ঢাকা ০৬:৫২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ জুলাই ২০২৫
এনসিপির সমাবেশ ঘিরে আওয়ামী লীগের হামলা-সংঘর্ষ

রণক্ষেত্র গোপালগঞ্জে নিহত চার, ২২ ঘণ্টার কারফিউ

  • আপডেট সময় : ০৯:১৭:৩৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৬ জুলাই ২০২৫
  • ৩০ বার পড়া হয়েছে

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনীর তৎপরতা -ছবি বিবিসি বাংলা

প্রত্যাশা ডেস্ক: গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সমাবেশ ঘিরে ব্যাপক সংঘর্ষ ও হামলার ঘটনায় অন্তত চারজন নিহত হয়েছেন। তবে সংঘর্ষের ঘটনায় আহত অনেকে চিকিৎসা নিতে হাসপাতালে গেলেও তাদের সঠিক সংখ্যা এখনো জানা যায়নি। খবর বিবিসি বাংলার।
গোপালগঞ্জের ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. জীবিতেশ বিশ্বাস সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে বিবিসি বাংলাকে জানান, সংঘর্ষের ঘটনায় এখন পর্যন্ত চারজনের মরদেহ সদর হাসপাতালে এসেছে। তাদের শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
এদিকে, হামলা ও সংঘর্ষের পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাত থেকে ২২ ঘণ্টার কারফিউ জারি করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টার সিনিয়র সহকারী প্রেস সচিব ফয়েজ আহম্মদ জানিয়েছেন, বুধবার (১৬ জুলাই) রাত ৮টা থেকে আগামীকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত এ কারফিউ জারি থাকবে। এর আগে বিকেলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গোপালগঞ্জ সদরে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়।

এদিন বিকেলে গোপালগঞ্জে সভা শেষে ফেরার পথে এনসিপির গাড়িবহরে হামলার ঘটনা ঘটে। কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়া আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এ হামলা চালায় বলে অভিযোগ ওঠে। এসময় গোপালগঞ্জ শহর রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এরপর এনসিপির শীর্ষ নেতারা জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে গিয়ে অবস্থান নেন। পরে সেনাবাহিনীর ট্যাঙ্কে করে নিরাপদে তাদের সেখান থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়।
এদিকে, হামলার ঘটনায় সারাদেশে ব্লকেড কর্মসূচি পালন করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। হামলায় উদ্বেগ জানিয়ে জড়িতদের শাস্তি দাবি করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। জামায়াত আগামীকাল বৃহস্পতিবার বিক্ষোভ কর্মসূচি দিয়েছে।

সাঁজোয়া যানে করে পুলিশ সুপারের কার্যালয় ছাড়লেন এনসিপি নেতারা: সেনাবাহিনীর সাঁজোয়া যানে করে ‘আটকাপড়া’ জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি নেতারা গোপালগঞ্জ পুলিশ সুপারের কার্যালয় ছাড়েন।

বুধবার (১৬ জুলাই) বিকালে শহরের পৌর পার্কে সমাবেশ শেষ করে গোপালগঞ্জ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পথে এনসিপি নেতাদের গাড়ি বহরে হামলার ঘটনা ঘটে। বিকাল পৌনে ৩টার দিকে শহরের লঞ্চ ঘাট এলাকায় গোপালগঞ্জ সরকারি কলেজের সামনে গাড়িবহরে এই হামলার ঘটনা ঘটে। সকাল থেকে দফায় দফায় হামলা ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার মধ্যে এনসিপি নেতারা শহরের পৌর পার্ক এলাকায় সমাবেশ করেছিলেন। সেখান থেকে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর প্রহরায় গাড়ি বহর নিয়ে বেরিয়ে কিছু দূর যাওয়ার পর পরই শত শত জনতা সেখানে হামলা চালায় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। এরপরই পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা এনসিপি নেতাদের গাড়িবহর ঘুরিয়ে জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে নিয়ে যান। তারা সেখানেই অবস্থান করছিলেন।

বিকালে অতিরিক্ত আইজি (ক্রাইম) খন্দকার রফিকুল ইসলাম জানান, এনসিপির নেতা কর্মীরা গোপালগঞ্জ এসপি অফিসে আটকা ছিলেন। পরে সোয়া ৫টার দিকে ‘ক্লিয়ার’ হলে তারা চলে যান।

ঘটনাস্থলে থাকা প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, গোটা এলাকায় রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। ফলে মানুষের পক্ষে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় চলাচল করা অসম্ভব হয়ে পড়ে।
জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয় চত্বরে এনসিপি নেতাদের সাঁজোয়া যানে উঠার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়েছেন। এক মিনিট পাঁচ সেকেন্ডের এই ভিডিওতে দেখা যায়, প্রথমে একটি সাঁজোয়া যানের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসেন এনসিপি নেতা সারজিস আলম, তিনি বেরিয়ে এসে হাসনাত আব্দুল্লাহকে নিয়ে আবার সাঁজোয়া যানে প্রবেশ করেন। সেখানে থাকা সেনাসদস্যরা তাদের সাঁজোয়া যানের ভেতরে ঢুকতে সাহায্য করেন। সারজিস ও হাসনাত আব্দুল্লাহ গাড়ির ভেতরে ঢোকার পর সেখানে প্রবেশ করেন। তারপর সেখানে এনসিপি নেতা আখতার হোসেন আসেন। কিন্তু তাকে সেই গাড়িতে না তুলে পাশের একটি গাড়িতে তোলা হয়। আরেকটি ভিডিওতে এনসিপি আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামকেও একই ধরনের সাঁজোয়া যানে উঠতে দেখা গেছে। পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের পাশে থাকা একজন সাংবাদিক বলেন, তিনি দুটি গাড়িতে করে নেতাদের চলে যেতে দেখেছেন। গাড়ি দুটো পুলিশ লাইনের দিকে গেছে।
পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে অবস্থানের বিষয়ে এর আগে এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব আলাউদ্দিন মোহাম্মদ বলেছিলেন, এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা সন্ত্রাসীদের আক্রমণের শিকার হয়ে পাশের একটি ভবনে আশ্রয় নিয়েছেন। পরে জানতে পেরেছেন এটি জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়। এখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় সন্ত্রাসপ্রবণ এলাকা অতিক্রম করে পদযাত্রার পরবর্তী কর্মসূচিতে যোগ দেওয়ার চেষ্টা করছেন।

এনসিপির পদযাত্রা ও সমাবেশকে ঘিরে সকাল থেকে দফায় দফায় হামলা, সংঘর্ষ, অগ্নিসংযোগ ও গুলির শব্দে গোটা গোপালগঞ্জ শহর রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে

এনসিপির পদযাত্রা ও সমাবেশকে ঘিরে সকাল থেকে দফায় দফায় হামলা, সংঘর্ষ, অগ্নিসংযোগ ও গুলির শব্দে গোটা গোপালগঞ্জ শহর রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। হাতবোমা, সাউন্ড গ্রেনেড ও কাঁদুনে গ্যাস নিক্ষেপের বিকট শব্দ আর ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার মধ্যে আতঙ্কে শহরের অধিকাংশ এলাকায় দোকানপাট বন্ধ হয়ে গেছে। মানুষের চলাচলও সীমিত হয়ে পড়েছে। এই অবস্থায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১৪৪ ধরা জারি করা হয়েছে।

হামলাকারীদের গ্রেফতারে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম, না হলে শুক্রবার লং মার্চ: গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতাকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনায় হামলাকারীদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছে ইনকিলাব মঞ্চ। বুধবার (১৬ জুলাই) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে আয়োজিত এক বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে এই আল্টিমেটাম ঘোষণা করেন সংগঠনের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদি।
হাদি বলেন, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যদি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হামলাকারীদের গ্রেফতার করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে শুক্রবার হাজার হাজার মানুষ নিয়ে গোপালগঞ্জ অভিমুখে লং মার্চ করা হবে। তিনি আরো বলেন, এই দেশে বিএনপি, জামাত, এনসিপি আছে। আমাদের তাদের সঙ্গে রাজনৈতিক ঝগড়া আছে। কিন্তু জুলাই ও স্বাধীনতার সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে কোনো ঝগড়া নেই। এনসিপির উদ্দেশে বলছি—এই সরকারে তোমাদের দুই ভাই আছে, আসিফ মাহমুদ আর মাহফুজ আলম। যদি সরকারে থেকেও তোমাদের গোপালগঞ্জে নিরাপত্তা না থাকে, তাহলে সারা দেশের নিরাপত্তা কোথায়?

শাহবাগ থানার সামনে অবরোধ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়ে হাদি বলেন, আমরা এখন শাহবাগ থানায় যাচ্ছি। আমাদের ভাইদের নিরাপদে ফিরিয়ে না আনলে কাউকেই এখানে মুক্ত থাকতে দেওয়া হবে না। শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি হবে, কিন্তু কেউ যদি উসকানি দেয়, স্যান্ডেল মেরে মুখের দাঁত ফেলে দেওয়া হবে। তিনি আরো বলেন, গোপালগঞ্জের প্রতিটি উপজেলাকে মাদারীপুর ও ফরিদপুরের সঙ্গে যুক্ত করতে হবে। ইনকিলাব মঞ্চের আরেক নেতা আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, এই ষড়যন্ত্রের অন্যতম উদ্দেশ্য হলো জুলাই সনদ বাতিল করা। যতদিন দিল্লির হনুমানগুলো গোপালগঞ্জে থাকবে, ততদিন জুলাই সনদ আদায় হবে না। তাই সনদ পেতে হলে তাদের সবাইকে রাবণে পাঠাতে হবে।
সমাবেশ শেষে টিএসসি থেকে মিছিল করে ইনকিলাব মঞ্চের নেতাকর্মীরা শাহবাগ থানার সামনে অবস্থান নেন। এ সময় তারা “মুজিববাদ নিন্দাবাদ, ইনকিলাব জিন্দাবাদ”, “মুজিববাদ মুর্দাবাদ, ইনকিলাব জিন্দাবাদ”, “গোলাপিদের আস্তানা, ভেঙে দাও গুড়িয়ে দাও”, “লাল জুলাইয়ের হাতিয়ার, গর্জে উঠো আরেকবার” প্রভৃতি স্লোগান দেন।

উত্তরায় শিক্ষার্থীদের রাস্তা অবরোধ: গোপালগঞ্জে এনসিপির কর্মসূচিতে হামলার প্রতিবাদে উত্তরায় সড়ক অবরোধ করেছে বিভিন্ন কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা। বুধবার (১৬ জুলাই) বিকাল ৫টার দিকে তারা সড়ক অবরোধ করেন। অবরোধকারীরা বলেন, ‘নিষিদ্ধ সংগঠন আওয়ামী লীগ প্রতিহতের প্রশ্নে আমরা সবাই এক ও ঐক্যবদ্ধ। এনসিপি’র নেতাকর্মীরা আমাদের ভাই-ব্রাদার, জুলাই আন্দোলনের সহযোদ্ধা। তাদের ওপর আজ ন্যাক্কারজনক হামলার প্রতিবাদে আমরা সড়ক অবরোধ করেছি।’ তারা আরো বলেন, ‘আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, যদি আমাদের ভাইদের কিছু হয় তাহলে আমরা পুরো ঢাকা শহর অচল করে দেবো।’ একইসঙ্গে অতি দ্রুত এনসিপি’র নেতাকর্মীদের সুস্থতার সহিত উদ্ধার করার দাবিও জানান অবরোধকারীরা।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ: গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কর্মসূচিতে হামলার প্রতিবাদে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে ছাত্র-জনতা। বুধবার (১৬ জুলাই) বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে মহাসড়কের ফেনীর মহিপাল ফ্লাইওভারের দক্ষিণাংশে অবস্থান নেন তারা। এ সময় ঢাকা-চট্টগ্রামমুখী দুই লেনে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। সরেজমিনে দেখা যায়, গোপালগঞ্জে এনসিপি নেতাদের ওপর হামলার প্রতিবাদে বিকেলে আন্দোলনকারীরা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। এ সময় নানা ধরনের প্রতিবাদী স্লোগান দেন তারা। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত (বিকেল সোয়া ৫টা) আন্দোলনকারীরা সড়কে অবস্থান করেন। এ সময় ‘আবু সাঈদ-মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ’, ‘গোপালগঞ্জে হামলা কেন, প্রশাসন জবাব চাই,’ ‘কথায় কথায় বাংলা ছাড়, বাংলা কি তোর বাপদাদার,’ ‘সারা বাংলায় খবর দে, আওয়ামী লীগের কবর দেয়,’ ‘জুলাইয়ের হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার,’ ‘ইনকিলাব ইনকিলাব, জিন্দাবাদ জিন্দাবাদ’ ইত্যাদি স্লোগান দেন আন্দোলনকারীরা।

বৃহস্পতিবার সারাদেশে জামায়াতের বিক্ষোভ: গোপালগঞ্জে এনসিপির ওপর হামলা, অগ্নিসংযোগ ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) দেশের সব জেলা ও মহানগরীতে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। বুধবার (১৬ জুলাই) দলটির সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার এক বিবৃতির মাধ্যমে এই কর্মসূচির ঘোষণা করেন। বিবৃতিতে তিনি বলেন, বুধবার গোপালগঞ্জ জেলায় এনসিপির পূর্বঘোষিত মার্চ টু গোপালগঞ্জ কর্মসূচিতে পতিত স্বৈরাচারের দোসর নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা নৃশংস হামলা চালায়। তারা এনসিপির নেতাদের হত্যার উদ্দেশ্যে তাদের গাড়িতে হামলা করে এবং তাদের অবস্থানস্থল এসপির অফিসেও হামলা চালায়। সন্ত্রাসীদের হামলায় এনসিপির বহু সংখ্যক নেতাকর্মী ও সাধারণ জনগণ আহত হয়েছেন। তিনি আরো বলেন, সন্ত্রাসীরা অগ্নিসংযোগ করে ব্যাপক ক্ষতিসাধন করেছে। তাদের সৃষ্ট সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, অগ্নিসংযোগের প্রতিবাদে আগামীকাল ১৭ জুলাই (বৃহস্পতিবার) বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে দেশের সব জেলা/মহানগরীতে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করা হলো। হামলাকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ ও ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলার লক্ষ্যে আমি এ কর্মসূচি পালনের জন্য সংগঠনের সর্বস্তরের জনশক্তি ও দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।

মাদারীপুরে এনসিপির পদযাত্রা স্থগিত: গোপালগঞ্জে সমাবেশ করেই মাদারীপুরে উদ্দেশে যাত্রা পথেই হামলার শিকার হন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতাকর্মীরা। হামলার শিকার ও সরকারি স্থাপনায় দীর্ঘক্ষণ আটকা থাকা মাদারীপুরের পদযাত্রা ও পথসভা স্থগিত করেছে দলটি। বুধবার (১৬ জুলাই) সন্ধ্যায় এই কর্মসূচি স্থগিতের ঘোষণা দেন মাদারীপুর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য সচিব মাসুম বিল্লাহ। এই জেলায় এনসিপির সমাবেশটি বিকাল ৩টায় হওয়ার কথা ছিল। এর আগে মাদারীপুর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা গোপালগঞ্জে এনসিপির নেতাকর্মীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেন। বুধবার বিকালে শহরের লেকেরপাড়ে এই বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ হয়। এ সময় গোপালগঞ্জে এনসিপির নেতাকর্মীদের উপর হামলার ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। দ্রুত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এই পদক্ষেপ না নিলে আগামীতে বৃহত্তর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন তারা।

 

 

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

এনসিপির সমাবেশ ঘিরে আওয়ামী লীগের হামলা-সংঘর্ষ

রণক্ষেত্র গোপালগঞ্জে নিহত চার, ২২ ঘণ্টার কারফিউ

আপডেট সময় : ০৯:১৭:৩৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৬ জুলাই ২০২৫

প্রত্যাশা ডেস্ক: গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সমাবেশ ঘিরে ব্যাপক সংঘর্ষ ও হামলার ঘটনায় অন্তত চারজন নিহত হয়েছেন। তবে সংঘর্ষের ঘটনায় আহত অনেকে চিকিৎসা নিতে হাসপাতালে গেলেও তাদের সঠিক সংখ্যা এখনো জানা যায়নি। খবর বিবিসি বাংলার।
গোপালগঞ্জের ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. জীবিতেশ বিশ্বাস সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে বিবিসি বাংলাকে জানান, সংঘর্ষের ঘটনায় এখন পর্যন্ত চারজনের মরদেহ সদর হাসপাতালে এসেছে। তাদের শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
এদিকে, হামলা ও সংঘর্ষের পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাত থেকে ২২ ঘণ্টার কারফিউ জারি করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টার সিনিয়র সহকারী প্রেস সচিব ফয়েজ আহম্মদ জানিয়েছেন, বুধবার (১৬ জুলাই) রাত ৮টা থেকে আগামীকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত এ কারফিউ জারি থাকবে। এর আগে বিকেলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গোপালগঞ্জ সদরে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়।

এদিন বিকেলে গোপালগঞ্জে সভা শেষে ফেরার পথে এনসিপির গাড়িবহরে হামলার ঘটনা ঘটে। কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়া আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এ হামলা চালায় বলে অভিযোগ ওঠে। এসময় গোপালগঞ্জ শহর রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এরপর এনসিপির শীর্ষ নেতারা জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে গিয়ে অবস্থান নেন। পরে সেনাবাহিনীর ট্যাঙ্কে করে নিরাপদে তাদের সেখান থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়।
এদিকে, হামলার ঘটনায় সারাদেশে ব্লকেড কর্মসূচি পালন করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। হামলায় উদ্বেগ জানিয়ে জড়িতদের শাস্তি দাবি করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। জামায়াত আগামীকাল বৃহস্পতিবার বিক্ষোভ কর্মসূচি দিয়েছে।

সাঁজোয়া যানে করে পুলিশ সুপারের কার্যালয় ছাড়লেন এনসিপি নেতারা: সেনাবাহিনীর সাঁজোয়া যানে করে ‘আটকাপড়া’ জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি নেতারা গোপালগঞ্জ পুলিশ সুপারের কার্যালয় ছাড়েন।

বুধবার (১৬ জুলাই) বিকালে শহরের পৌর পার্কে সমাবেশ শেষ করে গোপালগঞ্জ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পথে এনসিপি নেতাদের গাড়ি বহরে হামলার ঘটনা ঘটে। বিকাল পৌনে ৩টার দিকে শহরের লঞ্চ ঘাট এলাকায় গোপালগঞ্জ সরকারি কলেজের সামনে গাড়িবহরে এই হামলার ঘটনা ঘটে। সকাল থেকে দফায় দফায় হামলা ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার মধ্যে এনসিপি নেতারা শহরের পৌর পার্ক এলাকায় সমাবেশ করেছিলেন। সেখান থেকে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর প্রহরায় গাড়ি বহর নিয়ে বেরিয়ে কিছু দূর যাওয়ার পর পরই শত শত জনতা সেখানে হামলা চালায় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। এরপরই পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা এনসিপি নেতাদের গাড়িবহর ঘুরিয়ে জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে নিয়ে যান। তারা সেখানেই অবস্থান করছিলেন।

বিকালে অতিরিক্ত আইজি (ক্রাইম) খন্দকার রফিকুল ইসলাম জানান, এনসিপির নেতা কর্মীরা গোপালগঞ্জ এসপি অফিসে আটকা ছিলেন। পরে সোয়া ৫টার দিকে ‘ক্লিয়ার’ হলে তারা চলে যান।

ঘটনাস্থলে থাকা প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, গোটা এলাকায় রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। ফলে মানুষের পক্ষে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় চলাচল করা অসম্ভব হয়ে পড়ে।
জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয় চত্বরে এনসিপি নেতাদের সাঁজোয়া যানে উঠার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়েছেন। এক মিনিট পাঁচ সেকেন্ডের এই ভিডিওতে দেখা যায়, প্রথমে একটি সাঁজোয়া যানের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসেন এনসিপি নেতা সারজিস আলম, তিনি বেরিয়ে এসে হাসনাত আব্দুল্লাহকে নিয়ে আবার সাঁজোয়া যানে প্রবেশ করেন। সেখানে থাকা সেনাসদস্যরা তাদের সাঁজোয়া যানের ভেতরে ঢুকতে সাহায্য করেন। সারজিস ও হাসনাত আব্দুল্লাহ গাড়ির ভেতরে ঢোকার পর সেখানে প্রবেশ করেন। তারপর সেখানে এনসিপি নেতা আখতার হোসেন আসেন। কিন্তু তাকে সেই গাড়িতে না তুলে পাশের একটি গাড়িতে তোলা হয়। আরেকটি ভিডিওতে এনসিপি আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামকেও একই ধরনের সাঁজোয়া যানে উঠতে দেখা গেছে। পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের পাশে থাকা একজন সাংবাদিক বলেন, তিনি দুটি গাড়িতে করে নেতাদের চলে যেতে দেখেছেন। গাড়ি দুটো পুলিশ লাইনের দিকে গেছে।
পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে অবস্থানের বিষয়ে এর আগে এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব আলাউদ্দিন মোহাম্মদ বলেছিলেন, এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা সন্ত্রাসীদের আক্রমণের শিকার হয়ে পাশের একটি ভবনে আশ্রয় নিয়েছেন। পরে জানতে পেরেছেন এটি জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়। এখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় সন্ত্রাসপ্রবণ এলাকা অতিক্রম করে পদযাত্রার পরবর্তী কর্মসূচিতে যোগ দেওয়ার চেষ্টা করছেন।

এনসিপির পদযাত্রা ও সমাবেশকে ঘিরে সকাল থেকে দফায় দফায় হামলা, সংঘর্ষ, অগ্নিসংযোগ ও গুলির শব্দে গোটা গোপালগঞ্জ শহর রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে

এনসিপির পদযাত্রা ও সমাবেশকে ঘিরে সকাল থেকে দফায় দফায় হামলা, সংঘর্ষ, অগ্নিসংযোগ ও গুলির শব্দে গোটা গোপালগঞ্জ শহর রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। হাতবোমা, সাউন্ড গ্রেনেড ও কাঁদুনে গ্যাস নিক্ষেপের বিকট শব্দ আর ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার মধ্যে আতঙ্কে শহরের অধিকাংশ এলাকায় দোকানপাট বন্ধ হয়ে গেছে। মানুষের চলাচলও সীমিত হয়ে পড়েছে। এই অবস্থায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১৪৪ ধরা জারি করা হয়েছে।

হামলাকারীদের গ্রেফতারে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম, না হলে শুক্রবার লং মার্চ: গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতাকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনায় হামলাকারীদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছে ইনকিলাব মঞ্চ। বুধবার (১৬ জুলাই) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে আয়োজিত এক বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে এই আল্টিমেটাম ঘোষণা করেন সংগঠনের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদি।
হাদি বলেন, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যদি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হামলাকারীদের গ্রেফতার করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে শুক্রবার হাজার হাজার মানুষ নিয়ে গোপালগঞ্জ অভিমুখে লং মার্চ করা হবে। তিনি আরো বলেন, এই দেশে বিএনপি, জামাত, এনসিপি আছে। আমাদের তাদের সঙ্গে রাজনৈতিক ঝগড়া আছে। কিন্তু জুলাই ও স্বাধীনতার সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে কোনো ঝগড়া নেই। এনসিপির উদ্দেশে বলছি—এই সরকারে তোমাদের দুই ভাই আছে, আসিফ মাহমুদ আর মাহফুজ আলম। যদি সরকারে থেকেও তোমাদের গোপালগঞ্জে নিরাপত্তা না থাকে, তাহলে সারা দেশের নিরাপত্তা কোথায়?

শাহবাগ থানার সামনে অবরোধ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়ে হাদি বলেন, আমরা এখন শাহবাগ থানায় যাচ্ছি। আমাদের ভাইদের নিরাপদে ফিরিয়ে না আনলে কাউকেই এখানে মুক্ত থাকতে দেওয়া হবে না। শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি হবে, কিন্তু কেউ যদি উসকানি দেয়, স্যান্ডেল মেরে মুখের দাঁত ফেলে দেওয়া হবে। তিনি আরো বলেন, গোপালগঞ্জের প্রতিটি উপজেলাকে মাদারীপুর ও ফরিদপুরের সঙ্গে যুক্ত করতে হবে। ইনকিলাব মঞ্চের আরেক নেতা আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, এই ষড়যন্ত্রের অন্যতম উদ্দেশ্য হলো জুলাই সনদ বাতিল করা। যতদিন দিল্লির হনুমানগুলো গোপালগঞ্জে থাকবে, ততদিন জুলাই সনদ আদায় হবে না। তাই সনদ পেতে হলে তাদের সবাইকে রাবণে পাঠাতে হবে।
সমাবেশ শেষে টিএসসি থেকে মিছিল করে ইনকিলাব মঞ্চের নেতাকর্মীরা শাহবাগ থানার সামনে অবস্থান নেন। এ সময় তারা “মুজিববাদ নিন্দাবাদ, ইনকিলাব জিন্দাবাদ”, “মুজিববাদ মুর্দাবাদ, ইনকিলাব জিন্দাবাদ”, “গোলাপিদের আস্তানা, ভেঙে দাও গুড়িয়ে দাও”, “লাল জুলাইয়ের হাতিয়ার, গর্জে উঠো আরেকবার” প্রভৃতি স্লোগান দেন।

উত্তরায় শিক্ষার্থীদের রাস্তা অবরোধ: গোপালগঞ্জে এনসিপির কর্মসূচিতে হামলার প্রতিবাদে উত্তরায় সড়ক অবরোধ করেছে বিভিন্ন কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা। বুধবার (১৬ জুলাই) বিকাল ৫টার দিকে তারা সড়ক অবরোধ করেন। অবরোধকারীরা বলেন, ‘নিষিদ্ধ সংগঠন আওয়ামী লীগ প্রতিহতের প্রশ্নে আমরা সবাই এক ও ঐক্যবদ্ধ। এনসিপি’র নেতাকর্মীরা আমাদের ভাই-ব্রাদার, জুলাই আন্দোলনের সহযোদ্ধা। তাদের ওপর আজ ন্যাক্কারজনক হামলার প্রতিবাদে আমরা সড়ক অবরোধ করেছি।’ তারা আরো বলেন, ‘আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, যদি আমাদের ভাইদের কিছু হয় তাহলে আমরা পুরো ঢাকা শহর অচল করে দেবো।’ একইসঙ্গে অতি দ্রুত এনসিপি’র নেতাকর্মীদের সুস্থতার সহিত উদ্ধার করার দাবিও জানান অবরোধকারীরা।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ: গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কর্মসূচিতে হামলার প্রতিবাদে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে ছাত্র-জনতা। বুধবার (১৬ জুলাই) বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে মহাসড়কের ফেনীর মহিপাল ফ্লাইওভারের দক্ষিণাংশে অবস্থান নেন তারা। এ সময় ঢাকা-চট্টগ্রামমুখী দুই লেনে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। সরেজমিনে দেখা যায়, গোপালগঞ্জে এনসিপি নেতাদের ওপর হামলার প্রতিবাদে বিকেলে আন্দোলনকারীরা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। এ সময় নানা ধরনের প্রতিবাদী স্লোগান দেন তারা। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত (বিকেল সোয়া ৫টা) আন্দোলনকারীরা সড়কে অবস্থান করেন। এ সময় ‘আবু সাঈদ-মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ’, ‘গোপালগঞ্জে হামলা কেন, প্রশাসন জবাব চাই,’ ‘কথায় কথায় বাংলা ছাড়, বাংলা কি তোর বাপদাদার,’ ‘সারা বাংলায় খবর দে, আওয়ামী লীগের কবর দেয়,’ ‘জুলাইয়ের হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার,’ ‘ইনকিলাব ইনকিলাব, জিন্দাবাদ জিন্দাবাদ’ ইত্যাদি স্লোগান দেন আন্দোলনকারীরা।

বৃহস্পতিবার সারাদেশে জামায়াতের বিক্ষোভ: গোপালগঞ্জে এনসিপির ওপর হামলা, অগ্নিসংযোগ ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) দেশের সব জেলা ও মহানগরীতে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। বুধবার (১৬ জুলাই) দলটির সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার এক বিবৃতির মাধ্যমে এই কর্মসূচির ঘোষণা করেন। বিবৃতিতে তিনি বলেন, বুধবার গোপালগঞ্জ জেলায় এনসিপির পূর্বঘোষিত মার্চ টু গোপালগঞ্জ কর্মসূচিতে পতিত স্বৈরাচারের দোসর নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা নৃশংস হামলা চালায়। তারা এনসিপির নেতাদের হত্যার উদ্দেশ্যে তাদের গাড়িতে হামলা করে এবং তাদের অবস্থানস্থল এসপির অফিসেও হামলা চালায়। সন্ত্রাসীদের হামলায় এনসিপির বহু সংখ্যক নেতাকর্মী ও সাধারণ জনগণ আহত হয়েছেন। তিনি আরো বলেন, সন্ত্রাসীরা অগ্নিসংযোগ করে ব্যাপক ক্ষতিসাধন করেছে। তাদের সৃষ্ট সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, অগ্নিসংযোগের প্রতিবাদে আগামীকাল ১৭ জুলাই (বৃহস্পতিবার) বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে দেশের সব জেলা/মহানগরীতে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করা হলো। হামলাকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ ও ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলার লক্ষ্যে আমি এ কর্মসূচি পালনের জন্য সংগঠনের সর্বস্তরের জনশক্তি ও দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।

মাদারীপুরে এনসিপির পদযাত্রা স্থগিত: গোপালগঞ্জে সমাবেশ করেই মাদারীপুরে উদ্দেশে যাত্রা পথেই হামলার শিকার হন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতাকর্মীরা। হামলার শিকার ও সরকারি স্থাপনায় দীর্ঘক্ষণ আটকা থাকা মাদারীপুরের পদযাত্রা ও পথসভা স্থগিত করেছে দলটি। বুধবার (১৬ জুলাই) সন্ধ্যায় এই কর্মসূচি স্থগিতের ঘোষণা দেন মাদারীপুর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য সচিব মাসুম বিল্লাহ। এই জেলায় এনসিপির সমাবেশটি বিকাল ৩টায় হওয়ার কথা ছিল। এর আগে মাদারীপুর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা গোপালগঞ্জে এনসিপির নেতাকর্মীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেন। বুধবার বিকালে শহরের লেকেরপাড়ে এই বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ হয়। এ সময় গোপালগঞ্জে এনসিপির নেতাকর্মীদের উপর হামলার ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। দ্রুত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এই পদক্ষেপ না নিলে আগামীতে বৃহত্তর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন তারা।