মার্কেটের দোকানপাট বন্ধ : ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী ও নিউমার্কেটের ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষের কারণে ওই এলাকার অন্তত ২০টি মার্কেটের দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। এতে দিনে অন্তত ১০০ কোটি টাকার ক্ষতির আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, ঈদ কেনাকাটার ভর মৌসুমে এমন ঘটনা দুঃখজনক। দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আনতে পারলে তাদের ব্যাপক ক্ষতি হবে। বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, খুবই দুঃখজনক যে কেনাকাটার মৌসুমে এমন ঘটনা ঘটছে। ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না আমাদের কী পরিমাণ ক্ষতি হচ্ছে!
সাংবাদিকরাও আক্রান্ত, অ্যাম্বুলেন্স ভাঙচুর : রাজধানীর নিউ মার্কেট এলাকায় দোকানিদের সঙ্গে ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীদের দফায় দফায় সংঘর্ষের মধ্যে বেশ কয়েকজন সংবাদকর্মী দোকান কর্মচারীদের হামলার শিকার হয়েছেন। সংঘর্ষের ঘটনা নিয়ে ‘সঠিক তথ্য না দেওয়ার’ অভিযোগ তুলে লাইভে থাকা সাংবাদিকদের বাঁধাও দিয়েছেন তারা। এক দোকানে খাবারের বিল পরিশোধ নিয়ে কথাকাটাকাটির জেরে সোমবার মধ্যরাতে দোকান কর্মচারীদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের প্রায় আড়াই ঘণ্টা সংঘর্ষ চলে। পুলিশের হস্তক্ষেপে রাত আড়াইটার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলেও মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আবার সংঘর্ষ শুরু হয়, যা বেলা আড়াইটার সময়ও চলছিল। ঢাকা কলেজ প্রান্তে একদল সাংবাদিক এবং নিউ মার্কেট প্রান্তে আরেকদল সাংবাদিক পরিস্থিতি সম্পর্কে খবর সংগ্রহ করছিলেন। বিভিন্ন টেলিভিশন সেখান থেকে সরাসরি সম্প্রচারও করছিল। সে সময় দোকানকর্মচারীদের একটি দল কয়েকজন সাংবাদিকের ওপর চড়াও হয়।
ঘটনাস্থল থেকে আমাদের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক কামাল তালুকদার বলেন, “প্রথমে কথা কাটাকাটি ও পরে কিল ঘুষি মারা শুরু হয়। পরে অন্য ব্যবসায়ীরা এসে আহত সাংবাদিকদের উদ্ধার করেন। “একান্তর টিভির মহিন মিজান ও তার সঙ্গে থাকা ক্যামেরা পারসনকে কিলঘুষি মেরেছে তারা। দীপ্ত টিভির আসিফ সুমিতকে নাজেহাল করতে দেখা গেছে। এসএ টিভির সাংবাদিক তুহিন ও ক্যামেরা পার্সন কবিরসহ একটি টিমের ওপরও হামলা করা হয়েছে। এছাড়া মোবাইলে ও ফেইসবুকে লাইভ সম্প্রচারকারী বিভিন্ন গণমাধ্যমকর্মীদেরকেও মারধর করে তাড়িয়ে দেওয় দোকানিরা।”
নিউ মার্কেট ওভারব্রিজের ওপর থেকে ছবি তোলার সময় ঢিলের আঘাতে আহত হন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের আলোকচিত্রী মাহমুদ জামান অভী। ঘটনাস্থলে উপস্থিত আমাদের আরেক প্রতিবেদক রাসেল সরকার বলেন, “ইটের আঘাতে অন্তত ছয়জন সাংবাদিককে আহত হতে দেখেছি। একজন আহত ব্যক্তি অথবা অন্য কোনো রোগীকে অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতাল নিয়ে যাওয়ার পথে দোকানিরা হামলা চালিয়ে কাচ ভেঙে দেয়।”
দুপুরে নূরজাহান মার্কেটের নিচে এবং চন্দ্রিমা সুপার মার্কেটের তৃতীয় তলায় আগুন জ্বলতে দেখা যায়। চন্দ্রিমার আগুন কর্মীরাই নিভিয়ে ফেলেন। ফায়ার সার্ভিস নিয়ন্ত্রণ কক্ষের মোবিলাইজিং অফিসার দেওয়ান আজাদ হোসেন বলেন, “বেলা আড়াইটার দিকে আমাদের তিনটি ইউনিট আগুন নেভাতে গেছে। সেখানে এখনও কাজ চলছে।” সকাল থেকে দফায় দফায় দফায় সংঘর্ষ চললেও পুলিশের উপস্থিতি তেমন ছিল না। বেলা ১টার আগে আগে সাঁজোয়া যান ও জলকামান নিয়ে বিপুল সংখ্যক পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়, টিয়ার শেল ছুড়ে সংঘর্ষ থামানোর চেষ্টা চলে। পুলিশের তৎপর হতে বিলম্বের কারণ জানতে চাইলে রমনা বিভাগের পুলিশের উপ কমিশনার মোহাম্মদ সাজ্জাদুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সকালে শিক্ষার্থীরা কলেজের সামনে সড়ক অবরোধ করে বসে ছিল। হঠাৎ করে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। পুলিশ তখন ব্যবসায়ী নেতা ও কলেজ কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে সুষ্ঠু সমাধানের উপায় বের করার চেষ্টা করে। সে কারণে এই সময়টা লেগেছে।”
এই সংঘর্ষের মধ্যে তাৎক্ষণিক দুই পক্ষের মাঝামাঝি অবস্থান নেওয়া পুলিশের জন্য সহজ ছিল না বলেও জানান ঘটনাস্থলে আসা কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা।
দুই পক্ষের দীর্ঘ সংঘর্ষের ফলে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি ও দুর্ঘটনার ঝুঁকির বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা বলেন, “পুলিশ ইন করলে ত্রিমুখী সংঘর্ষটা শুরু হবে। যেহেতু শুরু থেকেই পুলিশ মাঝে অবস্থান করতে পারেনি তাই টেকনিক্যাল কারণে আলোচনা করে সমাধানের পথ বের করার চেষ্টা করছে।” পুরোনো অভিজ্ঞতার উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, “যতই ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হোক, শিক্ষার্থীরা মার্কেটে ঢুকবে না, আর ব্যবসায়ীরাও কলেজের ভেতরে যাবে না।” এদিকে বেলা ১২টার দিকে পুলিশ আসার কিছুক্ষণ আগে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের প্রতি সংহতি জানিয়ে নীলক্ষেত মোড়ে বিক্ষোভ মিছিল করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন আবাসিক হলের একদল শিক্ষার্থী। নীলক্ষেত মোড় থেকে নিউ মার্কেট মোড় ঘুরে মিছিল নিয়ে তারা আবার ক্যাম্পাসে ফিরে যান।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

রণক্ষেত্র নিউ মার্কেট

আপডেট সময় : ০১:৪৯:০৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ এপ্রিল ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিউ মার্কেটের দোকানকর্মীদের দফায় দফায় সংঘর্ষে অন্তত অর্ধশত আহত হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য ও হাসপাতালে খবর নিয়ে জানা যায়, গতকাল মঙ্গলবার প্রথম প্রহর থেকে দুপুর পর্যন্ত আহতদের মধ্যে শিক্ষার্থী ও দোকানকর্মী ছাড়াও রয়েছেন পথচারী, হকার, সাংবাদিক। এদের মধ্যে চারজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এক শিক্ষার্থী ভর্তি আছেন স্কয়ার হাসপাতালে। খাবারের দাম দেওয়া নেওয়া নিয়ে ঢাকা কলেজের কয়েক শিক্ষার্থী এবং নিউ মার্কেটের একটি দোকানের কর্মীদের মধ্যে মধ্যরাতে প্রথম মারামারি বাধে। রাতে এক দফা মারামারির পর থামলেও সকালে হয় ব্যাপক সংঘর্ষ। বিকাল নাগাদ দফায় দফায় সেই সংঘর্ষ চলছিল। সংঘর্ষে আহত অন্তত অর্ধশত জন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। এর মধ্যে রয়েছেন সাজ্জাদ, সেলিম, রাজু, কাওসার, রাহাদ, আলিফ, ইয়াসিন, রুবেল, রাজু, সাংবাদিক আসিফ ও এসএটিভির ক্যামেরা পার্সন কবির হোসেন।
জরুরি বিভাগের আবাসিক চিকিৎসক ডা. মো. আলাউদ্দিন জানান, আহতদের মধ্যে কয়েকজনের মাথায় আঘাত রয়েছে, তাদেরকে নিউরোসার্জারি বিভাগে পাঠানো হয়। বাকিদেরকে জরুরি বিভাগে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। চারজনকে ভর্তি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া। এই চারজনের মধ্যে তিনজন দোকান কর্মচারী। অন্যজন শিক্ষার্থী। আহত শিক্ষার্থীর নাম কানন চৌধুরী (২২)। দোকানকর্মীরা হলেন- মোরসালিন (২২), ইয়াসিন (২৩) এবং অজ্ঞাত (২৩)। মোরসালিন ও অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির অবস্থা গুরুতর বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। মোশাররফ হোসেন নামে এক শিক্ষার্থীকে রাতেই স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাকে আইসিইউতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে বলে জানান ঢাতা মহানগর পুলিশের নিউ মার্কেট জোনের অতিরিক্ত উপ কমিশনার শাহেন শাহ।
ঢাকা কলেজের ছাত্রাবাস খালি করার নির্দেশ : রাজধানীর নিউ মার্কেট এলাকায় দোকানকর্মীদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের দফায় দফায় সংঘর্ষের পর ঢাকা কলেজের ছাত্রাবাসগুলো আগামী ৫ মে পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলের মধ্যেই শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দিয়ে দুপুরে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে কলেজ কর্তৃপক্ষ। ঢাকা কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এ টি এম মইনুল হোসেন স্বাক্ষরিত ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “ঢাকা কলেজের সকল আবাসিক শিক্ষার্থীকে জানানো যাচ্ছে যে, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অদ্য ১৯ এপ্রিল ২০২২ মঙ্গলবার থেকে ৫ মে ২০২২ তারিখ বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ঢাকা কলেজের হলসমূহ বন্ধ ঘোষণা করা হলো। অদ্য মঙ্গলবার বিকালের মধ্যে ছাত্রাবাস খালি করার নির্দেশ দেওয়া হল।”
হল বন্ধের ঘোষণায় ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা, অধ্যক্ষ অবরুদ্ধ : রাজধানীর নিউ মার্কেট এলাকায় দোকানকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষের পর ঢাকা কলেজের ছাত্রাবাসগুলো বন্ধ ঘোষণা করায় বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে তার কক্ষে অবরুদ্ধ করে রেখেছে। মঙ্গলবার বিকাল ৩টার দিকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এ টি এম মইনুল হোসেন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে আগামী ৫ মে পর্যন্ত আবাসিক হলগুলো বন্ধ ঘোষণা করে বিকেলের মধ্যে হল খালি করার নির্দেশ দেওয়া হয়। ওই নির্দেশনা প্রত্যাখ্যান করে বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে শিক্ষার্থীরা ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের কার্যালয়ের বাইরে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। ‘শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা কেন, প্রশাসন জবাব চাই, ‘ক্যাম্পাসে পুলিশ কেন? প্রশাসন জবাব চাই’, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন তারা। বিকালে অধ্যক্ষের কার্যালয়ের বাইরে যখন এই বিক্ষোভ চলছিল, তখনও কিছু শিক্ষার্থী কলেজের সামনের রাস্তায় দোকানকর্মীদের সেঙ্গ বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ চালিয়ে যাচ্ছিল।
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় এবং সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য দুপুর দেড়টার দিকে শিক্ষার্থীদের শান্ত করতে গিয়ে তোপের মুখে পড়েন। ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা তাদের ঘিরে ধরেন।
এক শিক্ষার্থী লেখক ভট্টাচার্যকে উদ্দেশ করে বলেন, “আপনি তামাশা দেখতে আসছেন?” তার কথা শেষ না হতেই আরেকজন বলেন, “কেন আসছেন এখানে? সারাজীবন আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগকে বাঁচালাম। রাত থেকে ঝামেলা চলছে। আপনাদের কেউ আসলেন না।” জটলার মধ্য থেকে কয়েকজনকে লেখকের দিকে তেড়ে যেতে দেখা যায়। গালাগালিও করেন অনেকে। তবে এসবের জবাবে কিছু বলেননি লেখক। দীর্ঘদিন ঢাকা কলেজে ছাত্রলীগের কমিটি না হওয়ার জন্যও ক্ষোভ প্রকাশ করেন শিক্ষার্থীরা। কলেজ শাখার নেতাকর্মীদের দাবি, কলেজ ছাত্রলীগের কমিটি থাকলে ব্যবসায়ীরা ‘এত সাহস পেত না’।
পরে হল বন্ধের ঘোষণা দিলে আল নাহিয়ান খান জয় ও লেখক ভট্টাচার্য অধ্যক্ষের কার্যালয়ে গিয়ে অবস্থান নেন। অধ্যক্ষকে অবরুদ্ধ করা শিক্ষার্থীদের শান্ত করতে গিয়ে লেখক ভট্টাচার্য বলেছেন, “হল বন্ধ করে দেওয়া কোনো সমাধান নয়। প্রয়োজনে মার্কেট বন্ধ হবে। কিন্তু শিক্ষার্থীদের আবাসিক হল নয়।”
ঢাকা কলেজের ছাত্রদের সমর্থনে ঢাবি ছাত্রদের বিক্ষোভ : ঢাকা কলেজের ছাত্রদের সঙ্গে নিউমার্কেটসহ আশপাশের মার্কেটগুলোর ব্যবসায়ী ও দোকানকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনায় ঢাকা কলেজের ছাত্রদের পক্ষে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একটি অংশ। এ সময় পুলিশের প্রতি ক্ষোভ দেখান বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা।
ছাত্রদের সমর্থনে ইডেনের ছাত্রীদের বিক্ষোভ : ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সমর্থনে সড়কে নেমে বিক্ষোভ দেখিয়েছে ইডেন মহিলা কলেজের ছাত্রীদের একটি অংশ। ইডেন মহিলা কলেজের ছাত্রীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ঢাকা কলেজের দিকে যেতে চাইলে নিউমার্কেটের ব্যবসায়ীরা বাধা দেন। ব্যবসায়ীদের বাধার মুখে ছাত্রীরা নীলক্ষেত মোড়ে অবস্থান নেন। প্রায় শ খানেক ছাত্রী এ বিক্ষোভে অংশ নেন।
প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য, মঙ্গলবার বেলা তিনটার কিছু পরে ইডেন কলেজ থেকে মিছিল নিয়ে সড়কে বের হয় একদল ছাত্রী। মিছিলটি নীলক্ষেত মোড় হয়ে ঢাকা কলেজের দিকে যাচ্ছিল। এ সময় নিউমার্কেটের ফটকের সামনে ব্যবসায়ী ও দোকানকর্মীরা মিছিলটির সামনে দাঁড়িয়ে যান। দুই পক্ষের মধ্যে কিছুক্ষণ বাগ্বিত-া চলে। এরপর ছাত্রীরা মিছিল নিয়ে নীলক্ষেত মোড়ে এসে অবস্থান নেন।
নীলক্ষেত মোড়ে অবস্থান নিয়ে ছাত্রীরা বিভিন্ন স্লোগান দেন। ঢাকা কলেজের ছাত্রদের ওপর হামলার বিচার চান তাঁরা। পুলিশের ভূমিকার সমালোচনা করেও তাঁরা স্লোগান দেন। ইডেন কলেজের ছাত্রীদের হাতে থাকা প্ল্যাকার্ডে ‘স্ট্যান্ড উইথ ঢাকা কলেজ’, ‘আমার ভাইয়ের রক্ত, বৃথা যেতে দেব না’, ‘ঢাকা কলেজের ভাইদের কিছু হলে ইডেন কন্যারা জ্বালাবে আগুন ঘরে ঘরে’ প্রভৃতি লেখা ছিল। বিকাল চারটার দিকে ইডেনের ছাত্রীরা নীলক্ষেত মোড় থেকে সরে যান।
নিউমার্কেট এলাকায় মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ : ঢাকার নিউমার্কেট এলাকায় দ্রুতগতির মোবাইল ইন্টারনেট সেবা বন্ধ হয়ে গেছে। মোবাইল অপারেটর সূত্র জানিয়েছে, মঙ্গলবার বিকেল সোয়া চারটার পরে এই সেবা বন্ধ হয়ে যায়। অপারেটর সূত্র জানিয়েছে, সরকারি নির্দেশনা পাওয়ার পর ওই এলাকায় দ্রুত গতির ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়। ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিউমার্কেটের ব্যবসায়ীদের দফায় দফায় সংঘর্ষের পরিপ্রেক্ষিতে এই ব্যবস্থা নেওয়া হলো।
নিউ মার্কেট এলাকা রণক্ষেত্র : সোমবার মধ্যরাতে আড়াই ঘণ্টার সংঘাতের পর থমথমে পরিস্থিতির মধ্যে সকালে আবার সংঘর্ষে জড়িয়েছিল নিউ মার্কেটের দোকান কর্মচারী এবং ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা। ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা রাতের ঘটনার প্রতিবাদে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মানববন্ধন করতে রাস্তায় জড়ো হয়। এ সময় ব্যবসায়ীরাও বেরিয়ে এলে সংঘর্ষ শুরু হয়। কলেজের সামনের সড়কে লাঠি, রড হাতে জড়ো হওয়া শিক্ষার্থীদের ঢিল ছুড়তে দেখা যায়। অন্যদিকে নিউ মার্কেট ওভারব্রিজ এলাকায় অবস্থান নিয়ে থাকা দোকান কর্মচারীরা পাল্টা জবাব দেয়। নিউ মার্কেট থানার পরিদর্শক অপারেশনস হালদার অজিত ঠাকুর বলেন, “নিউ মার্কেটসহ আশেপাশের এলাকার সকল দোকান পাট বন্ধ রয়েছে।শিক্ষার্থীরা রাস্তায় অবস্থান করছে। দোকান কর্মচারীরাও বিচ্ছিন্নভাবে আছে।”
সকাল থেকে হাজার হাজার দোকান কর্মচারীকে লাঠি আর ইট নিয়ে রাস্তায় অবস্থান করছেন। আর ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা কলেজ ফটকের সামনে এবং হলের ছাদে অবস্থান নিয়ে আছেন। রাস্তায় অনেকের হাতে লাঠি আর মাথায় হেলমেট দেখা গেছে। ঢিল বৃষ্টির মধ্যে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে টিয়ার শেল ছুড়ছে পুলিশ। কয়েকটি বিস্ফোরণেরও আওয়াজও পাওয়া গেছে।
উপ কমিশনার সাজ্জাদুর রহমন জানান, “দুই পক্ষ আবারো মুখোমুখি হয়েছে। আমরা পরিস্থিস্তি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছি।”
আগের রাতের সংঘর্ষের পর থেকেই সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড় থেকে নিউ মার্কেট পর্যন্ত সড়কে যান চলাচল বন্ধ ছিল, সকালে সংঘর্ষ শুরুর পর রাস্তায় কাঠসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র জড়ো করে তাতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। এই সংঘর্ষের কারণে সায়েন্স ল্যাব থেকে নিউ মার্কেট পর্যন্ত অন্তত ৭৫টি বিপণি বিতান বন্ধ রয়েছে বলে দোকান মালিকরা জানিয়েছেন। ঈদের এই ভরা মৌসুমে সংঘর্ষ আর দোকানপাট বন্ধ থাকায় উদ্বেগ রয়েছে তাদের মধ্যে। নিউ মার্কেট দোকান মালিক সমিতির সভাপতি শাহীন আহমেদ বলেন, “সবপক্ষকে শান্ত করে রাত ৪টার দিকে আমরা বাসায় ফিরেছিলাম। আমরা ছাত্রনেতাদের কথা দিয়েছিলাম যে ব্যবসায়ীরা আর সংঘর্ষে জড়াবে না। কিন্তু সকালে ছাত্ররা আবার সড়ক অবরোধ করে। ফলে পাশে চাঁদনীচক, গাউছিয়া ও অন্যান্য মার্কেটের ব্যবসায়ীরা আবার একত্রিত হয়ে সংঘর্ষে জড়ায়।” নিউ মার্কেট মোড়ে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশের সদস্য রাজ্জাক জানান, মূল সড়ক বন্ধ থাকায় যানবাহনকে ঘুরে যেতে হচ্ছে। তাতে আশপাশের সব সড়কে চাপ পড়ছে। নীলক্ষেতের দিকে তীব্র যানজট তৈরি হয়েছে।
কী নিয়ে সংঘাত : সোমবার রাত ১২টার দিকে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। এরপর আড়াই ঘণ্টা ধরে দুই পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় ধাওয়া, পাল্টা ধাওয়া চলে। শেষ পর্যন্ত রাত আড়াইটার দিকে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে বলে নিউ মার্কেট জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার শরীফ মোহাম্মদ ফারুকুজ্জামান জানান। ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা রাতে দাবি করেছিল, নিউ মার্কেটে তর্কাতর্কির জেরে দোকানকর্মীদের মারধরের শিকার হন তিন ছাত্র। সেখান থেকে সংঘর্ষের সূত্রপাত। সকালে ব্যবসায়ী, পুলিশ ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়েছিল একটি খাবারের দোকানে কথা কাটাকাটি থেকে। নিউ মার্কেট দোকান মালিক সমিতির নেতা শাহীন আহমেদ বলেন, “নিউ মার্কেটের ৪ নম্বর গেইটের কাছে একটি খাবারের দোকান থেকে সংঘর্ষের সূত্রপাত। ওই খাবারের দোকানের লোকজনের সঙ্গে কয়েকজন শিক্ষার্থীর বাকবিত-ার পর ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা দলবদ্ধ হয়ে এসে হামলা চালায়। “রাতে ছাত্ররা অগ্নিসংযোগেরও চেষ্টা করে, কয়েকটি দোকানে লুটতরাজ চালায়। পুলিশ ঠিক সময়ে না এলে তারা মার্কেটে আগুন ধরিয়ে দিতে পারত।”
সাখাওয়াত হোসেন নামে ঢাকা কলেজের এক শিক্ষার্থী বলেন, “চতুর্থ বর্ষ আর মাস্টার্সের তিনজন শিক্ষার্থী রাতে খেতে যায়। দাম যা আসছে তার চেয়ে একটু কম দিতে চেয়েছিল তারা। এসময় ঝগড়ার এক পর্যায়ে দোকানে থাকা ধারালো ছুরি নিয়ে শিক্ষার্থীদের গুরুতর জখম করে দোকানিরা। এই খবর ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়লে শিক্ষার্থীরা গিয়ে ভাংচুর চালায়। এরপর ব্যবসায়ী ও পুলিশ ধাওয়া দিয়ে শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে দেয়। “এরপর রাতে কয়েক দফায় পাল্টাপাল্টি সংঘর্ষ হয়েছে। পুলিশ ও ব্যবসায়ীদের দিক থেকে গুলি ছোড়া হয়েছে। আর ছাত্রদের এই দিক থেকে বেশ কিছু ককটেল বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া গেছে। রাতে ৭ জন শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধসহ মোট ১৫ জন আহত হয়েছে বলে আমরা জেনেছি।”
নিউ মার্কেট জোনের অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার শাহেন শাহও বলেছেন, নিউ মার্কেট এলাকায় একটি খাবারের দোকানে ‘দাম দেওয়া নেওয়া নিয়ে’ সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। রাতের সংঘর্ষের সময় আহতদের মধ্যে দুই শিক্ষার্থীসহ চারজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। তিনজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ছেড়ে দেওয়া হয় বলে জানান মেডিকেল পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া। অন্য জনকে স্থানান্তর করা হয় অন্য হাসপাতালে। মোশাররফ হোসেন নামে ম্যানেজমেনট চতুর্থ বর্ষের ওই শিক্ষার্থীকে স্কয়ার হাসপাতালে আইসিইউতে রাখা হয়েছে জানিয়ে উপ কমিশনার শাহেন শাহ বলেন, তার অবস্থা এখন ‘স্থিতিশীল’। “তবে সেই ক্ষোভ থেকেই মূলত সকালে শিক্ষার্থীরা আবারো সড়কে অবস্থান নিয়েছে। শিক্ষার্থীদের হুমকির প্রেক্ষিত্রে নিউ মার্কেটের ব্যবসায়ীদের বলা হয়েছে তাদের দোকানপাট বন্ধ রাখতে। তারা দোকনপাট বন্ধ রেখেছে। আমরা দুই পক্ষের সাথে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে।”
২০ মার্কেটের দোকানপাট বন্ধ : ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী ও নিউমার্কেটের ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষের কারণে ওই এলাকার অন্তত ২০টি মার্কেটের দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। এতে দিনে অন্তত ১০০ কোটি টাকার ক্ষতির আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, ঈদ কেনাকাটার ভর মৌসুমে এমন ঘটনা দুঃখজনক। দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আনতে পারলে তাদের ব্যাপক ক্ষতি হবে। বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, খুবই দুঃখজনক যে কেনাকাটার মৌসুমে এমন ঘটনা ঘটছে। ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না আমাদের কী পরিমাণ ক্ষতি হচ্ছে!
সাংবাদিকরাও আক্রান্ত, অ্যাম্বুলেন্স ভাঙচুর : রাজধানীর নিউ মার্কেট এলাকায় দোকানিদের সঙ্গে ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীদের দফায় দফায় সংঘর্ষের মধ্যে বেশ কয়েকজন সংবাদকর্মী দোকান কর্মচারীদের হামলার শিকার হয়েছেন। সংঘর্ষের ঘটনা নিয়ে ‘সঠিক তথ্য না দেওয়ার’ অভিযোগ তুলে লাইভে থাকা সাংবাদিকদের বাঁধাও দিয়েছেন তারা। এক দোকানে খাবারের বিল পরিশোধ নিয়ে কথাকাটাকাটির জেরে সোমবার মধ্যরাতে দোকান কর্মচারীদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের প্রায় আড়াই ঘণ্টা সংঘর্ষ চলে। পুলিশের হস্তক্ষেপে রাত আড়াইটার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলেও মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আবার সংঘর্ষ শুরু হয়, যা বেলা আড়াইটার সময়ও চলছিল। ঢাকা কলেজ প্রান্তে একদল সাংবাদিক এবং নিউ মার্কেট প্রান্তে আরেকদল সাংবাদিক পরিস্থিতি সম্পর্কে খবর সংগ্রহ করছিলেন। বিভিন্ন টেলিভিশন সেখান থেকে সরাসরি সম্প্রচারও করছিল। সে সময় দোকানকর্মচারীদের একটি দল কয়েকজন সাংবাদিকের ওপর চড়াও হয়।
ঘটনাস্থল থেকে আমাদের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক কামাল তালুকদার বলেন, “প্রথমে কথা কাটাকাটি ও পরে কিল ঘুষি মারা শুরু হয়। পরে অন্য ব্যবসায়ীরা এসে আহত সাংবাদিকদের উদ্ধার করেন। “একান্তর টিভির মহিন মিজান ও তার সঙ্গে থাকা ক্যামেরা পারসনকে কিলঘুষি মেরেছে তারা। দীপ্ত টিভির আসিফ সুমিতকে নাজেহাল করতে দেখা গেছে। এসএ টিভির সাংবাদিক তুহিন ও ক্যামেরা পার্সন কবিরসহ একটি টিমের ওপরও হামলা করা হয়েছে। এছাড়া মোবাইলে ও ফেইসবুকে লাইভ সম্প্রচারকারী বিভিন্ন গণমাধ্যমকর্মীদেরকেও মারধর করে তাড়িয়ে দেওয় দোকানিরা।”
নিউ মার্কেট ওভারব্রিজের ওপর থেকে ছবি তোলার সময় ঢিলের আঘাতে আহত হন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের আলোকচিত্রী মাহমুদ জামান অভী। ঘটনাস্থলে উপস্থিত আমাদের আরেক প্রতিবেদক রাসেল সরকার বলেন, “ইটের আঘাতে অন্তত ছয়জন সাংবাদিককে আহত হতে দেখেছি। একজন আহত ব্যক্তি অথবা অন্য কোনো রোগীকে অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতাল নিয়ে যাওয়ার পথে দোকানিরা হামলা চালিয়ে কাচ ভেঙে দেয়।”
দুপুরে নূরজাহান মার্কেটের নিচে এবং চন্দ্রিমা সুপার মার্কেটের তৃতীয় তলায় আগুন জ্বলতে দেখা যায়। চন্দ্রিমার আগুন কর্মীরাই নিভিয়ে ফেলেন। ফায়ার সার্ভিস নিয়ন্ত্রণ কক্ষের মোবিলাইজিং অফিসার দেওয়ান আজাদ হোসেন বলেন, “বেলা আড়াইটার দিকে আমাদের তিনটি ইউনিট আগুন নেভাতে গেছে। সেখানে এখনও কাজ চলছে।” সকাল থেকে দফায় দফায় দফায় সংঘর্ষ চললেও পুলিশের উপস্থিতি তেমন ছিল না। বেলা ১টার আগে আগে সাঁজোয়া যান ও জলকামান নিয়ে বিপুল সংখ্যক পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়, টিয়ার শেল ছুড়ে সংঘর্ষ থামানোর চেষ্টা চলে। পুলিশের তৎপর হতে বিলম্বের কারণ জানতে চাইলে রমনা বিভাগের পুলিশের উপ কমিশনার মোহাম্মদ সাজ্জাদুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সকালে শিক্ষার্থীরা কলেজের সামনে সড়ক অবরোধ করে বসে ছিল। হঠাৎ করে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। পুলিশ তখন ব্যবসায়ী নেতা ও কলেজ কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে সুষ্ঠু সমাধানের উপায় বের করার চেষ্টা করে। সে কারণে এই সময়টা লেগেছে।”
এই সংঘর্ষের মধ্যে তাৎক্ষণিক দুই পক্ষের মাঝামাঝি অবস্থান নেওয়া পুলিশের জন্য সহজ ছিল না বলেও জানান ঘটনাস্থলে আসা কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা।
দুই পক্ষের দীর্ঘ সংঘর্ষের ফলে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি ও দুর্ঘটনার ঝুঁকির বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা বলেন, “পুলিশ ইন করলে ত্রিমুখী সংঘর্ষটা শুরু হবে। যেহেতু শুরু থেকেই পুলিশ মাঝে অবস্থান করতে পারেনি তাই টেকনিক্যাল কারণে আলোচনা করে সমাধানের পথ বের করার চেষ্টা করছে।” পুরোনো অভিজ্ঞতার উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, “যতই ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হোক, শিক্ষার্থীরা মার্কেটে ঢুকবে না, আর ব্যবসায়ীরাও কলেজের ভেতরে যাবে না।” এদিকে বেলা ১২টার দিকে পুলিশ আসার কিছুক্ষণ আগে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের প্রতি সংহতি জানিয়ে নীলক্ষেত মোড়ে বিক্ষোভ মিছিল করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন আবাসিক হলের একদল শিক্ষার্থী। নীলক্ষেত মোড় থেকে নিউ মার্কেট মোড় ঘুরে মিছিল নিয়ে তারা আবার ক্যাম্পাসে ফিরে যান।